Alapon

আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার অন্যতম শক্তিশালী একটি উপায় হলো জিকির...



আমাদের রূহকে খাদ্য সরবরাহ করলেই কেবল আমরা আসল প্রশান্তি লাভ করি। শরীরকে খাওয়ালে নয়। শরীরকে আহার করালে আমরা পশুবৃত্তিক আনন্দ পাব। যদি হালাল হয়, ভালো। একদিন দুইদিন ভালো লাগবে। আর যদি হারাম হয়, একদিন দুইদিন হয়ত ভালো লাগবে। এরপর চরম অস্বস্তিকর অপরাধবোধ আমাদের সারাক্ষণ কষ্ট দিবে। আমাদের বিবেক আঘাত করবে, ফিতরাহ প্রশ্নের পর প্রশ্ন বাণে জর্জরিত করবে— কেন তুমি এটা করেছো? কোন উদ্দেশ্যে এটা করেছো? জাননা এর জন্য শাস্তি পাবে? এটা করা ভুল কাজ ছিল। উভয় ক্ষেত্রেই— হালাল বা হারাম— শারীরিক আনন্দ খুবই সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য টিকে থাকে। আমরা সবাই এটা জানি।

পক্ষান্তরে, আধ্যাত্মিক আনন্দ, আত্মাকে আহার করালে, রূহকে খাদ্য সরবরাহ করলে, তার প্রয়োজন মেটালে— এটা জীবনকে শুধু যে বাঁচার যোগ্য করে তোলে তাই নয়, বরং আনন্দকে করে তোলে টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী। আমরা জীবনের সমস্যাগুলোকে কাটিয়ে উঠতে পারি আরও বেশি আশাব্যঞ্জক উপায়ে। এটা আমাদের প্রশান্তির চেতনা প্রদান করে, নির্মল এক আনন্দের আবহ তৈরি করে, স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান করে। আমরা বুঝতে পারি, কেন আমরা এই দুনিয়ায় বাস করি। আল্লাহর উপর আমাদের ঈমান যত শক্তিশালী হবে, আমাদের আন্তরিক দৃঢ়তাও তত শক্তিশালী হবে। আমরা আরও বেশি একনিষ্ঠতা, আরও বেশি ভরসা লাভ করবো। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, রূহকে আহার করানোর মাধ্যমে আমরা পরকালের অনন্ত সুখের জীবন লাভ করবো।

রূহকে খাদ্য প্রদান করা হয় রূহের উৎস থেকে। ঠিক যেমন শরীরকে আহার করানো হয় শরীরের উৎস থেকে। শরীর এসেছে মাটি থেকে। আমরা শরীরকে কীভাবে আহার করাই। ভূমি থেকে উৎপন্ন দ্রব্য সামগ্রী দিয়ে। শাকসবজি, ফলফলাদি এবং পশুপাখি দিয়ে।
আর রূহ এসেছে উপর থেকে। এটা আল্লাহ্‌ আমাদের উপহার দিয়েছেন। তাই, রূহের খাদ্য এই জমিন থেকে আসবে না। রূহের পুষ্টি আসবে যখন রূহকে তাঁর উৎসের সাথে যুক্ত করবেন। আর তা হলো, আল্লাহর দিকে ফেরানোর মাধ্যমে। কুরআন পড়ার মাধ্যমে।

আমাদের সেজদা, আমাদের দুয়া, আমাদের জিকির। এখানেই চূড়ান্ত সুখের অবস্থান।
[সেরা জিকির হলো চারটি। সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার। এই চারটি জিকির করার মাধ্যেম আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হোন। নিজের জীবনের প্রতিটি নিঃশ্বাসে, প্রতিটি পদক্ষেপে, প্রতিটি ফ্রি সময়ে, এই জিকির-আজকারগুলো বলতে থাকুন। এরসাথে যদি আরো যোগ করতে চান, বলুন— লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ, রাব্বানা আতিনা ফিদ দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানা ওয়া কিনা আজাবান নার। এভাবে বিভিন্ন দুআ করতে থাকুন। তাহলে, আপনার সারাদিন আল্লাহর জিকিরে পূর্ণ থাকবে।

আর আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার অন্যতম শক্তিশালী একটি উপায় হলো এই জিকির। আমাদের রাসূল (স) বলেছেন— মুসনাদে ইমাম আহমদের একটি হাদিস— "আল্লাহর জিকিরের চেয়ে কোন কিছু মানুষকে বেশি জাহান্নাম থেকে বাঁচাবে না।" অন্য কথায়, মানুষকে জাহান্নাম থেকে সবচেয়ে বেশি বাঁচাবে আল্লাহর জিকির।]

— ড. ইয়াসির ক্বাদী

পঠিত : ৪৮৭ বার

মন্তব্য: ০