Alapon

ইমরান খানের বিদায় ও ভাবনার কিছু বিষয়...



গত শনিবারে অনাস্থা ভোটে হেরে প্রায় সাড়ে তিন বছরের শাসনের অবসান হয় ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকারের।

ইমরান খানের এ পতনকে আমেরিকার পরিকল্পনায় সূচিত সংসদীয় ক্যু বললে খুব একটা ভুল হবে না।

এটা নিসন্দেহে বলা যায় ইমরান খান আমেরিকান ব্লক থেকে একেবারেই বের হয়ে আসতে চাচ্ছিলেন।আপাতত চীন রাশিয়ার দিকে ঝুকে পরবর্তীতে একটা স্বাধীন মুসলিম ব্লক তৈরির মনোবাসনা ছিল।

কিন্তু ইমরান খানের এ দুঃসময়ে কাউকেই এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।যে ইমরান কাশ্মীর ও ফিলিস্তিন ইস্যুতে যতটুকু সরব সেই ইমরান উইঘুরের মুসলমানের ব্যাপারে ততটুকুই নীরব।কারণ চীন তাতে অখুশি হবে।কিন্তু চীন কি ইমরানের পতনকে ঠেকাতে এগিয়ে এসেছে? এক কথায় না।এর দ্বারা চীন আবারো প্রমান করেছে পড়ে যাওয়া শক্তির সাথে তারা নাই।

ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলো যে অভিযোগ নিয়ে এসেছে তার মুল হচ্ছে অর্থনৈতিক অধোগতি ও ভুল পররাষ্ট্রনীতি।

এখন যারা ক্ষমতায় এসেছে এরা কি পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক পরাশক্তি বানিয়ে ফেলবে? একদমই না।বরং পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা আরো তলানীতে গিয়ে ঠেকবে।পররাষ্ট্রনীতি আরো নতজানু হবে।

নাওয়াজের ভাই শাহবাজ (মুসলিম লীগ)ও আসিফ জারদারির ছেলে বিলাওয়াল জারদারি(পিপলস পার্টি) উভয়ই দুর্নীতিবাজদের উত্তরসুরী।আর মাওলানা ফজলুর রহমানের ভুমিকা বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ।

সার্বিক দিক বিবেচনা করলে ইমরানের পতন হওয়াটাই স্বাভাবিক।কারণ, ইমরান খানের দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে নাই।সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ১৭২ টি আসন।সেক্ষেত্রে ইমরানের দলের ছিল ১৪৯টি।বাকি গুলো তিনি পুর্ণ করেন এমন কিছু রাজনৈতিক দলের সাথে মিশে যেগুলো তার নীতি আদর্শের পুরোপুরি বিপরীত।যেমন পিপিপি(ক্বাফ);যার প্রধানকে ইমরান নিজেই ডাকাত বলে অভিহিত করেছেন, বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি; যারা বেলুচকে পাকিস্তান থেকে আলাদা করার দাবী করে, মুত্তাহিদা ক্বওমী মুভমেন্ট; যাদের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদ ও ভারতের 'র' এর সাথে সংযোগের অভিযোগ আছে।

ইমরান খানকে আমরা সবাই অত্যন্ত সৎ ও মানবহিতৈষী হিসেবে জানি।দূর্নীতি, বিলাসী ও অনাড়ম্বর জীবনের প্রতি তার কোন মোহ নাই।ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় তার ভুমিকা অত্যন্ত সোচ্চার।হেলথ কার্ড,গরিবের আবাসন ও বিলিয়ন গাছে সবুজ পাকিস্তান এগুলো তার জনসমর্থন বাড়িয়েছে ঠিকই কিন্তু আমেরিকা বিরোধী অবস্থান ও এর ফলস্বরূপ সামরিক এস্টাবলিশমেন্টের সাথে দূরত্ব, সর্বোপরি পাকিস্তানের রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ইমরানের পতনকে ত্বরান্বিত করেছে।

ইমরান খানের পতনকালে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান সহ পাকিস্তানের একটি ইসলামি দলও তার পাশে দাঁড়ায়নি।অথচ ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামী'র সাথে কোয়ালিশন করে ইমরানের দল খায়বার পাখতুনখোয়ায় একটি সফল সরকার পরিচালনা করেছিল।কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ইসলামি দলগুলোকে সংসদ থেকে দূরে রাখতে সামরিক এস্টাবলিশমেন্টের সাথে একইভাবে কাজ করেছেন ইমরানও। ইমরান খান নিজে ইসলামপন্থী হলেও ইসলামী দলগুলোর সাথে তার বেশ দূরত্ব ছিল।

ইমরানের খানের মতো সৎ, নির্মোহ শাসকের খুব প্রয়োজন পাকিস্তানের তবে সেটা নীতিহীন, দুর্নীতিবাজদের সাথে কোয়ালিশন করে নয় বরং আদালত ও ইনসাফের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা দলের সাথে।

জন্মের পর থেকে ভারতের রাজনৈতিক কাঠামো যত শক্তিশালী হয়েছে পাকিস্তানের ততটাই খারাপ হয়েছে।ভারতের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উত্থান মোকাবেলায় পাকিস্তানে একটা শক্তিশালী,উন্নয়নকামী সরকারের বড্ড প্রয়োজন ছিল।

যাইহোক ইমরান খানের এ পতনের মধ্য দিয়ে একটা বিষয় পরিষ্কার যে, সিস্টেমের ভিতরে থেকে সিস্টেমকে পরিবর্তন করতে হলে গভীর ক্ষমতা বলয়ের ভিত্তি মজবুত করতে হবে, একটু সময় নিয়ে দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে হবে নতুবা সিস্টেমের বাইরে বিকল্প পন্থা খুঁজে বের করতে হবে।

- কাশেম আল মামুন

পঠিত : ৩১৫ বার

মন্তব্য: ০