Alapon

তাওয়াক্কুলের নামে অলসতা : ইসলামের শিক্ষা নয়


হারাম চাকরি থেকে ফিরে আসার গল্প শিরোনামে আমার একটা ভিডিও লেকচার ভাইরাল হয়েছিল। সিলেটে করা ওয়ার্কশপ অন ওয়ার্ক এর ভিডিও। কথা বলেছিলাম একজন ভাই কীভাবে অনেক টাকার একটা চাকরি ছেড়ে মাস নয়েক বেকার বসে তারপর খুব ভালো একটা চাকরি পান – সেটা নিয়ে।

কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই ভিডিওটা ভাইরাল না হলেই ভালো হতো। গতকাল একটা ইন্টারভিউতে বেশ কয়েকজন বলেছে তারা সেই ভিডিওটা দেখেছে। ভিডিওটা দেখে তারা হারাম কাজ করবে না – এমন ইন্সপিরেশন পেয়েছে, কিন্তু হালাল কাজ করতে হবে – সেই চেতনাটা পাননি।

ছোট্ট একটা চিঠি লিখতে দিয়েছিলাম – কোনো একটা কোম্পানির CMO এর কাছে একটা প্রপোজাল লেটার লিখবে সরোবরকে যেন তাদের কনটেন্ট মার্কেটিং এর দায়িত্ব দেয়। একজন মাত্র ইংলিশে লেখা আমার প্রশ্নটা বুঝেছে। বাকি কেউ বোঝেনি। ৮ জনের মধ্যে একজন।

সবাইকে বলেছি প্রতিদিন দুই ঘন্টা ফিনানশিয়াল এক্সপ্রেস পড়তে আর নুমান আলি খান, ইয়াসির কাদি আর মুফতি মেনকের ইংলিশে লেকচার শুনতে। বিজনেস কম্যুনিকেশনে ইংলিশ লাগে – এটা একটা ফ্যাক্ট। আর ইংলিশ একটা হার্ড স্কিল – এটা সরাসরি শিখতে হবে, সফট স্কিল দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। একটা মাত্র ছেলে যে বুঝেছে সে ভুল-ভাল সহ একটা চিঠি লিখল। কিছু কাজ দিলাম – সে গতদিন কিছু কাজ করল। আজকে কী করবে তা বুঝিয়ে দেওয়া হলো। সে বাসায় ফিরে রাতে জানিয়ে দিয়েছে – সে কাজ করবে না – অনেক প্রেশার লেগেছে তার কাছে।

হালাল-হারাম বাছাই করে চলতে হলে কাজে অনেক বেশি এক্সট্রা এফোর্ট দিতে হয়, অনেক বেশি কষ্ট করতে হয়। কেউ যদি বলে সে হারাম কামাই করবে না – কিন্তু সে স্কিলও ডেভেলপ করবে না, আবারও প্রেশারও নেবে না – সে আসলে অলস এবং মিথ্যাবাদী। সে তার অলসতাকে ইসলামের পোশাক পরাতে চাইছে মাত্র।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ইয়ামানের লোকেরা হজ করার সময় সঙ্গে খাবার রাখত না আর বলত, আমরা আল্ললাহর ওপর ভরসাকারী। তখন তারা হজ করতে এসে মক্কার লোকদের কাছে হাত পাততো। এই প্রেক্ষিতে আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা কুরআনের সূরা বাকারার ১৯৭ আয়াত অবতীর্ণ করেন:
“তোমরা সঙ্গে পাথেয় রাখ; নিশ্চয় উত্তম পাথেয় হচ্ছে আল্লাহর প্রতি তাকওয়া।”
অর্থাৎ আমরা কাজ করব; আয়-ইনকাম করব, এবং সেটা থেকে পাথেয় নিয়ে ইবাদাত করতে যাব। তবে কাজ করার সময় আল্লাহর পছন্দ-অপছন্দের প্রতি খেয়াল রাখব।
ইমাম আহমাদ বলেছিলেনঃ
“মানুষের কর্তব্য হচ্ছে সে যেন অন্যদের ওপর বোঝা হয়ে না থাকে। তার উচিত কাজকর্ম করে নিজের ও পরিবারের প্রয়োজন পূরণ করা। তবে প্রয়োজন পূরণের পরেও সে কাজকর্ম ছেড়ে দেবে না।” [কর্মের প্রতি উৎসাহ প্রদান, ইমাম আবু বকর খাল্লাল, উদ্দীপন প্রকাশন]

যে ছেলেটার বয়স ১৮ – সে এখনো আয় করে না – সে কি অনুভব করে না যে সে পরিবারের ওপর একটা বোঝা? বিশ্বাস করেন ভাইয়েরা – খুব ক্রিয়েটিভ হওয়া লাগবে – এমন না, শুধুমাত্র এডোব ইলাসট্রেটর আর ফটোশপ পারবেন – এটা দিয়েই মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা, হালালভাবে আয় করা যায়।

কতদিন ধরে একদম বেসিক ডিজাইনার খুঁজছি পাচ্ছি না – স্টার্টার ফেইজের ডিজাইনারই নাই। আবার আমাদের সামর্থ্যও নাই – অনেক বেশি বেতনের ডিজাইনার হায়ার করব। কিছু কাজ শিখিয়ে নেব – কিন্তু কিছু তো জানতে হবে! কোডিং শিখেন – কত যে কাজ, কত যে কাজ আছে – বলে বোঝানো যাবে না। বাচ্চাদের কোডিং শেখাবে – এমন শিক্ষক পাই না।
অলসতা, কর্মবিমুখতা আপনাকে অন্য মানুষের বোঝা করে দেয়। আপনার বাবা-মা হয়তো ভদ্রতা করে বলে না – কিন্তু তারা আপনাকে বোঝা মনে করে। আপনার পরিবারের সাথে আপনার যে ঝামেলা – সেটা যতটা না ইসলাম মানার কারণে তার চেয়ে বেশি কামাই না করার কারণে।

স্কিল শিখতে হবে, কষ্ট করতে হবে – আখিরাতে তো বটেই – দুনিয়াতে ভালো থাকতে হলেও এর বিকল্প নাই। ভাইয়েরা, সময় চলে যাচ্ছে। আপনারা সময় নষ্ট কোরেন না। আপনাদের অলসতাকে ইসলামের আলখেল্লা পরিয়ে এই দ্বীনটাকে আর ছোট করিয়েন না।
লেখাঃ Md Sharif Abu Hayat ভাই
ডিজাইনঃ Halal Job BD

পঠিত : ৪৬৯ বার

মন্তব্য: ০