Alapon

নবী, সাহাবা ও চার ইমামের ব্যাপারে আমার আকিদা।



*নবীদের ব্যাপারে আকিদা:

১. ইমাম আবু হানিফা বলেন,
الأنبياء كلهم منزهون عن الصغائر والكبائر وقد كانت منهم زلات وخطايا
"নবীগণ ছগিরা- কবিরা গুনাহ থেকে মুক্ত ছিলেন। তবে তাদের কাছ থেকে পদস্খলন ও ভুলত্রুটি প্রকাশ পেয়েছে।" শাইখ বিন বায বলেন, لكن لا يقر عليها بل ينبه عليها فيتركها "ভুল সংঘটিত হলেও তাঁরা এর ওপর স্থীর থাকেননি। সতর্ক করা হয়েছে। তারা সংশোধন করে নিয়েছেন।"
(মাজমুউল ফতোয়া ইবনে বায, ৬/২৯০)

২. নবীগণ নিষ্পাপ হলেও তাদের নিষ্পাপ হ‌ওয়াটা ফে‌রেশতাদের মতো ছিলো না যে, কোনো ক্ষমতাই নেই। বরং গুনাহ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নবুওতের পদে অভিষিক্ত করার জন্য আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে সবধরনের গুনাহ এবং মানবিক দুর্বলতা থেকে মুক্ত রেখেছেন।

৩. নবীদের ভুলত্রুটি আল্লাহ ইচ্ছা করেই ঘটিয়েছেন, যাতে করে আল্লাহর সিফত থেকে তাঁদেরকে আলাদা করা হয়। কেননা ভুলত্রুটি থেকে মুক্ত থাকা কেবল আল্লাহর গুণ।
বিস্তারিত জানতে দেখুন মুফতি মুহাম্মদ শফী রচিত, মাজালিসে হাকিমুল উম্মত, পৃষ্ঠা ৬৫।

*সাহাবাদের ব্যাপারে আকিদা:

১. নবীদের পরেই সবচেয়ে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী সাহাবায়ে কেরামগণ। দীন বুঝার একমাত্র মাধ্যম তারাই। সাহাবাদের মতো ঈমান আনা এবং তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করা ঈমানের দাবী। তাকওয়া ও পরহেজগারীর দিক থেকে সাহাবারা এমন উচ্চতার শিখরে আরোহণ করতে পেরেছিলেন যে পৃথিবীর কোনো মানব সমাজ কখনো সে স্তরে পৌঁঁছাতে পারেনি। তাই তাদেরকে ভালোবাসা ঈমানের অঙ্গ। তাদের দোষ ত্রুটি চর্চা করা হারাম। সাইয়্যেদ আবুল আ`লা মওদুদী রহ. বলেন, "সাহাবাদের সাথে হিংসা বিদ্বেষ পোষণ করা আমার দৃষ্টিতে স্বয়ং ইসলাম ও রসুল সা.- এর সাথে দুশমনী করার সমতুল্য।
তথ‌্যসূত্র: (ম‌ওদূদী, সাহাবায়ে কেরামদের মর্যাদা, পৃঃ ১০)

২. সাহাবাদের ঐক্যমত শরিয়তের দলিল তবে এককভাবে কোনো সাহাবি সত্যের মাপকাঠি নয় এবং তাঁর কথা শরিয়তের দলিল‌ও নয়। কেননা তাঁর মতামত ভুল‌ও হতে পারে। এবং ভুল হ‌ওয়ার শত শত উদাহরণও রয়েছে কিন্তু একটা ভুল সিদ্ধান্তের উপর সব সাহাবারা ঐক্যমত পোষণ করা অসম্ভব। ইমাম মালেক বলেছেন,
ما من أحد إلا وهو مأخوذ من كلامه ومردود عليه إلا رسول الله صلى الله عليه وسلم
"একমাত্র রসুল সা. ছাড়া এমন কোনো লোক নেই , যার কথা কিছু গ্রহণযোগ্য ও কিছু বর্জনযোগ্য হবে না।"

৩. সাহাবারা সত্যের মাপকাঠি নয় তবে সত্যের মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ। কুরআন হাদিস দিয়ে তাদেরকে পরখ করা হয়েছে তারা সেখানে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এই জন্য আল্লাহ তা`আলা সন্তুষ্ট হয়ে কুরআনে তাঁদের প্রশংসা করেছেন।

৪. সাহাবায়ে কেরাম নবীদের মতো নিষ্পাপ ছিলেন না। তাঁদের কাছ থেকে ছগিরা- কবিরা সব ধরনের গুনাহ প্রকাশিত হয়েছে। আবার গুনাহ করার পরে তাদের তাওবার দৃশ্য এত গভীর ছিলো যে, আল্লাহ তা`আলা খুশি হয়ে কিছু কিছু ঘটনা দৃষ্টান্তস্বরূপ কুর‌আন ম‌জি‌দেও তুলে ধরেছেন। তাই আমরা বিশ্বাস করি শয়তানের ধোঁকায় পড়ে কোনো পাপ কাজ করে ফেললেও তাওবা এবং দীনের অন্যান্য বিশাল খেদমতের বিনিময়ে আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে মাফ করে দিয়েছেন।

৫. হযরত মুয়াবিয়া রা. সম্পর্কেও আমরা একই রকম আকিদা পোষণ করি। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবি ছিলেন। তাঁর কাছে থেকেও ভুল শুদ্ধ দু`টাই প্রকাশ পেয়েছে। এবং তাঁর মাফির ব্যাপারেও এক‌ই বিশ্বাস রাখি।

*চার ইমামের ব্যাপারে মতামত:
১. প্রসিদ্ধ চার ইমাম উম্মতদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তারা প্রত্যেকেই মুজতাহিদ এবং ন্যায়পরায়ণ ছিলেন। তারা গবেষণা করে বিভিন্ন মাস‌আলা ইস্তেম্বাত করে দীনের বিশাল খেদমত করেছেন। তাদের গবেষণায় ভুল-শুদ্ধ দুইটাই রয়েছে। শুদ্ধ হলে দ্বিগুণ স‌ওয়াব আর ভুল হলে এক গুণ স‌ওয়াব পাবেন। (সহিহ বুখারি)

২. চারটা মাযহাব মানুষকে চারটা দলে বিভক্ত করার জন্য তৈরি করা হয়নি বরং শত শত বিভক্তি থেকে মানুষকে মুক্ত রাখার জন্য এবং শরিয়তের বিধানাবলী সহজ ভাবে পালন করার জন্য কুরআন হাদিসের আলোকে চারটা মাযহাব তৈরি হয়েছে।

৩. প্রত্যেক মাযহাব‌ই সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত তবে সব মাযহাবে ১০০% হক নিহিত নয়। তাই আলেমদের উচিত কুরআন-সুন্নাহ দিয়ে যাচাই করে হক টা গ্রহণ করা। আর আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের উচিত নিজ এলাকার বিজ্ঞ ও বিশ্বস্ত কোনো আলেমকে জিজ্ঞেস করে সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা।

৪. আমাদের দেশে দুইটা মাযহাব বেশি প্রচলিত- হানাফি ও আহলে হাদিস।
হানাফিরা যেমন মাযহাব মানে আহলে হাদিসরাও মাযহাব মানে। তারা যেসব বিষয় নিয়ে হানাফিদের সাথে মতবিরোধ করে, এইগুলা শাইখদের বক্তব্য শুনে কিংবা তাদের ব‌ই পড়ে ক‌রে থা‌কে; কুরআন সুন্নাহ থেকে গবেষণার ভিত্তিতে নয়।

৫) আহলে হাদিস এবং হানাফিদের মধ্যে মৌলিক তেমন কোনো পার্থক্য নেই। মতবিরোধ শাখা-প্রশাখা গত বিষয় নিয়ে। গোঁড়া থেকেই এইসব মতবিরোধ চলে আসছে। তাই এইগুলা নিয়ে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে নিন্দা করা, ঘায়েল করার চেষ্টা করা , তর্ক বিতর্ক ও ডিবেট করা নিন্দনীয় এবং ইসলামের আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক। এগুলো থেকে দূরে থাকাই ঈমানের দাবী। তবে একামতে দীন নিয়ে আহলে হাদিসের বিভিন্ন অপব্যাখ্যার জবাব দেওয়া প্রয়োজন। এবং এটা নিয়ে তাদের সাথে বসাও যেতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো বাদ দিয়ে মতবিরোধপূর্ণ ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে পড়ে থাকা মুসলমানদের অধঃপতনের অন্যতম কারণ।

পঠিত : ৪১৩ বার

মন্তব্য: ০