Alapon

মাওলানা ফজলুর রহমান; একটি বিনীত জিজ্ঞাসা...



পাকিস্তানের সর্বকালের সেরা স্বাধীনচেতা ও সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে জেনারেল জিয়াউল হকের প্রশংসা করতেন মুফতি শফী রহ.। আলেম- উলামা ও ইসলামের দরদে জিয়াউল হক যা করেছেন, তার কোনো তুলনা নেই। একারণে এখনো তার নামে রহমতুল্লাহি আলাইহি যুক্ত করা হয়, তাকে বলা হয় শহীদ।

জিয়াউল হকের শাসনামলকে অস্থির করে রেখেছিলেন একজন মাওলানা। তিনি হলেন ফজলুর রহমান সাহেব।

তিনি ভুট্টোর কাছ থেকে কী যে আশ্বাস পেয়েছিলেন কে জানে! ভুট্টোর সাথে মিলিত হয়ে গেলেন। এজন্য নিজের দলই ভেঙ্গে গেলো। জমিয়ত দুই ভাগ হয়ে গেলো। এক ভাগ জিয়াউল হক এর সাথে সম্পর্ক রাখলো। এর প্রধান ছিলেন মাওলানা সামিউল হক রহ.। আর মাওলানা ফজলুর রহমান ভুট্টোর সাথে মিলে জমিয়ত এফ এর কাজ চালাতে লাগলেন। এরপর থেকে পাকিস্তানের সকল শাসকের সাথে ঘনিষ্ঠ ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান।

পাকিস্তানের তখনো ছিলো একটি শক্তিশালী অর্থনীতি। পরবর্তী শাসকদের কাহিনী শুধু ডাকাতি আর লুটপাটের কাহিনী। জুলফিকার আলী ভুট্টো চেষ্টা করলেন দেশকে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর। তখন মাওলানা ফজলুর রহমান তার বিরুদ্ধে গেলেন এবং তার ঘুম হারাম করে ছাড়লেন। জুলফিকার আলীকে হত্যা করা হয় আদালতের সাজানো রায়ে।
মাওলানা পাকিস্তানের রাজনীতিতে সবসময়ই এক রহস্য। উইকিলিকসে ফাস হয়েছিলো আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের সাথে তার গোপন আলাপের নথি। সেখানে তিনি রাষ্ট্রদূতকে বলেছিলেন, আমাকে আপনারা ক্ষমতায় আসার সুযোগ দিন,আপনাদেরকে অন্যরা যেসব সুযোগ দিচ্ছে,আমরা আরো বেশি দেবো।

মাওলানার বিষয়ে সবচেয়ে স্পর্শকাতর অভিযোগগুলো আমার মতে তার দুর্নীতি বা বহুরূপিতা নয়। আসল অভিযোগ হলো ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাথে তার গোপন সম্পর্ক।

অজিত দোভালকে আপনারা চিনেন? দোভাল হচ্ছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার নীতিনির্ধারক এবং ভারতীয় গোপন এজেন্ডাসমূহের মূল কাণ্ডারি। বর্তমানে দোভাল ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা। দোভালের সাথে মাওলানার গোপন যোগাযোগ ফাস হয় কারগিল যুদ্ধের সময়।
এখানে দোভালের সাথে মাওলানার যে বৈঠকের ছবি দেখছেন, এটি ছিলো গোপন বৈঠক। রাষ্ট্রীয় সকল প্রটোকল ফাকি দিয়ে গোপনে এ বৈঠক হয়। অনেক পরে যখন তা ফাস হয়, চারদিকে হৈচৈ পড়ে যায়। দোভাল ও মাওলানার পুরনো সম্পর্কও সামনে আসে।

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার অফিসার থাকাকালে গোপনে মুসলিম পরিচয়ে সাত বছর পাকিস্তানে অবস্থান করে বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেন দোভাল। তিনি ইসলাম ধর্ম, উর্দু ভাষা ইত্যাদির উপরেও দক্ষ হয়ে উঠেন। দোভালের মাধ্যমে পাকিস্তানের উপর আধিপত্য বিস্তারের ভারতীয় প্লান বহুদূর এগিয়ে যায়। দোভাল যখন পাকিস্তানে থাকতেন, তখন থেকেই মাওলানা ছিলেন তার বন্ধু।

এটি স্পষ্ট, যে থানবী রহ. এর চিন্তাধারা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় কাজ করলেও মাওলানা ফজলুর রহমানের প্রভাবে থানবী ধারার জমিয়ত পাকিস্তানে কোণঠাসা হয়ে যায়। মাওলানার বাবা ছিলেন হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. এর শাগরিদ। সেকারণে তার জমিয়তের আনুগত্য ছিলো সর্বভারতীয় চিন্তাধারার প্রতি। সেই দিক থেকে একজন পাকিস্তানের নাগরিক এবং জননেতা হয়েও পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ গড়ায় ফজলুর রহমান ও তার বাবা বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন।

কাশ্মীর প্রশ্নে ফজলুর রহমান সাহেবের ভূমিকা সবচেয়ে রহস্যজনক। বারো বছর কাশ্মীর কমিটির সভাপতি ছিলেন মন্ত্রীর মর্যাদায়। রাষ্ট্রীয় সব সুবিধা ভোগ করেছেন।কিন্তু একটি মিটিংও আয়োজন করেননি। যতোবার কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তান গভর্নমেন্ট সক্রিয় হয়েছে, ততবার আভ্যন্তরীণ ঝামেলা লাগিয়েছেন তিনি।

আমি ব্যক্তিগতভাবে মাওলানা সাহেবকে শ্রদ্ধা করি। অনেক বড় ক্ষমতাশালী মানুষ তিনি। তার প্রতাপে পাকিস্তানে জমিয়তের অন্য ধারাগুলো নিস্তব্ধ হয়ে গেছে বলতে গেলে। আর কোনো বড় রাজনৈতিক দল না থাকায় সেখানকার আলেমদের তাকে সমর্থন করতে হয়। কেউ তার ফেভারে না থাকলে নানাভাবে হেনস্থা হতে হয়। যেমনটি হতে হয়েছে তারেক জামিল সাহেবকে। তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় কোনো আলেম রাজনীতিতে তার সাথে টক্করেও যাননি।

ফলে আলেমদের দল এই পরিচয়কে তিনি সবচেয়ে বেশি কাজে লাগিয়েছেন। কিন্তু তার কাজ নিয়ে ইদানীং পাকিস্তানে যেভাবে প্রশ্ন তুলছেন তরুণরা, এর শেষ কেমন হবে,প্রশ্নটা জাগছে!

তবে আমার মনে হয় তিনি হয়তো নেক নিয়তে (বসতির ভালোর জন্য) তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন, বাংলাদেশে যেমনটি করছেন ফরিদুদ্দীন মাসউদ সাহেব।
.
- ওয়াহিদুল হাদী।

পঠিত : ৪৮৪ বার

মন্তব্য: ১

২০২২-০৪-১৬ ১০:৫৩

User
তাসনিমের ডায়েরী

আহা........... বসতির ভালোর জন্য

submit