Alapon

যে খাতে দান না করলে শাস্তি পেতে হবে!



রমাদান মাস চলছে। দান সাদাকার মওসুম। ফরজ সাদাকা থেকে শুরু করে নফল সাদাকা, এই মাসে আমাদের সবার দান করার পরিকল্পনা আছে। প্রশ্ন হলো কাকে দান করবেন? কোন খাতে দান করবেন? কোন খাতে দান না করলে আল্লাহ আপনার টুঁটি চেপে ধরবেন?

দ্বীন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে দান করার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
হে ঈমানদারগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি ব্যবসায়ের সন্ধান দেবো যা তোমাদেরকে কঠিন আযাব থেকে মুক্তি দেবে? তোমরা আল্লাহ‌ ও তার রসূলের প্রতি ঈমান আনো এবং আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ ও জান-প্রাণ দিয়ে জিহাদ করো এটাই তোমাদের জন্য অতীব কল্যাণকর যদি তোমরা তা জানো। আল্লাহ তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন এবং তোমাদেরকে এমন সব বাগানে প্রবেশ করাবেন যার নীচে দিয়ে ঝর্ণাধারা বয়ে চলবে। আর চিরস্থায়ী বসবাসের জায়গা জান্নাতের মধ্যে তোমাদেরকে সর্বোত্তম ঘর দান করবেন। এটাই বড় সফলতা।

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,
//কী ব্যাপার? তোমরা আল্লাহর পথে কেন খরচ করছো না? অথচ যমীন ও আসমান সব তাঁরই। তোমাদের মধ্যে যারা বিজয়ের পরে অর্থ ব্যয় করবে ও জিহাদ করবে তারা কখনো সেসব ভাগ্যবানের সমকক্ষ হতে পারবে না যারা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও জিহাদ করেছে। বিজয়ের পরে ব্যয়কারী ও জিহাদকারীদের তুলনায় তাদের মর্যাদা অনেক বেশী। যদিও আল্লাহ উভয়কে ভাল প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তোমরা যা করছো আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত। এমন কেউ কি আছে যে আল্লাহকে ঋণ দিতে পারে? উত্তম ঋণ! যাতে আল্লাহ তা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে ফেরত দেন। আর সেদিন তার জন্য রয়েছে সর্বোত্তম প্রতিদান।//

এই কথাগুলো প্রভুর কথা। তিনি এগুলো বলেছেন সূরা হাদীদের ১০ ও ১১ নং আয়াতে। এটা আমাদের জন্য খুবই সুসংবাদওয়ালা আয়াত। আমরা চাইলেই আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার সুযোগ আমাদের আছে। বাংলাদেশে এখনো ইসলামের বিজয় সূচিত হয়নি। আমাদের এখনই সুযোগ অগ্রগামী বান্দাহ হয়ে যাওয়ার। আমরা সবাই ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার আন্দোলনে দান করবো। এটাই হবে সর্বোত্তম সাদাকা।

যদি দান না করি? তাহলে?
“যারা সোনা-রূপা সঞ্চয় করে রাখে এবং আল্লাহর রাস্তায় তা খরচ করে না; অতএব, আপনি তাদেরকে সুসংবাদ শুনিয়ে দিন, অতি যন্ত্রণাময় শাস্তির। যা সেদিন ঘটবে। যেদিন জাহান্নামের অগ্নিতে সেগুলোকে উত্তপ্ত করা হবে, অতঃপর সেগুলো দ্বারা তাদের ললাটসমূহে এবং তাদের পার্শ্বদেশসমূহে এবং তাদের পৃষ্ঠসমূহে দাগ দেয়া হবে, এটা তাই যা তোমরা নিজেদের জন্য সঞ্চয় করে রেখেছিলে, সুতরাং এখন স্বাদ গ্রহণ কর নিজেদের সঞ্চয়ের”। (আত-তওবাঃ ৩৪-৩৫)

যদি দান করি, কী লাভ?
যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ। যারা স্বীয় ধন সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, আর ব্যয় করার পর সে অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না এবং কষ্টও দেয় না,তাদেরই জন্যে তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে পুরস্কার এবং তাদের কোন আশংকা নেই,তারা চিন্তিতও হবে না।
(সূরা বাকারা : (২৬১-২৬২)

দান কি শুধু সচ্ছলরা করবে?
না, দান করতে হবে সচ্ছল, অসচ্ছল, সর্বাবস্থায়। আল্লাহ বলেন, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও যমীন, যা তৈরী করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্য। যারা স্বচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদিগকেই ভালবাসেন।
(সূরা আলে ইমরান: ১৩৩-১৩৪)

কী দান করবো?
দান করতে হয় প্রিয় বস্তু। যেমন নিজের জীবন, সম্পদ, প্রিয় ঘর, প্রিয় গাড়ি, সন্তান ইত্যাদি।
‘তোমরা প্রকৃত পুণ্য লাভ করতে পারবে না যেই পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তুগুলো আল্লাহর পথে ব্যয় না করবে।’
(সূরা ইমরান : ৯২)

দান কি প্রকাশ্যে না গোপনে?
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান উভয়ভাবেই করা যায়, তবে শুদ্ধ থাকতে হবে। লোক দেখানোর নিয়ত যাতে না থাকে। আল্লাহ বলেন: ”যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-খয়রাত কর, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি গোপনে ফকীর-মিসকিনকে দান করে দাও, তবে এটা বেশী উত্তম। আর তিনি তোমাদের পাপ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন।” (সূরা বকারা- ২৭১)

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তাঁরই দ্বীন প্রতিষ্ঠা এবং মানবতার কল্যাণে যথাসাধ্য ব্যয় করার তাওফীক দান করুন। আমীন, সুম্মা আমীন। ইয়া রাব্বাল আলামীন।

পঠিত : ২৬৪ বার

মন্তব্য: ০