Alapon

৭ই মার্চের দ্ব্যর্থতা : জয় বাংলা — জিয়ে পাকিস্তান




০১.
“... ৭ মার্চের মিটিং-এর বিশেষ বর্ণনা দেব না। লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়েছিল, মাথায় লাল ফিতা বাঁধা ও হাতে লাঙ্গল নিয়ে কৃষকেরাও সমবেত হয়েছিল। বন্ধু-বান্ধবের সাথেই উপস্থিত ছিলাম। সকলেই আশা করছিলাম যে সেদিন স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হবে। আসলে আমাদের এ ধারণা ছিল আবেগপূর্ণ এবং বিতর্কিত। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সংসদের অধিবেশন এবং মন্ত্রিসভা গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছিল। এটিই সঠিক গণতান্ত্রিক পদ্ধতি।
৭ মার্চের সভায় তার বক্তব্য "পাকিস্তান জিন্দাবাদ" বলে শেষ করেছিলেন। তাতে তিনি তো কোন অন্যায় করেন নি। পাকিস্তান অবিভক্ত ছিল রাজনৈতিকভাবে। গণতান্ত্রিক সংগ্রাম চলছিল জনমতের দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। সুতরাং রাজনীতিক হিসেবে তিনি তিনি তার ভাষণ সুষ্ঠুভাবে সমাপ্তও করেছিলেন। লক্ষাধিক লোক থেকে সেদিন কোন প্রতিবাদ আসেনি। অবশ্য শেষ করার পরমূহুর্তে ছাত্রনেতৃবৃন্দের পরামর্শে তিনি মাইকে ফিরে এসে “জয় বাংলা” ধ্বণিও উচ্চারণ করেছিলেন, যা সেদিন সমবেত জনগণকে উল্লসিত করেছিল। পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলাতে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়নি এবং তার ভাষণ রাজনৈতিকভাবে সুষ্ঠু ও সঙ্গতিপূর্ণই ছিল।
অথচ আজকাল ৭ মার্চের এই ভাষণ থেকে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ কথাটি মুছে ফেলা হয়েছে। কেন? কী কারণে? এতে আমি মনে করি মুজিবুর সাহেবের রাজনৈতিক প্রজ্ঞাকে খাটো করা হয়েছে। আরো বড় ক্ষতি হয়েছে, যে সম্প্রদায় এই কাজটি করেছেন তার প্রতি মানুষের আস্থা কমে গেছে॥”
— কর্ণেল (অবsmile কাজী নূর-উজ্জামান বীরউত্তম (৭নং সেক্টর কমান্ডার) / একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ : একজন সেক্টর কমান্ডারের স্মৃতিকথা ॥ [অবসর প্রকাশনা সংস্থা - ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ । পৃ: ১২-১৩]
০২.
“... একটা কথা বলি, শেখ সাহেব যে ভাষণ দিয়েছিলেন তাতে 'জয় বাংলার' সাথে সাথে 'জয় পাকিস্তান' শব্দটিও উচ্চারণ করেছিলেন। এখন এই ভাষণ নিয়ে নানা বিতর্ক-বিতন্ডা চলছে। আমি ছোট্ট মানুষ। আমাকে সাক্ষ্য দিতে কেউ ডাকবে না। আমি যেমন শুনেছি, তেমনি বললাম। হতে পারে, আমার শ্রুতির বিভ্রম ঘটেছিল॥”
— আহমদ ছফা / বেহাত বিপ্লব : ১৯৭১ । সম্পাদনা : সলিমুল্লাহ খান ॥ [আগামী প্রকাশনী - ডিসেম্বর, ২০১৩ । পৃ: ৮৪]
০৩.
“… ’৭১-এর জনতার স্বাধীনতার তীব্র আকাঙ্খাই নেতৃত্বকে পেছনে ফেলে অগ্রগামী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। জনতার সেই অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে স্বাধীনতার মূলমন্ত্র থেকে অন্য খাতে প্রবাহিত করার ক্ষমতা তৎকালীন কোন রাজনৈতিক নেতৃত্বের ছিল না। আর তাই সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রাম আপন পরিণতিতে ধাবিত হয়।
’৭১-এর ২৫শে মার্চ পর্যন্ত শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ইয়াহিয়ার সাথে আপোষ আলোচনা এক পাকিস্তানের ভিত্তিতেই ছিল। ৭ই মার্চের ভাষণের তাৎপর্য যতই স্বাধীকারের পটভূমিতে বিশ্লেষিত হোক না কেন তাও ‘জয় বাংলা'’ আর ‘জয় পাকিস্তানে’র উচ্চকিত শ্লোগানে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত আপোষ মীমাংসার ধুম্র জালে আবদ্ধ ছিল।
’৭১-এর ২৫শে মার্চের আলোচনা শেষে যখন জেনারেল ইয়াহিয়া খান পাক বাহিনীকে নিরস্ত্র বাঙালী জনতার উপর সশস্ত্র আক্রমণের নির্দেশ দিয়ে ভূট্টোসহ তার সঙ্গী সাথীদের নিয়ে করাচির পথে ধাবমান তখন রাত ৮.৩০ মিনিটে, শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ডের সাংবাদিকদের নিকট প্রদত্ত বক্তব্য ‘আলোচনা ফলপ্রসু হয়েছে আর মাত্র ঘোষণা বাকি’-এই বক্তব্যের তাৎপর্য আর যা-ই হোক রাত ১২টায় শেখ মুজিব কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণার কোন প্রেক্ষাপটের সাক্ষ্য বহন করে না।
… (পূর্ণাঙ্গ ভাষণ) প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোল এবং তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্ত্তত থাকো। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দিব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ্। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা। জয় পাকিস্তান।
... বাংলা জাতীয় লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এম. এম. আনোয়ারের উদ্যোগে আগরতলা এসেম্বলি মেম্বার রেস্ট হাউসে আমার ও আওয়ামী লীগ নেতা এবং জাতীয় পরিষদ সদস্য আবদুল মালেক উকিলের মধ্যে সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর এক দীর্ঘ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আমার প্রশ্নের উত্তরে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানাইয়া দেন যে, শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রেফতারের পূর্ব মুহূর্ত অবধি কোন নির্দেশ দান করেন নাই। এইদিকে মুজিব-ইয়াহিয়ার মার্চ-এর আলোচনার সূত্র ধরিয়া কনফেডারেশন প্রস্তাবের ভিত্তিতে সমঝােতার আলোচনা চলিতেছে। জনাব মালেক উকিল আমাকে ইহাও জানান যে, তিনি এই আলোচনার ফলাফল সম্পর্কে আশাবাদী।
প্রসঙ্গত ইহাও উল্লেখ্য যে, ইতিমধ্যে আমি সর্বজনাব আবদুল মালেক উকিল, জহুর আহমদ চৌধুরী, আবদুল হান্নান চৌধুরী, আলী আজম, খালেদ মোহাম্মদ আলী, লুৎফুল হাই সাচ্চু প্রমুখ আওয়ামী লীগ নেতার সহিত বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে আলোচনাকালে নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা বা লক্ষ্য সম্পর্কে কোন নির্দেশ দিয়াছিলেন কিনা, জানিতে চাহিয়াছিলাম। তাহারা সবাই স্পষ্ট ভাষায় ও নিঃসঙ্কোচে জবাব দিলেন যে, ২৫ মার্চ পাক বাহিনীর আকস্মিক অতর্কিত হামলার ফলে কোন নির্দেশ দান কিংবা পরামর্শ দান নেতার পক্ষে সম্ভব হয় নাই। অথচ স্বাধীনতা উত্তরকালে বানোয়াটভাবে বলা হয় যে, তিনি পূর্বাহ্নেই নির্দেশ প্রদান করিয়াছিলেন। শুধু তাহাই নয়, শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৭ই এপ্রিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কাউন্সিল অধিবেশনে ঘোষণা করেন যে, তিনি নির্দেশনামা জনাব জহুর আহমদ চৌধুরীকে পাঠাইয়াছিলেন।
... সময়োপযোগী নেতৃত্বদানের ব্যর্থতা ঢাকিবার জন্যই পরবর্তীকালে শেখ মুজিবুর রহমান অসত্যের আশ্রয় গ্রহণ করিয়া নির্দেশ প্রদানের একটি ঘোষণা পত্র ছাপাইয়া সাধারণ্যে বিলি করিয়াছিলেন। ইহা না করিয়া তাহার উচিত ছিল সময়োপযোগী অবদানের জন্য মেজর জিয়াউর রহমানকে স্বীকৃতিদান, ইহা হইত নেতাসুলভ আচরণ। তাঁহার মানসিকতার কারণেই শেখ মুজিবুর রহমান স্বাভাবিকভাবেই তাহা করিতে ব্যর্থ হন। ইহা অতীব পরিতাপ এবং দুঃখের বিষয়॥”
— অলি আহাদ / জাতীয় রাজনীতি : ১৯৪৫ থেকে '৭৫ [বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি - অক্টোবর, ২০১২ (পঞ্চম সংস্করণ) । পৃ: ১৭ (তৃতীয় সংস্করণের ভূমিকা) / ৩৮৬ / ৪০৬-৪০৭ / ৪০৯]
০৪.
“... জাতির জনক বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের বিখ্যাত ভাষন প্রসংগেও একই ব্যাপার। জাষ্টিস মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সাহেবের বিখ্যাত গ্রন্থ বাংলাদেশের তারিখ প্রথম সংস্করনে তিনি উল্লেখ করেছেন ভাষনের শেষে শেখ মুজিবুর রহমান বললেন ‘জয় বাংলা। জিয়ে পাকিস্তান’। দ্বিতীয় সংস্করনে তিনি ‘জিয়ে পাকিস্তান’ অংশটি বাদ দিলেন। কবি শামসুর রহমানের লেখা আত্মজীবনী যা দৈনিক জনকন্ঠে ‘কালের ধূলোয় লেখা’ শিরোনামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে সেখানেও তিনি বলেছেন শেখ মুজিবুর রহমানের শেষ কথা ছিল ‘জিয়ে পাকিস্তান’। আরো অনেকের কাছে আমি এ ধরনের কথা শুনেছি, যারা আওয়ামী ভাবধারার মানুষ। সমস্যা হল আমি নিজে ৮ এবং ৯ই মার্চের সমস্ত পত্রিকা খুঁজে এরকম কোন তথ্য পাই নি। তাহলে একটি ভুল ধারনা কেন প্রবাহিত হচ্ছে?
বংগবন্ধু যদি ‘জিয়ে পাকিস্তান’ বলে থাকেন তাহলে তাতে দোষের কিছু নেই। তিনি যা বলেছেন অবশ্যই ভেবে চিন্তেই বলেছেন। পাকিস্তানের সংগে তার আলোচনার পথ খোলা রাখতে হবে। তাকে সময় নিতে হবে। ৭ই মার্চে যুদ্ধ ঘোষনার মত অবস্থা তার ছিল না। বংগবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষন গেটেসবার্গ এড্রেসের চেয়েও গুরুত্বপূর্ন বলে আমি মনে করি। এখানে কোন অষ্পষ্টতা থাকা বাঞ্জনীয় না॥”
— হুমায়ুন আহমেদ / জোছনা ও জননীর গল্প ॥ [অন্য প্রকাশ - ফেব্রুয়ারী, ২০০৪ । ভূমিকা (পূর্ব কথা)]
০৫.
“... অসাধারণ ব্যক্তিত্বশালী মুজিব তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সেদিন স্বাধীনতা ঘোষণা করেন নাই সত্য, তবে তরুণদের চাপে অন্তত: তাদের মন রাখিলেন। শুধু তাদের দেখাইবার উদ্দেশ্যেই পরিষদে যোগ না দিবার ব্যাপারটার ঐরূপ বীরত্বব্যঞ্জক ব্র্যাভাডো প্রদর্শন করিলেন। স্বাধীনতা ঘোষণার দাবিদার তরুণদের খুশি করিবার জন্য শেখ মুজিব আরো দুইটা কাজ করিলেন। প্রথমত: উপসংহারে তিনি বলিলেন : আজিকার সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম। দ্বিতীয়ত: কিছুদিন ধরিয়া তিনি বক্তৃতার শেষ করিতেন এক সংগে 'জয় বাংলা' 'জয় পাকিস্তান' বলিয়া। এই দিনকার সভায় প্রথম ব্যতিক্রম করিলেন। শুধু 'জয় বাংলা' বলিয়া বক্তৃতা শেষ করিলেন। যারা নিজেরা উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন বলিয়া দাবি করেন, তাদের কেউ কেউ আমার এই কথার প্রতিবাদ করেন। তারা বলেন, শেখ মুজিব ৭ই মার্চের সভাতেও 'জয় বাংলা' 'জয় পাকিস্তান' বলিয়া বক্তৃতা শেষ করিয়াছিলেন। আমি যখন বলি যে পরদিন আমি রেডিও-টেলিভিশনে নিজ কানে তার বক্তৃতা শুনিয়াছি এবং তাতে 'জয় পাকিস্তান' ছিল না, তার জবাবে তারা বলেন, পরদিন রেকর্ড ব্রডকাস্ট করিবার সময় ঐ কথাটা বাদ দেওয়া হইয়াছিল। যাক আমি নিজ কানে যা শুনিয়াছিলাম, তাই লিখিতেছি।
বক্তৃতা শেষ করিয়াই মুজিব সভামঞ্চ ত্যাগ করিলেন। তাজুদ্দিন সাহেব মুহুর্তমাত্র সময় নষ্ট না করিয়া খপ করিয়া মাইকের স্ট্যান্ড চাপিয়া ধরিলেন এবং বলিলেন : ‘এইবার মওলানা তর্কবাগীশ মোনাজাত করিবেন। সভার কাজ শেষ।’ মওলানা সাহেব তখনি মাইকের সামনে দুই হাত তুলিয়া মোনাজাত শুরু করিলেন। সমবেত বিশ-পঁচিশ লক্ষ লোকের চল্লিশ-পঞ্চাশ লাখ হাত উঠিয়া পড়িল। মোনাজাতের সময় এবং তকবিরের সময় কথা বলিতে নাই। তাই কেউ কথা বলিলেন না। নড়িলেন না। যখন মোনাজাত শেষ হইল তখন শেখ মুজিব চলিয়া গিয়াছেন। পট করিয়া মাইকের লাইন কাটিয়া গিয়াছে। স্পষ্টত:ই বুঝা গেল, আর কেউ কিছু বলিতে না পারুক, এই জন্যই এ ব্যবস্থা করা হইয়াছিল। এতে এটা নি:সন্দেহে বোঝা গেল যে তথাকথিত ছাত্র-নেতা ও তরুণদের যবরদস্তি ও হুমকি ধমকেও সেদিন মুজিবের স্বাধীনতা ঘোষণার ইচ্ছা ছিল না। আমার বিবেচনায় এটা শেখ মুজিবের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতারই প্রমাণ॥”
— আবুল মনসুর আহমদ / আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর॥ [খোশরোজ কিতাব মহল - ডিসেম্বর, ১৯৯৯। পৃ: ৫৫৫-৫৫৬]
০৬.
“... ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন - ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ‘জয় বাংলা’ ‘জয় পাকিস্তান’। এই ঘোষণা সেদিন মানুষকে উদ্দিপীত করেছিলো। মানুষকে স্বাধীনতার জন্য অস্ত্রধারণে অনুপ্রাণিত করেছিলো। আজ শেখ সাহেবের সমর্থকরা সেদিনের ক্যাসেট থেকে ‘জয় পাকিস্তান’ শব্দটি তুলে ফেলেছেন। আর তার বিরোধীরা বলছেন, শেখ সাহেব ওই শ্লোগানের মাধ্যমে পাকিস্তান রাখতে চেয়েছিলেন। অর্থাৎ কেউই তাকে বিশ্বাস করছে না। এমন করে কি অবিকৃত ইতিহাস লেখা যায়॥”
— নির্মল সেন / স্বাধীনতার অবিকৃত ইতিহাস ॥ [সাপ্তাহিক বিচিত্রা - ১৪/০৪/১৯৯৪]
০৭.
“... শেখ সাহেব জনসভায় আসার আগেই জনসভা মুখরিত হয়ে উঠল। এক দফা এক দাবি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আমাদের নেতা পাঞ্জাবিদের পার্লামেন্টে যাবেন না।
এর মধ্যে শেখ সাহেব জনসভায় এসে পৌঁছলেন। তখন লাখ জনতার কণ্ঠে বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবি, তারা বারবার বলছে, পাঞ্জাবিদের পার্লামেন্টে আমাদের নেতা যাবেন না। এরপর বজ্রনির্ঘোষের মতো গগনবিদারী কণ্ঠে তার ভাষণ শুরু করলেন। এমন সুলিখিত ভাষণ কোনোদিন শুনিনি। কীভাষণ! আর শেখ সাহেবের কী গগনবিদারী কণ্ঠ! গোটা জনসভায় এক উন্মাদনা সৃষ্টি করল। শেখ সাহেবের ভাষণের মাঝে মাঝে পেছনের দিকে তাকাচ্ছিলেন। পেছনে ছিল ছাত্রলীগ নেতারা। তিনি এবারের সংগ্রাম, মুক্তি সংগ্রাম বলে একটু থামলেন এবং পেছনে ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খানের কাছে কি যেন জিজ্ঞাসা করলেন। তারপর তিনি বললেন, “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান।”
শেখ সাহেবের মঞ্চে সামনের সারিতে চেয়ারে আমি ও আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বসে ছিলাম, যেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো। শেখ সাহেবের ভাষণের প্রতিটি অক্ষর গোগ্রাসে গিলছিলাম। এরপর সভা ভাঙল। জনতার একটি অংশের মনে যেন কিছু না পাওয়ার ক্ষোভ থেকে গেল। তারা সবাই ওইদিনই চেয়েছিল শেখ সাহেব স্বাধীনতা ঘোষণা করুক। কিন্তু তা শেখ সাহেবের পক্ষে আদৌ সম্ভব ছিল না। তিনি অনুভব করেছিলেন, সংগ্রামের সময় উপস্থিত না-ও থাকতে পারেন। এই দুরদৃষ্টির ফলে তিনি বলেছিলেন আমি যদি নির্দেশ দিতে না পারি তাহলে তোমাদের কাছে নির্দেশ রইল যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করবে। এরচেয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আর কি নির্দেশ থাকতে পারে? আজকে যারা বলেন, শেখ সাহেব সেদিন স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, তারা কি বলতে পারেন এর চেয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা বেশি কী হতে পারে? আজকেও একদল লোক বলেন, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই স্বাধীনতার ঘোষক সম্পর্কে আমি বলতে চাই, স্বাধীনতার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নির্মাণ করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি সব তৈরি করে গিয়েছিলেন এবং সে ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমান নিশ্চয়ই সাহস দেখিয়েছেন। কিন্তু সে সাহস হলো একজন বেতার ঘোষকের সাহস। তার আগে এবং পেছনে সবকিছু প্রস্ট‘ত করে রেখেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তবে একথা সত্য, শেখ সাহেব ৭ মার্চের বক্তব্যের শেষদিকে বলেছিলেন, ‘জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান’।
আমি জানি, আমার এ বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক আছে, কানাডা থেকে একদল ছেলে লিখে জানিয়েছেন, আপনি মিথ্যা লিখেছেন। কানাডা কেন? ঢাকারও অধিকাংশ লোকের বিশ্বাস আমি মিথ্যা বলেছি। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমার স্মৃতি আমাকে বিভ্রান্ত করেনি। এবং আমার মতে, সেদিন জয় পাকিস্তান বলে শেখ সাহেব সঠিক কাজ করেছিলেন। একজন বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। ৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে আমি একটি ভিন্ন কথা শুনেছি। বিশেষ করে বামপন্থী মহল এটা বলেছে। তারা সমালোচনা করেছে, শেখ সাহেব স্বাধীনতা ঘোষণা দিলেন না কেন? আবার একই মুখে বলেছেন শেখ সাহেব বুর্জোয়া নেতা। তিনি কিছুতেই স্বাধীনতা ঘোষণা দিতে পারেন না। আমার মত হচ্ছে, জয় পাকিস্তান না বলে কোনো উপায় ছিল না। তখনো আলোচনা শেষ হয়নি। ক’দিন পর ইয়াহিয়াদের সঙ্গে আলোচনা করার কথা। একটি লোকও স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত নয়। সেদিন যদি জয় পাকিস্তান না বলে শুধু ‘জয় বাংলা’ বলতেন এবং স্বাধীনতার ঘোষণা দিতেন তাহলে ইয়াহিয়া বাহিনী মারমুখী আক্রমণ করত। লাখ লাখ লোক প্রাণ হারাতো। তখন এই মহলটিই বলত জনতাকে কোনো প্রস্তুত না করে এ ধরনের স্বাধীনতা ঘোষণা বালখিল্যতা। এ জন্যই অসংখ্য লোকের প্রাণহানি হয়েছে এবং এর জন্যই শেখ মুজিবের বিচার হওয়া উচিত।
এছাড়া জয় পাকিস্তান বলা সম্পর্কে আমার সঙ্গে শেখ সাহেবের আলাপ হয়েছিল। আমি বললাম, আপনি জয় পাকিস্তান বললেন কেন? শেখ সাহেবের মুখ কালো হয়ে গেল। এরপর তিনি বললেন, “আমরা খাবার টেবিলে ছেলেমেয়ে সবাই খেতে বসতাম। প্রথমে আমরা এক হাতের পাঁচটি আঙ্গুল অপর হাতের একটি আঙ্গুল অর্থাৎ ছয়টি আঙ্গুল দেখাতাম। অর্থাৎ এই ছয়টি আঙ্গুল ছিল ছয় দফা। পরে পাঁচটি আঙ্গুল নামিয়ে ফেলতাম। বাকি থাকত একটি আঙ্গুল। অর্থাৎ এক দফা। অর্থ হচ্ছে ছয় দফার শেষ কথা হচ্ছে এক দফা বাংলাদেশের স্বাধীনতা। সেদিন পাঁচ আঙ্গুল নামিয়ে ফেলার পর আমার কনিষ্ঠপুত্র রাসেল জিজ্ঞাসা করেছিল। তুমি আজকের জনসভায় জয় পাকিস্তান বলতে গেলে কেন? আমি কি রাসেলের প্রশ্নের জবাব আপনাকে দেব? আমাকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে হলে অনেক পথ অতিক্রম করতে হবে। ইয়াহিয়ার সামরিক সরকারকে শেষ কথা বলতে হবে। পশ্চিম পাকিস্তানের নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে ভুট্টো। তার সঙ্গেও কথা বলতে হবে। আমি এই আলোচনা শেষ না করে কিছু করলে পৃথিবীতে আমি জবাবদিহি করতে পারব না। আমি এখন ভালো অবস্থানে আছি। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হয়েও আমাকে ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে না। এই প্রেক্ষিতে আমি কিছুটা aggressive হতে পারি মাত্র, এর বেশি কিছু নয়। আমাকে আমাদের সেনাবাহিনী ও সরকারের কর্মচারীদের সঙ্গে আলাপ করতে হবে। সেই আলাপ এখনো শেষ হয়নি। সবদিকে এত অপ্রস্তুত রেখে একটি দেশকে আমি সংগ্রামের মুখে ঠেলে দিতে পারি না। আপনি কি বোঝেন না ওইদিন চারদিকে শত্রু বেষ্টিত অবস্থায় আমার অন্য কিছু বলার ছিল না?”
এই হচ্ছে ৭ মার্চ শেখ সাহেবের বক্তব্য সম্পর্কে আমার ব্যাখ্যা। আমার এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে এখনো অনেক মন্তব্য শুনি। কিন্তু তাদের কি স্মরণ নেই, ২৫ মার্চ কি অগোছালো অবস্থায় স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছিল? এটা যদি ৭ মার্চ হতো তাহলে আরো লাখ লাখ প্রাণ আমাদের হারাতে হতো। একথা কি সত্য নয়? যারা সেদিন শেখ সাহেবের সমালোচনা করেছিলেন, তারা বুকে হাত দিয়ে বলুন, শেখ সাহেব কি ভুল করেছিলেন? ওই ভুলটুকু না করলে আপনারা কোথায় পালিয়ে যাবেন সে সন্ধানও করার সময় পেতেন না। শেখ সাহেব যে জয় পাকিস্তান বলেছিলেন তার অন্যতম সাক্ষী আমার অনুজপ্রতিম সাংবাদিক লন্ডন প্রবাসী আবদুল গাফফার চৌধুরী। আমি জানি না, সে কথা আজ তার মনে আছে কিনা। তবে তিনি আমার সঙ্গে জনসভায় প্রথম সারিতে বসে ছিলেন॥”
— নির্মল সেন / ৭ই মার্চের ভাষণ “জয় পাকিস্তান” বিতর্ক ॥ (সংগৃহীত) আমার জীবনে একাত্তর ॥ [বর্তমান সময় - ২০০৯ । পৃ: ১১]
০৮.
“... আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদে কোনো দিন বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্ন নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনাই হয়নি বা আলোচনা করা সম্ভবও ছিল না। কারণ আওয়ামী লীগ কোনো গুপ্ত বিপ্লবী প্রতিষ্ঠান নয়। অথচ স্লোগান দিয়েছে একটি দেশ স্বাধীন করার। শত্রু প্রস্তুতি নিয়ে আঘাত হানতে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষ শত্রুর বিরুদ্ধে নেতৃত্ব চাচ্ছে। চাচ্ছে সংগ্রামের আহ্বান। কিন্তু সংগঠন হিসেবে কোনো প্রস্তুতিই ছিল না আওয়ামী লীগের। সুতরাং সিদ্ধান্ত নিয়ে জনসভা ডেকে স্বাধীনতা ঘোষণা দেবার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। এ ধরণের একটি সংগ্রামে যাবার কথা অন্তত: আওয়ামী লীগের নয়।
কিন্তু তা হলে কী হবে? এ বিতর্কই হয়েছিল ১৯৭১ সালের ৮ মার্চ। ৭ মার্চ শেখ সাহেব জয় বাংলা ও জয় পাকিস্তান বলে ভাষণ শেষ করলেন। আমার মনে হলো এবার স্বাধীনতা হচ্ছে না। প্রস্তুতি নেই। সময় নিতে হবে। সাময়িককালের জন্য হলেও শেখ সাহেবকে আপোষ করতে হবে। বন্ধু রুহুল আমিন কায়সার বললেন, এবারেই স্বাধীনতা, আওয়ামী লীগ বুঝেই হোক না বুঝেই হোক, আগুনে হাত দিয়েছে। যাদের মাঠে নামিয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছাড়া তাদের ঘরে ফিরিয়ে নেয়া যাবে না। আমরা সংঘর্ষ চাই বা না চাই ওরা সংঘর্ষ চাপিয়ে দেবে। যেকোনো মূল্যেই হোক এবারই স্বাধীনতা।
আমি একমত হলাম না। দু'জনে বাজি ধরলাম। বাজিতে আমি হেরেছিলাম। রুহুল আমিন কায়সার পঞ্চাশের দশকের ছাত্র আন্দোলনের একটি উজ্জল নাম। ছাত্র অবস্থায় বিপ্লবী দলের (আর এস পি) সংস্পর্শে আসেন। ষাটের দশকে চটকল শ্রমিকদের ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেন। তিনি বাংলাদেশ সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছিলেন শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। বাজিতে তিনি জিতে গেলেন। কিন্তু আমার হিসাব কি ভুল ছিল? আমি বলেছিলাম, আমাদের প্রস্ততি বলতে বাংলাদেশের মানুষের প্রস্তুতির কথাই বুঝিয়েছিলাম। ভারতের সাহায্য এবং সহযোগিতার প্রশ্নটি আমার হিসেবে ছিল না। আমি বুঝেছিলাম, ভারত সরকারের সহযোগিতায় বাংলাদেশ ভৌগলিক দিক থেকে স্বাধীন হতে পারে, কিন্তু তাতে অর্থনৈতিক মুক্তি আসে না। আর ভারতই বা আমাদের সাহায্য করবে কেন? তাই আগরতলা গিয়েই কংগ্রেস নেতাকে প্রশ্ন করেছিলাম, কেন আপনারা সীমান্ত খুলে দিলেন? আপনাদের কী লাভ বাংলাদেশকে স্বাধীন করে?
মা, আমার খটকা লেগেছিল আগরতলা গিয়ে। ত্রিপুরাবাসী আমাদের দু'হাত বাড়িয়ে কোলে তুলে নিয়েছে। এর অর্থ বুঝি। কিন্তু ভারত আমাদের সাহায্য দিচ্ছে কেন? কেন ট্রেনিং দিচ্ছে? ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কি সমঝোতা হয়েছে? এ সম্পর্কে সকলেই অন্ধকারে। একজন সচেতন রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে আমাকেও সেই অন্ধকারে ঝাঁপ দিতে হলো। সে মুহুর্তে ভিন্ন কোন বিকল্প ছিল না॥”
— নির্মল সেন / মা জন্মভূমি ॥ [তরফদার প্রকাশনী - ডিসেম্বর, ২০০৭ । পৃ: ৬১-৬২]
০৯.
“... আওয়ামী লীগ একটি সংসদীয় দল ছিল এবং শেখ মুজিব মুসলিম লীগ, আওয়ামী লীগ রাজনীতি করার সময় বিরোধীদের বিরুদ্ধে শারিরীক শক্তি প্রয়োগে অভ্যস্ত হলেও সশস্ত্র সংগ্রামের চিন্তা তার মাথায় কোনদিন থাকে নি। গোপন অবস্থায় থাকার ব্যাপারেও তার কোন চিন্তা ছিল না। বিশেষ বিশেষ জরুরী অবস্থায় জেলে যাওয়া ছাড়া তার করার মত কিছু ছিল না। সেটাই তিনি বরাবর করে এসেছিলেন।
১৯৭১ সালেও স্বাধীনতা যুদ্ধ ইত্যাদির কথা বললেও তার কোন চিন্তা বা প্রস্তুতি তার ছিল না। ৭ই মার্চের রেসকোর্স ময়দানে তার বক্তৃতায় স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের কথা বলার পর তিনি যার জন্য প্রস্তুত ছিলেন তা হলো, ইয়াহিয়া খান ও ভুট্টোর সাথে আলোচনা। এই আলোচনার উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জন্য সর্বোচ্চ আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার নিশ্চিত করে পাকিস্তানের কাঠামো রক্ষা করা। তিনি নিজে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া। সেটা সাধারণ পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক ছিল। এই চেষ্টা তিনি করেছিলেন।
৭ই মার্চের বক্তৃতার শেষে "জয় পাকিস্তান" বলা এদিক দিয়ে খুব তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। এটা এখন আওয়ামী লীগের লোকেরা অস্বীকার করে কারণ তার কোন রেকর্ড নেই। ৭ই মার্চের পর রেডিও তাদের দ্বারা পরিচালিত হতে থাকার সময় তারা 'জয় পাকিস্তান' শব্দ দুটি মুছে ফেলেছিলেন। তখন কোন ক্যাসেট রেকর্ডারের ব্যবহার ছিল না। একমাত্র রেকর্ড ছিল রেডিওতে। যারা শুনেছিল তাদের স্মৃতি ছাড়া এর অন্য কোন চিহ্ন নেই।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি ও দ্বিতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান 'বাংলাদেশের তারিখ' নামক বইয়ের প্রথম সংস্করণে লিখেছিলেন যে, ৭ই মার্চ শেখ মুজিব "জিয়ে পাকিস্তান" বলেছিলেন। কিন্তু বইটির দ্বিতীয় সংস্করণে এই সত্য ভাষণ বাদ দেয়া হয়েছে।
অহিংস অসহযোগ আন্দোলন করলেও স্বাধীনতা যুদ্ধে যাওয়ার কোন পরিকল্পনা তার ছিল না। বিস্ময়ের ব্যাপার যে, তৎকালীন জরুরী পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ডেকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তই নেওয়া হয় নি। দেশের প্রশাসন তারা পরিচালনা করছিলেন। কিন্তু নিজেদের সংগঠনে এ নিয়ে কোন আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন তারা বোধ করেন নি। সব কিছুই শেখ মুজিবের 'হুকুম' অনুযায়ী। তিনি তার ৭ই মার্চের বক্তৃতাতেও 'হুকুম' দেওয়ার কথা নিজেই বলেছিলেন।”
— বদরুদ্দীন উমর / আমার জীবন (তৃতীয় খন্ড) ॥ [জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ - জুন, ২০০৯ । পৃ: ১৪১-১৪২]
১০.
“... Zaman (Quazi Nooruzzaman) talks about the famous 7 March speech of Sheikh Mujibur Rahman, an event where he was present, and heard the Father of the Nation ending his speech with “Pakistan Zindabad”, and, moments later, on the advice of the student leaders, “Joy Bangla”. Zaman takes no issue with the end salutations, reasoning that Pakistan was still politically undivided, but takes a dim view that the words “Pakistan Zindabad” have been expunged from the rendering of the speech with the observation that, “I believe this tampering with the speech diminishes Sheikh Mujib's political efforts.” And, over a particularly contentious issue that continues to deeply divide the nation against itself, Zaman is convinced, offering a number of arguments in support, that Ziaur Rahman first announced the independence of Bangladesh over the radio. He then reasons, “Let's say it was Ziaur Rahman who was the first announcer of independence. What does it matter? Does this announcement belittle the Awami League or Sheikh Mujibur Rahman? Not in the least.”
— Shahid Alam / A freedom fighter's testament ( Review of “A Sector Commander Remembers Bangladesh Liberation War 1971” by Quazi Nooruzzaman)॥ [ The Daily Star - Saturday, November 27, 2010 ]
১১.
“... সময়টি ছিল জটিল। আমরা সবাই এক ঘোরের মধ্যে ছিলাম। কিন্তু আজ যখন দীর্ঘকাল পরে ঠাণ্ডা মস্তিষ্কে চিন্তা করি, তখন একটি কথার সদুত্তর পাওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে। স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য সেটাই ছিল প্রকৃষ্ট সময়। পশ্চিমারা তাদের মরণযুদ্ধ শুরু করার প্রস্তুতি তখনও সম্পন্ন করে উঠতে পারেনি। এ প্রান্তে সৈন্যসামন্তও অপ্রতুল এবং বাঙালিই বেশি। সেদিন স্বাধীনতার ঘোষণা এলে বাংলাদেশের মানুষকে হয়ত এত বড় মূল্য দিতে হত না।
’৭১-এর ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে বক্তৃতা দিলেন তা যেমনি ছিল ঐতিহাসিক, তেমনই তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বললেন বটে, “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম — এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম...” কিন্তু ঘোষণা দিলেন না আনুষ্ঠানিকভাবে । শেষ করলেন, “জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান” বলে॥”
— শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন / বলেছি বলছি বলব ॥ [অনন্যা - মে, ২০১৫ । পৃ: ৩৭]
১২.
“... ঐ দিন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষনা দেবেন, এমন আশা অনেকেই করেছিলেন। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপস্থিত রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রকে সাথে নিয়ে অগ্রসর হলে কয়েক 'শ বা কয়েক হাজার প্রাণের বিনিময়ে হলেও ঢাকা সেনানিবাস দখল করা অসম্ভব ছিল না। কিন্তু সেদিন নেতা আমাদের, তথা সব বাঙালিদেরই হতাশ করেছেন।
... পিলখানাতে ৪টি উইং মিলে প্রায় ২৫০০ ই.পি.আর বাঙালি সৈনিকদের অবস্থান ছিল। তাছাড়াও ছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ৪০০ সশস্ত্র পুলিশ। বেশ কয়েক শত আনসার ও মুজাহিদের অবস্থানও ছিল ঢাকায় যাদের সশস্ত্র করা হয়েছিল রাইফেল দ্বারা। সাক্ষাৎকারদানকারী অনেকেই মনে করেন যে, সঠিক নির্দেশ ও নেতৃত্ব পেলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কার্যকরী প্রতিরোধ গড়ে তোলা অসম্ভব ছিল না। কিন্তু সময়োপযোগী সঠিক নেতৃত্ব ও নির্দেশের অভাবে পরবর্তীকালে বাঙালি জাতিকে অনেক মাশুল দিতে হয়েছে॥”
— লে: কর্নেল (অবsmile আবু ওসমান চৌধুরী (৮ নং সেক্টর কমান্ডার) / এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম : ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ ॥ [চারুলিপি প্রকাশন - মার্চ, ১৯৯৯ । পৃ: ৮১ / ১০৪]
১৩.
“... শেখ মুজীব কি সত্যিই বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতা চেয়েছিলেন? ’৭১ সালের ৭ই মার্চ তারিখে রেসকোর্সের ময়দানে লক্ষ লক্ষ জনতার সামনে তিনি বলেছিলেন ‘আর যদি একটঅ গুলি চলে, তবে তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করো।’ একথাও তিনি বলেছিলেন যে, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। তথাপি তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি।
৭ই মার্চ ভোর ৭টায় একদল বাঙ্গালী সামরিক অফিসার একখানি পিক আপ বোঝাই হয়ে আমার বাড়ীতে এলেন। এদের মধ্যে একজন গোলন্দাজ বাহিনীর মেজর, একজন বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লীডার এবং আরো পাঁচ ছয়জন লেফটেন্যান্ট ও সিপাহী পর্যায়ের। তাদের ভীষণ উত্তেজিত দেখলাম। তাদের ধারণা অবিলম্বে যদি আমরা স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু না করি, তা হলে আগামী পনের দিনের মধ্যে সব বাঙ্গালী অফিসারকে পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠানো হবে, আর সব বাঙ্গালী সিপাহীকে নিরস্ত্র করে বন্দী অবস্থায় রাখা হবে। আর দলমত নির্বিশেষে বাঙ্গালীদের নির্মূল করে ফেলা হবে। এজন্য রোজ রাত্রে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে দুই থেকে তিনটি ফ্লাইটে সৈন্য আনা হচ্ছে।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা কিভাবে পাঞ্জাবী সৈন্যদের মোকাবেলা করবেন তা কি ভেবে দেখেছেন? জবাবে ওরা বললেন, গোলন্দাজ বাহিনী আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। বিমান ঘাঁটি আমরা আগে থেকে দখল করে রাখবো। বোমারু বিমান কিছু নষ্ট করে দেব, কিছু নিয়ে বাইরে যাবো। অস্ত্রাগার উড়িয়ে দেব। আপনারা শুধু শেখ সাহেবকে দিয়ে আজকের জনসভায় স্বাধীনতা ঘোষণা করার ব্যবস্থা করুন।
দেখলাম সিনিয়ার অফিসার হলেও ওরা খুব উত্তেজিত। তবুও ওদের আশ্বাস দিলাম যে, শেখ মুজিবের কাছে কথাটা বলবো। তবে জনসভায় যদি উনি কোন ঘোষণা না করেন, তা হলে বুঝবেন, আপনাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। আমার আশ্বাস পেয়ে ওরা চলে গেলেন।
কালবিলম্ব না করে আমি ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডে শেখ মুজিবের বাড়ী গেলাম। সেখানে দেখলাম, মুজিবকে ঘিরে বসে আছেন ড: কামাল হোসেন, মনসুর আলী, নজরুল ইসলাম, তাজুদ্দীন, কামরুজ্জামান এবং আরো কয়েকজন তৃতীয় শ্রেণীর নেতা। আমি মুজিবকে পাশের একটি কামরায় নিয়ে বললাম, আমাদের বাঙ্গালী সেনানায়কদের পরিকল্পনা ও অনুরোধের কথা। শেখ সাহেব বললেন, আমরা আগে ভাগে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারি নে, কারণ তা হলে সব বিদেশী রাষ্ট্র আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী বলবে এবং বিপদে কোনরকম সাহায্য ও সহানুভূতি পাওয়া যাবে না।
বুঝলাম শেখ মুজিব পাকিস্তান ভাঙ্গতে চান না, পূর্ব-পাকিস্তানের নায্য দাবী ও সুবিধাদি পুরোপুরি আদায় করতে চান। এজন্যই তিনি মহাত্মা গান্ধীর অনুসরণে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেছিলেন॥”
— মোহাম্মদ মোদাব্বের / সাংবাদিকের রোজনামচা ॥ [বর্ণ মিছিল - সেপ্টেম্বর, ১৯৭৭ । পৃ: ৩০৬]
১৪.
“... ভাষণ শুনে (৭ই মার্চ) ফেরার সময় ওকে (শহীদুল্লাহ কায়সার) বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছিল। নিজে নিজেই বলে যাচ্ছে - 'আজই সমস্ত জাতিকে সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে যুদ্ধের ঘোষণা দেয়া উচিত ছিল।' ... সারাদেশে গণহত্যা শুরু হয়েছে (২৫শে মার্চ)। এটা ঠেকাতে পারল না আমাদের নেতারা? চারিদিকে গুলির শব্দ শুনতে পাওনি?”
- মুক্তিযুদ্ধ : আগে ও পরে / পান্না কায়সার [আগামী প্রকাশনী - ফেব্রুয়ারী, ১৯৯১ । পৃ: ১১৯]
১৫.
“... সমাজ বিশ্লেষণ ও করণীয় ণির্ধারণের ক্ষেত্রে মওলানা ভাসানীর নিজস্ব একটি বৈশিষ্ট্য ছিলো, যার দ্বারা এদেশের লক্ষ কোটি মেহনতি মানুষকে সহজে উদ্বুদ্ধ করা যেতো। যুক্তি আর আবেগকে তিনি একই সমান্তরালে প্রবাহিত করেছেন। কখনও তার বক্তৃতায় আবেগ বেশী থাকলেও সে আবেগ ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দী বা শেখ মুজিবের মতো যুক্তিবর্জিত ছিলো না।
যেমন উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে শেখ মুজিবের ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের বক্তৃতায় কোন যুক্তি ছিলো না, ছিলো আবেগ। সাম্রাজ্যবাদের কাছে আত্মসমর্পণের পথ খোলা রেখেই তিনি সেই বক্তৃতায় স্বাধীকার প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের সুনির্দিষ্ট কর্মসূচী দিতে পারেননি। কিন্তু মওলানা ভাসানী একই পরিস্থিতিতে বলেছিলেন, আমার পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন নয়। পরাধীন॥”
— শাহরিয়ার কবির / মওলানা ভাসানী : রাজনৈতিক জীবন ও সংগ্রাম ॥ [নওরোজ কিতাবিস্তান - মে, ১৯৭৮ । পৃ: Xiii (ভূমিকা)]
১৬.
“... Mujib was thus virtually left alone against the extremists within his own party who were also bringing pressure on him to declare full independence for East Pakistan. Expectations were raised so high that it was hoped by almost every one that Sheikh Mujib would declare independence for East Pakistan in the meeting next day (Mar 7) like the Unilateral Declaration of Independence by Ian Smith, prime minister of Rhodesia who declared independence of his country against the wills and wishes of the British Government.
Abdur Rauf, a student leader during the 1969 anti-Ayub movement told me several years later in the house of Barrister Amirul Islam, an Awami League leader, that Sheikh Mujib immediately before going out to deliver his historic speech to the mammoth 7th of March meeting extracted a promise from the student leaders who were more militant than their elders that they would not break Pakistan. Just before the army crack-down Rauf left for Rangpur, his home town for safety.”
— Faruq Aziz Khan (Secretary to Prime Minister Tajuddin Ahmed, Chairman - SPARSO) / Spring 1971 : A Centre stage Account of Bangladesh War of Liberation. [UPL - 1993 / P. 38]
১৭.
“... Sheikh Mujib had, in the meantime, announced that he would address a public rally at the Ramna Race Course on 7 March 1971 at 4 p.m. He had promised to chart out the future course of action at that rally. In a sense, the occasion could provide him with the ideal opportunity to take the plunge and declare East Pakistan's independence as an independent state. There was also a power vacuum in the Martial Law set up in East Pakistan. Although Yaqub Khan was technically in command, as a result of his differences with the President, he had already submitted his resignation and was waiting to be relieved. A lot of responsibility rested on my shoulders as the next-in-command and I was very conscious of it. I believe Sheikh Mujib was aware of it toothat a lot now depended on my reaction to future developments. I had no personal relationship with him as we had barely met, and never exchanged a word.
On the afternoon of 6 March 1971, the Awami League Working Committee was reported to be in session at Sheikh Mujib's residence, considering the text of his speech for 7 March. I don't know what transpired but there were many extremists in the Awami League. In fact, it had been reported to us that several die-hard Communists had smuggled themselves into the Awami League, without actually changing their creed or convictions. They planned to erode Mujib's party from within. Moreover, the student wing was, by nature, volatile and explosive; they, too, were a strong pressure group within the party.
Early in the evening of 6 March, one of my senior staff officers, accompanied by a Bengali gentleman, came to my residence and asked to see me. The Bengali gentleman was introduced to me but, unfortunately, I do not remember his name and I don't seem to have recorded it either. He said that he was a close confidant of Sheikh Mujib who had sent him to plead with me. Sheikh Mujib's message, briefly, was that he was under great pressure from the extremists and student leaders within the party to declare unilateral declaration of independence during his public address on the afternoon of 7 March. Sheikh Mujib claimed that he was a patriot and did not want any responsibility for the break-up of Pakistan. He, therefore, wanted me to take him into protective custody and confine him to the cantonment. For this, he wanted me to send a military escort to fetch him from his Dhanmandi residence.
For the information of the reader, Sheikh Mujib's residence was very heavily guarded by armed Awami League volunteers. In addition to the continued presence of the Working Committee, there were scores of expectant Awami League workers and members of the press in and around the area of the house. Only a lunatic would take Sheikh Mujib's proposal at face value and plunge into action when disastrous results were sure to follow. As I saw it, Sheikh Mujib was probing my reaction in case he declared the unilateral declaration of independence during his public rally on 7 March. My response would be very relevant and so it was important for him to get a prior inkling, if possible.
After hearing Sheikh Mujib's message, I decided to use the full weight of my position to prevent the catastrophe that could take place on 7 March. I told the confidant that I was fully convinced that Mujib was a patriot, and that his role as a student leader in Calcutta during the movement and agitation for Pakistan was well known to me. Therefore, in my opinion, how could he demolish what he had helped to create? In a light-hearted vein, I added that Sheikh Mujib was welcome to be my honoured guest if he felt threatened; for that, since he knew the cantonment area well, all he had to do was drive straight to my residence-in which case he would not need an escort as he would be coming of his own free will.
Sheikh Mujib did not give up. He decided to try one more time. At 2 a.m. on the night between 6 and 7 March, I was woken up and informed that two guests, accompanied by some of my staff officers, were waiting in the drawing room to see me on an urgent matter. This time, there were two different East Pakistani gentlemen. Besides them, my senior staff officers, Colonel (later Brigadier) Saadullah Khan, Lieutenant Colonel (later Brigadier) Mohammad Taj, and Major Munawwar Khan of the Divisional Intelligence were also present. The two visitors were formally introduced as emissaries from Sheikh Mujibur Rahman. I am afraid I do not recall the names of either of the two, but I do recollect that I had previously heard of one of them as a public figure. One of them did all the talking, and was apparently the spokesman. He repeated the earlier story, but with greater emphasis this time, once again stressing the threat to Sheikh Mujib's person and the need to take him into protective custody. As before, I did not buy the story. However, I added a strong warning this time. I told the emissaries to inform Sheikh Mujib that, during his speech, I would have the army-armed with guns and tanks-standing by in the cantonment, ready to move immediately. I would also have arrangements in place to listen to Sheikh Mujib's speech directly from the Race Course. In case Sheikh Mujib attacked the integrity of the country and proclaimed the Universal Declaration of Independence, I would discharge my duty without hesitation and with all the power at my command. I would have the army march in immediately with orders to wreck the meeting and, if necessary, raze Dhaka to the ground. I impressed upon the emissaries that they should inform Sheikh Mujib that the consequences of indiscretion would be disastrous and the onus would be entirely on him. I advised Sheikh Mujib to keep the door open for further negotiations and avoid unnecessary bloodshed.
According to Professor Rehman Sobhan, saner elements carried the day and it was decided not to take the extreme step but to leave the door open for further negotiation. While the army was standing by in the cantonment, I listened directly to Sheikh Mujib's speech. His tone was conciliatory and he merely repeated the four earlier demands of his 4 March speech. Within a few minutes, the speech was over. Before the recalcitrant elements could raise a hue and cry Sheikh Mujib had hurriedly left the stage. In fact, the whole event was a bit of an anti-climax, but I thanked Allah and heaved a sigh of relief.”
— Major General (Retd.) Khadim Hussain Raja / A Stranger in My Own Country : East Pakistan, 1969-1971 ॥ [Oxford University Press (Karachi)- 2012 । p. 59-62]


A PHP Error was encountered

Severity: Notice
Message: Undefined index: userfile
Filename: controllers/general.php
Line Number: 112


A PHP Error was encountered

Severity: Notice
Message: Undefined index: userfile
Filename: controllers/general.php
Line Number: 113

{"message":"Please select image..!"}[/img]

পঠিত : ১৬৫৯ বার

মন্তব্য: ০