Alapon

পর্দা নাকি নফসের দাসত্ব...



পর্দা উদ্দেশ্য ছিলো নিজেকে যথাসম্ভব অনাকর্ষণীয় করে রাখা ও নিজের সৌন্দর্যকে লুকিয়ে রাখার। আমরা অনেকেই পর্দার ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে ফেলি। এমনসব কাজকর্ম করে ফেলি যার ফলে আমাদের পর্দা নষ্ট হয়।

আমরা সবাই একরকম না। কেউ মোটা, কেউ চিকন। পর্দার পোশাকের ক্ষেত্রে নিজের পরিপূর্ণ পর্দা হবে এরকম বুরকা বেছে নেবো। আর সবসময় প্রয়োজন সাপেক্ষে একইরকম বুরকা কিনবো। যখন আরো ভালো পোশাক পেলে, যেটায় আরো ভালোভাবে পর্দা করা যাবে তখন সেটা কিনবো। কেনার সময় নিজের নিয়তের ওপর খেয়াল রাখবো কেন কিনছি। নিজের পর্দার জন্য নাকি শখ পূরণের জন্য। রঙিন বোরকা পরিহার করবো। এমন এক রঙের বোরকা কিনবো যা দৃষ্টি আকর্ষণীয় নয়। সেটা হতে পারে, কালো, ধূসর, খয়েরী অথবা জলপাই রঙের। আমাদের অনেকের বুরকার বা জিলবাবের বিশাল কালেকশন আছে। প্রয়োজন অনুসারে পর্দার পোশাক কিনবো। পর্দার পোশাক কেনার নামে অপচয় করবো না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি থাকবো। পর্দার পোশাক কেনার সময় দেখবো, কোনটা পড়লে আমাকে সুন্দর বা আকর্ষণীয় লাগবে না। কোনটা পড়লে আমাকে অনাড়ম্বর লাগবে।

আমরা অনেকেই হাতমোজার ওপর ব্রেসলেট, ঘড়ি ইত্যাদি পরি। নানান ডিজাইনের ব্যাগ বহন করি। ঘড়ি ও ব্যাগ অনেক সময় প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে এমন ঘড়ি, ব্যাগ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় এক্সেসোরিজ কেনা উচিত যেটা অন্য কারো দৃষ্টি কারবে না। যথাসম্ভব ট্রেন্ড এড়িয়ে চলতে হবে।

আমরা অনেকে দেখা যায়, বিয়ে বা পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানে সুন্দর আর জাঁকজমকপূর্ণ বুরকা পরি। কেন পরি কখনো নিজেকে জিজ্ঞেস করেছি?

পরিবার যদি জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক কিংবা সামান্য জাঁকজমকপূর্ণ বোরকা পড়তেও জোর-জবরদস্তি করে আমি কেন এক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদর্শন করবো? এতে তো আমার পর্দার আসলে উদ্দেশ্য পূরণ হয় না! আমি তো বোরকা-জিলবাব পরি নিজের সৌন্দর্য লুকানোর জন্য। এরকম সামান্য ছাড় দেওয়া থেকেই ধীরে ধীরে শুরু হয় ট্রেন্ড। আর ছাড় দিতে দিতে একসময় আমরা পর্দাকে বানিয়ে ফেলি সৌন্দর্য প্রকাশের নতুন মাধ্যম।

পরিবারের জন্য পর্দার ক্ষেত্রে এই সামান্য ছাড় দেওয়ার চিন্তাটা আসলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা মাত্র। আর আমরা সবাই জানি শয়তান মানুষকে ছোট ছোট ছাড়ের বাহানায় কত বড় বড় পাপের দিকে ঠেলে দেয়।

দুঃখজনকভাবে এখন বুরকারও নতুন নতুন ট্রেন্ড বের হয়। আমরাও অনেকে এসব ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ে দেই।যেমন এখন ট্রেন্ডে আছে কুইন নিকাব। আমার এরকম নিকাব কেনার ও পরার উদ্দেশ্যটা কি?

পর্দার পোশাক অনেক মূল্যবান। একে পরিধান করার পর এর সম্মান ও মহত্ত্ব ধরে রাখবো। একজন সম্ভ্রান্ত মুসলিমাহর মতো চলবো। তবে অহংকার করবো না। রাস্তাঘাটে চলাফেরার সময় আদব বজিয়ে রেখে চলবো। হাসি-ঠাট্টা করবো না। নিজের অঙ্গভঙ্গি সংযত করবো। দাঁড়ানোর সময়ও এমনভাবে দাঁড়াবো না যাতে দেখতে আকর্ষণীয় লাগে কিংবা শরীরের সাথে কাপড় আঁটসাঁট হয়ে লেগে থাকে ও শরীরের আকৃতি প্রকাশ পায়। যেমনঃ কোমড়ে হাত দিয়ে বা হেলান দিয়ে দাঁড়াবো বা বসবো না।

নিজের মধ্যে গাইরাত্ব সৃষ্টি করতে হবে। আমি বের হয়েছি আমার প্রয়োজনে। কেন অন্য মানুষকে আমি আমার হাসি, আমার কণ্ঠ বা শরীরের একাংশও আমি দেখতে দিবো। পাব্লিক প্লেসে নিজের আবেগ প্রকাশ করবো না। কপাল ও ভ্রু ঢেকে রাখবো। আমার কাছে আমার শরীরের একাংশও তুচ্ছ না।

ধীরে ধীরে আমরা পর্দার ক্ষেত্রে লেভাল আপ করতে পারি। চোখও পর্দা একটা অংশ। কারণ মেয়েদের চোখও অনেক আকর্ষণীয়। মেয়েরা আল্লাহ তা'আলার এমনই এক অপরূপ সৃষ্টি। যার একাংশও আকর্ষণহীন নয়। যারা অপারগ, চশমা ছাড়া দেখতে পারেন না, তাদের কথা ভিন্ন।

আমরা অনেকেই ফিংগারলেস হাত মোজা পরি। ফিংগারলেস হাত মোজা পড়া যেতে পারে লিখার ক্ষেত্রে। প্রয়োজন শেষে আবার ঢেকে রাখবো। সম্পূর্ণ হাত ঢাকতে ওপরে আবার হাতমোজা পড়বো। নিজের আঙুলগুলো কি আমার কাছে কি এতোটাই মূল্যহীন যে আমি তা সবাইকে দেখার জন্য উন্মুক্ত করে রাখি?

আমরা অনেকে রেস্টোরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করি। রেস্টোরেন্টে কখনো সাচ্ছন্দ্যে খাওয়া যায় না। আমাদের অনেকেরই অভ্যাস হয়ে গেছে তারা খেতে পারি। তবে খাওয়ার সময় হাতমোজা পড়ে খাওয়া যায় না। আমরা অনেকে ফিংগারলেস হাতমোজা পরে খাওয়া-দাওয়া চালিয়ে নেই। তবে এতে কি নন-মাহরামের সামনে আমার হাত উন্মুক্ত হয়ে পড়ছে না?

রেস্টোরেন্টে খাওয়া-দাওয়ার জন্য অনুৎসাহিত করলে আমরা কিছু বোন তেড়ে আসি। তর্ক করা শুরু করে দেই, "ইসলাম কি এতোটাই কঠিন নাকি?!"। আমি নিজে ভেবে দেখি আমার কাছে রেস্টোরেন্টে খাওয়াটাকি এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ?

ইসলামে মেয়েদের সযত্নে মুক্তার মতো লুকিয়ে রাখা হয়। কারণ সে অনেক দামী। সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে আমাকে ঘরে অবস্থানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে বাহির হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রেস্টোরেন্টে খাওয়াটাকি সেই প্রয়োজনের মধ্যে পরে?

নিজেকে আমি জিজ্ঞেস করি। আমি কি পর্দা করছি নাকি নিজের নফসের দাসত্ব করছি। রেস্টোরেন্টের খাবার খেতে মন চাইলে তা বাসায় এনেই খাওয়া যেতে পারে। রেস্টোরেন্টের মতো পরিবেশ চাইলে প্রয়োজনে বাসা সুন্দর করে সাজিয়ে নেবো।
ভ্রমণ করা ও কোথাও ঘুরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমি উপর্যুক্ত সকল বিষয় খেয়াল রাখবো।
বোরকা-নিকাব পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করা থেকে বিরত থাকবো। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ছবি দেওয়া মানে, নিজেকে সবসময় দেখার সুযোগ করে দেওয়া। আর এটা একজন রুচিশীল, সভ্য ও সম্ভ্রান্ত মুসলিমাহর বৈশিষ্ট্য হতে পারে না।

পর্দা সবসময় উত্তম ও পরিপূর্ণ হতে হবে। পর্দার শ্রেণিবিভাগ হয় না। উত্তম পর্দা, মধ্যম পর্দা বলতে কিছু নেই, যার একটা করলেই হবে। আমরা প্রয়োজনে ধাপে ধাপে পরিপূর্ণ পর্দার দিকে এগিয়ে যাবো। তবে মাঝপথে থেমে গেলে চলবে না।

সবসময় খেয়াল রাখবো যেন, আমার পর্দা যেন অন্যের জন্য ফিতনা না হয়। আমি নফসের না, নফস আমার দাস হবে। সে আমাকে কখনো যেন কাবু করতে না পারে।

কিছু অভ্যাস আমাকে ত্যাগ করা শিখতে হবে। কিছু অভ্যাস গড়তে হবে। শুধু মাত্র আমার রব, আমার প্রিয় যিনি আমাকে সবচেয়ে ভালোবাসেন সেই প্রেমময় আল্লাহর তা'আলার জন্য...

- সংগৃহিত

পঠিত : ৫৫৫ বার

মন্তব্য: ০