Alapon

"শিবির এবং ছাত্রীসংস্থা"




আমি এমন অনেক মানুষকে চিনি, যাঁরা শিবিরের কারণে শিবিরে এসে ফ্রি-মিক্সিং ছেড়েছে। যারা তাদের হাজারো অপরাধের পথ ছেড়েছে এই শিবিরের উছিলায়। যাঁরা একেকজন ছিলো এলাকার একেকজন মূর্তিমান আতংক, সেই তাঁরা শিবিরের মাধ্যমে দ্বীনের দাওয়াত পেয়ে দ্বীনে ফিরে হয়ে গেছেন মানুষের জন্যে রহমদিল।

আমার পরিচিত একজন আঙ্কেল আছেন। যিনি আমাকে নিজের ছেলেই পরিচয় দেন, আংকেল-আন্টি দুজনেই। আঙ্কেলের সাথে যখনই দেখা হতো বা হয়, তখনই আঙ্কেল বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমো এঁকে দেন। অথচ এই মানুষটাকেই নাকি সবাই বাঘের মতো ভয় পেতো। এই মানুষের কাছেই নাকি মানুষ এক সময় ভয়েও কাছে ঘেঁষতে পারতো না!

এবং আমাদের এক মাকেও জানি, যাঁর সাথে ঢাকার একটা স্কুলের কিশোরকণ্ঠ পাঠক ফোরামের পরিচালক থাকার সুবাধে পরিচয়। তিনি ছাত্রীসংস্থায় এসেই পর্দা করা, হিজাব-নিকাব করা শিখেছেন আলহামদুলিল্লাহ! তিনি বলেছেন, তিনি ক্লাস ফোরে থাকতে ছাত্রীসংস্থার সাথে পরিচিত হয়েছেন, অতঃপর ঢাকায় এসে এসএসির পরে সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়েছেন। সেই থেকে যে দ্বীনের পথে অসংখ্য মানুষকে এনেছেন, যার কোনো হিসেব নেই। তখন থেকে তিনি হিজাব-নিকাব করা শুরু করেছেন, আজো পর্যন্ত তিনি একটা সিঙেল মোমেন্টের জন্যেও হিজাব এবং নিকাব ছাড়া চলেননি। এবং আমাদের মতো ছোটোদের সামনেও তিনি নিকাব ছাড়া আসতেন না। যখনই প্রয়োজন হতো সামনে আসার, তিনি বোরকা পরেই আসতেন। অথচ তিনি আমাকে নিজের ছেলেই পরিচয় দেন। আমিও তাঁকে মায়ের মতোই শ্রদ্ধা করি। মা-ও ডাকি।

একবার তিনি বলেন, রেদওয়ান বুঝছো, ছেলে ডাকা মানেই ছেলে না। হ্যাঁ, শ্রদ্ধা স্নেহ থাকবেই। কিন্তু আল্লাহর বিধানও থাকবে। আমি ইচ্ছে করলে তোমাদের সামনে হিজাব-নিকাব ছাড়াও আসতে পারি, কিন্তু আমার দ্বীন আমাকে সেটায় উৎসাহ দেয় না। আমরা যদি তোমাদের সামনে পর্দার গুরুত্ব ফুটিয়ে না তুলি, তাহলে অন্যরা কীভাবে তুলবে? যারা পর্দার বিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে, তাঁরা তো তোমাদের তা বুঝাবে না। সুযোগ পেলে তারা তোমাকে আরো বিপথগামী করে তুলবে। সেই যে আমার ছোট্ট মনে কথাটা গেঁথে গেছে, তখনই উপলব্ধি করতে পারলাম আসলে ছাত্রীসংস্থা ভেতর ভেতর মানুষকে কী দারুণভাবেই না পরিবর্তন করে! আমি সেই থেকে ইসলাম নিয়ে কাজ করা, দ্বীনের মূল ধারায় থাকা সব সংঠনের মতো ছাত্রীসংস্থাকেও ভালোবাসতে শুরু করি। কিন্তু আমারও ইচ্ছে ছিলো আমার ছোটো বোনটাও ছাত্রীসংস্থা করুক। কিন্তু এলাকায় সেই সংঠনের কোনো ধরনের অস্তিত্ব না থাকায় আমার পরিবারের কোনো বোনই ( চাচাতো, ফুফাতো, মামাতো কেউই) সংঠনটাতে যুক্ত হতে পারেনি।

আমি চাই উক্ত সংঠনগুলো নিজেদের ঐতিহ্য, ধরে রাখুক। কোনো ধরনের পদস্থখল তাদের না ঘটুক। শিবিরের ভাইদের জন্যে, ছাত্রীসংস্থার বোনেদের জন্যে অনেক শুভকামনা। আল্লাহ্‌ তাদের সকল ধরনের বিপদাপদ থেকে হেফাজত করুন। আ-মী-ন!

পঠিত : ৫৫০ বার

মন্তব্য: ০