Alapon

যেসব উপায়ে আমাদের পাপ সমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়...



আজকে আমরা আকর্ষণীয় একটি তালিকা নিয়ে কথা বলবো যা শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (র) সংকলন করেছেন। আর এই তালিকাটি হলো, যে সকল সম্ভাব্য উপায়ে আমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেয়া হতে পারে।

আমরা জানি, সাধারণ নিয়ম হলো কুরআনে পরিষ্কার করে বলে দেয়া হয়েছে কেউ কোনো মন্দ কাজ করলে তাকে সে কাজের জন্য শাস্তি দেওয়া হবে। তাহলে, কোনো ব্যক্তি একটি মন্দ কাজ করলে তার ঐ কাজের জন্য একটি শাস্তি নির্ধারিত হয়ে যায়।

কিন্তু এই শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা অনেকগুলো উপায় রেখেছেন। কিছু কিছু উপায় আমাদের হাতে আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা অন্য মানুষদের অনুমতি দিবেন আমাদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়ার।

তো, শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (র) কুরআন হাদিস থেকে এরকম দশটি উপায় খুঁজে বের করেছেন যার মাধ্যমে আমরা আমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে নিতে পারি; চূড়ান্ত শাস্তিতে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পূর্বে। অবশ্যই চূড়ান্ত শাস্তি হলো দোজখের আগুন। আমরা আল্লাহর আশ্রয় চাই। আমরা ঐ শাস্তি ভোগ করতে চাই না।

এ উপায়গুলোর মাঝে কিছু কিছু উপায় অন্য উপায়গুলোর চেয়ে উত্তম। সবগুলো একরকম নয়। আমরা আলোচনা করতে গিয়ে বুঝতে পারবো। কিছু উপায় আমাদের হাতে আর কিছু আমাদের হাতে নয়। এই উপায়গুলো সম্পর্কে সচেতন থাকলে, জানা থাকলে আমাদের বেশ উপকার হবে। ইনশা আল্লাহু তায়ালা। কারণ, যেটাই আমাদের পক্ষে করা সম্ভব আমরা তা সবচে বেশি পরিমাণে করতে চাই।

তাহলে তাড়াতাড়ি বলছি। দশটি বিষয়ের তালিকা তো। আমাদেরকে একটু দ্রুত শেষ করতে হবে।

প্রথম দুইটি হলো...আমাদের সবার এ দুইটা জানা থাকার কথা। তাওবা এবং ইস্তেগফার। এক নাম্বার: তাওবা। দুই নাম্বার: ইস্তেগফার।

এখন, তাওবা এবং ইস্তেগফারকে একত্রেও রাখা যায়। কিন্তু, বাস্তবে তারা ভিন্ন এই সেন্সে যে, তাওবা ইস্তেগফারের চেয়ে বিস্তৃত। তাওবা হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নিকট ফিরে আসা আর ইস্তেগফার হলো আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া। তাহলে তাওবা বিস্তৃত। আপনি আল্লাহর দিকে ফিরে আসেন ক্ষমা চেয়ে। অন্তরে অনুশোচনা অনুভব করা তাওবা। হায়রে! কেন আমি অমুক পাপটি করলাম--এমন অনুতাপ অনুভব করা হলো তাওবার মূল। আর ইস্তেগফার হলো আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া।

তাওবা ও ইস্তেগফারের উপকারিতা নিয়ে এবং তাওবা করার নিয়ম নিয়ে অসংখ্য খুৎবায়, বক্তব্য বিবৃতিতে আলোচনা করা হয়েছে।

আপনারা সবাই জানেন, আমাদের রাসূল (স) বলেছেন- "যে সত্যিকার অর্থে তাওবা করে তার জন্যে ব্যাপারটা এমন যেন সে পাপটি কোনোদিন করেই-নি।" তিনি আরও বলেছেন- "আমি আল্লাহর নিকট দৈনিক একশবারের বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করি।"

সুতরাং, এক এবং দুই নাম্বার হলো তাওবা এবং ইস্তেগফার। আর এগুলো হলো প্রধান উপায়, সবচে গুরুত্বপূর্ণ উপায় ও সবচে কার্যকরী উপায়। বাকিগুলো এই দুইটার মত কার্যকরী নয়। আরেকটা ব্যাপার হলো এ দুইটা আমাদের হাতে। তাওবা এবং ইস্তেগফার আমরা করি। এর কার্যকরীতার ব্যাপারে গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে। যেমন, আল্লাহ কুরআনে বলেছেন- "ইন্নাল্লাহ ইয়াগফিরুজ জুনুওবা জামিয়া।" অর্থাৎ- আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দিবেন। যদি আপনার তাওবা সঠিক হয়, আপনার পাপগুলো মাফ হয়ে গেছে। তাহলে আবারো বলছি,এক এবং দুই নাম্বার হলো তাওবা এবং ইস্তেগফার।

তিন নাম্বার...আর কোন ব্যাপার আমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেয়। অর্থাৎ, যার কারণে আমাদের পাপগুলো মুছে যায়। আল্লাহ বলেন- اِنَّ الۡحَسَنٰتِ یُذۡهِبۡنَ السَّیِّاٰتِ - “নিশ্চয়ই ভালকাজ মন্দকাজকে মিটিয়ে দেয়।” (11:114)

অতএব, ঘনঘন পুণ্যের কাজ করতে থাকলে এবং বারবার করতে থাকলে বিশেষ করে সে কাজগুলো যেগুলোর কথা রাসূলুল্লাহ (স) উল্লেখ করেছেন। তোমরা যদি এগুলো নিয়মিত কর, কাজগুলোর মাঝের সময়গুলোতে যে পাপগুলো করা হয় তা দূর করে দেয়া হবে। তো, তিনি বলেছেন তোমরা তোমাদের পাপের আগুনে জ্বলছ। তারপর যখন নামাজ পড়ো তখন এগুলো ধুয়ে মুছে পরিষ্কার হয়ে যায়। এরপর আবার তোমরা পাপের আগুনে জ্বলতে থাকো, পাপের আগুনে জ্বলতে থাকো, অতঃপর সালাত আদায় করলে এগুলো পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয়। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সবগুলো নিয়ে এভাবে বললেন।

একটি বিখ্যাত হাদিসে তিনি সাহাবাদের জিজ্ঞেস করলেন- "তোমরা ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কী মনে কর যে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে?" তাঁরা বুঝতে পারেননি উনি আসলে কিসের প্রতি ইঙ্গিত করছেন। তাঁরা জবাব দিলেন- ঐ ব্যক্তি তো সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবে। তিনি বললেন- এটা হলো নামাজের উদাহরণ। সুতরাং, পুণ্যের কাজ পাপ কাজকে বিদূরিত করে দেয়।

অবশ্যই, আরেকটি প্রসিদ্ধ ঘটনায় এক ব্যক্তি প্রচণ্ড অনুতপ্ত হয়ে রাসূলুল্লাহ (স) এর কাছে এলেন এবং বললেন- "ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি এক মহিলার সাথে মজা করছিলাম এবং তাকে চুমু দিয়ে ফেলেছি। তাই, এখন আমার উপর শরীয়তের শাস্তি প্রয়োগ করুন।" রাসূলুল্লাহ (স) চুপ করে থাকলেন। এরপর তাঁরা সবাই মিলে একত্রে নামাজ পড়লেন। নামাজ শেষে তিনি ঐ ব্যক্তিকে বললেন- তুমি কি আমাদের সাথে জামাতে নামাজ পড়ো নি? তুমি কি মসজিদে হেঁটে আসো নি? অজু করো নি? তুমি তো এগুলো সবই করেছ তাই না? লোকটি বলল- হ্যাঁ করেছি। তিনি বললেন- "নিশ্চয়ই ভালো কাজ মন্দ কাজকে দূর করে দেয়।" এটাই তোমার তাওবা। তুমি এখানে এসেছ, অনুতপ্ত হয়েছ, তুমি ক্ষমা প্রার্থনা করেছ। এখন তুমি নামাজ ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট ভালো ভালো কাজগুলো করেছ।

সুতরাং, ভালো কাজ নিজেই মন্দ কাজকে মিটিয়ে দেয়। বিশেষ করে যে কাজগুলো পাপরাশি ক্ষমা করার সাথে জড়িত। উদাহরণস্বরূপঃ এক রামাদান থেকে আরেক রামাদান, এই দুই রামাদানের ভেতরে যত পাপ করা হয় তার জন্য কাফফারা হয়ে যাবে। এক হজ্জ থেকে আরেক হজ্জ, এক উমরা থেকে আরেক উমরা, সকল পাপ ক্ষমা করে দিবে। অজু করলে পাপ ঝরে যায়। এভাবে যে কোনো ভালো কাজ।

তাই, যখনি আমাদের দ্বারা কোনো পাপের কাজ সংঘটিত হয়ে যাবে এরপর সাথে সাথেই কোনো একটি পুণ্যের কাজ করতে হবে। এটা ছিল তৃতীয় পয়েন্ট।
---------
অতএব এক, তাওবা। দুই, ইস্তেগফার। তিন, ভালো ভালো কাজ।

চার নাম্ববারটা আমাদের হাতে নেই। এটা হলো রাসূলুল্লাহ (স) এর শাফায়াত তাঁর উম্মতের জন্য এবং তাঁর ইস্তেগফার তাঁর উম্মতের জন্য। এর জন্য তিনি যা করবেন- তিনি আল্লাহর কাছে দুআ করবেন আল্লাহ যেন তাঁর সমগ্র উম্মতকে ক্ষমা করে দেন। আর এটা কয়েকটা ক্যাটাগরিতে করা হবে। মনে করুন, এ বি সি ডি...এরকম।

তো, তাঁর জীবনকালে সাহাবারা সরাসরি তাঁর কাছে যেতেন। কুরআনে এসেছে- وَ لَوۡ اَنَّهُمۡ اِذۡ ظَّلَمُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ جَآءُوۡکَ فَاسۡتَغۡفَرُوا اللّٰهَ وَ اسۡتَغۡفَرَ لَهُمُ الرَّسُوۡلُ لَوَجَدُوا اللّٰهَ تَوَّابًا رَّحِیۡمًا - "আর যদি তারা যখন নিজদের প্রতি যুলম করেছিল তখন তোমার কাছে আসত অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইত এবং রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইত তাহলে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তাওবা কবূলকারী, দয়ালু পেত।" (৪:৬৪)

রাসূলুল্লাহ (স) তাঁদের মাঝে থাকার কারণে তাঁদের এই মহা সুযোগটা ছিল। সাহাবাদের এ সুযোগটা ছিল কিন্তু আমাদের তা নেই। বহু আশীর্বাদের দরজা খোলা ছিল। তার মাঝে অন্যতম হলো, ভুল কিছু করে ফেললে তাঁরা সাথে সাথে রাসূলুল্লাহ (স) এর কাছে গিয়ে বলতে পারতেন- "ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি একটি অন্যায় করে ফেলেছি। দয়া করে আল্লাহর কাছে দুআ করুন তিনি যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন।" আমাদের জন্য এই আশীর্বাদের দরজাটি খোলা নেই। আমরা তো তাঁর কাছে যেতে পারবো না।

যাইহউক, আমাদের রাসূল (স) বলেছেন... এই সহিহ হাদিস। আবু দাউদ এবং অন্য গ্রন্থেও এটি বর্ণিত আছে। "তোমাদের আমলগুলো সোম এবং বৃহস্পতিবারে আমার নিকট উপস্থাপন করা হয়। যদি ভালো পাই, আমি আমার উম্মতের জন্য আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আর যদি বিপরীত পাই, আমি আল্লাহর কাছে উম্মতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি।" আর এটা সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে যে, তিনি তাহাজ্জুদের নামাজে তাঁর উম্মতের গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করতেন।

আমরা আরও জানি, প্রতিটি নবীকে একটি বিশেষ দুআ প্রদান করা হয়েছে, যা কবুল করা হবে বলে তাঁদের গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে। নিজের জন্য কল্যাণকর কিছু প্রার্থনা করে সেই দুআটি সবাই দুনিয়াতে ব্যবহার করে ফেলেছেন। কিন্তু, আমাদের রাসূল (স) এটি রেখে দিয়েছেন শেষ বিচারের দিনের জন্য। তিনি তাঁর উম্মতের শাফায়াতের জন্য এটি ব্যবহার করবেন।

সুতরাং, রাসূলুল্লাহ (স) এর শাফায়াতের মাধ্যমে আমাদের গুনাহ ক্ষমা করা হবে। তাহলে এটা কত নাম্বার? মনে আছে আপনাদের? এটি চার নাম্বার উপায়। এটি হলো রাসূলুল্লাহ (স) এর শাফায়াত, দুআ এবং ক্ষমা প্রার্থনা তাঁর উম্মতের জন্য।

এখন, এই দুনিয়াতে তো আমাদের পক্ষে সরাসরি তাঁর নিকট শাফায়াত চাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু কিয়ামতের দিন আমরা সরাসরি রাসূলুল্লাহ (স) এর নিকট চাইতে পারবো, অবশ্য একই সময় কালের মধ্যে যতটুকুর অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু আসল পয়েন্ট হলো- আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা মানুষকে বাছাই করবেন। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা সিদ্ধান্ত নিবেন কারা রাসূলুল্লাহ (স) এর শাফায়াতের যোগ্য হবেন।

এজন্য প্রতিটি আযানের শেষে আমাদের দুআ করা উচিত- اَللّٰهُمَّ رَبَّ هٰذِهِ الدَّعْوَةِ التَّآمَّةِ، وَالصَّلاَةِ الْقَآئِمَةِ، آتِ مُحَمَّدَانِ الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًامَحْمُوْدَانِ الَّذِىْ وَعَدْتَهُ ﺇِﻧَّﻚَ ﻟَﺎ ﺗُﺨْﻠِﻒُ ﺍﻟْﻤِﻴﻌَﺎﺩَ - (আল্লা-হুম্মা রববা হা-যিহিদ্ দা‘ওয়াতিত্ তা-ম্মাতি ওয়াস সালা-তিল ক্বা-’ইমাতি আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাদীলাতা ওয়াব্‘আছহু মাক্বা-মাম মাহমূদানিল্লাযী ওয়া‘আদতাহ, ইন্নাকালা তুখলিফুল মী‘আদ।) অর্থ- “হে আল্লাহ ! এই পরিপূর্ণ আহ্বান এবং প্রতিষ্ঠিত সালাতের রব্ব! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে ওসীলা তথা জান্নাতের একটি স্তর এবং ফযীলত তথা সকল সৃষ্টির উপর অতিরিক্ত মর্যাদা দান করুন। আর তাঁকে মাকামে মাহমূদে পৌঁছে দিন, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাঁকে দিয়েছেন নিশ্চয় আপনি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না।”

কারণ, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন- যে কেউ এই দুআ আন্তরিকতার সাথে করবে, কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত তার জন্য বাধ্যতামূলক হবে।
তো, এটা ছিল চার নাম্বার উপায়।

পাঁচ নাম্বার উপায় হলো- আপনাকে ক্ষমা করে দেয়ার জন্য ঈমানদারদের দুআ। যে কেউ যে কোনো সময় যদি বলে- আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করে দিন। অথবা জানাজার নামাজ। অথবা কারো মৃত্যুর পর মানুষ তার কথা মনে করে যদি বলে- আমি বা আমরা দুআ করছি আল্লাহ উনাকে ক্ষমা করে দিন। উনি খুবই দ্বীনদার মানুষ ছিলেন। এটাও তার গুনাহ ক্ষমা করে দিবে।

এই ব্যাপারটা কি আমাদের হাতে?
না।
যদি বলি আংশিকভাবে?
কিছুটা।
কেন কিছুটা?
প্রভাব।

ভেরি গুড! প্রভাব। কার কথা মানুষ বেশি মনে করবে এবং তার জন্য বেশি করে ক্ষমা চাইবে? যার কার্যক্রম অনেক বেশি মানুষের উপকার করে। যিনি বহু মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেন। যার উত্তম চরিত্র এবং উত্তম আচার-ব্যবহারের কথা মানুষ মনে রাখে।
তাই, পরপারে চলে যাওয়া মানুষদের কথা চিন্তা করতে গেলে তাৎক্ষনিকভাবে সবার আগে কার কথা আমাদের স্মরণে আসে? যাদের কার্যক্রম আমাদের সবচেয়ে বেশি উপকার করেছে। যারা আমাদের সবচে বেশি সাহায্য করেছেন। যাদের চরিত্র, যাদের উপকার আমাদের কাজে লেগেছে।

অতএব, যদিও পাঁচ নাম্বার উপায় সরাসরি আমাদের হাতে নেই, পরোক্ষভাবে আমরা এর জন্য বীজ বপন করে যেতে পারি। কিভাবে? ভালো ভালো কাজ করে। দানশীল হয়ে, দয়ালু হয়ে, সহমর্মিতা প্রদর্শন করে, অন্যদের খোঁজ খবর নিয়ে। যেন আমরা মানুষের মাঝে সবচে বেশি প্রভাব রেখে যেতে পারি, যার ফলে, সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ যেন আমাদের জন্য দুআ করে, আমাদের মৃত্যুর পর অথবা আমাদের জীবিত থাকাবস্থায়।

আমাদের রাসূল (স) বলেছেন- যে দুআগুলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা প্রত্যাখ্যান করেন না তা হলো- এক মুসলিম ভাইয়ের জন্য অপর মুসলিম ভাইয়ের দুআ তার অনুপস্থিতে। সে জানেও না আর আপনি আপনার হাত উত্তোলন করে আল্লাহর নিকট দুআ করছেন- "ও আল্লাহ! আহমেদ ভাই আমার সাথে খুবই উত্তম আচরণ করেছেন। আমার টাকার ভীষণ দরকার ছিল, তিনি আমাকে ধার দিয়েছেন। ইয়া আল্লাহ! তাকে আরও বেশি বেশি ধন-সম্পদ দান করুন। ইয়া আল্লাহ! তার পাপগুলো ক্ষমা করে দিন।" এই দুআটা এসেছে একেবারে আপনার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা এটা কবুল করবেন।

প্রসঙ্গত, এই সুন্নাহটির কথা আমার ভুলে গেছি। আরেক ভাইয়ের জন্য দুআ করলে আপনার কী ক্ষতি হবে। আর জানেন তো? আপনি যখন আপনার মুসলিম ভাইয়ের জন্য দুআ করেন তখন একজন ফেরেশতা আপনার জন্যেও দুআ করেন। ফেরেশতা বলেন- ইয়া আল্লাহ! যে দুআ করছে তাকেও এটা দান করুন।
মানুষের জন্য দুআ করলে আপনি কী হারাবেন! আমরা কতটা কৃপণ হতে পারি! আমরা এমনকি অন্যদের জন্যেও দুআ করি না। এটা জানা সত্ত্বেও অন্যদের জন্যে যে দুআ করি আমরাও সেটা পাবো।
—---------
জানাজার নামাজও। আমাদের রাসূল (স) বলেছেন- "কারো জানাজায় মুসলমানদের তিন সারি লোক যোগ দিলে তার জন্য (আল্লাহর ক্ষমা) অবধারিত হয়ে যায়।" তিন সারি মানে অনেক মানুষ যোগ দেয়। কেন বহু মানুষ আপনার জানাজায় যোগ দিবে? কেন তারা আসবে? যখন আপনি তাদের উপকার করেন। আবারো বলছি। যত বেশি মানুষ আপনার জানাজায় যোগ দিবে, আপনার পাপগুলো ক্ষমা করে দেয়ার সম্ভাবনা তত বেশি।
এটা কত নাম্বার উপায়? আপনাদের মনে আছে তো?

- পাঁচ নাম্বার।
- পাঁচ নাম্বার? আচ্ছা ঠিকাছে।
ছয় নাম্বারঃ ঈমানদারদের দুআর পর পরেই এর অবস্থান। ছয় নাম্বার উপায় হলো- পরপারে চলে যাওয়ার পর আপনাকে দেওয়া ঈমানদারদের উত্তম আমল। এটা দুআর চেয়ে ভিন্ন। কোনো পুণ্যের কাজ উপহার দেওয়া। যা অনেক বেশি দুর্লভ। কে আপনাকে হজ্জ এবং উমরা উপহার দিবে? আপনার মৃত্যুর পর কে আপনার নামে এক লাখ টাকা দান করবে? এমন ঘটনা একেবারেই বিরল। অল্প কিছু সংখ্যক মানুষ আপনার জন্য এটা করতে পারে যাদের জীবনে আপনার প্রভাব অপরিসীম। অথবা কোনো না কোনো ভাবে আপনি তাদের সীমাহীন উপকার করেছেন।

তো, আপনি যদি কাউকে ভালো আমল দান করেন, যিনি ইতোমধ্যে মারা গেছেন। তিনি ইতোমধ্যে বারজাখের জগতে চলে গেছেন। আর আপনি তার কথা মনে করে তাকে কোনো ভালো আমল দান করলেন। তখন পরলোকে সে ব্যক্তির মর্যাদা বেড়ে যাবে এবং তার গুনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হবে। এটা ঠিক ঐ ব্যাপারটার মতো- দুনিয়াতে থাকাবস্থায় কোনো ভালো কাজ করলে যেমন আপনার গুনাহ মাফ হয়ে যেতো, ঠিক তেমনি আপনি মারা যাওয়ার পরেও কেউ যদি আপনার পক্ষ থেকে কোনো ভালো কাজ করে এতেও আপনার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।

কিন্তু আবারো বলছি, কে আপনাকে পুণ্যের কাজ দান করবে? কোন ধরণের মানুষেরা আপনার জন্য এমন কষ্ট স্বীকার করবে? আপনার ছেলে বা মেয়েরাই শুধু এমনটা করতে পারে। যদি তারা ধার্মিক হয় এবং আপনি তাদের সঠিক উপায়ে বড় করেছেন। কে অনেক টাকা দান করে বলবে- "ইয়া রব! এই দানের পুরস্কার আমি আমার বাবার জন্য চাই বা অমুকের জন্য চাই।"

আবারো বলছি, এগুলো বেঁচে থাকাবস্থায় মানুষের উপকার করার করার বাস্তবতা। কে আপনার জন্য এতো কষ্ট করতে যাবে।

আমি এমন ঘটনার কথা জানি। আমার শিক্ষক আমাকে বলেছেন। তাঁরা সুদূর অতীতের বিখ্যাত উলামাদের জন্য হজ্জ করতেন। কারণ তাঁরা বলতেন, আমরা তাঁদের লেখা থেকে এতো বেশি উপকৃত হয়েছি যে, কৃতজ্ঞতা স্বরূপ অন্ততপক্ষে তাঁদের জন্য উমরা এবং হজ্জ করতে পারি। যেমন, ইমাম নববীর জন্য হজ্জ করতে পারি; ইবনে হাজমের জন্য করতে পারি বা অমুক আলেমের জন্য করতে পারি। আক্ষরিক অর্থেই তাঁরা হাজার বছর আগের কোনো আলেমের জন্য উমরা করতেন। কারণ তাঁরা বলতেন, আমি ঐ ব্যক্তির নিকট কত যে ঋণী!

এগুলোই হলো রেখে যাওয়া সৎ কর্মের উপকারিতা।

— ড. ইয়াসির ক্বাদী

পঠিত : ৬৭৪ বার

মন্তব্য: ০