Alapon

বাবা ও ভাইয়ের সংসারে ডিভোর্সি নারী: নানা সমীকরণ...



আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখনও আশপাশের পরিবারগুলোতে খুব বেশি তালাকপ্রাপ্তা ও ডিভোর্সি নারী দেখা যেত না। ষোল-সতের বছরের ব্যবধানে সামাজিক বাস্তবতা এমন দাঁড়িয়েছে যে, এখন প্রায় প্রতিটি ঘরেই দুই একজন ডিভোর্সি নারীর হাহাকার শোনা যায়।
একেকটা ডিভোর্সের পিছনে একেক রকম গল্প থাকে; সেসবের কোনোটি সত্য, কোনোটি মিথ্যা; কোনোটি যৌক্তিক, কোনোটি অযৌক্তিক; কোনোটি মানবিক, কোনোটি অমানবিক। তবে কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে, সবগুলোর ফলাফলই দুঃখজনক; দীর্ঘশ্বাসপূর্ণ।

সঙ্গত কারণেই ডিভোর্সের সবগুলো গল্প এখানে আলাপ করা হবে না; তাছাড়া সেটা সম্ভবও নয়। কাজেই যে ডিভোর্স যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত এবং যে ডিভোর্স জীবন বাঁচানোর তাগিদে হয়, আমরা কেবল সেটা নিয়ে আলাপ করব এখানে।

ডিভোর্সের যৌক্তিক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে দম্পতি ও তাদের পরিবারের আন্তরিক প্রচেষ্টার পরেও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বোঝাপড়ার না হওয়া, কোন একজনের শারীরিক, মানসিক বা চারিত্রিক ত্রুটি ও স্খলন এত বেশি হওয়া, যেটা নিয়ে বাস্তবিক অর্থেই সংসার ধর্ম নির্বাহ করা সম্ভব নয়, ধর্মী-বিষয়ে দম্পতির মধ্যে ঈমান ও কুফরের দেয়াল তৈরি হওয়া অথবা কোন একজনের মধ্যে এতটা ধর্মীয় বিচ্যুতি দেখা দেওয়া, যেটা সঙ্গে করে আসলে সুখী দাম্পত্য বজায় রাখা সম্ভব নয়।

ডিভোর্সগুলো উপর্যুক্ত যৌক্তিক কারণে হোক কিংবা অন্য কোন অযৌক্তিক কারণে, ফলাফল সর্বাবস্থায় প্রায় অভিন্ন হয়ে থাকে। নারীকে তার বাবা বা ভাইয়ের সংসারে আশ্রিত হতে হয়। নারী স্বাবলম্বী হলে, অর্থনৈতিক দিকটা বাদে সামাজিক কর্মকাণ্ডের প্রায় সব ক্ষেত্রেই বাবা ও ভাইয়ের উপর তাকে নির্ভর করতে হয়। এটা আমাদের সমাজের একটা অলঙ্ঘনীয় বাস্তবতা। তবে এটা সত্য যে, স্বাবলম্বী একজন নারী সাধারণ নারীর চেয়ে তুলনামূলক ন্যায্য বা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে। তদুপরি অনেকক্ষেত্রে স্বাবলম্বী নারীর দ্বিতীয় বিয়ে প্রথম স্বামীর চেয়েও ভাল পাত্রে হতে দেখা যায়। ‌

অবশ্য সমাজ এখন এমন একটা তিক্ত বাস্তবতা দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে যে, পর্যাপ্ত পারিবারিক শিক্ষা ও সংসারী মন মানসিকতা না থাকলে, অনেক ক্ষেত্রে নারীর স্বাবলম্বিতা অথবা বাবা-বা ও ভাই কর্তৃক সেই স্বাবলম্বিতাকে পুঁজি করার মানসিকতা নারীকে বা দম্পতিকে অযৌক্তিক ডিভোর্সে প্ররোচিত করে।

এবার আসা যাক বাবা বা ভাইয়ের সংসারে ডিভোর্সি নারী জীবন যাপন প্রসঙ্গে। আমরা যেহেতু এমন ডিভোর্স নিয়ে আলোচনা করছি, যেটা সম্পন্ন হয় নারী এবং তার পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে, সেহেতু এটা হলফ করেই বলা যায় যে, এই ডিভোর্স পরবর্তী নারীর জীবন একক ব্যক্তি কেন্দ্রিক গৃহীত ডিভোর্স পরবর্তী জীবনের চেয়ে অনেকটা সহজ। কারণ সবাই মিলে ডিভোর্সের সিদ্ধান্তে গেলে, সে ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বাড়তি একটু সহমর্মিতা কাজ করে, সে সহমর্মিতা পরিবারের সদস্যদের কাজে শতভাগ প্রকাশ না পেলেও তারা মুখে অন্তত তাদের দায়টা স্বীকার করে। সংসার জীবনে দায়ের স্বীকারোক্তিটুকুরও মূল্য অনেক। পক্ষান্তরে যে নারী একক ইচ্ছা বা কর্তৃত্ববলে পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেয়, তার ক্ষেত্রে মৌখিক দায়টুকুও রক্ষা করতে চায় না তার পরিবার।

বাবার পরিবারের ডিভোর্সি বা তালাকপ্রাপ্তা নারীর সমস্যা


স্বামীর সংসার ছেড়ে একজন নারী যখন বাবার ঘরে এসে ঠাঁই নেয়, তখন তার মানসিক অবস্থা কেমন থাকে সেটা সহজেই অনুমেয়। এসময় তার যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে মানসিক সাপোর্ট ও পুনর্গঠন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কোনো নারীই সাধারণত ডিভোর্স পরবর্তী মন-মানসের ভাঙ্গা-গড়ার সময়ে এই সাপোর্ট পায় না; উল্টো পরিবারের সদস্যদের থেকে এমন সব আচরণের সম্মুখীন হয়, যেগুলি তাদের মানসিক ভাঙ্গন ও আত্মার ক্ষত আরো বাড়িয়ে তোলে।

পরিবারে বিবাহ-উপযুক্ত ভাই বোন থাকলে, তারা ওই নারীকে নিজেদের জন্য অভিশাপ মনে করে। তারা ভাবে, তাদের ঘাড়ে স্বামীর সংসার বঞ্চিত বড় বোনের বোঝা যতদিন আছে, ততদিন তারা ভালো ঘরে সম্বন্ধ করতে পারবে না। এটা শুধু তারা মনেই করে না অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে বলে বেড়ায় এবং সংসার বঞ্চিত নারীকে কোণঠাসা করে রাখে। শুধু তারা কেন, অনেক ক্ষেত্রে আপন মা বাবার আচরণ থেকেও বুঝা যায়, তালাকপ্রাপ্তা বা ডিভোর্সি মেয়েটি তাদের সংসারে অনাহুত। তার কারণে অনেক ক্লেদ ও বিড়ম্বনার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে তাদের সকলের।

অবশ্য মা বাবা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা যথেষ্ট সচেতন ও আন্তরিক হলে ভাবে, মেয়েটাকে ভালো কোথাও পাত্রস্থ করতে পারাই একমাত্র সমাধান। কিন্তু খুব কম ক্ষেত্রেই তাদের এই ভাবনাটা বাস্তবে রূপ নিতে দেখা যায়। যখনই নতুন কোন জায়গা থেকে সম্বন্ধ আসে, পূর্বের তিক্ত অভিজ্ঞতা তাদেরকে অস্থির ও সন্দিহান করে তুলে। তাদের মন-মগজে তখন একটা ব্যাপারই শুধু ঘুরতে থাকে, এটাও আগের মতো হবে না তো? একবার চুন খেয়ে মুখ পুড়েছি; তাই দই দেখলেও ভয় করে!

ভাই-বোনদের যদি এই ডিভোর্সের আগেই বিয়ে হয়ে থাকে তাহলে, তার জীবনে ভিন্নমাত্রায় আরো গুরুতর সমস্যা নেমে আসে। মেয়েদের জন্য বাবা মার সংসার তুলনামূলক সহজ হলেও, ভাবিদের সঙ্গে ভাইয়ের সমস্যার অত্যন্ত কঠিন। সে ক্ষেত্রে তাকে সঙ্গত ও সঙ্গত কারণে, পরিবারের কাছের এবং দূরের মানুষদের থেকে কটুকথা শুনতে হয়।

অধিকন্তু, ভাইদের যদি বাচ্চা কাচ্চা থেকে থাকে, তাহলে অনাহুত নারীর ভালোমন্দ অনেকটাই নির্ভর করে রান্নাবান্না এবং বাচ্চা কাচ্চার দেখাশোনা করার উপর। অর্থাৎ ডিভোর্সি যদি ভাবিদের প্রসূতিকালীন সেবা যত্ন করতে পারে, সেইসাথে বাচ্চাকাচ্চার কিছুটা দেখভালও করে, তাহলে ভাইদের সংসারে দুই দণ্ড স্থির শ্বাস নেওয়া তার পক্ষে তুলনামূলক সহজ হয়। এরপরও যখন তখন কটু কথা শুনতে হয়, যেহেতু এটা অন্যের সংসার।

এই নারীর যদি কোনো সন্তান থেকে থাকে, তাহলে জটিলতা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। সংসারের কাজে-কর্মে এবং কর্তাব্যক্তিদের উপার্জিত সম্পদ কোথায় কার জন্য কতটুকু ব্যয় হচ্ছে, তার হার নির্ধারণে মা-বাবা, মেয়ে, ছেলে, ছেলের বউ এবং মেয়ের ঘরের ও ছেলের ঘরের নাতি-নাতনিদের মধ্যে বিশাল গ্যাঞ্জাম তৈরি হয়। মা বাবা তখন ভাবেন, ছেলেদের অর্থনৈতিক অবস্থা যেমনই হোক, মেয়েটা তো বিধবা! তার বাচ্চাকাচ্চাগুলো তো এতিম! এই ভাবনার কারণেই ছেলের ঘরের ও মেয়ের ঘরের নাতিনাতনিদের প্রতি মা-বাবার আচরণে বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়; আর সেই বৈষম্য থেকে জন্ম নেয় ভাই বোন, মামা-ভাগনা-ভাগনি এবং ফুফু-ভাতিজা-ভাতিজির মধ্যে বিদ্বেষভাব ও সম্পর্কহীনতা। এর বাজে প্রভাব পড়তে থাকে সংসার জীবনের সর্বক্ষেত্রেই।

ডিভোর্সি নারীদের পুনর্বাসনে করণীয়

ডিভোর্সকে যদি ব্যক্তি, পরিবার ও সামাজিক জীবনের একটা বাস্তবতা বলে মেনে নেওয়া হয়, তবে এটার সমাধানে বাস্তবসম্মত বিকল্প কিছু কার্যকর পদক্ষেপ আমাদেরকে অবশ্যই নিতে হবে। যে সকল পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে—

১) বিয়ে। এটা সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর সমাধান। মা-বাবা এবং ভাইবোন সর্ব দিক বিচারে ডিভোর্সি নারীর জন্য অনুকূল প্রমাণিত হলেও, স্বামীর প্রয়োজন কখনই তাদেরকে দিয়ে পূরণ হবার নয়। তাছাড়া বিয়ের সঙ্গে ধর্মীয়, চারিত্রিক ও নৈতিক এমন কিছু বিষয় সম্পৃক্ত, যেগুলোর সহজ কোন বিকল্প হতে পারে না। কিন্তু ডিভোর্সি নারীর বিয়েতে বেশ কিছু জটিলতা দেখা দেয়, বিশেষ করে, যখন তার সন্তান থাকে কিংবা নিঃসন্তান বিধবার পারিবারিক ও অর্থনৈতিক ভালো ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকে। কারণ, আমাদের সমাজে অবিবাহিত পুরুষের এমন নারী বিয়ে করার প্রচলন নেই। আমাদের অবিবাহিত পুরুষরা সাধারণত কুমারী নারীদেরকেই বিয়ে করে।

তো এই সংকট নিরসনের জন্য সমাজে দ্বিতীয় বা একাদিক্রমে চতুর্থ বিয়ের ধারণাটা আমরা ধর্মীয়, শাস্ত্রীয়, পারিবারিক ও সামাজিক ঢঙে প্রচার করা যেতে পারে। দৃষ্টিবঞ্চিত কিছু মানুষের চোখে হয়তো এই বিশাল লেখার শুধু এই অংশটাই চোখে পড়বে এবং এটাকে কেন্দ্র করে তারা নানা আপত্তি তুলবে। তা তুলুক। কোথাও সমস্যা দেখা দিলে, সেইটাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আরেকটা বিধানের কল্পিত সমস্যা তুলে আনা কোনো সমাধান নয়। বরং বিকল্প বিধানটা কিভাবে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত রেখে প্রয়োগ করা যায়, সেটা ভাবাই বিজ্ঞ মানুষের কাজ।

তো বলছিলাম, বিধবা সঙ্কট দূর করার ক্ষেত্রে বিয়ে প্রথম সমাধান। কিন্তু অবিবাহিত পুরুষের কাছে বিবাহিত নারীর বিয়ে আমাদের সমাজে দুঃসাধ্য হওয়ায় দ্বিতীয় বিয়ে আরেকটি সমাধান হতে পারে। দ্বিতীয় বিয়েকেই অনেকে সমস্যা মনে করে; এটা একটা ভুল ধারণা। দ্বিতীয় বিয়ের বিধান দেওয়া হয়েছে সমাধান হিসেবে। কিন্তু কোথাও কারও ক্ষেত্রে সেটা সমাধান না হয়ে, বিপদের কারণ হলে, বুঝতে হবে, উদ্ভূত সমস্যাটা বিধানের নয় বরং তার প্রয়োগ পদ্ধতির। কত চিকিৎসার প্রয়োগ পদ্ধতির ত্রুটির কারণেই তো মানুষের জীবন বিপন্ন হতে দেখা যায়, কিন্তু তাই বলে মানুষ তো চিকিৎসা গ্রহণ বাদ দিয়ে দেয়নি।

তাছাড়া দ্বিতীয় বিয়ের ব্যাপারে আমাদের মধ্যে যে বাজে ধারণার জন্ম হয়েছে, সেটা আমাদেরই মধ্যকার এমন কিছু পুরুষের কারণে, যারা দ্বিতীয় বিয়ে করেছে দ্বীনের অংশ হিসেবে নয়; বরং নিজেদের প্রবৃত্তির তাড়নায়। তবে হ্যাঁ, কেউ কেউ প্রবৃত্তি পরায়ণতার মুখোশ হিসেবে ধর্মের ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে। সেটা আমাদের বুঝতে হবে তার ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার প্রবণতা ও সার্বিক জীবনাচার থেকে। এদুটো ক্ষেত্রে কেউ মানোত্তীর্ণ হলে, তাকে শুধু দ্বিতীয় বিয়ে নয়, চতুর্থ বিয়ে করালেও কোন স্ত্রী তার অবিচারের শিকার হবে না।

ব্যাপারটাতে নিজেকে পরিষ্কার একটি অবস্থানে রাখার জন্য আমরা আমাদের সমাজে একটু চোখ বুলাতে পারি। দেখতে পারি, ধর্মীয় অনুশাসন ও জীবনাচারে শুদ্ধ কোন ব্যক্তি একাধিক বিয়ে করেছে কিনা? করলে, স্ত্রীদের সাথে তার আচরণ এবং স্ত্রীদের পারস্পরিক আচরণ কেমন? সেটা প্রশংসিত হলে, মনে হয় চিন্তার বদ্ধ দুয়ার টা আরেকটু মেলে ধরা যেতে পারে। এমন শুদ্ধ কাউকে পাওয়া না গেলে, আমরা দেখতে পারি, যারা দ্বিতীয় বিয়ে করেছে তারা এটাকে আদৌ ধর্মীয় অনুশাসন মনে করে করেছে কিনা? যদি না করে থাকে, তাহলে তাদেরকে দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ের মতো সমাধানমূলক একটি বিধানের ব্যাপারে বাজে মন্তব্য বা ধারণা পোষণ করা যাবে না।

২) আলাদা বাসস্থান। হ্যাঁ, বিয়ে সম্ভব না হলে, মা-বাবার জীবদ্দশায় স্বামীহীনা নারীর জন্য আলাদা বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। সেইসাথে সে যেন নিজের অর্থায়নে অন্ন-বস্ত্রের ব্যবস্থা করতে পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ এমন নারীর জন্য বাবা-ভাইয়ের সঙ্গে যৌথ পরিবারে বসবাস সর্ব বিবেচনায়ই ক্ষতিকর। মা-বাবার জীবদ্দশায় বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে এ জন্য যে, পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাকে উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে পারে অথবা অন্য কোন উপায়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, মেয়ের জন্য এই বাসস্থান বা উপার্জনমূলক ব্যবস্থা যেন ছেলে এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর প্রমানিত না হয়। বিষয়টির সুরতহালের জন্য বিজ্ঞ হালিমের শরণাপন্ন হওয়া যেতে পারে।

৩) সমান শ্রম ব্যয়ে যৌথ পরিবার। হ্যাঁ, আলাদা বাসস্থানের ব্যবস্থা করা না গেলে, যৌথ পরিবারই হবে শেষ ঠিকানা। তবে যৌথ পরিবারের সিদ্ধান্তে আসতে হলে, প্রথমে মেয়ে এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাউন্সেলিং করে নিতে হবে। সবাইকে বোঝাতে হবে এবং বুঝতে হবে যে, একজন মানুষ বিয়ের আগে যেহেতু পরিবারের বোঝা যাচ্ছিল না, সুতরাং বিয়ের একদুই বছরে এমন কিছু হয়ে যায় নি যে, সে এখন পরিবারের সবার বোঝা হয়ে থাকবে।

মেয়েকেও এটা মনে করতে হবে যে, মৌলিকভাবে এখন এটা তার বাবা ও ভাই-ভাবিদের সংসার। সংসারে অন্যান্যদের দায় ও দায়িত্ব যতখানি, ভালো থাকতে হলে তাকেও ঠিক ততটাই করতে হবে। বিয়ের আগের সময়ের সাথে ডিভোর্স পরবর্তী সময়কে তুলনা করা যাবে না।

বিয়ের আগে হয়তো আপনি রাজকন্যার মর্যাদা নিয়ে বিরাজ করেছেন সবার মধ্যে, হয়তো আপনার কোন ব্যস্ততা ছিল না তখন, বরং সবাই ব্যস্ত থাকত আপনাকে নিয়ে, কিন্তু আপনাকে এটা বিশ্বাস করতে হবে যে, সময় ও অবস্থানের পরিবর্তনে ব্যক্তির দায় ও দায়িত্বে পরিবর্তন আসে বড় রকমের। এই অমোঘ সত্যটা উপেক্ষা করলে, আপনি সুখী হতে পারবেন না কখনোই।

মেয়ের পাশাপাশি মা-বাবাকেও বিষয়টা বুঝতে হবে। মেয়ে এবং মেয়ের সন্তানকে ছেলে ছেলের বউ এবং তাদের সন্তানদের চেয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া যাবে না। কথায়, কাজে ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে—কোথাও না। এটা করতে গেলে, নৌকার এক ফুটো বন্ধ করতে গিয়ে আপনি হাজারটা ফুটো করে ফেলবেন। সংসার তরী ডুবে যাবে তখন মাঝ নদীতে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুমতি দিন। সংসার জীবনটাকে সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরিয়ে তুলুন।

- আকরাম হোসাইন

পঠিত : ১৪২৭ বার

মন্তব্য: ০