Alapon

প্রকৃত জ্ঞানীরা প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর কখনোই নিজের শিকড়কে অস্বীকার করে না...



তখন ইখওয়ানুল মুসলিমিনকে নিয়ে চারদিকে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ততোদিনে ইখওয়ানের বয়স হয়ে গেছে সত্তর বছর।

এ সময় ইখওয়ানের সদস্যরা ইমাম কারযাভীর কাছে দাবি জানালো, তিনি যেন ইখওয়ানুল মুসলিমিনের ইতিহাস রচনা করেন। এ সময় ইখওয়ানের সদস্যরা ইমামকে বলেন, ‘এটা তো আপনার প্রতি ইখওয়ানের হক। ইখওয়ান তো আপনার কাছে এই দাবি করতেই পারে। তবে একথাও সত্য, আপনার ওপর এখন কেবল ইখওয়ানেরই নয়; বরং পুরো মুসলিম উম্মাহরই হক রয়েছে।’

ইখওয়ানের সদস্যদের দাবির বিপরীতে ইমাম কারযাভী বলেন, ‘আপনাদের কথা যৌক্তিক। এখন সারা দুনিয়ার মুসলমানরাই আমার একান্ত আপনজন। কিন্তু তাই বলে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের দাবিকে তো আমি উপেক্ষা করতে পারি না।

আর আমি তো এটা কিছুতেই অস্বীকার করতে পারব না যে, আমি বেড়ে উঠেছি ইখওয়ানুল মুসলিমিনের ছায়ায়। আমি শিক্ষা গ্রহণ করেছি ইখওয়ানুল মুসলিমিনের ইমাম হাসান আল বান্না রহ.-এর কাছে, ইখওয়ানের সদস্যদের কাছে এবং তাঁর ছাত্রদের কাছে।

ইখওয়ানুল মুসলিমিনের মাঝে আমি নিজেকে সমর্পণ করে দিয়েছি, নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছি। তাদের পরিচর্যাতেই তো আমি পরিপক্ব হয়েছি, আজকের ‘আমি’ হয়ে উঠেছি। ইখওয়ানুল মুসলিমিনের ছায়ায় থেকেই তো আমার ইলমে, আমার ফিকিরে সমৃদ্ধি এসেছে। আমার জ্ঞানের, আমার মননের ঋদ্ধি হয়েছে তো এই ইখওয়ানুল মুসলিমিনের সান্নিধ্যেই। এই অনুগ্রহকে, এই অবদানকে আমি কীভাবেই-বা অস্বীকার করি?’

এই কৃতজ্ঞতাবোধ ইমাম কারযাভীকেই মানায়। যে মানুষ জ্ঞানের দিক থেকে যতো বেশি সমৃদ্ধ, তিনি ততো বেশি কৃতজ্ঞ ও বিনয়ী।

আর প্রকৃত জ্ঞানীরা প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর কখনোই নিজের শিকড়কে অস্বীকার করে না। যার কারণে ইমাম কারযাভী নিজেকে একজন ‘ইখওয়ানী’ ঘোষণা দেওয়ার পরও, তাকে কেউ কখনোই অস্বীকার করতে পারে না। বরং, ইমাম কারযাভী বর্তমান মুসলিম দুনিয়ার কতৃপক্ষ হয়ে উঠেছেন।

আর এখন এমন বহু আলেমকে দেখেছি, যারা প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর নিজের শিকড়কে অস্বীকার করেছে। শিকড়ের প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়েছে। আর শিকড়ের প্রতি বিনয়ী হওয়া তো পরের কথা, কখনো কখনো নিজেকে নিরপেক্ষ প্রমাণ করতে গিয়ে শিকড়কেই উপড়ে ফেলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তবে মজার বিষয় হল, সেই সকল অকৃতজ্ঞরা সময়ের ব্যবধানে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। টিকে থাকবে তারাই, যারা কৃতজ্ঞ হতে জানে।

পঠিত : ২৫৮ বার

মন্তব্য: ০