Alapon

ভালবাসা শুধু শুভ্র চামড়া আর নীল চোখের জন্য

পৃথিবীর পরতে পরতে বারুদ, বোমা আর গুলির শব্দ।আফ্রিকার দেশগুলোতে ক্ষুধার্ত মানুষের মিছিল দীর্ঘ হতে দীর্ঘ হচ্ছে। ফিলিস্তিনী শিশুরা বোমা আর বারুদের মাঝে তার জীবনের বোঝাপড়ার দিনগুলো পাড় করে। কাশ্মীর এক রক্তাক্ত উপত্যকা। আফগানিস্তান সিরিয়া, ইরাক ধ্বংসস্তুপ। পশ্চিমা বিশ্ব রক্ত শোষণ করেছে প্রতিটি দেশে। সিরিয়ার উদ্বাস্তুরা ঠাই পায়নি পশ্চিমি অনেক দেশে। আফগানদের স্থান ছিলো কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে। আইন মানবাধিকার আর গণতন্ত্রের ধ্বজাধ্বারীরা উদ্দাস্তুদের ন্যূনতম মরযাদা দিতে হৃদয়ের সংকোচনকে উম্মুক্ত করেনি। এর বীপরীত দৃশ্য দেখা গেল ইউক্রেণে রাশিয়ার আক্রমণে। বিগত শতাব্দীর শেষভাগে এবং এই শতাব্দীর শুরুতে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলোর তালিকায় সবই ছিল মুসলিম বর্তমান সময়ে যখন রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেণ আক্রান্ত হলো পশ্চিমি দেশের তথাকথিত মানবতাবাদীতর বর্ণবাদী চেহারা নতুন করে উম্মোচিত হলো।
ইউক্রেনের সীমান্তসংলগ্ন দেশ পোল্যান্ড লাখ লাখ ইউক্রেনীয় উদ্বাস্তুকে আতিথ্য ও হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়ে বরণ করেছে করেছে। অথচ এই কয়েকদিন আগে আফগান শরণার্থীদের ফিরিয়ে দিয়েছিলো। তখন পোল্যান্ডের সরকারি নিরাপত্তাকর্মী ও সেখানকার মানুষ বর্ণবাদী মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে। এমনকি ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসা মানুষগুলোর মধ্যে যাদের গায়ের রং ইউরোপীয়দের মতো সাদা নয়, যাদের চোখ নীল নয় তাদের তারা ঢুকতে দিতে চাইছে না।
দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য হতে জানা যায়, কয়েক দিন আগে ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ডে ঢোকার সময় তিনজন ভারতীয় নাগরিককে পোল্যান্ডের পাঁচ ব্যক্তি বেদম পিটিয়েছে। তিনজনের মধ্যে একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আফ্রিকা থেকে ইউক্রেনে পড়তে যাওয়া বহু ছাত্রছাত্রী উদ্বাস্তু দলে আছে। পোল্যান্ড সীমান্তে সাদাদের ঢুকতে দেওয়া হলেও তাদের আটকে দেওয়া হয়েছে। পোল্যান্ডের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, তারা তাদের সীমান্তে ‘হোয়াইটস অনলি’ লেখা একটা বিলবোর্ড টাঙিয়ে দিলেই পারত।
এটি শুধু যে পোল্যান্ডের ক্ষেত্রে হচ্ছে, তা নয়। আরব অ্যান্ড মিডল ইস্ট জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন কলম্বিয়া ব্রডকাস্টিং সিস্টেমে কর্মরত মার্কিন সাংবাদিক চার্লি ডি আগাথাসহ অনেক পশ্চিমা সাংবাদিককে প্রকাশ্যে বর্ণবাদী ভাষা ব্যবহারের নিন্দা করেছে। ডি আগাথা সম্প্রতি ইউক্রেন সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘সবার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, এটি কয়েক দশক ধরে সংঘাতের মুখে থাকা ইরাক অথবা আফগানিস্তানের মতো কোনো জায়গা নয়।’ কিয়েভ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘এই শহর অপেক্ষাকৃত সভ্য, অপেক্ষাকৃত ইউরোপিয়ান।’ তিনি কোনো রকম রাখঢাক না করে ইরাক ও আফগানিস্তানের মানুষকে ইউরোপের তুলনায় অসভ্য বলেছেন।
পশ্চিমি সভ্যতা কিংবা খৃস্টান দুনিয়ার ভালবাসা শুধু শুভ্র চামড়া আর নীল চোখের জন্য- এটা তার আবার নিশ্চিৎ করলো

পঠিত : ৩৫৭ বার

মন্তব্য: ০