Alapon

অপরাধ ও সহশীলতা এবং কিছু কথা...



পর্যবেক্ষণ এর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আংশিক সক্ষমতাই একজন মানুষকে দেয়া হয়েছে। কাজেই, এই এতটুকুন ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে, সমস্ত কিছুর ব্যপারে বা কোন বিশেষ ঘটনার আংশিক দেখে সম্যক অবস্থার ওপর হুকুম দিতে পারি না আমরা। অন্তত আমাদের আরও কিছু অংশকে মিলিয়ে অতঃপর বিধান বা হুকুম জারি করতে হয়। দু'জন সাক্ষী থাকার পরও কখনও-সখনও অপরাধীর জবানবন্দিকে জরুরি হিশেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, অপরাধ সংগঠনের মনস্তত্ব একমাত্র অপরাধী-ই জানে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই মনস্তত্ত্বের জ্ঞান ও জানাশোনা তাঁকে পার পাইয়ে দেয়। যেমন, ছোট বাচ্চার অপরাধবোধই নাই। তার হত্যাকে আমলে নিবে না পুলিশ। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটা অবিবেচনা যোগ্য অপরাধ হিশেবেই ধর্তব্য হবে। ধরেন, কেউ বুঝেশুনে কাউকে হত্যা করল।

সুতরাং অপরাধের মনস্তত্ব বুঝেই অতঃপর প্রতিক্রিয়ায় যেতে পারি আমরা। তবে কারও থেকে কোন রকম ভুলত্রুটি হয়ে গেলে আমাদের যা যা করা উচিত—

• কারও অপরাধের আংশিক দেখে-ই তার ব্যপারে হুকুম জারি না করা। হতে পারে বাধ্য হয়ে সে এটা করেছে। এর বিপরীত প্রমাণ মিললে, হতে পারে সে তওবা করে এখন ভালো হয়ে যাবে। তাঁকে আমলে নেয়া। তবে, তার থেকে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। কারণ, মুমিন একই গর্ত থেকে দু'বার সাপের ছোবল খায় না।

• বারবার অপরাধ স্বীকার করেও অপরাধ করতে দেখলে আমাদের উচিত তাঁর জন্য দোয়া করা। তাকে ভন্ড বা ধড়িবাজ না ভাবা। তাঁকে সাহায্য করা। কটাক্ষ করা থেকে বিরত থাকা। একটু ভেবে দেখুন, এমন অপরাধের মনস্তাপ আপনার, আমার, সবারই হয়। আমরা এস্তেগফার পড়ি। আবার অপরাধ করি। এই বিষয়টার প্রমাণ আমি নিজেই। সাথে সাথে, দুইজন একদম কাছের মানুষকে দেখেছি। একজন নিজে থেকেই তার এই অপারগতা স্বীকার করেছেন। অপরজন ভালো থাকার চেষ্টা করছেন, আল্লাহকে ভয় করেন, এমন কথা আমাকে বলেছেন তিনি। কিন্তু —আল্লাহ আমাকে এবং তাকে ক্ষমা করুন— আমি তাকে এই অপরাধে বারবার আক্রান্ত হতে দেখেছি। আমি জানি, আমরা দুর্বল। আমাদের আংশিক ইচ্ছেশক্তি দেয়া হয়েছে। এই যোগ্যতা দিয়েই আমাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে।

[নোক্তাঃ সহনশীলতা চর্চা নিয়ে আমার পড়া বইগুলোর মাঝে সবচেয়ে সহজ ও চরিত্র ও চিন্তার পরিবর্তনে বিপ্লবী মনে হয়েছে, বদিউজ্জামান সাঈদ নূরসী র এর লিখিত- 'উম্মাহর অস্তিত্ব, ইখলাস ও ভ্রাতৃত্ব' নামক বইটি।]

• আমরা অপরে অপরাধ তালাশ করতে গিয়ে নিজেরা যেন অপরাধ না করে বসি- সেটাও মাথায় রাখা উচিত। কাউকে সংশোধনের দায়িত্ব আমাকে দেয়া হয়নি। আমি কেবল ভালো কথা পৌঁছে দিয়ে দোয়া করতে পারি। সংশোধনের মালিক আল্লাহ। বিষয়টাকে এতটাই আংশিকভাবে দেখা উচিত যেন, একটা ছেলের সাথে একটা মেয়েকে দেখলে এটা ভাবতে পারি, তারা দু'জন হয়তো পরিচিত, আত্মীয়। কিংবা মেয়েটাকে সাহায্য করতেই ছেলেটা তার সাথে চলছে। কুরআনের আয়াত- "একজনের বোঝা অপরজন বহন করবে না।" মানে, একটি অপরাধ অপর কোন অপরাধের দায়ভার নিবে না। এটাও একটা ব্যখ্যা। প্রতিটি অপরাধ ভিন্ন ভিন্ন। প্রতিটির সাজাও ভিন্ন ভিন্ন।

'যে সুন্দর দিকসমূহ দেখে সে সুন্দর চিন্তা করে। যে সুন্দর চিন্তা করে সে জীবনের স্বাদ গ্রহণ করে।'— বদিউজ্জামান সাঈদ নূরসী র.
এই আলোচনা থেকে উদ্দেশ্য এতটুকুই- আমাদের চিন্তাভাবনা ও ভাবনা পদ্ধতির দুরস্ত করা। আমাদের ভাবনার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানার্জন করা।
আলোচ্য আয়াত— ولا تزر وازرة وزر أخري— একের দোষে অন্য দোষী হবে না/ এক অপরাধ অপর অপরাধের দায়ভার নিবে না।

লেখা- আব্দুল্লাহ আল মাহী

পঠিত : ২৯৯ বার

মন্তব্য: ০