"আমাদের সিলেবাস প্রনোয়ণের উদ্দেশ্য কী?"
তারিখঃ ১৪ এপ্রিল, ২০২২, ২৩:৫০
ঠিকমত সিলেবাস না পড়া সিম্পরা যখন বলে এককেন্দ্রিক সিলেবাস পাঠগ্রহণে এই সমস্যা সেই সমস্যা, তখন স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, সিলেবাস বলতে তারা আদৌ কিছু বুঝে কিনা!
যেমন যে ব্যক্তি প্রাথমিকে পড়ে, তাকে সে প্রথমিক সিলেবাসই পড়তে হবে। এর বাহিরে অন্যান্য ক্লাসের সিলেবাস নিয়ে পণ্ডিতি করলে শুধু কতিপয় লেখক আর পরিচ্ছেদ-অধ্যায়ের নামই হয়তো জানা হবে, একটা নির্দিষ্ট ক্লাস এবং নির্দিষ্ট মানে উত্তীর্ণ হওয়া যাবে না।
এরপর আপনি ইতিহাস জানতে যদি ফিজিক্স-ক্যামিস্ট্রি নিয়ে ঘাটাঘাটি করেন, তাহলে দুয়েকটা ফিজিক্স ক্যামিস্ট্রি বই এবং সে বইয়ের অধ্যায় সম্পর্কে জানবেন, সর্বোচ্চ হলে শুধু দুয়েকটা থিউরি জানবেন, বাট ইতিহাসের পাণ্ডিত্য অর্জন হবে না! আদু ভাই হয়ে বছরের পর বছর একই শ্রেণিতে পড়ে থাকতে হবে।
বহুমুখী এবং বাহুমাত্রীক সিলেবাস হচ্ছে ফালতু আলাপ। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে, নির্দিষ্ট আদর্শ আর নির্দিষ্ট মানে উত্তীর্ণ হওয়া যাবে না।
আমরা সিলেবাস প্রনোয়ণ করি কী জন্য? বা একটা প্রতিষ্ঠানের সিলেবাস তৈরি হবে কী জন্য? একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য-লক্ষ্য, আদর্শকে সামনে রেখে, একটা সুনির্দিষ্ট মানে উত্তীর্ণ করার লক্ষ্যকে সামনে রেখেই তো। তাই না?
এইটা পড়ো, সেইটা পড়ো, এইটা জানা ছাড়া মুক্তি নেই, ওইটা জানা ছাড়া উপায় নেই; এসব হচ্ছে পাগলামি। জ্ঞানবাজী। আর সর্বোপরি এসব শাহবাগীদের বৈশিষ্ট্য। শাহবাগীরা যেভাবে বলে মোল্লারা কুরআন হাদিস ছাড়া কিছুই জানে না, এদের দ্বারা কিছুই হবে না, এরাও তদ্রূপ। আরেহ, মোল্লাদের কাজ নবুওয়াতি মিরাসের প্রতিনিধিত্ব করা, তাদের কাজ বটতলার উপন্যাস রচনা করা না।
তদ্রূপ আমাদেরকে কেউ কেউ বলেন মাওলানা মওদূদী রহঃ এর এককেন্দ্রিক পাঠ বা এককেন্দ্রিক সিলেবাস পাঠ করি আমরা ; আসলে এরাও ইন্টেলেকচুয়াল ইসলামি শাহবাগী, এরা না আন্দোলনের মেজাজ বুঝে, না সিলেবাসের পাঠ বুঝে। আমাদের সিলেবাসের পাঠ শুধু এই জন্য না যে, ফাঁকা বুলি সমৃদ্ধ তাত্ত্বিক জন্ম দেবো। আমাদের সিলেবাস-পাঠের উদ্দেশ্য হচ্ছে খোদার জমিনে তার খেলাফত প্রতিষ্ঠার উপযোগী লোক তৈরি করা। ময়দানে আরো বীরের বেশে ভূমিকা রাখার মত ঈমান আর আধ্যাত্মিকতা সৃষ্টি করা। আমাদের পাঠ এই জন্য নয় যে, নিজেকে প্রগতিশীল হিসেবে উপস্থাপন করা, আমাদের সিলেবাস পাঠের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইকামাতে দ্বীনের পথে একাগ্রতার সাথে আরো নিবিড়ভাবে একজন মানুষকে নিয়োজিত করা!
এরা অনেকেই নাকি জ্ঞানের বিশৃঙ্খলা দূর করতে চায়, জ্ঞানের বিশৃঙ্খলা দূর করতে নাকি আপনাকে দুনিয়ার সবই পড়তে হবে! অথচ দেখুন, সাহাবায়ে আজমাইন দুনিয়ার কয়টি বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন? সাহাবায়ে কেরামের কথা আনলে আবার ওনার কিছুটা নাখোশ হয়ে পড়ে! কিন্তু দেখুন, ইমাম আবু হানিফা থেকে শুরু করে উলামায়ে আরব'আ; তারা কয়টা বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন? ইমাম তাইমিয়া, ইমাম বান্না? সাইয়েদ কুতুব?
মাওলানা মওদূদী রহঃ অনেক বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন ঠিক আছে, কিন্তু তিনি সবকিছুর মূলে রেখেছেন ইকামাতে দ্বীন। সব কিছুর মূলে ছিলো তার আন্দোলন-সংগঠন।
তাই ইকামাতে দ্বীন, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর পথে সক্রিয় থাকার জন্যই পড়া জরুরি। এছাড়া পড়ার নসীহত প্রদান করা হচ্ছে অকর্মন্য বিপ্লবী সিম্প ও শাহবাগীদের বৈশিষ্ট্য। এরকম বৈশিষ্ট্য ধারণকারীদের একজন ভাই অবশ্য একবার বুক সেক্সুয়াল উপাধি দিয়েছেন। আমার কাছে এদের জন্য এই উপাধিটাও পারফেক্ট মনে হইছে।
একটা কথা হলো যে, আমরা মওদূদী রহঃকে যেভাবে পাঠে রেখেছি, রেখেছি কুতুব-বান্না-দেহলভী- বেগভীচ এবং এরবাকানদেরকেও। আমরা কার থেকে কী এবং কতটা নেয়া জরুরি সে আলোকেই সিলেবাস সাজিয়েছি।
আমাদের সিলেবাস তৈরির উদ্দেশ্য বিপ্লবী সিম্প এবং হিজাবি ফেমিনিস্ট তৈরি না! খোদার জমিনে তার দ্বীন কায়েমের উপযোগী ঈমানদার মুজাহিদ সৃষ্টি!
যে জ্ঞান-গবেষণা আমাদের তাক্বওয়ার মান কমিয়ে দেয়, আমলের প্রেরণা দাবিয়ে দেয়, ইকামাতে দ্বীনের সংগ্রামের মহান মুজাহিদদেরকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা শেখায়, খোদার পথের সংগ্রাম থেকে দূরে সরিয়ে দেয় কিংবা নিষ্ক্রিয় করে দেয় ; সে জ্ঞান গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।
জ্ঞান-গবেষণার ফলাফল তো হবে শিরক বিদ'আত আর নিফাকি ও ফাসেকি মুক্ত জীবন গঠন। ইখলাস আর আমলের উন্নয়ন ঘটানো ; জ্ঞান গবেষণার প্রয়োজন তো যোগ্য মুজাহিদ সৃষ্টি করার জন্যে , তা না করে যদি জ্ঞানের জাগরণ নাম দিয়ে নারী পুরুষের ফ্রি মিক্সিং চালু করা হয়, নিকাব খোলানোর বন্দোবস্ত করা হয়, তাহলে প্রয়োজন নেই সে জ্ঞানের। আল্লাহর রাসুলের জ্ঞান ছিলো পর্দার অন্তর্ভুক্ত করা। আর এসব সিম্প জ্ঞানের জাগরণের নাম দিয়ে আগে যারা ভালো পর্দা করতো, তাদের পর্দায় শিথিলতা আনায়। কী আশ্চর্য ইসলামি জাগরণ করছে এরা !
~লিখেছেন : রোহান আব্দুল্লাহ

মন্তব্য: ০