Alapon

••লিবারেলিজম••



আমরা প্রায়ই শুনে থাকি অমুক মুভিতে তমুক নায়িকা 'সাহসী দৃশ্যে' অভিনয় করেছে। এখানে সাহসী দৃশ্য অর্থ কী? নায়িকা কী বাঘের সাথে লড়াই করে নিজ সন্তানকে উদ্ধার করেছে? কিংবা বড় শত্রু বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে জাতিকে মুক্ত করতে ভূমিকা রেখেছে? উত্তর হবে না। মুভিতে নায়িকার সাহসী দৃশ্য বলতে এখানে ভিন্ন একটি বিষয় ইঙ্গিত করা হয়, আর তা আমরা সবাই জানি। যার নাম হওয়া উচিত ছিল রগরগে নোংরা দৃশ্য, অশ্লীন দৃশ্য বা বেহায়া কামুক দৃশ্য‌। এখানে নগ্নতা-অশ্লীনতা প্রকাশের নাম দেয়া হয়েছে সাহসীকতা। 'সাহসী' শব্দের অভিধানিক অর্থ আর পারিভাষিক অর্থ এখানে ভিন্ন।
আবার অ্যামেরিকাতে গর্ভপাত/শিশুহত্যার সাথে জড়িত সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান এর নাম হলো প্ল্যান্ড পেরেন্টহুড ফেডারেশন অব অ্যামেরিকা (Planned Parenthood Federation of America,PPFA)। এরা গর্ভপাতের আইনী বৈধতার জন্য আন্দোলন করাকে নাম দেয় প্রো-চয়েস(Pro Choice) অবস্থান‌।[1] একজন নারীর শরীরে কী করা হবে আর কী করা হবে না, সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার কেবল সেই নারীর থাকা উচিত। শুনতে খুব ভালো। কিন্তু এর বাস্তবতা কী? একজন মহিলা বিভিন্ন লোকের সাথে যিনা করে বেড়াবে, কিন্তু প্রেগনেন্ট হয়ে গেলে কোন রকমের মোরাল অথবা আইনি অস্বস্তি ছাড়াই সে যেন এই শিশুকে হত্যা করতে পারে। আর এই হত্যাকাণ্ড যেন জনগনের ট্যাক্সের টাকায় করা যায় এই হলো তাদের আন্দোলনের দাবি। এই অবস্থান আদতে প্রো-কিলিং, এর নাম হওয়া উচিত ছিল প্রো-কিলিং মুভমেন্ট। কিন্তু তারা এর নাম দিয়েছে প্রো-চয়েস। এভাবে পশ্চিমা বিশ্ব বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ে টার্মোলজির(পরিভাষার) চক্ররে ফেলে মানবজাতিকে বিভ্রান্ত করে আসছে। তাদের প্রতিটি আর্দশের নাম ও শ্লোগানের মধ্যেই ভিন্ন ভিন্ন টার্মোলজির বাতাবরণে বাস্তবতা আড়ালের প্রবণতা রয়েছে।
এভাবেই লিবারেলিজম, স্বাধীনতা, সাম্য, নারীবাদ, গনতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতাসহ এ জাতীয় পশ্চিমা টার্মগুলোর সুন্দর সুন্দর নাম ও শ্লোগানের আড়ালে এর ভেতরের বিষাক্ত দর্শনগুলোর বাস্তবতাকে আড়াল করে থাকে। তাই তাদের মতাদর্শগুলো বুঝতে শুধু শব্দ নয়, তাদের দেয়া এই নামের আড়ালে প্রকৃত বাস্তবতা কী তা জানার প্রয়োজন পড়ে। সপ্তদশ শতকে ইউরোপের কথিত 'এনলাইটেনমেন্টের' হাতধরে যে মতবাদগুলো বিশ্বে প্রভাব বিস্তার করেছে তার মধ্যে আদি ও সবচেয়ে প্রভাবশালী দর্শন হলো লিবারেলিজম। যার অনুবাদ অনেকে করে থাকেন উদারবাদ বা উদারনীতিবাদ হিসেবে। যা একাধারে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক ফিলোসফি। এটি মানবজীবনে ধর্মের অনুরূপ ফাংশন করে ও আলাদা জীবন ব্যবস্থা হিসেবে স্বতন্ত্র মূলনীতি প্রদান করে।
গত ৩৫০ বছরে লিবারেলিজম অনেক বড় বড় বিপ্লব ও পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে। যেমন: ফরাসি বিপ্লব, আমেরিকার স্বাধীনতা আন্দোলন, উসমানি খিলাফতের তানযিমাত (যা পরবর্তিতে উসমানি খিলাফতের ধ্বংসের কারণ হিসাবে প্রমানিত হয়) প্রভৃতি। আধুনিক যুগে জাতিসংঘ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন, পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের সংবিধান ও আইন এবং প্রভাবশালী এনজিওগুলোর নীতিমালায় লিবারেলিজমের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রচ্ছন্ন প্রভাব রয়েছে। মোটাদাগে সারাবিশ্বের জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় লিবারেলিজমের প্রভাব স্পষ্ট। তাছাড়া লিবারেলিজমের আমাদের জাতীয়, আন্তর্জাতিক স্টাবলিশমেন্টের মানস, নৈতিকতা ও আদর্শবাদে শক্তিশালী অবস্থানে আছে। আজ আমরা এ প্রবন্ধে লিবারেলিজম নিয়ে মৌলিক কিছু বিষয় আলোচনার আশা রাখি।
লিবারেলিজম কী:
Liberal শব্দটি এসেছে মূলত ল্যাটিন Liber শব্দ থেকে যার অর্থ Free (মুক্ত)। পশ্চিমা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক দর্শনে Free শব্দটিও বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়। Liberal শব্দের ইংরেজি অর্থ উদারতা। লিবারেলিজম বা উদারতাবাদ একটা দর্শন কিন্তু নামে উদারতা থাকলেও এতে এই দর্শনের সাথে দান-খয়রাতের বিশেষ কোন সম্পর্ক নেই, বরং উল্টোটা আছে। এমনকি লিবারেলিজম ভিন্নমতের তথা ভিন্ন দর্শনের সাথে সর্বদা সহনশীলও না। ফ্রেঞ্চ রেভুলিউশন ছাড়া কোনদিন লিবারেলিজম পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হতোনা। কিন্তু এই বিপ্লবের ইতিহাস অত্যন্ত রক্তাক্ত এবং নিষ্ঠুর। কেবল লিবারেল দর্শন প্রচার না করার অপরাধেই অগনিত মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল।
লিবারেলিজম তাহলে উদারতার আড়ালে কীসের মুক্তির কথা বলে? এ মুক্তি হচ্ছে, স্রষ্টা বা অন্যকোন শক্তির আনুগত্য থেকে মুক্তির। লিবারেলিজমের ডিসকোর্স হলো মানুষ স্বনির্ভর, স্বাধীন এবং সার্বভৌম। শর্তহীনভাবে যেকোন ইচ্ছে, নিজের যেকোন চাহিদা ও কামনাবাসনা মেটানোর অধিকার তার আছে। প্রতিটি মানুষের অধিকার আছে এই শয়তানী আত্ম-উপাসনায় নিমগ্ন হবার। সবার উচিৎ অপরের স্বাধীনতা বাস্তবায়নের এই অধিকারকে শ্রদ্ধা করা।
"সমাজে ব্যক্তির স্বাধীনতার অধিকার ও মর্যাদাতে কোন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ সমর্থনযোগ্য নয়"- এই হচ্ছে উদারনীতিবাদ বা লিবারেলিজমের এর মূল দর্শন। রাষ্ট্র, সমাজ ও অর্থনীতি ক্ষেত্রে বিভিন্ন দার্শনিক বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে উদারনীতিবাদকে ব্যাখ্যা করেছেন বা করে থাকেন। লিবারেল দার্শনিকরা মানুষের ব্যক্তি-স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সহনশীলতা, মুক্তবাজার অর্থনীতি, রাষ্ট্রের ক্রমহ্রাসমান হস্তক্ষেপ(Minimal State) এর উপরে দাঁড়িয়েই কথা বলেন বা তর্ক-বিতর্ক করেন। মূলত উদারবাদীরা ব্যক্তির নিজ ক্ষমতা ও বিকাশের উপর ভিত্তি করেই গড়ে তোলেন তাদের মতবাদ। উদারবাদের একজন কট্টর প্রবর্তক জন স্টুয়ার্ট মিলের ভাষায় লিবারেলিজম হলো,
"Over himself,over his own body,and mind,the individual is sovereign" [2]
(নিজের উপর, নিজের দেহ এবং মনের উপরে ব্যক্তিই সার্বভৌম)
এই সার্বভৌম ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর যে কোন হস্তক্ষেপেই উদারবাদীদের জোর আপত্তি; উদারবাদীরা হচ্ছে নিরঙ্কুশ ব্যক্তি-স্বাতন্ত্রবাদী। অর্থাৎ প্রতিটি ব্যক্তিই নিজের ইলাহ। আল্লাহর বিধানের কাছে আত্মসমর্পণের পরিবর্তে নিজের খায়েসাতের কাছে আত্মসমর্পণ করা। যে কোন বিষয় চয়েস করার অধিকার কেবলমাত্র তার নিজের। বলা যায় লিবারেলিজমের পরম লক্ষ্য হচ্ছে ইউটিলিটারিয়ান প্রিন্সিপাল। প্লেযার প্রিন্সিপাল। অর্থাৎ আমার যা মনে চাইবে আমি তাই করবো, কারও বাধা দেয়ার অধিকার নেই।
লিবারেলিজম মানব জীবনে একটি স্বতন্ত্র ধর্ম রূপে আত্মপ্রকাশ করে, লিবারেলিজমেরও গড রয়েছে। লিবারেলিজমের গড হচ্ছে - ব্যক্তির দেবত্ব অর্জন। আর এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সমাজ, রাষ্ট্র, ব্যক্তি, ধর্ম কেউ তাকে বাধা প্রদান করতে পারবে না। লিবারেল রাষ্ট্রের কাজ হলো ব্যক্তির কর্ম ও অপকর্মের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অর্থাৎ লিবারেজিমের ধারণায় ব্যক্তি চিন্তা, কর্ম ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন ও সার্বভৌম। আল্লাহর মর্জি, ইচ্ছা ও বিধানের সামনে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের পরিবর্তে জীবনের মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করা হয় নিজের খায়েসাত তথা প্রবৃত্তিকে। মানুষ আল্লাহর দাস না হয়ে উঠে প্রবৃত্তির দাস। যদিও আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বারবার প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন:
“আপনি কি তাকে দেখেছেন যে তার নিজের পছন্দ অপছন্দ বা নিজের নফসের খাহেশাত কে নিজের মা’বুদ বানিয়ে নিয়েছে? আপনি কি তার উকিল হবেন?”[3]
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে: “তার চেয়ে বেশি বিভ্রান্ত আর কে হতে পারে যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়েত ব্যতিরেকে নিজের প্রবৃত্তির ভালোলাগা মন্দলাগার অনুসরণ করে? নিশ্চয় আল্লাহ অত্যাচারী সম্প্রদায় কে হেদায়েত প্রদান করেন না।"[4]
রাসূলুল্লাহ সা. বলেন: “তিনটি বিষয় মানুষকে ধ্বংস করে: অপ্রতিরোধ্য লোভ-কৃপণতা, নিজ প্রবৃত্তির ভালোলাগা মন্দ লাগার আনুগত্য, মানুষের তার নিজ বিষয়ে পরিতৃপ্তি।”[5]
ব্যক্তিগত পছন্দ বা প্রবৃত্তির অনুসরণের অর্থ বিশ্বাস বা কর্মের ক্ষেত্রে আল্লাহ বা তাঁর রাসূলের কোনো নির্দেশ, শিক্ষা বা সুন্নাত অবগত হওয়ার পরে কোনো যুক্তি, তর্ক বা অন্য কোনো অজুহাতে তা পরিত্যাগ করা বা ব্যাখ্যা করে উড়িয়ে দেওয়া। মুমিনের নাজাতের একমাত্র উপায় হলো, নিজের মন-মর্জিকে সুন্নাতের অনুগত করে নেওয়া। কুরআন বা হাদীসের কোনো নির্দেশ বা শিক্ষা যদি নিজের পছন্দের বাইরে হয়, অথবা নিজের বা সমাজের প্রচলিত কর্মের বিপরীত হয়, তবে নিজের রুচি পরিবর্তন করে তাকে আল্লাহর বিধানের অনুগত করতে হবে। লিবারেল ডগমার অনুসারী হয়ে প্রকৃত্তিকে খোদা মানা যাবে না।
.
মূলনীতি ও সমালোচনা:
লিবারেলিজমের মতে ব্যক্তি স্বাধীন, তার যা ইচ্ছে চিন্তার, বলার ও করার স্বাধীনতা রয়েছে। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে কারো যদি চুরি, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ করতে ইচ্ছে হয় তাহলে তাকে কী এর স্বাধীনতাও দেয়া হবে? লিবারেলদের মতে উত্তর হবে, না। এই সমস্যা সমাধানে তারা একটি মূলনীতি ঠিক করেছে। যার নাম অপকার নীতি (Harm principle)।
অপকার নীতি বা হার্ম প্রিন্সিপালের মূল উৎপত্তি হয় লিবারালিজমের একজন প্রধান দার্শনিক জন স্টুয়ার্ট মিল এর কাছ থেকে। তার বই On Liberty এর Introductory Chapter এ লিখেন,
'' That principle is, that the sole end for which mankind warranted, individually or collectively, in interfering with the liberty of action of any of their number, is self-protection.That the only purpose for which power can be rightfully exercised over any member of a civilized community, against his will, is to prevent harm to others.''(On Liberty, Chapter 1, Page 15)
''নীতিটি হলো- একমাত্র যে কারণে কারও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যেতে পারে, তা হলো একক বা যৌথভাবে আত্মরক্ষা। যে উদ্দেশ্যে কোন সভ্য সমাজের ব্যক্তির উপর তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ক্ষমতা প্রয়োগ করা যেতে পারে, পরাধীন রাখা যেতে পারে, জোর করা যেতে পারে, তা হল অন্য কারোর ক্ষতি করা থেকে রক্ষা করা।''
অর্থাৎ লিবারালিজমের ভিত্তিমূল ধারণা হার্ম প্রিন্সিপালের অর্থ দ্বারায়,
''মানুষ স্বাধীন, তার যা ইচ্ছা করার অধিকার আছে যতক্ষণ পর্যন্ত সেটা অন্য কারোর ক্ষতি না করছে। সে কারও ক্ষতি না করলে তাকে সমাজ, রাষ্ট্র, ধর্ম বা কোন প্রতিষ্ঠানের বাধা দেয়ার অধিকার নেই, শুধুমাত্র তখনই আছে যখন তা কারোর ক্ষতি করবে। কোন কাজ অন্য কারোর ক্ষতি না করলে সেটা নৈতিকভাবে অনুমোদিত, শুধুমাত্র তখনই খারাপ যখন তা কারোর ক্ষতি করবে। কোনকিছু বৈধ নাকি অবৈধ সেটা নির্ধারণ করা হবে তা অন্য কারোর ক্ষতি করছে কিনা তার উপর ভিত্তি করে।'
এখানে যে প্রশ্ন চলে আসে, ব্যক্তি যদি নিজেই নিজের ক্ষতি করে সেটার সমাধান কী? সকল জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ একমত হবেন মদ, গাজা, হেরোইন তথা মাদকসেবন ক্ষতিকর, এখন কোন ব্যক্তি যদি এগুলো সেবন করে নিজের ক্ষতি করতে চায় তা করতে পারবে কিনা? কিংবা তাকে নিজেই নিজের অঙ্গহানী বা আত্মহত্যা করার অধিকার দেয়া হবে কিনা? এখানে কী হার্ম প্রিন্সিপাল লঙ্ঘিত হবে? আশ্চর্যজনক হলেও সত্য লিবারেল দার্শনিক জন স্টুয়ার্ট মিল ও অন্যান্য লিবারেলরা হার্ম প্রিন্সিপালে নিজের উপর নিজে ক্ষতি করাকে ক্ষতি হিসেবে গণ্য করে না, তাদের মতে নিজের উপর একজন মানুষ সার্বভৌম। মিল আরও বলেন,
''His own good, either physical or moral, is not a sufficient warrant. He cannot rightfully be compelled to do or forbear because it will be better for him to do so, because it will make him happier, because, in the opinions of others, to do so would be wise, or even right. ''(On Liberty,Chapter 1,Page 15)
''শারীরিক বা নৈতিকভাবে তার নিজের ভালো ( স্বাধীনতা হরণ) করার কোনও যথেষ্ট কারণ নয়। এটি করা তার জন্য ভাল হবে, এটি তাকে আরও সুখী করে তুলবে, অন্য কারোর মতে এটি করা প্রজ্ঞাপূর্ণ বা সঠিক এইসকল কারণে তাকে বাধ্য করা অথবা বিরত রাখার অধিকার কারোর নেই।''
অর্থাৎ মিলের মতে কোন একা মানুষ যদি মদ্যপান করতে থাকে, নিজেকে মেরেও ফেলতে থাকে তারপরও কেউ তাকে বাধা দেয়ার অধিকার রাখে না! মূলত তা হচ্ছে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের(Individualism) প্রকৃত রূপ, যা লিবারালিজমের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সাধারণভাবেই ইনডিভিজুয়ালিজম পরার্থতার ধারণাকে অবহেলা ও অবমূল্যায়ন করে। তাই নাগরিকের জন্য ক্ষতিকর জেনেও রাষ্ট্র তাতে বাধা দিতে পারবে না। কেননা তাতে তাদের কথিত ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হবে।
এজন্য আমরা লিবারেল রাষ্ট্র গুলোতে মদের বৈধতা দেখি। বর্তমান পৃথিবীতে মাদক সেবনের প্রত্যক্ষ প্রভাবে প্রতি ২০ জনের একজন মানুষ মারা যাচ্ছেন।[6] পরোক্ষ মৃত্যুর সংখ্যা তো আরো বহুগুন বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে কেবল ২০১৬ সালেই ৩ মিলিয়নের অধিক মানুষের মৃত্যুর জন্য কেবল এলকোহল দায়ী।[7] এতো ক্ষতির পরও লিবারেল রাষ্ট্রে এলকোহল সেবন বৈধ! কেননা লিবারেল ভিউ অনুযায়ী ব্যক্তির সর্বোচ্চ স্বাধীনতা দিতে হবে। আবার অনেক লিবারেল রাষ্ট্র গাজাসহ বহু নেশাদ্রব্যের বৈধতা দিচ্ছে। এটা হলো ব্যক্তির সর্বোচ্চ 'ইউটিলিটি' প্রদান! এখানে ব্যক্তি যেহেতু অপরের ক্ষতি করছে না বা হার্ম প্রিন্সিপালের নীতি লঙ্ঘিত হচ্ছে না তাই এসব কোন কিছুই লিবারেলদের দৃষ্টিতে অপরাধ নয়, বাধা দেয়ার তো প্রশ্নই উঠে না।
লিবারেলিজমের বড় সমস্যা হলো এ দর্শন 'ব্যক্তি' সম্পর্ককে বুঝতে ভুল করেছে। মানুষ কখনো ইনডিভিজুয়াল হতে পারে না। মানুষ সামাজিক জীব। একজন ব্যক্তি পরিবার, সমাজ, দেশ ও পৃথিবীর অংশ। একজন মানুষের আপন ক্ষতি করা মানে কেবল তার নিজের ক্ষতি নয়। একাধারে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষতি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভুক্তিভোগী হয় সকলেই। একজন ব্যক্তি ভালো কিছু করলেও এর ভুক্তিভোগী কেবল সে একা হয় না, আবার অনুরূপভাবে খারাপের প্রভাবও সবার উপর পরে‌। এই সত্য উপলদ্ধি করতেই ব্যর্থ হয়েছে হার্ম প্রিন্সিপাল পন্থীরা। তাই এ নীতি মানবজাতিকে চরম সমস্যার মধ্যে ফেলেছে।
লিবারেলিজমের আরেকটি জনপ্রিয় মূলনীতি হলো, সম্মতি(concent)। লিবারেল দৃষ্টিকোণ থেকে পারস্পরিক সম্মতি থাকলে যেকোনো কাজ বা ইন্টারেক্ট দুই বা ততোধিকের মধ্যে বৈধ। জিনা- ব্যভিচার, পরকিয়া থেকে শুরু করে এর থেকেও নিকৃষ্ট অযাচারগুলোও বৈধ হবে যদি পারস্পরিক কনসেন্ট থাকে। এর ভয়াবহতা আজ চক্ষুষ্মান সকলের কাছেই স্পষ্ট। যা পরিবার ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিচ্ছে। বৈধতা দিয়েছে সমকামিতার মতো ঘৃণ্য পাপকেও। বিকৃতি ঘটিয়েছে মানসিকার। কুৎসিত নারীবাদি চিন্তার বিকাশ ঘটিয়েছে। তৈরি করেছে পুরুষ বিদ্বেষ। লিবারেল ডকট্রিনের গর্ভ থেকে উৎপন্ন হয়েছে আমূল নারীবাদের (Radical Feminism) মতো চরম মানবতাবিধ্বংসী দর্শনের। রেডিকেল ফেমিনিজমের মূলকথা হলো পুরুষ নারীকে শোষন করে যৌন নিগ্রহের মাধ্যমে। নারী পুরুষের শারিরীক সম্পর্কে নারীর উপর পুরুষের আধিপত্য কায়েম হয়। তাই নারী-পুরুষের বিচ্ছেদ ঘটাতে হবে। পুরুষের সঙ্গে নারীর বিবাহ ও সম্পর্ককে অস্বীকার করতে হবে। নারীদের হতে হবে সমকামী(লেসবিয়ান)। নারী কখনো পুরুষের সংস্পর্শে আসবেনা। এ জাতীয় দূষিত চিন্তার জন্ম হয়েছে লিবারেলিজম থেকে। লিবারেলিজমের মূল্যবোধ হলো এই 'কনসেন্ট' মূলনীতির উপর সকলকে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। অন্যথা তিনি আর গুড সিটিজেন নন; রেডিকেল, উগ্র, চরমপন্থী ট্যাগ তার উপর অনিবার্যরূপে আরোপিত হবে।
আমরা আগেই বলেছি লিবারেলরা ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদী। আর এই ব্যক্তি-স্বাতন্ত্রবাদের উপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠেছে আধুনিক পুঁজিবাদী রাষ্ট্র; যাকে বর্তমানে বলা হয় ‘লিবারেল ডেমোক্রেটিক স্টেট’.(Liberalism as the theory and practice of individual liberty,juridical defense and the constitutional state-Sabine) এই নীতির উপর দাঁড়িয়েই তৈরি হয় পুঁজিবাদী অর্থনীতির বুনিয়াদ এবং সামাজিক কাঠামো। এই লিবারেল ব্যক্তি-স্বাতন্ত্রবাদীরা যে পুঁজিবাদি মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করেছে তার বিষফল আজ সকলের সামনে স্পষ্ট। যা বিশ্বজুড়ে সীমাহীন অর্থনৈতিক বৈষম্য তৈরী করেছে। সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ কতিপয় বুর্জোয়ার হাতে তুলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সেবা সংস্থা অক্সফাম ২০১৯ এর রিপোর্টে জানিয়েছে, বিশ্বের ২৬ ধনীর যা সম্পদ, তা পৃথিবীর সকল দরিদ্রদের মোট সম্পত্তির অর্ধেকেরও বেশি। ১শতাংশের হাতে সব সম্পদ কুক্ষিগত।
লিবারেলিজম অর্থনীতিতে পুঁজিবাদের জন্ম দিয়ে বৈষম্য তৈরি করেছে। রাজনীতিকে করেছে সেকুলারকরণ। নৈতিকার প্রশ্নে নোংরামির উদগাতা লিবারেলিজম। তারাই বিশ্বজুরে এবোরশন(শিশুহত্যার) বৈধতার পক্ষে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছে। বিবাহকে করেছে কঠিন, যটিল ও গৌণ; আর বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কে দিয়েছে আইনি বৈধতা । মানুষকে করেছে একা, নিঃস্ব, উদ্দেশ্যহীন। নারীবাদের জন্মদিয়ে সূচনা করেছে পুরুষ বিদ্বেষের বিকৃতধারার। মানবজাতিকে ক্ষতিছাড়া তেমন কিছুই উপহার দিতে পারেনি লিবারেলিজম। তাই দেখা যায়, লিবারেলিজমের বিকাশের সাথে সাথে সকল দেশে হতাশা আর আত্মহত্যার হার ক্রমশ বেড়েছে।
সর্বপরি আধুনিক লিবারেলিজমের প্রয়োগিক অর্থ দ্বারায়,
✓ রাজনীতিতে ধর্মহীনতা।
✓ সভ্যতা, সমাজ ও সাহিত্যে নিরঙ্কুশ প্রবৃত্তির স্বাধীনতা।
✓ অর্থনীতিতে অবাধ উন্মুক্ত নীতি।
‌ নিয়ন্ত্রনহীন উদারতা।
✓ আধুনিক পুঁজিবাদ ও নবতর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা।
লিবারেলিজমের ইমানহরণ প্রক্রিয়া:
মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে ইমান। ইমান থাকলে একজন মানুষ মুমিন, ইমান না থাকলে কাফের। আর কুফর-শিরকের কারণে একজন মুমিনের ইমানও নষ্ট হয়ে যায়। মুমিন থেকে কাফের পরিণত হয়, আর কাফেররা হচ্ছে চিরস্থায়ী জাহান্নামী। লিবারেলিজম কেবল কুফরই নয়, বরং বহু কুফরি মতবাদের স্রষ্টা। এর মূল উপজীব্য-ই হচ্ছে মানুষ সার্বভৌম, স্বাধীন। লিবারেলিজমের সূচনাই হচ্ছে আল্লাহকে ইলাহ(যার সার্বভৌম আনুগত্য করা হয়) হিসেবে অস্বীকারের মাধ্যমে। লিবারেলিজমের দৃষ্টিতে মানুষ কারও অধীন নয়, স্বাধীনসত্তা। যে কোন কিছু চয়েসের ক্ষেত্রে তার পূর্ণস্বাধীনতা থাকবে। অথচ ইসলামের অর্থই হচ্ছে আত্মসমর্পণ। আল্লাহর সকল বিধান বিনা বাক্যে মেনে না নিলে কেউ মুসলিমই হতে পারে না। লিবারেলিজমের চেতনা সরাসরি ইসলামের পবিত্র কালেমার সাথেই সাংঘর্ষিক। একজন ব্যক্তি একসাথে মুসলিম ও লিবারেল হতে পারে না। যে ব্যক্তি নিজেকে একইসঙ্গে মুসলিম ও লিবারেল উভয়টাই দাবি করে হয় তিনি ইসলাম বুঝেননি বা লিবারেলিজমই বুঝেন না।
লিবারেলিজমে বিশ্বাসী অধিকাংশ মানুষ যে কাফের সম্প্রদায়ভুক্ত সে ব্যাপারে তো সবাই একমত হবেন। তারা নিজেদের মুসলিম দাবিও করতে আসছে না। কিন্তু বড় চিন্তার বিষয় হচ্ছে বহু মুসলিম পরিবারের সদস্যরাও লিবারেলদের সর্বোগ্রাসী প্রোপাগান্ডায় বিভ্রান্ত হচ্ছেন। তাদের মূল্যবোধ ধারণ করছেন, অন্তরে কুফর লালন করছেন বা আমলে কুফরি করছেন। আমরা মনে করি ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতাই এক্ষেত্রে প্রধাণত দায়ী। লিবারেলদের বহুল প্রচারিত একটি দৃষ্টিভঙ্গি হলো 'ব্যক্তি স্বাধীনতার' প্রতি সম্মান ও স্বীকৃতি প্রদান। ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া। আমরা আগেই বলেছি যদি আপনি অবাধ ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী না হন বা ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণহীন চিন্তা, বাক ও কর্মের স্বাধীনতার স্বীকৃতি না দেন তাহলে আপনি অসহিষ্ণু,উগ্র, রেডিকেল বলে চিহ্নিত হবেন। আপনাকে অবশ্যই ভিন্ন মতের(হোক তা ইসলাম ও মানবতা বিরুদ্ধ ক্ষতিকর) প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে‌। তবে লিবারেলরা চরম ডাবল স্ট্যান্ডার্ড মানসিকতার। মুসলিমদের ক্ষেত্রে এই নীতিগুলো বেমালুম ভুলে যান। দুঃখজনক হলেও সত্য মুসলিমদের অনেকেই তাদের এই দৃষ্টিভঙ্গী মেনে নেন। আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক হারাম কাজকে 'অধিকার' হিসেবে সাপোর্ট দিয়ে বসেন। ইসলামি দৃষ্টিকোন থেকে ইমান ভঙ্গের একটি মৌলিক কারণ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক অবৈধকে বৈধ মনে করা, আর বৈধকে নিষিদ্ধ মনে করা। বহু মুসলিম এই ক্ষেত্রে এসে লিবারেল মূল্যবোধের কাছে ফেঁসে যান, ইমান নষ্টের ফাঁদে পা দেন। সহনশীল হতে যেয়ে ইমান বিসর্জন দিয়ে বসেন।
এ বিষয়টি বুঝতে একটি উদাহরণ দেয়া যাক, সাদিয়া একজন কলেজ ছাত্রী। সে তার চুল আবৃত না করে খোলামেলাভাবে কলেজে যায়। এক্ষেত্রে সে আল্লাহর দেয়া পর্দার মতো বড় একটি ফরজ বিধান লঙ্ঘন করছে। সাদিয়া যদি তার কাজটিকে আল্লাহর হুকুমের অমান্য এবং এজন্য নিজেকে পাপী মনে করে থাকে, তাহলে সে কবিরাহ গোনাহগার হবে। এতে পাপী হবে, কাফের হবে না।
সাদিয়ার এ খোলামেলা চলাফেরাকে পারার লোকজন খারাপ চোখে দেখলেও সে এলাকার ফেক্সিলোডের দোকানী বাচ্চু খারাপ মনে করেন না, বরং সে এটা তার ব্যক্তিস্বাধীনতা ও অধিকার বিবেচনা করেন। এখানে বাচ্চু লিবারেলদের 'ফ্রিডম অব চয়েস' নীতির অর্চনা দিতে গিয়ে আল্লাহর হুকুম অমান্য করা যে পাপ ও অপরাধ এটাই ভুলে বসে আছে। আল্লাহর দৃষ্টিতে সাদিয়া অপরাধী হলেও বাচ্চুর দৃষ্টিতে নয়। আল্লাহর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে( পর্দার ফরজিয়াত মেনে নেননি) বাচ্চু এক্ষেত্রে কুফর করছে । সে আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নিষিদ্ধ কাজকে নিষিদ্ধ ও অমান্য করাকে অপরাধ মনে করছে না। এক্ষেত্রে‌ বেপর্দা, খোলামেলা থেকে সাদিয়া করেছে কবিরা গোনাহ, আর বাচ্চু এটাকে অধিকারের স্বীকৃতি দিতে যেয়ে করেছে কুফর। যা একজন মুসলিমকে ইসলামের গন্ডি থেকে বের করে দেয়।
এভাবে লিবারেলিজমের মূল্যবোধ অগণিত মুসলিমের ইমানহরণ করছে। বহু মুসলিম নামধামী ব্যক্তিরা কনসেন্ট থাকলেই যে কোন অপকর্ম বৈধ বলে মেনে নিচ্ছেন, এর পক্ষে সাফাই গাচ্ছেন। ধর্ষণকে অপরাধ মনে করলেও পারস্পারিক কনসেন্ট থাকে বলে লিভটুগেদারকে(জিনা) অপরাধ মনে করছেন না। অনেকে বর্তমানে LGBT মুভমেন্টের পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন। ভ্রুণ হত্যাসহ শত শত হারাম কাজের পক্ষ নিচ্ছেন। যদিও তারা অনেকেই ব্যক্তিগত জীবনে সমকামী বা লিভটুগেদারের সাথে জড়িত নয়। 'ফ্রিডম অব চয়েস' ডগমা মানতে গিয়ে হারামের পক্ষ নিচ্ছেন। আর ফলশ্রুতিতে হারাম কাজের বৈধতার পক্ষে ওকালতি করে নিজের মূল্যবান ইমান হারাচ্ছেন। (আল্লাহ তায়ালা আমাদের ইমানকে হেফাজত করার তওফিক দিন)
লিবারেলিজম মানববিধ্বংসী মতবাদ হিসেবে এখনো বহাল তবিয়তে টিকে আছে, আর মানব জাতিকে নিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ ধ্বংসের অতল গহ্বরে। এর বিষাক্ত ছোবল থেকে মুক্তির দিশা দিতে পারে কেবল মাত্র ইসলাম। জাহেলিয়াতের ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে ইসলামের আলোয় ভূবন সাজানোর দীপ্ত শপথ নেয়ার এখনই সময়। লিবারেলিজমের অন্ধকার থেকে জাতিকে সত্য-সুন্দরের পথ দেখাতে ইসলামের দ্বীপ শিখা জ্বালতে হবে। তবেই আমরা পাবো কল্যাণময় বাসযোগ্য বসুন্ধরা।
তথ্যসূত্র:
1.The pro-choice movement is in tatters. Planned Parenthood is part of the problem,Jessa Crispin; The Guerdian-Mon 13 Jul 2020
2.John Stuart Mill (১৮৫৯)। On Liberty। Oxford University। page:22।
3. সূরা ফুরকান, ৪৩ আয়াত।
4. সূরা আল-কাসাস, ৫০ আয়াত।
5. মুনযিরি, আত-তারগীব ১/২৩০, আলবানী, সহীহুত তারগীব ১/৯৭।
6. Alcohol Rehab Guide,Report: What Is the Rate of Alcohol-Death? By Nathan Yerby [Edited: July 24, 2019]
7. World health organisation, topic: Alcohol [21 September 2018]

পঠিত : ৬৩০ বার

মন্তব্য: ০