Alapon

দশ ও বিশ রাকায়াত তারাবিহর না বলা ইতিহাস...



ওমর (রা) নিকট খবর আসে মানুষ একাকী কিংবা ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে, বিভিন্ন ভাবে তারাবীহ আদায় করছেন। এলাকা ভেদে তা ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে রূপ নিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে একদিন এই নামাজের বৈশিষ্ট্য হারিয়ে যাবে। তাই তিনি তদানীন্তন সময়ের প্রায় সকল সম্মানী সাহাবীদের নিকট থেকে পরামর্শ গ্রহণ করে উবাই ইবনের কা'বের (রা) ইমামতিতে বিশ রাকায়াত তারাবীহ পড়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

দুনিয়াতে চৌদ্দ-শত বছর এভাবেই চলে আসছিল। উনবিংশ শতাব্দির শেষ ভাগ থেকে কথা উঠে এই নামাজটি রাসুল (সাঃ) আট বা দশ রাকায়াতে শেষ করেছেন। সহিত হাদিসও পাওয়া গিয়েছে এবং অনেকে এই হাদিস নতুন করে করে আমল করতে গিয়ে সমাজে কোথাও বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আমার কথা এখানে নয়, অন্যত্র। ওমর (রা) যখন বিশ রাকায়াতের সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন তখন মুসলমানদের সময়টা কেমন ছিল সেই কথা গুলো নিয়ে কি আমরা কখনও ভেবেছি?

১. ওমর (রা) বিশ রাকায়াতের সিদ্ধান্ত জোড় করে চাপিয়ে দেননি। বরং যাঁরা আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) সাথে তারাবীহ নামাজ পড়েছেন এমন সাহাবীদের থেকেই মতামত-পরামর্শ নিয়েছে।

২. তখন আবুবকর (রা) ব্যতীত জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত বাকী সকল সাহাবী বেঁচে ছিলেন।

৩. তখনও খোলাফায়ে রাশেদিনের তিনজন যথা ওমর, ওসমান ও আলী (রা) বেঁচে ছিলেন।

৪. তখনও রাসুল (সা) সকল পত্নীগণ বেঁচেছিলেন, যাঁরা গৃহাভ্যন্তরে রাসুলের নামাজ নিজ চোখে দেখেছেন। এমনকি তারাও বিশ রাকায়াত তারাবীহর বিরোধিতা করেন নাই।

৫. তখনও মদিনার সকল সাহাবী জীবিত ছিলেন, যারা কিছুদিন আগেই রাসুল (সা) এর সাথে তারাবীহর নামাজে শরীক হবার সৌভাগ্য লাভ করেছিল।

৬. তখনও ইসলাম জানার জন্য হাজার হাজার সাহাবী রাসুল পত্নীদের নিকট দ্বারস্থ হচ্ছিলেন।

৭. আনাস, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, হাসান, হোসাইন (রাঃ) সহ বহু তরুণ কিশোর সাহাবী বেঁচে ছিলেন যাঁদের অনেকই রাসুলের গৃহাভ্যন্তর ও বাহিরের নামাজ দেখার সুযোগ নিকটে থেকেই পেয়েছিল।

এভাবে আরো বহু উপমা দেওয়া যায়; কথা লম্বা হবে। বিশ রাকায়াত নামাজের পক্ষে এক শক্ত ও কঠিন ভিত্তি মানুষর মাঝে হাজির থাকার পরও আমরা কেন সেই কথাটিকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বেশী জোড় খাটাচ্ছি যে, বোখারী শরীফের হাদিসে আছে রাসুল (সাঃ) আট বা দশ রাকায়াত নামাজ পড়ছেন! উপরের বর্ণিত প্রতিটি সাহাবীর জীবনই তো রাসুল (সাঃ) হাদিস প্রমাণের জন্য যথেষ্ট নয় কি? বিশ রাকায়াত তারাবীহ কে প্রায় গুরুত্বপূর্ণ সকল সাহাবী মনে প্রাণে ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে এবাদতের অংশ করে নিয়েছিল। হাদিসের প্রকাশ তো দুভাবেই হয়, মুখে ঘোষনা দেওয়া এবং অনুসরনের মাধ্যমে পালন করা।

রাসুল (সাঃ) ইন্তেকালের প্রায় ১৭০ বছর পরে ইমাম বোখারীর জন্ম হয়। তিনি অগণিত সহিত হাদিস জোগাড় করেছেন। এর পরে বাকী ইমামদের জন্ম হয়। তাঁরাও অগণিত সহিহ হাদিস জোগাড় করেছেন। এটাতে মুসলমানদের কল্যাণ হয়েছে। তখনই কিছু হাদিস সংগ্রহ হয়েছে যাতে উল্লেখ আছে, রাসুল (সাঃ) আট কিংবা দশ রাকায়াত তারাবিহ পড়েছেন।

এটাও সত্য তথ্য কিন্তু গভীরতা ভিন্ন। (পরের কিস্তিতে আসবে ইনশায়াল্লাহ) আমাদের কিছু ভাই এই কয়েকটি হাদিসকে আঁকড়ে ধরতে বদ্ধপরিকর কিন্তু উপরের বর্ণিত শত শত সাহাবী যে বিশ রাকায়াত নামাজ পড়ে অনুসরন করে দেখিয়েছেন সেটাকে রেখেছি দ্বিতীয় সারিতে। তাহলে কি আমাদের কিছু ভাই ধরে নিচ্ছেন যে, তখনকার সে সব সাহাবীদের চিন্তা, কর্ম ও দূরদর্শিতার চেয়েও বর্তমানের আমাদের কিছু আলেমের বিজ্ঞতা বেশী ভারী! আমার লক্ষ্য সমালোচনা করা নয়, মূল লক্ষ্যে এক হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা মাত্র।

এটা নিয়ে বর্তমানের সমাজ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। খোদা-দ্রোহী তামাসা করার সুযোগ পাচ্ছে! শয়তান কাতুকুতু অনুভব করছে। ইসলামী জ্ঞানে পরিপূর্ণ শূন্য দক্ষতা নিয়ে পুলিশ অফিসার আর নির্বাচিত মেয়রেরা আলেমদের নিবৃত করে এবং সত্য মিথ্যার বিচার করছে! রাসুল (সাঃ) ফেতনাকে হত্যার চেয়ে জঘন্য বলেছেন। বর্তমানে আমরা পরিপূর্ণ ফেতনার মাঝেই ঢুবে আছি, এক মসজিদ থেকে নামাজ শেষ করে অন্য মসজিদের উচ্ছেদে গলাবাজি আর লাঠিবাজি করছি। আর এতে যারা ইন্ধন যোগাচ্ছে তারা সবাই আলেম।

ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম জল্লাদ হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এই ধরনের একটি পরিবেশে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিতে গিয়ে, খুনে মেতে উঠেছিলেন। আলেম বলে কেউ দাবী করলেই তাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করত। পুরো বাগদাদ নগরীকে তিনি আলেম শুন্য করেছিলেন। জানিনা আমাদের সোজা করতে সে ধরনের আরেক জালিমকে আল্লাহ পাঠিয়ে দেয় কিনা!

- নজরুল ইসলাম টিপু

পঠিত : ৩৩৯ বার

মন্তব্য: ০