Alapon

বিয়ে মানেই যে শুধু একটা ফিজিক্যাল রিলেশন, তা কিন্তু না...



বিয়ে মানেই যে শুধু একটা ফিজিক্যাল রিলেশন তা কিন্তু না। হ্যাঁ, ফিজিক্যাল রিলেশন অবশ্যই বিয়ের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য। তবে এর বাইরেও আরো অনেক উদ্দেশ্য আছে। বিয়ের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে- মানসিক প্রশান্তি লাভ। এই প্রশান্তি ছাড়া কনজুগাল লাইফ কখনোই পরিপূর্ণ হতে পারে না। কখনোই শান্তিময় হতে পারে না।

'বিয়ে'- আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য একটা বিরাট নিয়ামত। এ সম্পর্ক প্রেম-ভালোবাসা এবং আন্তরিকতার সম্পর্ক। এ সম্পর্কের ফলেই হাজবেন্ড, ওয়াইফ একে অপরকে সুখ ও দুঃখের অংশীদার করে নেয়। একে অপরের সাথে শান্তি, আরাম ও আনন্দ উপভোগ করে নেয়।

দাম্পত্য জীবনের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ আমরা দেখতে পাই আল্লাহর রাসূলের জীবনে। জীবনের অন্য সবকিছুর মতোই দাম্পত্য জীবনের ক্ষেত্রেও তিনি রেখে গেছেন সর্বোত্তম আদর্শ। আন্তরিকতা ও অসংখ্য রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতায় ভরপুর ছিল রাসুল সা.-এর দাম্পত্য জীবন।
খাদিজা রা. এর সাথে রাসূল সা.-এর পঁচিশ বছরের কনজুগাল লাইফ ছিলো খুবই চমৎকার! খাদিজা রা. বলেছিলেন, তিনি মুহাম্মদ সা.কে ভালোবাসেন তাঁর দয়া, সততা ও সত্যবাদিতার জন্য। তাঁদের সুখী কনজুগাল লাইফের ভিত্তি ছিলো মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং ও মায়া-মমতা। রাসূল সা.ও খাদিজা রা.কে অসম্ভব ভালোবাসতেন। তাঁর বেঁচে থাকাকালীন সময়ে রাসূল সা. আর কোনো বিয়ে করেননি।

প্রথম যখন ওহী নাযিল হয় রাসূল সা. এর উপর, রাসূল সা. প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলেন এবং খুব টেনশন ফিল করছিলেন। ছুটে গিয়েছিলেন খাদিজা রা. এর কাছে। তাঁর সাথে শেয়ার করেছিলেন সমস্ত ঘটনা।খাদিজা রা. এর সান্ত্বনা রাসূল সা. এর ভয় ও অনিশ্চয়তাকে দূর করে দিয়েছিলো। মুশরিকদের প্রত্যাখান ও অবিশ্বাসের কারণে রাসূল সা. যে ব্যথা অনুভব করতেন, খাদিজা রা. এর কাছে এলে তা দূর হয়ে যেতো। খাদিজা রা. রাসূল সা.কে সান্ত্বনা দিতেন, সাহস ও উৎসাহ যোগাতেন। রাসূল সা. এর সব কথাই তিনি বিনা দ্বিধায় বিশ্বাস করতেন।

খাদিজা রা. ছিলেন রাসুলুল্লাহ সা.-এর পরামর্শদাত্রী, ছিলেন বিপদের বিশ্বস্ত সাথী, ছিলেন নৈরাশ্যে আশার সঞ্চারিণী!

খাদিজা রা. এর মৃত্যুর পর রাসূল সা. খাদিজা রা. কে প্রচণ্ড মিস করতেন। বাড়িতে যখনই কোনো পশু জবাই হতো, রাসূল সা. খুঁজে খুঁজে খাদিজার রা. বান্ধুবিদের বাসায় গোশত পাঠিয়ে দিতেন। এটি ছিল খাদিজা রা. এর স্মৃতিকে অমলিন রাখার চেষ্টা।

দাম্পত্য জীবনকে সুন্দর ও প্রাণবন্ত রাখার জন্য দুজনে একান্তে সময় কাটানোর কোন বিকল্প নেই। আমাদের নবীজি স্ত্রীদেরকে অনেক ভালোবাসতেন এবং তাঁদের সাথে অনেক সময় কাটাতেন। রাতের বেলায় চারদিক নিরব হয়ে এলে তিনি আয়েশা রা.-কে সাথে ঘুরতে বের হতেন এবং হাঁটতে-হাঁটতে কথা বলতেন। হাজবেন্ড, ওয়াইফ একসাথে নির্জনে হাঁটা বিরাট এক মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।

হাজবেন্ডের প্রতি ওয়াইফের এবং ওয়াইফের প্রতি হাজবেন্ডের ভালোবাসা হওয়া উচিত খুব গভীর এবং এ ভালোবাসা অবশ্যই প্রকাশ করাও উচিত।

একবার এক হজ্জের সফরে রাসূল সা. সাফিয়্যাসহ অন্য স্ত্রীদেরও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। পথে সাফিয়্যা রা. এর উটটি দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে আর চলতে পারছিলো না। এতে তিনি ভয় পেয়ে যান এবং কান্না শুরু করলেন। খবর পেয়ে রাসূল সা. ছুটে আসেন এবং নিজের জামা ও পবিত্র হাতে তাঁর চোখের পানি মুছে দেন। (মুসনাদ: ৬/৩৩৭)

সাফিয়া রা. কিছুটা শর্ট ছিলেন। উটের পিঠে উঠতে একটু কষ্ট হতো। তখন রাসূল সা. তাঁকে সাহায্য করার জন্যে নিজের হাঁটু পেতে দিতেন। আর সাফিয়্যা রা. সেই হাঁটুতে পা রেখে উটের উপর উঠে বসতেন। (বুখারী)

কী অসাধারণ! পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষটি তাঁর স্ত্রীর সাহায্যে নিজের হাঁটু বিছিয়ে দিয়েছেন আর স্ত্রী সেই হাঁটুতে পা দিয়ে ভর করে উটের পিঠে চড়েছেন। কী চমৎকার ভালোবাসার প্রকাশ! আরেকটি হাদীসে এসেছে, কখনো কখনো সাফিয়্যা রা. উটের পিঠে ঘুমঘুম অবস্থায় হেলে পড়তেন। তখন রাসূল সা. তাঁর মাথা ধরে রাখতেন।

বিভিন্ন হাদিসের মাধ্যমে জানা যায়, রাসূল সা. কতোটা রোমান্টিক একজন মানুষ ছিলেন।
আয়েশা রা. বলেন, মসজিদে ইতিকাফকালীন সময়ে রাসূল সা. আমার দিকে তার মাথা ঝুঁকিয়ে দিতেন আর তার চুল আঁচড়ে দিতাম। (বুখারি-২০২৮)

আয়েশা রা. আরো বলেছেন, রাসুল সা. আমার কোলে হেলান দিয়ে কুরআন তেলাওয়াত করেছেন। তখন আমি পিরিয়ড অবস্থায় ছিলাম। (বুখারী: ২৯৭)

আয়েশা রা. মহানবী সা. এর স্নেহ, ভালোবাসা ও শিক্ষার সংস্পর্শেই বড় হয়েছিলেন। তাঁদের বিবাহিত জীবন ছিল খুব রোমাঞ্চপূর্ণ। রাসূল সা. আয়েশা রা.কে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। তাঁদের নয় বছরের দাম্পত্য জীবনে ছিলো পারস্পরিক সহমর্মিতা ও সীমাহীন আবেগে ভরপুর। আয়েশা রা.কে খুশী করার জন্য রাসূল সা. তাঁকে মাঝে মাঝে গল্পও শোনাতেন। আবার কখনো কখনো আয়েশা রা. এর গল্পও শুনতেন।

একবার এক সফরে আয়েশা রা. রাসূল সা. এর সফরসঙ্গী ছিলেন। চলার পথে এক পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ সা. আয়েশাকে বললেন, 'এসো! আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা করি।' প্রতিযোগিতায় জয়ী হন আয়েশা রা.। এর কিছুদিন পর আবার তাঁরা দু'জন দৌড় প্রতিযোগিতা করেন। সেদিন রাসূল সা. জয়ী হন। রাসূল সা. তখন মজা করে বলেছিলেন, 'এটা হচ্ছে ঐদিনের প্রতিশোধ!' (আবু দাউদ)

আরেকটি হাদিসে এসেছে, রাসূল সা. এবং আয়েশা রা. একই প্লেটে খাবার খেতেন এবং দু'জন গ্লাসের একই জায়গায় মুখ লাগিয়ে পানি পান করতেন। (মুসনাদ: ৬/২১৭)
কী চমৎকার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ!

রাসূল সা. তাঁর স্ত্রীদের ঘরের কাজেও সাহায্য করতেন। আয়েশা রা. বলেন: রাসুলুল্লাহ সা. যখন ঘরে থাকতেন, ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকতেন এবং যখন নামাজের সময় হতো তখন তিনি নামাজে চলে যেতেন।

সিরাহ থেকে জানা যায়, রাসূল সা. এর দাম্পত্য জীবন ছিল আন্তরিকতা, সহমর্মিতা, ভালোবাসা, নিষ্ঠা আর দায়িত্বশীলতার অপূর্ব সংমিশ্রণ।

যারা দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করেছেন বা করতে যাচ্ছেন... রাসূল সা. এর দাম্পত্য জীবনের আদর্শই হোক অনুকরণীয় আদর্শ!

- সাজেদা হোমায়রা

পঠিত : ৫৩৩ বার

মন্তব্য: ১

২০২২-০৩-১৬ ২২:৩০

User
সামিউল ইসলাম বাবু

সুন্দর একটা পোষ্ট

submit