Alapon

ইসলামী সংস্কৃতি মানে কী?



লা-দ্বীনি বা দ্বীনহীন ব্যক্তিদের চিন্তা বাদ দিলে মুসলিম সংস্কৃতি ধারণ করা যুবক, ইসলামপন্থী লকব ধারণ করা ব্যক্তিগণ আমাদের দেশে এখনো সংস্কৃতি মানে—
অনুষ্ঠান, ইসলামী ক্যালিওগ্রাফি, মসজিদ তৈরি, মক্তব্যে পড়া, কুরআন সবক দেয়া, খতম শেষ করা, একসাথে মসজিদে জুম'আ আদায় করা, বিয়েতে ইসলামী গান বাজানো, গায়ে হলুদের জায়গায় মেহেদি সন্ধ্যা, বই-পুস্তক রচনা ইত্যাদিই বুঝে থাকেন। এটা ছাড়াও আবার শব-ই বরাত-মেরাজ, মিলাদ-কিয়াম, যাত্রা, পুঁথিপাঠ, হাসান-হোসেন ইত্যাদিকেও প্রভাবশালী সংস্কৃতির উপদান হিসেবে দেখা হয়।

এগুলো বাম কিংবা লা দ্বীনি ব্যক্তিগণ না, ইসলাম নাম ধারণ করা ব্যক্তিগণই একে মান্য করেন। এই উপাদানগুলোকে তারা মান্য করেন, এর বশ্যতা স্বীকার করেন— শুধু তা-ই না, তাঁরা একে আলাদা একটা ধর্মীয় গডের ডিভাইন রুলস হিসেবেই অনেকটা মান্য করেন।

প্রশ্ন হচ্ছে ইসলামী সংস্কৃতি কী? সংস্কৃতি কি মাথায় টুপি দেয়া থেকে নিয়ে পাঞ্জাবি পরে মসজিদে যাওয়া—নাকি মুসলমানদের সংস্কৃতি কোনো এক ব্যাপক ব্যবস্থা?

আসলে সংস্কৃতি ওপরের কোনটিই না। এগুলো ইসলামের বা মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ আহবান তথা সাংস্কৃতিক বা তামাদ্দুনিক উপাদানগুলো থেকে ভায়োলেট হয়ে আসা কিছু নব্য সেক্যুলারি কৃষ্টি। সেক্যুলার বললাম—কারণ যে আহবান, যে কৃষ্টি কালচার আধ্যাত্মিকতা বহির্ভূত, যে কালচারে মানুষের মুক্তির মেনিফেস্টো নেই, সেগুলো সেক্যুলারি উপাদান বৈ কিছুই নয়। হ্যাঁ একটা জিনিস বৈধ, সেটা হলো এর মধ্যেও কিছু ‘সাম্য সম্প্রীতি ও ভাতৃত্ব’ গড়ে ওঠে।

এছাড়া ভায়োলেট হয়ে আসা ওপরের Sub-culture বা সেক্যুলারি কৃষ্টিগুলো আমাদেরকে আমাদের মূল এজেন্ডা, মূল সংস্কৃতি ও তমদ্দুন থেকে দূরে সরিয়ে রেখে, ‘মূল ও শিকড়’ থেকে এক ধরনের সম্পর্কহীনতা তৈরি করে আমাদের ‘মূলহীন বা শিকড়হীন’ করে দেয়। বাকি থাকে শুধু ওপরের অনুষ্ঠানগুলোর আনুষ্ঠানিকতা ও জাঁঝমকতা, যার মধ্যে মুসলিম উম্মাহ ডুবে থাকে। এবং প্রতিটি দেশেই উক্ত সংস্কৃতিগুলোর বিভিন্ন রূপ রয়েছে। পাকিস্তান-বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়শিয়ার মত দেশে এসব 'সাব কালচারগুলো' আমাদের মৌলিক তামাদ্দুনকে আড়াল করে রাখে।

আমার লেখার ওপর এখন একটি প্রশ্ন ওঠবে, সেটা হলো তাহলে সংস্কৃতি কী? “সংস্কৃতি মূলত মানুষের আখেরাতে মুক্তি উপায়”—সংস্কৃতিকে আমরা কীভাবে আমাদের সাথে খাপ খাওয়াবো? যে সংস্কৃতি মানুষের মুক্তির জন্য যথেষ্ট সেই সংস্কৃতিই প্রকৃত সংস্কৃতি। মানুষের মুক্তি কোথায়? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নও-মুসলিম সাহাবাদেরকে শারীরিক ও মানসিক দাস হতে মুক্তি দিয়ে ‘আযাদ দাস’ বানিয়েছিলেন সেটাই মূলত সংস্কৃতি ও এটাই সাংস্কৃতিক কাজ।

এখন যে সংস্কৃতিকে সংস্কৃতি বলা হচ্ছে এগুলো তো মানুষকে আযাদ দাস বানাতে পারেনা, সুতরাং এগুলো সংস্কৃতি নয়। যে সংস্কৃতি মানুষের জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে তাকে তার সৃষ্টিকর্তার রেযামন্দী হাসিল করে আখেরাতে মুক্তি পাইয়ে দেয় সেটাই মূল সংস্কৃতি।

আর যে সংস্কৃতিতে আখেরাতের ছাপ নেই, ভয় নেই, স্পিরিচুয়াল শক্তি নেই সেই সংস্কৃতি মোটেই কোনো সংস্কৃতি নয়। সেগুলো মৌলিক তামাদ্দুন আড়াল করে দেয়ার জন্য একটা মানসিক রোগ মাত্র।

-সাইফুল্লাহ মোহাম্মাদ তোফায়েল

পঠিত : ৪৮৫ বার

মন্তব্য: ০