Alapon

১৪ই মার্চ আন্তর্জাতিক নদী রক্ষা দিবস



বাংলাদেশের নদ-নদী নিয়ে কিছু কথাঃ
বাংলাদেশের অধিকাংশ নদী বর্তমানে মৃত প্রায়! এর অন্যতম কারন ভারত নদীগুলোর উজানে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করেছেন। যেমন- গঙ্গা নদীতে ফারাক্কা বাঁধ,তিস্তার গজলডোবা বাঁধ, মনু নদীতে নল কাথা বাঁধ, যশোরের কোদলা নদীর উপর বাঁধ, খোয়াই নদীর উপর চাকমা ঘাট বাঁধ,বাংলা বন্ধে মহানন্দা নদীর উপর বাঁধ, গোমতি নদীর উপর মহারানী বাঁধ এবং মুহুরী নদীর উপর কলসি বাঁধ নির্মাণ করে শুষ্ক মওসুমে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করছে বাংলাদেশকে বছরের পর বছর ধরে।

এ ছাড়া ১৫টি নদীর উপর ভারত অস্থায়ীভাবে কাঁচা বাঁধ নির্মাণ করেছে, বর্ষায় এসব অস্থায়ী বাঁধ কেটে দেয়া হয়। ভারতের এই পানি আগ্রাসী নীতির কবলে পড়ে শুষ্ক মওসুমে দেশের নদ-নদীগুলো পানি শূন্য হয়ে পড়ে। আর বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশকে ভাসানো হয় পানি দিয়ে।
এভাবে গত তিতাল্লিশ বছরে বাংলাদেশ কম পক্ষে ৫০ হাজার একর ভূমি হারিয়েছে।

জানা যায়, সীমান্ত পার থেকে ভারতীয়রা বালি কেটে নিয়ে যাওয়ায় সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই ধরলা, দুধ কুমার, মাতা মুহুরী,আত্রাই, তিস্তা, পদ্ম, গঙ্গা ইছামতিসহ বিভিন্ন সীমান্ত নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

ভারত ১৯৭৫ সালে গঙ্গা নদীর উপর ফারাক্কা ব্যারেজ চালু করে বাংলাদেশের নদী প্রবাহে প্রথম আঘাত হানে এবং এর প্রবাহের একটি বিরাট অংশ প্রত্যাহার করে ভাগিরথি নদীতে চালান করে দেয়, গঙ্গা নদীর ন্যূনতম প্রবাহ ৭০,০০০ কিউসেক যা ফারাক্কা ব্যারেজ চালু হওয়ার আগে পুরোটাই বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হত ও বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের শাখা নদীগুলোকে পানির যোগান দিতো। গঙ্গানদীর পানি বণ্টন নিয়ে ১৯৭৭ সালে প্রথম যে চুক্তি হয় তাতে গ্যারান্টি ক্লজ দিয়ে ৩৪,৫০০ কিউসেক পানি পেয়েছিলো।কিন্তু ভারত বাংলাদেশকে সেটা থেকে বঞ্চিত করেছেন বছরের পর বছর।

বাংলাদেশের প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের ফারাক্কা ও তিস্তা ব্যারেজের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় দেশের ৫৩টি নদ-নদীতে বিরূপ প্রভাব পড়ে। ফারাক্কার কারণে গঙ্গার ¯শ্রোত ধারার পদ্মা , গড়াই, আত্রাই, বড়াল, চিকনাই, হুরাসগরসহ এর শাখা ও প্রশাখা নদ-নদী সমূহের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে।
তিস্তা ব্যারেজের কারণে শুকিয়ে গেছে তিস্তা, ব্রক্ষপুত্র যমুনা, করতোয়া, ফুলঝোরসহ এর শাখা প্রশাখা নদী। তিস্তা নদীটি নীলফামারী জেলার খড়িবাড়ি সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ১৭৮৭ সালে একটি বড় বন্যায় নদীটি গতিপথ পরিবর্তন করে লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম এবং গাইবান্ধা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চিলমারী নদীবন্দরের দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদে পতিত হয়। তিস্তা নদীর সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৩১৫ কিমি, তার মধ্যে ১১৫ কিমি বাংলাদেশ ভূখণ্ডে অবস্থিত।

আত্রাই সবচেয়ে ক্ষর শ্রোতা নদী হিসেবেই পরিচিত, এটির সর্বোচ্চ গভীরতা ৯৯ ফুট (৩০ মিটার)।
এক সময় শীত মৌসুমে এই নদীতে ১০,০০০ কিউসেক পানি থাকতো।
কিন্তু বর্তমানে নদীটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

এছাড়াও গর্ভেশরী, বেলান, ঢেপা, কাঞ্চন, নর্ত, ইছামতী নদী ,মহানন্দা, করতোয়া এই নদীগুলো এক সময় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে উর্বর ভূমি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলো। কিন্তু সেই নদীগুলোই আজ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে মরুভূমিতে রূপান্তর করছে।

এখনই সময় আমাদের ন্যায্য হিস্যা বুঝে নেয়ার, নাহলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল মরুভূমিতে রূপান্তরিত হতে খুব বেশি সময় লাগবেনা!
যার নমুনা আমরা উত্তরাঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে দেখতে পাই।

আ জ ম ওবায়দুল্লাহ

পঠিত : ৪৯৬ বার

মন্তব্য: ০