Alapon

"স্ত্রীর ভরণপোষণ : কর্তব্য না করুণা?"



আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাঁর কালামে পাকে বলেছেন যে, পুরুষকে নারীর কাওয়াম করেছেন। তাঁদের দায়িত্বশীল করেছেন। রব্বে কারিম তাঁর কালামে পাকের মাধ্যমে আমাদেরকে তা জানিয়ে বলেন,
"পুরুষগণ নারীদের প্রতি দায়িত্বশীল, যেহেতু আল্লাহ একের ওপর অন্যকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং তারা তাদের সম্পদ থেকে ব্যয়ও করে।"(সুরা নিসা: আয়াত-২৩৩)


এখন একজন পুরুষ যখন বিয়ে করে, তখন স্বভাবতই সে পুরুষের ঘাড়ে পরিপূর্ণভাবে দায়িত্ব এসে যায় যে, তিনি তার স্ত্রীর ভরণপোষণ দিবেন। তার যাবতীয় প্রয়োজনাদি পূর্ণ করবেন। তার প্রতি যত্নশীল হবেন। এই যে দায়িত্বটা, এটা অনেকেই পূরণ করেন,। অনেকেই না, প্রায় সবাই-ই পূরণ করেন। কিন্তু এটাকে অনেকে নিজের একটা একনিষ্ঠ দায়িত্ব মনে না করে মনে করে করুণা। অন্তত পক্ষে অনেকের আচরণে সেটাই ফুটে ওঠে! হ্যাঁ, এটা স্বীকৃতি দিতেই হবে। আজো সমাজের পরতে পরতে এই অদ্ভুত কিসিমের মানসিকতা সম্পন্ন লোকজন বিরাজিত রয়েছে। তারা মাঝেমধ্যে এমনও করে যে, তাদেরকে ( স্ত্রীদেরকে) ধমকের পর ধমক দিয়ে বুঝানো হয় যে, আমি সারাদিন পরিশ্রম করে আয় রোজগার করি, তোমার প্রয়োজন মেটাই। তোমার প্রতি করুণা করি। কিন্তু দেখুন, কুরআন কী বলে, আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওতাআলা কী বলেন; মহান আল্লাহ বলেন,
‘তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেরূপ গৃহে বাস করো তাদেরও (স্ত্রীদের) সেরূপ গৃহে বাস করতে দাও। তাদের কোনো কষ্ট দেবে না, তাদের (জীবন) সঙ্কটে ফেলার জন্য।’ (সুরা তালাক: আয়াত-৬)।

এভাবে কুরআন আপনাকে আরো জানাচ্ছে যে,
‘পিতার কর্তব্য যথারীতি তাদের ( স্ত্রী ও সন্তানদের) ভরণপোষণ করা।’ (সুরা বাকারা: আয়াত-২৩৩)।


হ্যাঁ, আপনি পুরুষ। আপনি অনেক পরিশ্রম করেন। সংসার-সমাজ-রাষ্ট্র; সবকিছু নিয়েই আপনি মহাব্যস্ত। রাজ্যের চিন্তাভাবনা সবই আপনার মাথায়, আপনার মগজে। আপনি রুজি করেন। হাঁড়ভাঙা খাটুনি খেটে যান দিন ও রাত। এভাবেই স্ত্রী-সন্তানদের জীবীকার বন্দোবস্ত করেন। তাদের প্রয়োজন পূরণ করেন। এতোটুকুন নিরেট সত্য। এবং এটাই আপনার অন্যতম একটা প্রধান দায়িত্ব। এটা কস্মিনকালেও আপনার করুণা নয় তাদের প্রতি। তাদের প্রতি এই দায়িত্ব পালন করতে আপনি বাধ্য। কিন্তু করুণা বিষয়টি ভিন্ন। করুণা করতে আপনি আমি বাধ্য নয়। বাধ্য দায়িত্ব পালন করতে। দায়িত্ব পালন না করার শাস্তি ভীষণ ভয়াবহ! কুরআন-হাদিসের প্রতিটি পরতে পরতে আপনাকে উৎসাহ আর নির্দেশ দেয়া হয়েছে এই দায়িত্ব পালন করতে।

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পুরুষ ও শ্রেষ্ঠ মানুষ মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম পুরুষদেরকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন যে,
‘তুমি যখন খাবে, তাকেও তা খাওয়াবে, তুমি যখন পরিধান করবে, তাকেও পরাবে। তার চেহারায় কখনো প্রহার করবে না। (আবু দাউদ-২১৪২
)

আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম বলেছেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ হচ্ছে একজন নেককার-আদর্শ স্ত্রী। এই আদর্শ স্ত্রীরাই স্বামীর জন্যে অহংকার। তেমনি একজন আদর্শ স্বামীও স্ত্রীর অহঙ্কার। স্ত্রীর কাছে আদর্শ স্বামী হওয়াটা একজন উত্তম ও মুখলিস পুরুষের জন্য চরম ও পরম সৌভাগ্যের বিষয়। আদর্শ স্বামী হতে স্পেশাল কিছু করতে হয়। সেটা শুধুই ভরপুর টাকা দিয়েই হওয়া যায়, তা নারীরাও মনে করেন না। আদর্শ স্বামীর আলাদা কিছু গুণাবলি থাকতে হয়। পারতপক্ষে স্ত্রীর প্রতি দায়িত্বগুলো খুব নিখুঁতভাবে পালনের চেষ্টা করতে হয়। স্ত্রীর সাথে উত্তম আচরণ ও অনুপম ব্যবহার করতে হয়। অকৃত্রিমভাবে স্ত্রীকে ভালোবাসতে হয়। আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন,
‘তোমরা তাদের (স্ত্রী্দের) সাথে উত্তম আচরণ করো। আর যদি তাকে তোমার অপছন্দও হয়, তবুও। যা তুমি অপছন্দ করো, হয়তো আল্লাহ তাতে সীমাহীন কল্যাণ দেবেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত-১৯)

অনেক সময় বাহিরে থেকে এসে আমাদের পুরুষেরা দেখা যায় সব রাগ-জেদ ঝাড়ে বউয়ের প্রতি। অথচ এটা ঠিক না। এটা একটা কাপুরুষোচিত কাজ। দেখুন, রাসুলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম কী বলেন, তিনি বলেছেন,
‘কোনো মুমিন পুরুষ মুমিন নারীর প্রতি রাগান্বিত হবে না। কেননা, যদি তার কোনো কাজ খারাপ মনে হয়, তাহলে তার এমন গুণও থাকবে, যার জন্য সে তার ওপর সন্তুষ্ট হতে পারবে।’ (সহিহ মুসলিম-১৪৬৯)


আপনি যতোই কষ্টে থাকেন, আপনাকে অবশ্যই স্ত্রীর সাথে সুন্দর আচরণ করতে হবে। আপনার ভালোবাসার বাহুডোরে তাঁকে বেঁধে রাখতেই হবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন,

‘তাদের সাথে সৎভাবে জীবন যাপন করবে।’ (সূরা নিসা, আয়াত-১৯)


আমাদের নেতা, আমাদের আদর্শ, জগতের রহমত রহমাতাল্লিল আ'লামিন বলেছেন যে,
"তার সাথে (স্ত্রীর সাথে) অসদাচরণ করবে না।’মুসনাদে আহমাদ-১৮৫০১)


এখানে আরেকটা কথা, অনেক সময় স্ত্রীরাও অবিবেচকের মতো আচরণ করে। কথাবার্তা বলে। তাঁর পার্টনারকে বুঝতে চায় না। বাহির থেকে আসছে, সে কেমন আছে, তাঁর মুড কেমন, তা উপলব্ধি করতে চেষ্টা করে না। বাসায় আসার সাথে সাথেই ঘ্যানর ঘ্যানর ফ্যানর ফ্যানর শুরু করে। অভিযোগের পর অভিযোগ উপস্থাপন করে, কে কী বললো, কে কী করলো সেসব অযথা অপ্রয়োজনীয় কথাও তুলে প্রিয় মানুষটির কানভারী করে। তার মগজকে বিষিয়ে তোলে। বিষয়টি মোটেও উচিৎ নয়। একটা সুন্দর বন্ধনের জন্যে, সুখময় দাম্পত্যের জন্যে তা কখনোই কল্যাণ বয়ে আনে না।

আচ্ছা, যাহোক, এই যে এতোগুলো দায়িত্ব বা কর্তব্য পুরুষের, নারীর কি কোনো দায়িত্ব নেই? ইসলাম কি তাঁদের এমনিতেই ছেড়ে দিয়েছে? নাহ, বিষয়টি তা নয়। স্ত্রীর দায়িত্ব হলো তাঁর স্বামীর আনুগত্য করা। তাঁকে সর্বোচ্চ সম্মান করা। স্বামীর প্রতি শারীয়া নির্দেশিত আনুগত্যে শৈথিল্য প্রদর্শন করা যাবে না। রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লামের একটা হাদিস আছে, যেখানে তিনি বলেছেন যে,
আল্লাহ্‌ ব্যতীত যদি অন্য কাউকে আমি সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে তার স্বামীকে সিজদা করার অনুমতি দিতাম। (তিরমিযীঃ ১১৫৯)


কুরআনের মধ্যেও একজন পুণ্যবতী নারীর গুণাবলি হিসেবে বলা হয়েছে যে,
তাঁরা অনুগতা এবং স্বামীর অনুপস্থিতিতে ধন-সম্পদ ও নিজেদের ইজ্জত রক্ষাকারিণী। (সুরা নিসা: আয়াত-২৩৩)


-"স্ত্রীর ভরণপোষণ : কর্তব্য না করুণা?"-
|| রেদওয়ান রাওয়াহা ||
০৬/০৩/২২ ইং

পঠিত : ২৯৮ বার

মন্তব্য: ০