Alapon

|| জয়বাংলা ও এর গন্তব্য ||


সম্প্রীতি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের একটি বক্তব্যের ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে। তার বক্তব্যের মধ্যে আসলেই যৌক্তিকতা আছে। সাথে আছে কিছু স্বেচ্ছাচারিতা
জয় বাংলা স্লোগানের জন্ম দিয়েছিলো ছাত্রলীগের অ্যাক্টিভিটিস্টরা। ১৯৬৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে শিক্ষা দিবস পালনে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভায় ছাত্র আফতাব আহমেদ ও চিশতী হেলালুর রহমান জয় বাংলা স্লোগান টি সর্বপ্রথম উচ্চারণ করেন। ১৯৭০ সালের ৭ জুন রেসকোর্স ময়দানে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমানের কন্ঠে প্রথমবারের মতো এই শ্লোগানটি দিলে তা আওয়ামী লীগের কাছে বৈধতা পেয়ে যায়।
আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আওয়ামী লীগ ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি(ন্যাপ) বরাবরই সোচ্চার ছিল। কিন্তু চালচিত্র বদলে দেয় একটি স্লোগান -জয় বাংলা। আওয়ামী লীগের রক্ষণশীল নেতারা স্লোগান এর বিরোধিতা করেছিলেন। এর মধ্যে তারা হিনদুভারতের স্লোগান জয় হিন্দ এর ছায়া দেখেছিলেন। অন্য দলগুলো এর বিরোধিতা করে। ইসলামপন্থী হিসেবে পরিচিত দলগুলো এই শ্লোগান এরমধ্যে আবিষ্কার করে ভারতীয় জুজু। তারা বিদ্রুপ করে বলতে থাকে- জয় বাংলা জয় হিন্দ ,লুঙ্গি খুলে ধুতি পিন্দ।

ইসলামপন্থি ও চীনপন্থী দলগুলোর অভিযোগ এই স্লোগানে যুক্ত বাংলার গন্ধ আছে। এদেশের রাজনীতিতে জয় বাংলা স্লোগান নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি।
জয় বাংলা স্লোগানের প্রথম উৎপত্তি হয় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে । কাজী নজরুল ইসলাম পূর্ণ অভিনন্দন কবিতায় জয়বাংলা শব্দটি ব্যবহার করেন।২০১১ ও ২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা জানান যে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা থেকেই বঙ্গবন্ধু এই জয় বাংলা স্লোগানটি নিয়েছিলেন।
জয়বাংলা হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক স্লোগান। কোন বক্তৃতাও বার্তা শেষে তারা জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু শব্দবন্ধটি ব্যবহার করে থাকেন। বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ত্রিপুরা ও বরাক উপত্যকার লোকেরা জয় বাংলা স্লোগান ব্যবহার করে থাকে। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির শ্লোগান জয় শ্রীরাম স্লোগান এর বিকল্প হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেস জয় বাংলা স্লোগান ব্যবহার প্রথম শুরু করে।
সম্প্রীতি জয়বাংলা কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে। বাঙালি সংস্কৃতিমনা প্রগতিশীল গোষ্ঠী এই স্লোগানকে স্বাগত জানালেও ইসলামপন্থী ও জাতীয়তাবাদী দল গুলো একে সরকারের একক স্বেচ্ছাচারিতা বলে উল্লেখ করে। জন্ম লগ্ন থেকেই ভারতের প্রতি বাঙালির মন মানসিকতায় এলার্জি আছে। যেমনটি দেখা যায় পাক-ভারত সম্পর্কের মধ্যে। কিন্তু আওয়ামী সরকারের অতিরিক্ত ভারতপ্রীতি ও হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতি বাংলাদেশে আমদানি যেন নিজ জাতিসত্তার প্রতি ভিন্ন সংস্কৃতি কে চাপিয়ে দেয়ার মত।

একথা বলতে দ্বিধা নেই যে ,এদেশের ক্রমবিকাশে জয়বাংলার সাথে সাথে স্বাধীনবাংলা জিন্দাবাদ, আজাদ বাংলা জিন্দাবাদ ,বাংলাদেশ জিন্দাবাদ প্রভৃতি স্লোগান বিভিন্ন প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় রাজনীতিবিদেরা ব্যবহার করেছিলেন। সবকিছু বাদ দিয়ে কোন রাজনৈতিক দলের স্লোগানকে জাতীয় স্লোগান এ রুপান্তর করা নিতান্তই অযৌক্তিক। এটি জাতির মধ্যে বিভক্তি ছড়ানো ও বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছুই নয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ এবং শেখ মুজিব জিন্দাবাদ একটি সাধারন শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। এখনকার স্বার্থন্বেষী রাজনীতিবিদেরা জয়বাংলা ছাড়া নাকি বাংলাদেশ কল্পনা করাও বৃথা মনে করে। যা ক্ষমতাসীন ক্ষমতাসীনদের তোষামোদি ছাড়া আর কিছুই নয়।
রাজনৈতিক স্লোগান কখনো কোন জাতির একক প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। স্বার্থন্বেষী মহল আজকে একটি স্বাধীন দেশ কে একের পর এক রাজনৈতিকরণ করেই চলছে। মানুষের অধিকারকে খর্ব করে সরকারের সকল কর্মসূচীকে দলীয় কর্মসূচিতে রূপান্তর করা বড়োই দুর্ভাগ্যের। বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কথিত চেতনার ঝান্ডাধারী সরকার। ক্ষমতার পালাবদলে তাদের সকল কর্মকান্ড তাসের ঘরের মতো ইতিহাস থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
১৯৭৫ সালে খন্দকার মোশতাক আহমেদের সভাপতিত্বে জয়বাংলা প্রতিস্থাপন করে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ কে বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান করা হয় ।বাংলাদেশ জিন্দাবাদ আজকে হারিয়ে গিয়েছে কালের বিবর্তনে জয়বাংলার অদূর ভবিষ্যতও সহজেই কল্পনা করা যায়।
|| জয়বাংলা ও এর গন্তব্য ||
--- কমরেড সিফাত।

পঠিত : ৪০২ বার

মন্তব্য: ০