Alapon

নারীবাদ ও ‘সম’ অধিকার



নারীবাদ গড়েই উঠেছে নারীদের ‘সম’ অধিকার প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে। লক্ষ্যণীয়, এখানে আগেই ধরে নেয়া হয়েছে যে, ‘সম’ মানেই হলো ‘সঠিক’। আসলেই কি তাই? নারী-পুরুষ সব জায়গায় সমান সমানভাবে থাকবে, সব জায়গায় সমান সমান অধিকার ভোগ করবে সেটাই কি ন্যায়? আদতে বাস-ট্রাক চালানো, গলা ফাটিয়ে হেল্পারি করা-সহ ভারী ভারী যত কাজ রয়েছে—সেসব বিষয় সামনে নিয়ে এলে নারীবাদীদের তোলা ‘সম’ অধিকারের আস্ফালন আর শোনা যায় না। কেবল অফিস-আদালতে এসির বাতাস খেতে খেতে ভাবমারা কর্পোরেট জব করার সময় সমধিকারের যত বুলি আওড়ানো হয়।
.
একটা উদাহরণ দেয়া যাক, একটা নির্মানকাজের জন্য দিনমজুর নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। সেখানে লাইনে কিছু পুরুষ আর মহিলা দাঁড়াল। লোক নিয়োগ শেষে দেখা গেল, পুরুষ বেশি নিয়োগ দেয়া হয়েছে আর মহিলা কম। মহিলাদের যেসব কাজ দেয়া হয়েছে তাও অপেক্ষাকৃত কম কষ্টের, মজুরিও নির্ধারণ করা হয়েছে সে অনুযায়ী। এখন নারীবাদীদের অবস্থা হলো এমন—তারা দাবি করছে, তারাও পুরুষদের সমান সংখ্যায় কাজ করবে, আর একই সময় পরিমাণ কাজ করার পরিবর্তে তাদেরকে একই পরিমাণ মজুরি দিতে হবে। এই হলো তাদের সংজ্ঞার ‘সমঅধিকারের’ প্রায়োগিক রূপ। অথচ তারা নিজেরাও জানে এ কাজে তারা চাইলেও পুরুষদের সমান আউটপুট দিতে পারবে না।
.
বাস্তবতা হলো এই যে, কিছু কাজ রয়েছে যা পুরুষদের জন্য, আবার কিছু কাজ রয়েছে যা মহিলাদের জন্য। স্বয়ং আল্লাহর নির্ধারণ করে দেয়া এই বাস্তবতাকে যারা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে না, নিজেদের এই ফিতরাতবোধ যারা নষ্ট করে ফেলেছে, তারাই সমঅধিকারের অসাড় আস্ফালন করে থাকে। তাই নারীবাদীরা যত দ্রুত সত্য মেনে নিতে পারবে, ততই তাদের মঙ্গল। আর ‘সম’ মানেই সত্য নয়, সঠিক নয়। বরং যে যেখানে উপযুক্ত সেখানেই সে সঠিক, সত্য।
.
লিঙ্গভিত্তিক বেতন বৈষম্য (Gender Wage Gap) বিষয়ক মিথঃ
.
নারীবাদীদের ব্যবহৃত এক কল্পনাপ্রসূত অসার যুক্তি হলো Gender Wage Gap বা চাকরি-বাকরিতে ‘বেতন-বৈষম্য’, যা নব্য নারীবাদ বা নিও ফেমিনিজমের মূল ভিত্তি। অর্থাৎ, ভারী সব কাজ বাদ দিয়ে নারীবাদীরা যেসব জায়গায় নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে চায় সেখানে না কি তারা অধিকার(!) আর বেতন-বৈষম্যের শিকার হয়। খতিয়ে দেখা যাক। (ইসলামের দৃষ্টিকোণ কিছুক্ষণ পরে আলোচিত হবে, প্রথমে সেক্যুলার দৃষ্টিকোণ থেকেই আলোচিত হলো।)
.
আমেরিকায় করা বিভিন্ন জরিপ অনুযায়ী তথাকথিত বেতন-বৈষম্যের পরিমাণ ২৩ শতাংশ। অর্থাৎ, প্রতি একজন কর্মজীবী সাধারণ পুরুষ ১০০ ডলার আয় করলে প্রতি একজন কর্মজীবী সাধারণ নারী আয় করে ৭৭ ডলার। নব্য নারীবাদীদেরকে প্রায় সবসময়ই এই ধরনের মুখস্ত তথ্য ব্যবহার করতে দেখা যায়। অথচ একইসাথে এসব জরিপ আর গবেষণায় উল্লেখিত বেতন বৈষম্যের যেসমস্ত কারণগুলো উল্লেখ করা হয়, সেগুলো আর বলতে শোনা যায় না। বাস্তবতা হলো, পুরুষ আর নারীদের বেতন ব্যাবধানের পেছনে কিছু কারণ কাজ করে, যার প্রথমেই রয়েছে নারীদের Choice বা বেছে নেয়া। এমনকি American Association of University Women—যা কিনা একটা নারীবাদী সংস্থা—তাদের দেয়া প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে বিদ্যমান এই বেতন-বৈষম্যের প্রধান কারণগুলো হলো পেশা, পদবি, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের ঘণ্টা ইত্যাদির ক্ষেত্রে পুরুষ আর নারীর ভিন্ন ভিন্ন পছন্দ।[১] সেখানে বলা হয়েছে, নারীরা নিজেরাই পড়ালেখা করার সময় এমন সব বিষয়াদি বেছে নেয়, যার বাজারমূল্য কম। তাছাড়া কর্মক্ষেত্রেও তাদের পদবি, দায়িত্ব, সংসারের জন্য ওভারটাইম না করা ইত্যাদি কারণে এমন বেতন-ফারাক সৃষ্টি হয়েছে যা অতি স্বাভাবিক।
.
আর এই বিভিন্ন কার্যকারণগুলো বিবেচনা করলে বেতন ফারাক এসে দাঁড়ায় মাত্র ৬.৬% এ। আর এরও কারণ শুধুমাত্র নারী-পুরুষের পছন্দ করে নেয়ার বিভিন্নতা। একজন নারী তাঁর সংসার সামলানোর জন্য যেখানে তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরতে উদ্যত হন, সেখানে একজন পুরুষ সেই সংসারের জন্যই ওভারটাইম কাজ করতেও দ্বিধা করেন না। অর্থাৎ, ক্যারিয়ার বেছে নেবার বিভিন্নতার কারণেই এই ব্যাবধান বা ফারাক সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এই কথাগুলো কিন্তু নারীবাদীদের একদমই পছন্দ না। ২০০৯ সালে U.S. Department of Labor এর প্রকাশ করা ‘An Analysis of Reasons for the Disparity in Wages Between Men and Women’ প্রতিবেদনেও একই তথ্য পাওয়া গিয়েছিল, যা কি না ৫০টিরও বেশি পিয়ার রিভিউ গবেষণা থেকে নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। সেখানেও বলা হয়েছে, বিদ্যমান বেতন ফারাকের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পছন্দ বিবেচনা করলে রীতিমতো কোনো ফারাকই আর বিবেচ্য থাকে না। সেগুলো নিয়ে আন্দোলন আর উচ্চবাচ্য করা তো হাস্যকর ব্যাপার।

~মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার
.
.

পঠিত : ৩৭৭ বার

মন্তব্য: ০