Alapon

মানব জনম (বই রিভিউ)

মানবজনম
লেখক সাদাত হোসাইন
প্রকাশনী: ভাষাচিত্র
রেটিং: ৪.৬/৫


অনেকদিন আগে থেকে চিন্তাভাবনা করেছিলাম সাদাত হোসেন এর বই পড়বো। বাট ইয়া বড় মোটা বই দেখে পড়ার ইচ্ছা থাকলেও পড়ার সাহস হয়ে ওঠেনি। শেষমেষ কাল বিলম্ব না করে বইটি কিনেই পড়ে ফেললাম এক নি:শ্বাসে!


বুদ্ধিমানেরা সাহসী হয় না। সাহসী হয় বোকারা। সাহসী তাদেরকেই বলে যারা যে কোন পরস্থিতিতে ঝাপিয়ে পড়ে। কিন্তু বুদ্ধিমানেরা ঝাপিয়ে পড়ে না। তারা আগে বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করে, ভেবে দেখে তার জন্য সহজ হবে কিনা। যদি দেখে সহজ হবে না তাহলে সে কাজটা কৌশলে অন্য জনকে দিয়ে করিয়ে নেয়।


আষাঢ় মাস। চারিদিকে বন্যার পানি থৈ থৈ করছে। প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে। গভীর রাত্রি তখন। হোসেনাবাদ গ্রামরে সবাই কম্বলমুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়েছে শুধু দুইজন বাদে। আব্দুল ফকির ও তার সহকারী জুলফিকার এই বৃষ্টিভেজা রাত্রিতে হোসনাবাদ থেকে ফেতেহপুর এর উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আব্দুল ফকির এর হাটতে কষ্ট হচ্ছে। তার পায়ের সামনের আঙ্গুল গুলো না থাকায় এই কাদা মাটিতে নিজের ভারসাম্য রাখতে হিমসিম খাচ্ছে। কিন্তু তবুও তাকে যেতে হবে। তাকে এত রাত্রেই ফতেহপুর যাওয়ার জন্য খবর পাঠিয়েছেন তৈয়ব খা ।


তৈয়ব আলী খা। ফতেহপুর এর প্রতাবশালী লোক যাকে সবাই একনামে চেনে, সবাই খুব ভয় পায়। তার তিনটি সন্তান। দবির খা , কবির খা এবং একটা মেয়ে কোহিনুর। তৈয়ব খার মত তার কোন ছেলেই বুদ্ধিমান না। তাই তিনি মাঝে মাঝে হতাশ হন।


তৈয়ব খার বড় ছেলে দবির খা ভবঘুরে। তাকে এক মাস গ্রামে দেখা যায়তো এক বছর দেখা যায় না। খবির খা ছোট ছেলে। তিনি ফতেহপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। খবির খার দুইটি সন্তান। দুটি সন্তানের একটি কাতারে থাকে। একটি হল মনির। মনির ভ্যবলা টাইপের। খবির খা বয়স ৬০ বছর। এই বয়সেও তৈয়ব খাকে ভীষন রকমের ভয় করে। শুধু খবির খা নয় পুরো বাড়ির সবাই তৈয়ব আীল খাকে ভয় করে। তৈয়ব খা তার বংশের মান-মর্যাদার ব্যাপারে খুবই সতর্কবান। তৈয়ব আলী খা বুদ্ধিমান মানুষ। কোন কাজ করার আগে ভেবে চিন্তে করে। বুদ্ধিমান বলেই খা বংশটাকে নিয়ে গেছে এতদুর!


তৈয়ব খার একমাত্র মেয়ে কোহিনুর। সে গ্রামের আর ৫,৬ টা মেয়ের মতন না। কোহিনুর তার বাবার সাতেই শুধু কথা বলে। তৈয়ব আলী তার এই মেয়েকে খুব ভালোবাসে। এত ভালোবাসার পড়েও কোন এক কারণে ২৫ ধরে কোহিনুর গ্রামে আসে না। এতগুলো বছর বাড়ির কারো সাথে যোগাযোগ রাখে নাই। কিন্তু কি কারণ?


এতবছর বছর পর কোহিনুরের ছেলে নয়ন গ্রামে এসছে এক বিশেষ কারনে। কি সেই কারণ? ধূসর বর্ণ ধারন করা এই সম্পর্ককে আবার জোড়া লাগাতে এসেছে? না অন্য এক কারনে এসেছে?


নয়ন গ্রাম এসেই সাপের কামড় খেয়েছে। এই কথা শুনে তৈয়ব খা খুব চিন্তিত। সে বাধ্য হয়েই আব্দল ফকির এর মত শয়তানকে তাকে ডাকতে হয়েছে!


আব্দুল ফকির এই অঞ্চলের সাপে কাটা মানুষের বিষ নামায়। সে গ্রামের এক সরল মানুষ। তবে এই সহজ সরল মানুষের মাঝে রয়েছে এক ভংকর রুপ। তাকে দেখে গ্রামের অনেক লোক ভয় করে। সবাই মনে করে তার রয়েছে কিছু অপ্রাকৃতিক ক্ষমতা। সত্যিই কি তার অপ্রাকৃতিক ক্ষমতা আছে? না মানুষকে ধোকা দেওয়ার জন্য সে কৌশল অবলম্বন করে?


ফকির আলির একমাত্র মেয়ে পারুল। পারুল রাজিব নামের এক ছেলেকে ভালোবাসে। রাজীব এর সাথে পারুরের বিয়ের কথা কিন্তু রাজীব নামের ছেলে হঠাৎ করেই চলে যায়। রাজীব চলে গেলেও তার এক স্মৃতি পারুল বহন করে। সেই স্মৃতির নাম এক ফুটফুটে মেয়ে অপেক্ষা।


অফেক্ষার সকল দায়িত্ব তার মামা নয়নের। কিন্তু নয়ন কিভাবে পারুলের মেয়ের মামা হয়? তাহলে ঘটনা কি? এটা কি মানবজনমের একটা খেলা? কিন্তু কি সেই খেলাটা? আর কিভাবে এই খেলাটা হল?


মোরাল অব দ্যা বকবক: অসম্ভব সুন্দর একখানা উপন্যাস। এত মোটা হলেও এক নি:শ্বাসে বইটা শেষ করার খোড়াক জাগাবে। এই উপন্যাসের ভিতরে রয়েছে বাস্তব জীবনের কয়েকটি সুন্দর সুন্ধর বাক্য। যার একটি উপরে দেয়া হয়েছে।

পঠিত : ২২৫৬ বার

মন্তব্য: ০