Alapon

যত বড়ো ধনী ; হব তত বেশি বিনয়ী...



আজকে সমাজে যে যত বড়ো ধনী, সম্পদশালী, সে তত বেশি অহংকারী, দাম্ভিক। যাদের টাকা আছে, দুনিয়াটা যেন শুধু তাদের জন্যই সাজানো হয়েছে। শুধু তাদেরই স্বাধীন বিচরণক্ষেত্র। বিপদগ্রস্ত গরীব-দুঃখীরা সর্বদা উপেক্ষিত থাকে ওদের কাছে।

যারা সমাজের নেতা, লিডার, তাদের সবচেয়ে বেশি হিংস্র চরিত্রের অধিকারী দেখা যায়। তাদের কথা বলাই যেন সিদ্ধান্ত। দুঃস্থদের মতামত নেওয়ারও প্রয়োজন মনে করা হয় না।
আজকে অধিকাংশই যারা একটু-আধটু ক্ষমতা পেয়ে যায়, পাওয়ার অর্জন করে, নিজেদের ক্ষমতা ও পাওয়ারকে অন্যায় পথে নষ্ট করে তারা। অথচ এ-ই পাওয়ারকে তারা একজন বিপদগ্রস্ত মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য ব্যয় করতে পারত।

এ-ই সমাজের ধনী ও প্রভাবশালী লোক বলতেই অহংকারী মানুষের দৃশ্য স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে।
অথচ আল্লাহ বলেন,
وَ لَا تَمۡشِ فِی الۡاَرۡضِ مَرَحًا ۚ اِنَّکَ لَنۡ تَخۡرِقَ الۡاَرۡضَ وَ لَنۡ تَبۡلُغَ الۡجِبَالَ طُوۡلًا
‘যমিনে দম্ভভরে চলাফেরা কর না, তুমি কখনও যমিনকে বিদীর্ণ করতে পারবে না, আর উচ্চতায় পর্বতের ন্যায় হতেও পারবে না।’ [সুরা বনি ইসরাইল : ৩৭।]

সমগ্র মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা। তিনি বিচার দিবসেরও একচ্ছত্র অধিপতি। এতৎসত্তেও তিনি তাঁর এ-ই দুই সিফাতের মাঝে ‘রহমান এবং রহীম’ সিফাত বর্ণনা করেছেন।
সুরা ফাতিহায় তিনি বলেন,
اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ
‘যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টিকুলের রব।’ [সুরা ফাতিহা : ১।]
الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ
‘যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু।’ [সুরা ফাতিহা : ২।]
مٰلِکِ یَوۡمِ الدِّیۡنِ
‘যিনি বিচার দিবসের মালিক।’ [সুরা ফাতিহা : ৩।]

আয়াত তিনটির সিকুয়েন্স লক্ষ্য করুন—প্রথম আয়াতে আল্লাহ বলছেন, তিনি সমগ্র মহাবিশ্বের প্রতিপালক।

যিনি আপনার আমারসহ গোটা মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা, প্রতিপালক—তিনি কতই না মহান হবেন! প্রভাবশালী হবেন! এজন্য হয়ত আমরা তাকে ভয় পেতে পারি।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা দ্বিতীয় আয়াতে জানিয়ে দিলেন—তিনি পরম করুণাময়। অসীম দয়ালু। তিনি এত্তো বড়ো প্রতাপশালী হয়েও দয়াবান। যাঁর দয়া দুনিয়ায় মুসলিম অমুসলিম, ধনী-গরিব, দুঃস্থ ও নিঃস্ব নির্বিশেষে সকলের মাঝে ছড়িয়ে আছে। আখিরাতে শুধু মুসলিমদের উপর আবর্তিত হবে।

আবার তাঁর সীমাহীন করুণার বানী শুনে আমরা যেন অবাধ্য হয়ে না যা-ই, তাই পরের আয়াতে তিনি জানিয়ে দিলেন—তিনি বিচার দিবসের মালিক। তোমরা দুনিয়ায় যাকিছু কর না কেন, সবকিছু লিপিবদ্ধ হচ্ছে এবং আখিরাতে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে।
প্রথম ও তৃতীয় আয়াত উভয়টির মধ্যেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার অসীম প্রভাব, প্রতাপ, ক্ষমতা ও পাওয়ারের বৈভব ফুটে উঠেছে। কিন্তু মধ্যবর্তী আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাঁর অপার অনুগ্রহের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। এর দ্বারা তিনি বান্দাকে এটা শিক্ষা দিচ্ছেন যে—যে যত বড়ো শক্তিশালী, ক্ষমতাবান ও ঐশ্বর্যের অধিকারী হবে, তাকে তত বেশি বিনয়ী হতে হবে। তাকে হতে হবে তত বেশি মায়া, মমতা ও ভালোবাসার লালনকারী।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা সমগ্র মহাবিশ্বের অস্তিত্বদানকারী, গোটা মাখলুকাতের স্রষ্টা ও প্রতিপালক, একই সাথে একচ্ছত্র অধিপতি পরকালের বিচার দিবসেরও। তিনি সবার ওপর ক্ষমতাবান, তা-ই সবচেয়ে বেশি দয়াবান। তিনি রহীম, রহমান।

অতএব আমাদেরও এ-ই শপথ গ্রহণ করতে হবে—যত বড়ো ধনী হব, যত বেশি সম্পদশালী ও দুনিয়ার ক্ষমতার অধিকারী হব—তত বেশি বিনয়ী হব। তত বেশি উদার ও সহানুভূতিশীল হব। তত বেশি মানুষের উপকার করব।
বর্ণিত হয়েছে,
مَنْ تَوَاضَعَ لِلَّهِ رَفَعَهُ اللهُ، فَهُوَ فِي نَفْسِه صَغِيرٌ، وَفِي أَعْيُنِ النَّاسِ عَظِيمٌ.
‘আল্লাহর জন্যে যে বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে সমুন্নত করেন; তখন সে নিজের চোখে তুচ্ছ হলেও মানুষের চোখে অনেক বড়ো বিবেচিত হয়।’ [শুআবুল ঈমান : ৭৭৯০।]
وَ عِبَادُ الرَّحۡمٰنِ الَّذِیۡنَ یَمۡشُوۡنَ عَلَی الۡاَرۡضِ هَوۡنًا وَّ اِذَا خَاطَبَهُمُ الۡجٰهِلُوۡنَ قَالُوۡا سَلٰمًا
‘আর রহমানের বান্দা তারাই যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞ লোকেরা যখন তাদেরকে সম্বোধন করে, তারা বলে—সালাম।’ [সুরা ফুরকান : ৬৩।]
______________________
শাইখ ইসমাইল মেনক হাফিজাহুল্লাহর লেকচার অবলম্বনে লেখা বই থেকে...

-আব্দুল্লাহ আল কাফী।

পঠিত : ৩৮১ বার

মন্তব্য: ০