Alapon

রিজিকের বিষয়ে অন্তরে পেরেশানি তৈরী হলে পবিত্র কোরআন হাতে নিন...



রিজিকের বিষয়টা নিয়ে আমরা কমবেশী সবাই অনেক পেরেশানির মধ্যে থাকি এবং আল্লাহর কাছে মানুষ যতো বিষয়ে দোয়া চায় তার তালিকা করলে দেখা যাবে রিজিকের জন্য বান্দার দোয়া সেই তালিকার প্রথম এক, দুই, তিনের মধ্যেই থাকবে।

অথচ রিজিকের তুলনার একটি সুন্দর উদাহরণ আছে আল কোরআনের নাজিলের মধ্যে। এবং শুধু বোঝার সুবিধার্থে আমরা আল কোরআনকে যদি নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের প্রতি প্রদত্ত রিজিক হিসেবে ধরি, তাহলে রিজিকের বিষয়টা উপলদ্ধি করা আমাদের জন্য একদম সহজ হবে।

মনে করি, পুরো কোরআনটা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের প্রতি রিজিক হিসেবে দেয়া হয়েছে, যা তাঁর নবুয়তের দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে নাজিল হয়েছে, এবং সেটাই ছিল তার জীবনের রিজিক।

এখন কখনো বড় সুরা নাজিল হয়েছে, কখনো ছোট সুরা নাজিল হয়েছে, কখনোবা এক সুরা থেকে অন্য সুরা মাঝে ছিল দীর্ঘ বিরতি, কখনোবা স্বল্প বিরতি আবার কখনোবা একটানা বিভিন্ন সুরার বিভিন্ন আয়াত নাজিল হয়েছে। কখনো তা ছিল জীবনের আপাত সহজ শান্ত সময়ে আবার কখনোবা তা ছিল অত্যন্ত কঠিন পরিবেশে।

এবং এই বিষয়ে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের কোন হাত ছিলনা যে, কখন কোন সুরা কতটুকু আয়াত তার উপর নাজিল হবে, বরং যেটা তাকদীরে নির্ধারিত ছিল ঠিক ততটুকুই নাজিল হয়েছে, তারচেয়ে কমও নয় আবার তার একটু বেশীও নয়। এবং এভাবে দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে একটানা ওহী নাজিলের পরে দেখা গেলো ৬৬৬৬ আয়াতের এক বিশাল কিতাব, যা তার তাকদীরে নির্ধারিত ছিল তা পূর্ণ মাত্রায় জিব্রাইল ফিরিশতা মারফত নাজিল হয়েছে।

এখানে উল্লেখ্য যে পবিত্র রমজান মাসের লাইলাতুল কদরের রাতে হেরা গুহাতে যে প্রথমবারের মতোন ওহী নাজিল হয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের উপর, হাদীসে বর্ণিত আছে পুরো পবিত্র কোরআন সেই পবিত্র কদরের রাতে প্রথম আসমানে নাজিল করা হয় এবং পরবর্তী তেইশ বছরে জিব্রাইল ফিরিশতা মারফত প্রয়োজনমত আয়াত ও সুরা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের প্রতি নাজিল করা হয়।
আমাদের জীবনের রিজিকের ব্যাপারটিও ঠিক তেমন। আমাদের পুরো জীবনের রিজিক ও তাকদীর নির্ধারিত। কিন্তু আমরা জানিনা কখন, কিভাবে, কতটুক পরিমানে তা আমাদের কাছে আসবে। কখনো তার প্রাপ্তি সহজ আবার কখনোবা তা কঠিন, কখনো একসাথে অনেক পরিমান রিজিক প্রাপ্ত হয় আবার কখনোবা দীর্ঘ সময় ধরে অল্প অল্প করে রিজিক প্রাপ্তি হয়। এবং পুরো জীবন শেষে হিসেব করলে দেখা যায়, যার যতটুকু রিজিক ছিল, হায়াত ছিল ততোটুকুই সে উপভোগ করেছে, তার চাইতে একটু বেশীও নয় আবার একটু কমও নয়। তবে রিজিকের এই পরীক্ষা কারো জন্য হয়তো সহজ আবার কারো জন্য একটু বেশী কঠিন।

এবং আবারো সেই কদরের রাত্রিতেই প্রথম আসমানে পরবর্তী এক বছরের রিজিক বা বাজেট পেশ করা হয়, এবং বছরের প্রতিদিন যার ভাগ্যে যতটুকুন রিজিক আছে ফিরিশতা মারফত প্রতিদিন সেই ব্যক্তির জন্য ততটুকু নাজিল করা হয়।

এমন ঘটনাও উল্লেখিত আছ, আসমানে দুজন ফিরিশতার দেখা হয়েছে এবং একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করছেন যে, আজকের দিনে তোমার কাজ কি? তো একজন বললেন, আমি আজকে ঐ জেলের জালে ঐ মাছটি ধরিয়ে দেব, এটা তার রিজিকে আছে এবং আরেকজন বললো, আমি ঐ গোয়ালার দুধ ফেলে দেব, কারণ সেটা তার রিজিকে আজকে নেই। এবং এভাবেই আল্লাহ কতৃক নির্ধারিত তাকদীর ও রিজিক প্রতিদিন প্রতিটি প্রাণীর কাছে পৌছে যায়, আলহামদু লিল্লাহ।

রিজিকের বিষয়ে অন্তরে পেরেশানি তৈরী হলে পবিত্র কোরআন হাতে নিন এবং রিজিকের একটি প্রত্যক্ষ নমুনা দেখুন যে, মহান আল্লাহ কিভাবে তার প্রিয় রাসুলের উপর দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে আল কোরআন নাজিল করেছেন, যদিও কাফেররা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে তা বাধা দেয়ার জন্য, কিন্তু অবশেষে আল্লাহর ইচ্ছাই বিজয়ী হয়েছে এবং আল কোরআন পুরোটাই নাজিল হয়েছে।

তাই আপনার জীবনে রিজিকের সাময়িক বাধা বিপত্তি আসলেও, পেরেশান না হয়ে মহান আল্লাহর উপর আস্থা রাখুন, ধৈর্য ধরুন, সৎভাবে চেষ্টা করতে থাকুন। মহান আল্লাহ আপনার রিজিক আপনাকে পূর্ণ মাত্রায় দেবেন, তার একটু কমও নয় কিংবা একটু বেশীও নয়।

- khan

পঠিত : ৫৭৫ বার

মন্তব্য: ০