Alapon

গিগাবাইট দৈত্য (বই রিভিউ)

আসিফ মেহদী ভাইয়ের লেখা গিগাবাইট দৈত্য মূলত একটা গল্প সংকলন। মোট ১০টি গল্প দিয়ে সাজানো বইটি। নাম শুনেই মনে প্রশ্ন আসতে পারে গিগাবাইট দৈত্য আবার কি!
ছোটবেলায় নিশ্চয়ই আলাদিনের প্রদীপের দৈত্যের কথা শুনেছেন। এখন তো আর আমাদের যুগ নাই। এখন বাচ্চারা বড় হয় ট্যাব হাতে নিয়ে। বাচ্চারা যেমন ডিজিটাল হয়ে গেছে, তেমনি দৈত্যরাও এনালগ থেকে ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে। হে হে হে !
যাহোক, চলুন কিছু গল্পের কাহিনী সংক্ষেপ দেখে নেই।


প্রথম গল্পটি হলো ‘লেটুস মামার নতুন মিশন’। গল্পে লেটুস মামা একজন ছাত্র। তার সহপাঠি দুই এলিয়েন লুডু আর দাবা। ও হ্যা বলতে ভুলে গেছি, লেটুস মামা কিন্তু আগামী সতাব্দীর লোক। এখন যেমন এক দেশের লোক অন্য দেশের ভার্সিটিতে পড়তে যায়। ওখানে তেমন এক গ্রহের প্রাণি অন্য গ্রহে পড়তে যায়। যাহোক, লেটুস মামা একদিন পৃথিবীর বোরিং লাইফ ছেড়ে এক্সাইটিং কিছু করার জন্য ভাগ্নে পাঙ্কু আর দুই এলিয়েন জমজ ভাই লুডু আর দাবাকে নিয়ে মহাকাশ ভ্রমনে বের হলো। অন্য একটা গ্রহে নেমে বিশ্রাম করে সেই গ্রহের বানিজ্য মেলায় ঘুরে ফিরে তারা গেলো মিউজিয়াম দেখতে। সেখানে তারা পেলো তিনটা অদ্ভুত জিনিস! এখানেই বলা থামাবো কারন এখান থেকেই তো আসল মজা!


পাঁচ নম্বরে আছে টাইটেল গল্প ‘গিগাবাইট দৈত্য’। ইতু একদিন নেট ব্রাউজ করতে করতে একটা লিঙ্ক পেলো। ওখালে ক্লিক করতেই ল্যাপটপের চারিদিকে ধোয়া উড়তে শুরু করলো এবং একটু পরে তার সামনে হাজির হলো এক বিশাল আকারের দৈত্য। ইতু আমাদের মত ক্ষ্যাত না। তাই সে ভয় পায়নি। সে জানে যে দৈত্য আসলে মানুষের তিনটা ইচ্ছা পুরোন করে। ইতুর ইচ্ছা কি পুরোন করেছিলো গিগাবাইট?


যদিও গল্প মোট ১০টা, তবুও মাত্র ২টা গল্পের সারসংক্ষেপ দিলাম। কাহিনী সংক্ষেপ বাদ দিয়ে এবার একটু পর্যালোচনায় যাওয়া যাক।


শিশু সাহিত্য লেখা হয় মূলত শিশুদের নির্মল আনন্দ দেওয়ার জন্যেই। তবে লেখক এক্ষেত্রে ব্যাতক্রমী চিন্তা করেছেন। আমরা শিশু সাহিত্যে শুধু গাছ-পালা, পশু-পাখি আর দৈত্য-দানব নিয়ে আলোচনা করলেও কখনো আমাদের সমাজ, দেশ, নৈতিকতা নিয়ে আলোচনা করা হয় না। এতে আমাদের শিশুরা আনন্দ পেলেও আনন্দের পাশাপাশি কিছু শিখতে পারছে না। সেক্ষেত্রে শিশু সাহিত্যে যদি আনন্দের সাথে সাথে নৈতিকতা, সমাজ, দেশপ্রেমের মেসেজ দেওয়া যায়, তবে সেটা শিশুর অবচেতন মনে গেথে যায়। যার ফল হতে পারে সুদুর প্রসারি। আমাদের দেশের শিশু সাহিত্যে এখনো পর্যন্ত এমন এক্সপেরিমেন্ট হুয়েছে কিনা জানা নেই আমার। তবে লেখকের এই উদ্দোগকে স্বাগত জানাই। তবে তারমানে এই না যে, জ্ঞান দিতে গিয়ে এটাকে উপদেশের বই বানায় ফেলছে। দুইটা বিষয়ে ব্যালেন্স রেখেছেন লেখক। স্বাভাবিকভাবেই মেলায় গেলে আপনারা ছোট ভাইবোন বা ছেলেমেয়ের জন্য বই কিনেন। তারা মেলায় এলে বায়না করে। সেক্ষেত্রে এই বইটা দিতেই পারেন। 
আর যদি বলেন নিজে পড়ার কথা তাহলে আমি নিজের কথা আগে বলবো, শিশু সাহিত্য ছোটবেলায় পড়ে যা মজা পেতাম এখন তার কয়েকগুন বেশি মজা পাই। শিশু সাহিত্যকে আমি কখনই শিশুদের একচেটিয়া সম্পত্তি মনে করি না। সব বয়সের মানুষই শিশু সাহিত্য পড়ে নির্মন আনন্দ নিতে পারে। 
লেখক আসিফ মেহদী ভাইয়ের কথা একটু না বললেই নয়। ভাইয়ের হাতেগোনা কয়েকটি বই পড়লেও তার লেখনির স্টাইলের বড় ভক্ত আমি। চমৎকার সাবলিলভাবে গল্প বলতে পারেন আসিফ ভাই। অনেকে বলে তার লেখায় হুমায়ূন আহমেদের ছাপ আছে। আমি কখনোই একমত না। কারো লেখা সাবলিল হলেই যে তার লেখা হুমায়ূন আহমেদের মত হবে তা নয়। আসিফ ভাইয়ের লেখার সম্পূর্ণ নিজস্ব একটা ধাচ আছে। 
গিগাবাইট দৈত্য বইয়ের দাম খুব বেশি না। আপনার বইয়ের লিস্টের এক কোনায় আনায়াসেই ঢুকে যেতে পারবে।

পঠিত : ৭৬৯ বার

মন্তব্য: ০