মসজিদপ্রেমী নারী এবং কিছু কথা...
তারিখঃ ৭ এপ্রিল, ২০২২, ১৫:০৩
ইসলামি সমাজব্যবস্থায় একজন নারী বিধবা হলে কিংবা তালাকপ্রাপ্তা হলে পরবর্তী তার বিয়ে হওয়া সহজ ছিলো। আমাদের সমাজে একজন নারীর স্বামী মারা গেলে বা তাকে তালাক দেয়া হলে তো তাকে ‘অপয়া’ ভাবা হয়!
এসব ব্যাপারে যে ইসলামে কুসংস্কার নেই, তার সবচেয়ে বড়ো উদাহরণ হলেন একজন নারী সাহাবী। তাঁর নাম ছিলো আতিকা বিনতে যায়িদ (রাদিয়াল্লাহু আনহা)। ইসলামপূর্ব মক্কায় যেসব বিখ্যাত ‘হুনাফা’ ছিলেন, আতিকার (রা
বাবা যায়িদ ইবনে আমর ছিলেন তাদের একজন। আতিকার (রা
ভাই সায়িদ ইবনে যায়িদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন ‘আশারায়ে মুবাশশারা’ বা দুনিয়ার বুকে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ জনের একজন।
আতিকা বিনতে যায়িদের (রা
বিভিন্ন সময়ে পাঁচটি বিয়ে হয়। কখনো তাঁর স্বামী ইন্তেকাল করেছেন, তো কখনো তিনি তালাকপ্রাপ্তা হয়েছেন। তাঁর স্বামীদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন উমর ইবনুল খাত্তাব (রা
।
এখানে একটি মজার ব্যাপার আছে। উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বিয়ে করেন সায়িদ ইবনে যায়িদের (রা
বোন আতিকাকে (রা
, অন্যদিকে সায়িদ ইবনে যায়িদ (রা
বিয়ে করেন উমরের (রা
বোন ফাতিমাকে (রাদিয়াল্লাহু আনহা); সেই ফাতিমা ও সায়িদের (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) ঘরে গিয়ে উমর (রা
ইসলাম গ্রহণে আগ্রহী হোন।
আতিকা বিনতে যায়িদ (রা
ছিলেন একজন কবি। তিনি মূলত মার্সিয়া বা শোকগাথা কাব্য লিখতেন, ইংরেজিতে যাকে বলা হয় । তাঁর স্বামীর ইন্তেকালে, নবিজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তেকালে, শহীদদের জন্য তিনি এসব কবিতা লিখতেন।
মসজিদের প্রতি আতিকা বিনতে যায়িদের (রা
আলাদা টান ছিলো। তিনি ফজর ও এশার নামাজেও মসজিদে যেতেন। লোকজন তাঁকে বললো, “আপনি কেনো মসজিদে নামাজ পড়তে যান? আপনি কি জানেন না যে, উমর (রা
এটা অপছন্দ করেন?”
তিনি জবাব দিলেন, “তাহলে স্বয়ং উমর (রা
আমাকে বাধা দিচ্ছেন না কেনো?”
তাঁকে জানানো হলো যে, নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“আল্লাহর বান্দীদের (নারীদের) আল্লাহর মসজিদে যেতে বারণ করো না।”
অর্থাৎ, নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেহেতু নারীরা মসজিদে যেতে চাইলে বারণ করতে নিষেধ করেছেন, সেজন্য উমর (রা
বারণ করছেন না। [সহীহ বুখারী: ৯০০]
আতিকা বিনতে যায়িদ (রা
মসজিদে যাবার আগে তাঁর স্বামী উমরকে (রা
জিজ্ঞেস করতেন। কিন্তু, উমর (রা
নিষেধ করতেন না। তখন আতিকা (রা
বলতেন:
“আল্লাহর কসম! যতোদিন আপনি আমাকে নিষেধ না করেন, ততোদিন আমি (মসজিদে) যেতেই থাকবো।” তবুও, উমর (রা
তাঁকে কখনো নিষেধ করেননি। [ইমাম মালিক, মুয়াত্তা: ৪৫৩]
মসজিদে ফজরের নামাজ পড়ার সময় খলিফা উমরকে (রা
আঘাত করা হয়, এই জখমের ফলে তিনি ইন্তেকাল করেন।
ইবনে হাজার আসকালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: “যেদিন উমরকে (রা
আঘাত করা হয়, সেদিনের নামাজে উপস্থিত ছিলেন তাঁর স্ত্রী আতিকা বিনতে যায়িদ (রা
।” [ইবনে হাজার আসকালানী, ফাতহুল বারী: ৩/৩৪]
উমরের (রা
ইন্তেকালের পর আতিকার (রা
বিয়ে হয় যুবাইর ইবনে আউয়ামের (রা
সাথে। বিয়ের চুক্তিতে আতিকা (রা
উল্লেখ করেন যে, যুবাইর ইবনে আউয়াম (রা
তাঁকে আঘাত করতে পারবেন না এবং তাঁকে মসজিদে যেতে বাধা দিতে পারবেন না। [ইবনে হাজার আসকালানী, আল-ইসাবা ফী তামিজিস সাহাবা: ৮/১১৪৪৮]
হযরত মুয়াবিয়ার (রা
শাসনকালে আতিকা বিনতে যায়িদ (রা
ইন্তেকাল করেন।
- আরিফুল ইসলাম
মন্তব্য: ০