Alapon

অতএব, জুলুম নিপাত যাক, সেই সাথে সকল জালিমও...



ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস (Liz Truss) গতকাল রোববার সকালে 'বিবিসি মর্নিং’ নামক প্রাত্যহিক নিয়মিত টিভি অনুষ্ঠানে পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন যে, যে কোন ব্রিটিশ নাগরিক ইউক্রেনে রাশিয়ান সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করতে গেলে তিনি তাদের সমর্থন করবেন। ব্রিটিশ সরকার ইউক্রেনের জন্য খাদ্য সাহায্যসহ নানান সামরিক সাহায্যও পাঠাচ্ছে (সুত্র: বিবিসি)।

ইউক্রেন একটি স্বাধীন দেশ, প্রতিবেশি বৃহৎ শক্তির দ্বারা সে আক্রান্ত। ইউক্রেনবাসী নিজেদের স্বাধীনতা ও দেশ রক্ষায় অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে। তারা দেশপ্রেমিক, স্বাধীনতাকামী মহান! বিশ্ববাসীর নিকট থেকে সহমর্মীতা পাচ্ছেন, প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগীতাও।

আচ্ছা, ঠিক এরকম ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিরা কি পেয়েছে? তারাও তো নিজেদের দেশ দখলের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে। তারা কেন জঙ্গী নামে আখ্যায়িত হয়? তারা কেন নিন্দিত হন? নিরিহ আফগানদের সাহায্য করতে আসা ওসামা বিন লাদেনের কি দোষ ছিল? আজ ব্রিটিশ পররাষ্টমন্ত্রী পরোক্ষভাবে উৎসাহ দিচ্ছেন তার দেশের নাগরিকদের ইউক্রেনে গিয়ে প্রতিরোধে যোগ দিতে, সেই তিনি কি তার নাগরিকদের একইভাবে উৎসাহ ও সমর্থন দেবেন কেউ যদি ফিলিস্তিনে গিয়ে ফিলিস্তিনকে দখলদার মুক্ত করতে চায়? পশ্চিম তীর কিংবা গোলান উপত্যকার ক্ষেত্রেও কি তার নিজের ও সরকারের ভুমিকা একইরকম হবে? কাশ্মীরের ক্ষেত্রেও?

আবার দেখুন; ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নিজ দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে মাঠে নেমেছেন। তিনি বিশ্ববাসীর প্রশংসাও কুড়িয়েছেন। কিন্তু এই তিনিই কিছুদিন আগে মজলুম ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধকে সন্ত্রাস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। দ্বিচারীতার কি বাহারি রুপ!

যে জাতিসংঘা ইরাক, ইরান, লিবিয়া, সিরিয়া ও আফগানিস্থানের বেলায় দিনের পর দিন নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশন পাশ করে তথাকথিত ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়’কে দিয়ে সেই সব দেশের অন্ততপক্ষে ৩৫ লক্ষ প্রাণ সংহারের রাস্তা উন্মুক্ত করেছে, জাতি সংঘের রেজুলেশন বাস্তবায়নের নামে পুরো দেশগুলোকে শশ্মান বানিয়েছে, সেই জাতিসংঘ রাশিয়ার বেলায় মিনমিনে গলায় কাতর প্রার্থনা জানাচ্ছে পুটিনের কাছে! মেরুদন্ডহীন, ভীরু ভেড়া একটা!

বিশ্বের বুকে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে এবং আলোচ্য ঘটনার মত নতুন কোন ঘটনার পূনারাবৃত্তি ঠেকাতে হলে এই দ্বিচারী অবস্থানের পরিসমাপ্তি ঘটানোটা খুবই জরুরি। বস্তুত, স্বাধীনতাকামী মুক্তিযোদ্ধা আর সন্ত্রাসী জঙ্গী, প্রতিরোধ আর আগ্রাসন, এ গুলোর চিরায়ত সঙ্গাকে বদলে দিয়ে বিশ্বের বুকে শোষণ ও জুলুমকে স্থায়ী রুপদানকারী শক্তির আজ যে মাতম দেখছি আমরা, তা তাদের নিজেদেরই সৃষ্টি।

এদের এই অবস্থানকে সমর্থন দিতে আমার কোন দায় নেই। তেমনটা থাকার প্রশ্নই ওঠে না। তবে বিশ্বের বুকে প্রতিটি মজলুমের জন্য নৈতিক সমর্থন অবশ্যই রয়েছে, কারণ আমি একজন মুসলমান। আর কোন মুসলমান কখনও জেনে শুনে কোন জালিমের সমর্থক হতে পারে না। অতএব জুলুম নিপাত যাক, সকল জালিমও!

- জিয়াউল হক

পঠিত : ৩৯৩ বার

মন্তব্য: ০