Alapon

শিক্ষানবিশ সন্তানের বিয়ে-ভাবনা...!



পরিবার জীবনে যে কত ধরনের সমস্যা ও জটিলতা সম্মুখীন হতে হয়, তার কোন ইয়ত্তা নেই! গতকাল এক ছেলে এসেছে। পরিবারের লোকজন তাকে বিয়ে করাতে চাইছে। আরো চাইছে, বিয়ের পর ছেলেটি কমপক্ষে আরো দুই বছর লেখাপড়া করবে। এসময় তার ও তার স্ত্রীর যাবতীয় দায়-দায়িত্ব বহন করবে তার বাবা। খুবই ভালো কথা। ছেলেটিরও খুশি হওয়ার কথা।

কিন্তু ছেলেটির মধ্যে খুশির কোনো আমেজ বা আবেশ দেখা গেল না। বরং তার চেহারায় দেখতে পেলাম, অকুল ভাবনা ও অনিশ্চয়তা সঞ্জাত অস্বস্তি! সচেতন ও দায়িত্বশীল পরিবারের বড় ছেলেপুলেদের ক্ষেত্রে সচরাচর এমনই হয়।

এর পিছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে:

০১) আমাদের সমাজের বিয়েগুলো হয় সাধারণত বিলম্বিত। সে ক্ষেত্রে স্বভাবতই বাবা-মায়ের শেষ বয়সে ছেলেরা বিবাহ উপযুক্ত হয়। এই সময়টা মা-বাবার জন্য নতুন করে দায়ভার নেওয়ার সময় না; বরং ভারমুক্ত হওয়ার সময়। সচেতন ছেলেরা এটা বোঝে। তাই মা বাবা চাইলেও অথবা পীড়াপীড়ি করলেও তারা রাজি হতে চায় না। কিংবা রাজি হলেও তাদের মধ্যে বিয়ের স্বাভাবিক আনন্দ বা কৌতূহল কাজ করে না।

০২) এধরনের বিয়েতে বেশ কিছু জটিলতা দেখা দেয়। যেমন, নিজের ও স্ত্রীর ব্যক্তিগত প্রয়োজন, সম্মানজনক উপায়ে শ্বশুর বাড়িতে বেড়ানো, স্ত্রীর খুব কাছের বন্ধু বা আত্মীয়ের খবর নেয়া এবং এই ধরনের আরও কিছু বিষয় সম্পূর্ণরূপে বাবার মর্জি ও অর্থায়নের উপর নির্ভর করে। আত্মমর্যাদাশীল ছেলেদের জন্য বিষয়টা একটু পীড়াদায়ক।

তাছাড়া এর একটা পার্শপ্রতিক্রিয়াও আছে। সেটা হচ্ছে, এই বয়সে এসে মা বাবা অনেক সময় সাধারণ কোন কারণ বা আবদারেও বিরক্ত হয়ে যায়। আর এই বিরক্তি উৎপাদনের পুরো ভাগে থাকে অর্থনৈতিক দাবি ও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে তাদের ওপর নির্ভরতা।

০৩) অনেক সময় আবার বাবা-মা নিজেদের সচেতনতার কল্যাণে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যথাযথভাবে সন্তান ও তার স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারে। তবে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা প্রায়শই সেটা স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে না। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কোন্দল ও মনোমালিন্য লেগেই থাকে।

০৪) লেখাপড়ার মাঝখানে বিয়ে করানো হলে, ছেলেরা টিউশন বা অন্য কোন পার্ট টাইম জবের দিকে ধাবিত হতে পারে। ইতি হতে পারে বাবার আকাঙ্ক্ষার অনুপাতে তাদের লেখাপড়া সর্বোচ্চ মনে হবে না। পারিবারিক অর্থায়নের মুখাপেক্ষিতা বা অনিশ্চয়তাও তাকে লেখা পড়ার ক্ষেত্রে ঠেলে দিতে পারে আকাশ থেকে মাটির দিকে।

আমি নিজেও কয়েকদিন যাবত ভাবছিলাম এই সমস্যা নিয়ে। আমি চাই চুটিয়ে বাঁচতে। সে হিসেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সঠিক ও দ্রুততম সময়ে বিয়ে করাবো ছেলেমেয়েদের ইনশাআল্লাহ। এখন যেমন ছেলেকে নিয়ে ক্রিকেট ও ব্যাডমিন্টন খেলতে যাই, তখন যাবো নাতি-নাতনি নিয়ে। কিন্তু এটার সঠিক উপায় কী হবে? সন্তানদের তো লেখাপড়াও করাতে হবে সর্বোচ্চ মানে। তাছাড়া তারা সচেতন হলে বাবার কাঁধে পা রেখে নিজেকে ও বউ-বাচ্চাকে পালবে না। এবং আমি আশা করি, তাদের মধ্যে এতোটুকু সচেতনতা থাকবে।
নিজের সমস্যা সমাধানের জন্য যে আলোকে চিন্তা করেছিলাম, ছেলেটিকে সেটা বললাম। সাথে এটাও বললাম, যতদিন তুমি ছেলে আছো, ততদিন এই সমস্যা সমাধানের একক কর্তৃত্ব তোমার হাতে নেই। তবে চেষ্টা করো এই চিন্তাটা ধারণ করার। তাহলে তোমার পরবর্তী প্রজন্ম এর সুফল ভোগ করতে পারবে।

আমি তাকে বললাম, আমার ছেলেকে দিয়ে যদি উচ্চশিক্ষার আশা থাকে, এবং সেইসাথে থাকে পরিবার জীবনকে জান্নাতি সুখ ও কলকাকলিতে ভরে তোলার প্রতিজ্ঞা, তাহলে অত্যন্ত সচেতনতার সাথে সুপরিকল্পিতভাবে একটি কাজ করতে হবে। সেটি হচ্ছে, ছেলেটা যে শিক্ষকের কাছে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করছে, তার সাথে কথা বলা। তাকে জানানো যে, ছেলেটি যে বিষয়ে লেখাপড়া করছে, আমি চাই সে বিষয়টিতে সে অতিরিক্ত গবেষণা করুক। সর্বোচ্চ মানের একজন গবেষক হোক। সেজন্য আপনি তাকে নিয়মিত কাজের বাইরে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অতিরিক্ত গবেষণা করাবেন। সপ্তাহ, পক্ষ বা মাস পর পর ওই বিষয়ে নতুন নতুন অভিসন্দর্ভ জমা দিতে বলবেন। কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সে সাফল্য অর্জন করতে পারলে, আমার অর্থায়নে তাকে নির্দিষ্ট একটি অংকের মাসিক বেতন দেবেন। আমরা দুজনে মিলে তার গবেষণার বিষয় নির্ধারণ করবো। তাকে জানাবো এটা তার বাড়তি আয়ের উৎস। অর্থায়ন আমিই করব। তবে সে জানবে আপনি করছেন।

উল্লেখ্য, লেখাপড়ার মাঝখানে ছেলেকে বিয়ে করালে, তার ও তার স্ত্রীর খরচ তো বহন করতে হবেই। এটা সরাসরি বিশেষ অনুকম্পা হিসেবে তার হাতে দিলে সে হীনমন্যতায় ভুগবে। এতে শুধু তার লেখাপড়াই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না; বরং মানসিকভাবেও ভেঙ্গে পড়বে; সংসারের সুখ উবে যেতে পারে তখন। আর উপরে বর্ণিত পদ্ধতিতে দিলে, আশা করা যায়, সব কিছু ঠিক থাকবে, সন্তান ও পরিবারের প্রত্যেকের সাথে প্রত্যেকের শ্রদ্ধা ও ভালবাসাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকবে।

এই সমাধান শুধু ওই সকল সামর্থ্যবান পরিবারের জন্য, যারা ছেলেপুলের লেখাপড়া চলাকালে তাদের বিয়ে করাতে চায়। এদের সাথে অন্যদের গুলিয়ে ফেললে হবে না কিন্তু!

- আকরাম হোসাইন

পঠিত : ৪৩৯ বার

মন্তব্য: ০