Alapon

আজ শহীদ সোহানের ৬ষ্ঠ শাহদাতবার্ষিকী



সোহান তার ছোট বোনকে সাথে নিয়ে অপেক্ষা করছিল মায়ের। মা আসবেন ঢাকা থেকে। মাকে এগিয়ে নিতে জামতলায় অপেক্ষা করছিল সোহান ও মাসুমা।

এইসময় একটি ইজিবাইকে চারজন লোক এসে দাঁড়ায় তাদের সামনে। টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তুলে সোহানকে। কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয় মাসুমা। তারপর সবাইকে খবর দেয়। সোহানকে সাদা পোষাকে তুলে নিয়ে যায় ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ থানার দুই এসআই নীরব ও নাসির।

ইন্টারের ছেলে ছিল সোহান। ঝিনাইদহের নূর আলি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। এটা ১০ এপ্রিল ২০১৬ সালের কথা। এরপর আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না সোহানকে।

সোহানের অপরাধ সে ছাত্রশিবিরের কর্মী। এই অপরাধে তাকে অপহরণ করে পুলিশ। সবাই খুঁজতে থাকে সোহানকে। না, কোথাও পাওয়া যায় না তাকে। পুলিশ তার অপহরণের কথা অস্বীকার করে। মামলা, জিডিও কিছুই গ্রহণ করে নি।

১৭ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে সোহানের পরিবার। কিছু পত্রিকায় রিপোর্ট হয়। তারপরও সোহানের খোঁজ পাওয়া যায়নি কোথাও। পুলিশ সাহায্য করা তো দূরের কথা বরং অস্বীকার করে যাচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনের পর জিডি নিয়েছে তবে হুমকি ধামকি দিয়েছে। সোহানের পরিবারকে জঙ্গী পরিবার বলেছে।

তার পরেরদিন সোহানের মা স্থানীয় এমপি আনোয়ারুল আজিমের কাছে যান ছেলে বাঁচাতে। আনোয়ারুল আজিম তাকে তাড়িয়ে দেন। প্রায় ৩০০ গ্রামবাসী মিলে এমপির কাছে গিয়ে অনুরোধ করে পুলিশের কাছ থেকে সোহানকে ছাড়িয়ে আনতে। তারা এও বলে, আগামী দিন থেকে সোহান ও সোহানদের পরিবার আওয়ামী লীগ করবে।

এমপি আনোয়ারুল আজিম তাদের বলে, তোদের আওয়ামীলীগ করা লাগবে না। আওয়ামী লীগ করার জন্য লোকের অভাব হবে না।

এরপর ২০ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে কালীগঞ্জ থেকে প্রায় ৫০ কি.মি. দূরে চুয়াডাঙ্গায় সোহানের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভুলাটিয়ার মাঠে ডান হাত ভাঙ্গা, বাম চোখ উপড়ানো মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায় শহীদ মহিউদ্দীন সোহানের।

কান্নায় ভেঙে পড়ে সোহানের গ্রামবাসী! তারা তাদের একটি সন্তানকে হারিয়ে ফেললো। এভাবে সারা বাংলাদেশে হাসিনা তার লেলিয়ে দেওয়া গুণ্ডা বাহিনী দিয়ে শিবিরের ছেলেদের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়েছে।

শহীদ সোহানের মা সেদিন আর্তনাদ করে বলেছিলেন "মারবেই যখন আমার বাবুটারে। চোখ দুইটা তুইল্যা নিলো ক্যান বাবুর??"

আজ শহীদ সোহানের ৬ষ্ঠ শাহদাতবার্ষিকী। এই রমজান মাসে দোয়া করছি, হে মালিক! হাসিনা ও তার গুণ্ডাদের জন্য ফেরাউন ও তার বাহিনীর পরিণতি কবুল করো। জালিমদের জন্য লাঞ্ছনা ও তোমার অভিশাপের ফয়সালা করে দাও। আমিন।

পঠিত : ৯৫৩ বার

মন্তব্য: ০