Alapon

ফেমিনিস্টদের ভ্রান্তি বোঝে নিন।



একটি সমাজ সমৃদ্ধি লাভ করে সার্বিক বিষয়ের সমন্বয়ে। এখানে প্রতিটি ধাপে একেকটা সিস্টেমেটিক ব্যাপার রয়েছে। রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন কর্মক্ষেত্র। মানুষও এর প্রতিটি ধাপেধাপে বিভক্ত হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। প্রত্যেকের লক্ষ্যবস্তু এক নয়, জীবন বলতে একজন এক জিনিস বোঝে তো অন্যজন বোঝে অন্যকিছু। এভাবেই মানুষ ব্যতিক্রমী লক্ষ্যবস্তু নিয়ে প্রগতিশীলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই প্রগতিশীলতার মূল স্টেপ হচ্ছে পরিবার অর্থাৎ 'ঘর''। কারণ এই পরিবার, বাসা কিংবা ঘর থেকেই জন্ম নেয় ভবিষ্যৎ সমাজ সংস্কারকরা। এরা বেড়ে উঠে কোনো অফিসিয়াল ক্যাম্প থেকে নয়, তাদের শিক্ষা-দীক্ষা, নৈতিক মূল্যবোধের যোগান দেয় এই পরিবারই।
.
একজন 'মা' তাকে মমতার চাদরে আবৃত করে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন, যাতে এই মানুষটাই সমাজে মানুষের মতো বাঁচে, একটি আদর্শ মানুষের সমাজ গঠনে ভূমিকা পালন করে। মানুষ হয়ে মানুষকে নিয়ে ভাবতে শেখে। মানুষ কখনো আকাশ থেকে জমিনে পড়ে প্রগতিশীলতার দৌড়ে অংশ নেয়না। প্রত্যেকটি মানুষের আগমন এবং বেড়ে ওঠার পিছনে রয়েছে একজন মায়ের গল্প। পরম মমতায় সারাক্ষণ আঠার মতো লেগে থেকে প্রতিটি মা তাঁর সন্তানকে গড়ে তোলেন, মানুষের মতো মানুষ করেন।
.
যখন সে বলতে জানেনা, মা গভীর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তার চোখের ভাষা, অঙ্গভঙ্গির ভাষা বোঝার চেষ্টা করেন। যখন সে হুহু করে কেঁদে ওঠে, একটু বিলম্ব না করেই বুকে জড়িয়ে নেন মা। আদুরে সন্তানকে পরম মমতায় খাবার তুলে দেন মুখে। পরম সুখে পাড়ি জমায়ে দেন ঘুম। সন্তান যখন হাঁটতে পারেনা, হাত দিয়ে কিছু ধরতে পারে না, এই মা-ই পরম যত্নে ও আনন্দে সন্তানের হাত ও পায়ের ভূমিকা পালন করে যান। সন্তানের প্রতিটি চাহিদাই নিজের মতো করে বোঝে নিতে শিখেন তিনি।

এভাবেই মায়েরা একটা ভাষাহীন সন্তানকে ভাষা দিয়ে, বোধহীনকে বোধ শিক্ষা দিয়ে, দীর্ঘ শ্রমের মাধ্যমে পশুর থেকে আলাদা করে নেন। এ সমাজের প্রত্যেকটি নারীই একেকটি 'মা'। এঁরা সমাজ গড়ার কারিগর নয় শুধু, এঁরা সমাজ গড়ার কারিগরদের কারিগর। এই কারিগরীর মূল স্থানই হচ্ছে ঘর। হ্যাঁ একটি ঘর! আর এই ঘরেই আল্লাহ আজ্জাওয়াজাল নারীদের ফুল টাইম ডিউটি দিয়েছেন। কারণ এটা এমন এক প্রতিষ্ঠান, যে প্রতিষ্ঠানে দক্ষ employe না থাকলে পুরো প্রজেক্টটাই লস! কোনো অযুহাত নেই, নেই কোনো উন্নত চিন্তার প্রয়োগ। এখানে নারীই লাগবে। হ্যাঁ, কেবলই নারী!
.
এ জন্য আল্লাহ পাক মানুষদের কর্মক্ষেত্র দেখিয়ে দিয়েছেন। ইশারা পাই রাসুল সাঃ এর হাদিস থেকে। একজন পুরুষের বাহিরে কাজ করা যতটা জরুরি একজন মেয়ের ঘরে কাজ করা তারচেয়ে বেশি জরুরি। এক্ষেত্রে কেউ যদি নারীর এই কাজ ও মর্জাদাকে খাটো করে, তবে সেটা তার অজ্ঞতা হতে পারে। তাই অজ্ঞদের চোখে মর্যদাবান হতে গিয়ে কিন্তু রবের বাণীর বিকৃতি করা মুমীন নর-নারীর কাজ হতে পারে না। মানুষের মধ্যে কেউ কাজ করছে কোম্পানিতে, কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, কেউ কলকারখানায়, কেউবা সরকারি বিভিন্ন সেক্টরে। সমাজ সংস্কারের জন্য এসবের কোনোটির ভূমিকাই কম নয়।
.
আল্লাহ আজ্জাওয়াজালের অনুগ্রহ যে তিনি প্রত্যেকটি মানুষকেই নিজ কর্মের প্রতি জোঁক ও সন্তুষ্ট রেখেছেন। আচ্ছা, কৃষকের কথাই বলি। সারাদিন রোদে পুড়ে কাদায় লেপ্টে তাঁরা চাষাবাদ করে কোটি কোটি মানুষের খাবারের চাহিদা মেটাচ্ছে। কিন্তু এখন যদি তাঁরা সবাই মিলে হট্টগোল করে বসে যে, অন্যরা এসি রুমে বসে আরাম করে চাকরি করে মাস শেষে বেতনও পায় ভালো। আমরা কেন রোদে পুড়ে কাজ করবো, তাও এর মূল্যায়ন নেই। তাহলে অবস্থা কী হতে পারে ভাবুন? অথবা সব সেক্টরের মানুষগুলোই যদি সুবিধা বোঝে সেক্টর ভিত্তিক বিরোধ তৈরি করে, কী হবে পরিস্থিতির? মানুষ না খেয়ে মারা যাবে, অর্থনীতিতে ধ্বস নামবে, মোট কথা সমাজ ও দেশ দেওলিয়া হয়ে যাবে।

সামান্য কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিমতের এমন বিপ্লবের মাধ্যমে যদি পরিস্থিতি এতোটা নাজুক হয়ে যেতে পারে, তাহলে আল্লাহ তাআ'লা নারীদের মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে তাঁর কর্মক্ষেত্র স্বাভাবিকভাবে ঘরকে নির্দিষ্ট দেওয়ার পরও স্রেফ ব্যক্তিমতকে প্রাধান্য দিয়ে তথাকথিত নারীবাদীরা মেয়েদেরকে ('ঘর') সন্তান গড়ার ফ্যাক্টরি থেকে বের করে রাস্তায় নামিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কী উপহার দিতে চায়? একটা কাপড় তৈরিতে পূর্ণ দায়িত্বশীলতা এবং মনোযোগ না থাকলে যেমন একটা কোয়ালিটিপূর্ণ কাপড় উৎপাদন করা সম্ভব নয়। ঠিক তেমনই একটা স্বাধীনচেতা ফেমিনিস্ট 'মা'কে দিয়ে প্রজন্ম কোনো প্রোডাক্টিভ জাতি আশা করতে পারেনা। তথাকথিত নারীবাদীদের মুখোশ এটাই যে, ওরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটা পাশবিক প্রজন্ম হিসেবে দেখতে চায়। এক্ষেত্রে হিজাবি ফেমিনিস্টরাও আবার তাদের সুরে সুর মিলিয়ে "গ্যারেজে পালিয়ে ডাবল মাস্টার্স বা ট্রিপল পিএইচডি" তত্ত্ব আবিষ্কার করে সন্তানের প্রতি অমনোযোগিতা এবং সন্তানহীনতাকেও অনেক সময় উৎসাহিত করে। এক্ষেত্রে তাঁরা উম্মুল মুমিনীনদের জীবনীকে বিকৃতি আর অপব্যাখ্যা করে উপস্থাপন করে নিজেদের ভ্রান্তি সহজ-সরল বোনেদের ওপর চাপিয়ে দিতে চায়। এরাও মূলত আপনাকে সেই পাশবিক পথেই নিতে চায়, যেই পথে নিতে চায় কাঠসেক্যুলার ফেমিনিস্টরা।

আপনি যদি হক্কানি আলিম এবং ইলমের সিলসিলা মেইন্টেইন করে ইলম অর্জনের চেষ্টা না করেন, তাহলে কাঠসেক্যুলার ফেমিনিস্টদের ভ্রান্তি বুঝতে পারলেও হিজাবি ফেমিনিস্টদের ভ্রান্তি বুঝতে পারবেন না।

পঠিত : ২৫৩ বার

মন্তব্য: ০