Alapon

রাষ্ট্রীয় ও সাংগঠনিক পদবীর জন্য পাওয়া উপঢৌকন কি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত হতে পারে?



রাষ্ট্রীয় ও সাংগঠনিক পদবীর জন্য পাওয়া উপঢৌকন কি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত হতে পারে?
খলীফা মনসুর ইমাম আবু হানিফাকে একবার কিছু উপঢৌকন পাঠালেন। ইমাম আবু হানিফা উপহার গ্রহণ করার আগে জানতে চাইলেন, এটি খলীফা কেন কোথা থেকে দিচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে দেখলেন মনসুরকে এটি দূর রাজ্যের কোনো এক অধিপতি উপঢৌকন হিসেবে পাঠিয়েছেন। এই তথ্য জানার পর ইমাম হানিফা মনসুরের দেয়া উপহারটি ফিরিয়ে দিলেন।

মনসুর ইমামের নিকট জবাবদিহিতা চাইলেন, ‘আপনি কেন আমার দেয়া উপহার গ্রহণ করলেন না?’ ইমাম বললেন, ‘আপনি কবে আমাকে নিজ থেকে উপহার দিলেন আর আমি সেটা গ্রহণ করলাম না?’

আপনি নিজে থেকে আমাকে উপহার দেননি। দিয়েছেন সেই উপহার যা আপনাকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দেয়া হয়েছে। আপনি রাষ্ট্রের প্রধান না হলে কেউ আপনাকে চিনতো না। কেউ আপনাকে উপহার দেয় খলীফা হিসেবে সুতরাং এটি হলো রাষ্ট্রীয় কোষাগারের সম্পদ। যার মালিক জনগণ, আপনি নয়। সুতরাং এটা থেকে আপনি আমাকে উপহার দিয়ে ব্যক্তিগত ফায়দা নিতে পারবেন না।

ঘটনাটির মূল থিম আমি নিয়েছি নবুয়তী সিয়াসাতের পথ প্রদর্শক উস্তাদ ইমাম আবুল আ'লা মওদূদী রহ. এর কিতাব ‘খেলাফত ও রাজতন্ত্র’ বই থেকে। ইসলামী রাষ্ট্রের রূপরেখা দিয়ে তিনি আমাদেরকে বিংশ শতাব্দীতে প্রথম খিলাফাতুন আলা মিনহাজিন নবুয়্যতের’ স্বপ্ন দেখিয়েছেন।

ইমাম আবু হানিফার মূল কথা ছিল এটাই যে, যে পদের জন্য আপনি একজন সম্মানিত ব্যক্তিত্ব - সেই পদের জন্য আসা সম্পত্তি মূলত রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিই। উমাইয়া ও আব্বাসীয় খলীফারা এটা স্বীকার করতো না। স্বয়ং বিশ্বনবীর সাহাবী হযরত মুয়াবিয়া রা. ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিকে নিজের কর্ম, পদ ও স্বীয়নফসের জন্য ব্যবহার করেছেন।

এই ধারাবাহিকতা ও এই সিলসিলাতেই আমরা দেখতে পাই খলীফা হারুনুর রশীদও একই কাজ করে থাকতেন। যার কারণে ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজে রাষ্ট্রের সম্পত্তি কিভাবে, কোথায় ও কে খরচ করবেন এবং রাষ্ট্রের সম্পত্তিতে হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই সর্বোপরি এর মালিক আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এরপর জনগণ এই বিষয়টা পরিষ্কার করার জন্য কিতাব লিখেন ‘‘আল কিতাবুল খারাজ।’’

ইমাম আল মওদূদী এই বিষয়টার অবতারণা করেছেন তার কিতাবে। আমি যেকারণে এই কথাগুলো বললাম এবার সেই বিষয়ে আসি। আমি দেখতে পাচ্ছি সাংগঠনিক পদবীর জন্য যিনি সর্ব সম্মানে ভূষিত হন। যিনি সব ধরনের মানবিক সুযোগ সুবিধা পান, যিনি লক্ষ লক্ষ ফেইসবুক লাইক পান তিনি শেষ পর্যন্ত সেই মর্যাদা, সেই সম্মান ও সেই লাইক'কে নিজের ব্যক্তিগত কাজ, স্বীয় নফস ও স্বীয় সম্মানের জন্য ব্যবহার করে থাকেন।

রাষ্ট্রীয় পদবীর জন্য খলীফা পুরস্কার পেয়ে থাকলে তার মালিক যেমন জনগণ, ঠিক তেমনি সাংগঠনিক পদবী পাওয়ার জন্য মানুষ আপনাকে যে কারণে সম্মান করে সেই সম্মান ও পদবীর মালিকও তেমনি সংগঠন। একে আপনি আপনার ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে কাজ লাগাতে পারেন না। স্বীয় ফায়দা হাসিল করতে পারেন না।

আপনি মিঃ অমুক ভাই, তমুক ভাই আপনাকে কেউ চিনতোই না যদি না আপনি এই পদবীতে না বসতেন। আপনি বসেছেন বলেই লোকে লক্ষ লক্ষ লাইক দেয়। এখন লোকেদের কেন আপনি শুধুমাত্র সেই লক্ষ্যের দিকেই নিয়ে যান, যে লক্ষ্যের জন্য আপনি তাদেরকে একত্রিত করেছিলেন।

আমার প্রস্তাবনা হলো- (মালে গণিমত ও রাষ্ট্রীয় ভাতা বেতন ছাড়া) আপনি যদি পদবীর কারণে সুযোগ -সুবিধা, উপঢৌকন, বিদেশের ভিসা পেয়ে থাকেন তাহলে সেই সুযোগ-সুবিধা, উপঢৌকন ও বৈদেশিক ভিসা সবটাই কাজে লাগানো হবে রাষ্ট্রের বা সংগঠনের। নিরেট সংগঠনের কাজে। সুতরাং সাংগঠনিক ফেইস ভ্যালু তৈরি করে নিরেট সাংগঠনিক কাজ করুন নিজের ব্যবসা বাঁচানো বাদ দিন। আল্লাহ আমাকে সহ সবাইকে রক্ষা করুন। আমীন।

পঠিত : ২২২ বার

মন্তব্য: ০