Alapon

মূলকে ধারণকারী মল্লিক



মল্লিক রহিঃ মূলকে ধারণ করতেন। তিনি মূল থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন না। তিনি মূল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়াটাকে সর্বানাশা কাজ মনে করতেন। যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতেন, তিনি তাদের সর্বানাশা মনে করতেন। আমি কি বানিয়ে বলেছি? নাহ, মল্লিকের একটি গান ছিলো এরকম যে,
সংগঠনকে ভাঙ্গতে যাদের, মন কাঁদে না
এর ইতিহাস মুছতে যাদের, যায় আসে না
তাদের মতো, আমি যেনো, না হই কখনো সর্বনাশী......


তিনি পৃথিবীর সবকিছু থেকেই সংগঠনকে বেশি ভালোবাসতেন। সংগঠনের চেয়ে কাউকে বড়ো কিছু মনে করতেন না। তিনি শতকিছু হলেও সংগঠনেই ফিরে আসতেন। তাই তো তিনি বলেছেন,
সংগঠনকে ভালোবাসি আমি,
আমি সংগঠনকে ভালোবাসি।
এই জীবনকে গড়বো বলে,
বারে বারে তার কাছে আসি....
সংগঠনের চেয়ে বড়ো কেউ নয়,
সংগঠনই মূল পরিচয়....


তিনি সংগঠন থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়াটাকে মেনে নিতে পারতেন না। তাই তো তার গানেই ফুটে ওঠে যে,

আমার গানের ভাষা, জীবনের সাথে যেনো মিলেমিশে হয় একাকার
নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছি, বলতে না পারে কেউ, ব্যথা ভরা, কথাগুলো তার....


সংগঠনকে ভাঙ্গার কাজ যারা করে, জনশক্তিকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়ার কাজ যারা করে, তিনি তাদেরকে অনুরোধ করেন,
" যা কিছু কর‍তে চাও করতে পারো,
অনুরোধ শুধু ওগো শুধু পর হয়ো না
এ বুক ভাঙতে চাও ভাঙতে পারো,
অনুরোধ শুধু এই ঘর ভেঙো না। "

আমাদের শাহাদাতের সবুজ স্মৃতিগুলো তিনি মনে রেখেছেন। খুব দারুণভাবেই মনে রেখেছেন। এই সংগঠন অনেক শ্রম-ঘাম আর রক্ত দিয়ে গড়া, এটা তিনি মাথায় রেখেছেন। রেখেছেন মনে। সেজন্য তিনি তার গানে সুরে সুরে বলেন,

"অনেক রক্ত দিয়ে গড়া এই মাসজি মুক্তির প্রিয় ঠিকানা
অনেক কান্না ভেজা, এই সুবহি উন্মিদ, স্বপ্নের সীয় সীমানা,
কেমন করে ওগো, আগুন দেবে তুমি, নিদয় নিঠুর হয়ো না...."


সংগঠনে যখন আজকের অতি ইন্টেলেকচুয়ালদের মতো তৎকালীন অতি বিপ্লবীরা ভাঙার কাজ শুরু করেছে, তখন তাঁর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাবার উপক্রম হয়েছে। ভীষণ কষ্ট পেয়েছেন তিনি তাতে। সে বিষয়টি তাঁর গানে গানেই স্পষ্টরূপে ফুটে ওঠে। শুনুন তেমনি তাঁর একটি গান। তিনি গেয়েছেন,

ধৈর্য ধারণ করার শক্তি, দাও গো মেহেরবান
বুকের ভেতর ব্যথার নদী বইছে অবিরাম......


সোজাসাপটা কথা হলো মল্লিক কখনোই সংগঠনে নিষ্ক্রিয় পার্টির সদস্য হয়ে বসের থাকার পক্ষে ছিলেন না। কখনোই তিনি সংগঠনে ভাঙনকে মেনে নিতে পারেননি। তাঁর কাছে যারাই গিয়েছেন, তারা আন্দোলনের ময়দানে আরো বেশিই সক্রিয় হয়েছেন, নিষ্ক্রিয় নন। তিনি গানের নাম করে একসাথে ছেলে মেয়ের প্রোগ্রাম করেননি। একবাসে ট্যুরে যাবার কাজ কখনোই করেননি। সেটার পক্ষেও ছিলেন না। মিউজিককে হালাল করার পক্ষেও ছিলেন না তিনি। হারাম মিউজিকের প্রতি তাঁর আগ্রহবোধও ছিলো না। এই বিষয়ে তাঁর আকিদা ছিলো স্পষ্ট এবং দৃঢ়।

তাঁর কাছে যারাই ভিড়তো, তারাই কিন্তু সংগঠনে আরো অগ্রসর হতো। তিনি সংগঠনকে অগ্রসর করতেই জনপদে জনপদে সফর করতেন। তিনি নিজ বলয় সৃষ্টি করে কাউকে নিষ্ক্রিয় পার্টির সদস্য বানাননি। তাঁর গান-কবিতার মাধ্যমে, এবং তাঁর সোহবতে আন্দোলন ও সংগঠনের কাজে অগ্রসর হবার প্রণোদনা পেতো জনশক্তিরা। অথচ এখন কেউ কেউ ওনাকে দ্বিতীয় ইকবাল স্বীকৃতি দিয়েও আন্দোলনের ময়দানে নিষ্ক্রিয়। তাদের কাছে, তাদের গ্রুপ কিংবা ইনস্টিউটে যারা যায়, তারা উল্টো আরো নিষ্ক্রিয় আর নিষ্কর্মা হয়ে যায়। তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা শুরু করে সংগঠনকে নিয়ে। সংগঠনের দায়িত্বশীলদেরকে নিয়ে।
অথচ মল্লিক আল্লাহর কাছে আশা করতেন তিনি যে শপথ নিয়ে ইসলামি আন্দোলনের পথে অগ্রসর হয়েছেন, সে পথে যেনো আজীবন সক্রিয় হয়ে থাকতে পারেন। তাঁর গানে তিনি বলেন,
জীবন প্রভাত বেলায়, যে শপথ করেছিনু আমি
সে পথের মঞ্জিলে, ছুটে চলি যেনো দিবাযামী...।।


সুতরাং মল্লিক প্রীতি শুধু তার কোনো গান কবিতা আওড়িয়েই হয় না। হওয়া যায় না। তাঁকে দ্বিতীয় ইকবাল স্বীকৃতি দিয়েও হয় না। বরঞ্চ মল্লিক প্রীতি তো হলো যে, তাঁর আদর্শের ওপর হিমাদ্রিসম অটল-অনড় থাকা। তাই নয় কি?

তাঁর আদর্শ-তাঁর স্বরূপ আরো স্পষ্ট হয়ে যায় এই গানের মাধ্যমেই। যে গানে তিনি লিখেন,
ঈমানের দাবি যদি কুরবানি হয়
সে দাবি পূরণে আমি,
তৈরি থাকি যেনো, ওগো দয়াময়...


~রোহান আব্দুল্লাহ

পঠিত : ৫৬১ বার

মন্তব্য: ০