Alapon

লাইলাতুল কদর কী? আমাদের করণীয় কী?



ক্বদর অর্থ কী?
ক্বদর অর্থ: মহাত্ম্য , সম্মান, তাক্বদীর(ভাগ্য)

লাইলাতুল ক্বদর কী?
লাইলাতুল ক্বদর অর্থ মহিমান্বিত রাত, মহাসম্মানিত রাত, তাক্বদীর নির্ধারণের রাত।

লাইলাতুল ক্বদর কোন রাত:
১. রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “রামাদানের শেষ দশকে লাইলাতুল-কদর অন্বেষণ কর।” [বুখারী: ২০২১]
২. আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “রমযান মাসের শেষ দশকের বিজোড় (রাত) গুলিতে শবেক্বদর অনুসন্ধান কর।” (বুখারী ২০১৭)

লাইলাতুল ক্বদর কেন মহিমান্বিত:
১. এই রাত্রে কুরআন নাযিল হয়েছে, إِنَّآ أَنزَلْنٰهُ فِى لَيْلَةِ الْقَدْرِ
২. এ রাত্রিতে মানুষের এক বছরের তাক্বদীর তথা অবধারিত বয়স, মৃত্যু, রিফিক, বৃষ্টি ইত্যাদির পরিমাণ লাওহে মাহফুয থেকে নির্দিষ্ট ফেরেশতাগণকে দেয়া হয়।
تَنَزَّلُ الْمَلٰٓئِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ
ঐ রাতে (মালাইকা) ফিরিশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের রবের অনুমতিক্রমে।
فِيْهَا يُفْرَقُ كُلُّ امْرٍحَىِىيْمٍ
এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয় । সূরা আদ-দুখান: ৪

৩. এই রাতের মর্যাদা হাজার মাসের চেয়েও বেশি
لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ

৪. এই রাতের ফজর পর্যন্ত শান্তি অবতীর্ণ হয়।
سَلٰمٌ هِىَ حَتّٰى مَطْلَعِ الْفَجْرِ

৫. এই রাত বরকতময়
إِنَّآ أَنزَلْنٰهُ فِى لَيْلَةٍ مُّبٰرَكَةٍ ۚ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ
আমি ইহা অবতীর্ণ করেছি এক মুবারাক রাতে, আমিতো সতর্ককারী। সূরা আদ-দুখান: ৩

৬. এই রাতে অতীতের গুনাহ মাফ ক’রে দেওয়া হয়
রাসূল সা. বলেছেন, “যে ব্যক্তি লাইলাতুল ক্বদরে ঈমানসহ নেকীর আশায় কিয়াম করে (নামায পড়ে), তার অতীতের গুনাহ মাফ ক’রে দেওয়া হয় ।”
(সহীহুল বুখারী ৩৫, ৩৭, ৩৮, ১৯০১, ২০০৮, ২০০৯, ২০১৪, মুসলিম ৭৬০,

লাইলাতুল কদরের আলামত:
এ রাত বেশি ঠাণ্ডাও হয় না, বেশি গরমও হয় না, বরং তা হয় উজ্জ্বল
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমাকে লায়লাতুল কদর দেখানো হয়েছিল, তবে পরবর্তীতে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। এ রাত হলো রমজানের শেষ দশদিনের রাতগুলোয়। এ রাত হলো মুক্ত ও উজ্জ্বল, যা ঠাণ্ডাও না গরমও না।’(তিরমিজি)

লাইলাতুল ক্বদরে কী ইবাদত করবো:
১. ইতিকাফ করা:
রমজানের শেষ দশকের পুরোটাতেই ইতিকাফ করতে হয়, তাতে লাইলাতুল কদর পাওয়ার সম্ভাবনা নিশ্চিত হয়। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সা. রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)

২. কিয়ামুল লাইল/সালাত আদায় করা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি শবেক্বদরে (ভাগ্যরজনী অথবা মহীয়সী রজনীতে) ঈমানসহ নেকীর আশায় কিয়াম করে (নামায পড়ে), তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয় ।
(সহীহুল বুখারী ৩৫, ৩৭, ৩৮, ১৯০১, ২০০৮, ২০০৯, ২০১৪, মুসলিম ৭৬০, তিরমিযী ৬৮৩, নাসায়ী ২১৯৮ থেকে ২২০৭, ৫০২৭, আবূ দাঊদ ৩১৭১, ১৩৭২

৩. দুআ করা
আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত একদা আমি নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি বলুন, যদি আমি লাইলাতুল ক্বদর পাই তাহলে তাতে কোন (দুআ) পড়ব? তিনি বললেন, এই দুআ, আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউবুন (কারীমুন) তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নী। অর্থাৎ, হে আল্লাহ! নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল, (মহানুভব) ক্ষমা ভালবাস। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
(আহমহদ ২৫৩৮৪, তিরমিযী ৩৫১৩, নাসাঈর কুবরা ৭৭১২, ইবনে মাজাহ ৩৮৫০, হাকেম ১৯৪২)

৪. নফল ইবাদত
রাসূল সা. বলেছেন, “যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদাত করে, তাঁর পিছনের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে”।
এই রাতের উত্তম আমল তাহাজ্জুদ সালাত, কুরআন পাঠ, সাদাকাহ ইত্যাদি।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে লাইলাতুল ক্বদরের বরকত হাসিল করার তৌফিক দান করুন।

পঠিত : ৮৯১ বার

মন্তব্য: ০