Alapon

মহান আল্লাহপাকের করুনা এবং কিছু কথা...



আমাদের রাসূল (স) উল্লেখ করেছেন, যখন আল্লাহ সৃষ্টি জগতকে সৃষ্টি করলেন, তিনি তাঁর দয়াকে একশো ভাগে ভাগ করলেন। (এখানে একটা ব্যাপার মনে রাখুন, এটি একটি প্রতীকী হাদিস। আল্লাহর দয়ার কোন শেষ নেই, তাঁর দয়াকে ভাগ করা যাবে না। তাঁর দয়া অসীম। এই উদাহরণের মাধ্যমে আমাদেরকে একটি ধারণা দেয়া হচ্ছে মাত্র।)

তিনি তাঁর করুণাকে ১০০ ভাগে ভাগ করলেন। তার থেকে এক ভাগ তিনি এই দুনিয়াতে অবতীর্ণ করলেন। আর এই কারণে গোটা সৃষ্টি জগতে কিছুটা দয়া পরিলক্ষিত হয়। এর কারণে মানুষ একে অন্যের প্রতি দয়ালু। রাসূল (স) বলেছেন, এই কারণে মা ঘোড়া তার বাচ্চার প্রতি দয়া দেখায়। এই কারণে মা পাখি তার বাচ্চাকে আহার করায়। আর আল্লাহ ৯৯ ভাগ দয়া সংরক্ষণ করে রেখেছেন। সেই ৯৯ ভাগ দয়া কিয়ামতের দিন ব্যবহার করা হবে।

এখন, একবার ভেবে দেখুন, সময়ের শুরু থেকে শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেওয়া পর্যন্ত প্রতিটি দয়া যে কোনো সৃষ্টি দেখিয়েছে— যে কোন পাখি, যে কোন প্রাণী, যে কোন মানুষ দেখিয়েছে যে কোন সৃষ্টির প্রতি, যে কোন গাছের প্রতি; আপনি এই সব দয়াগুলোকে যদি একত্রিত করেন, বিলিয়ন বিলিয়ন বছর ধরে, এই সমস্ত দয়া মাত্র এক শতাংশ দয়া থেকে এসেছে। আর ৯৯ ভাগ দয়া আল্লাহ এক দিন ব্যবহার করবেন। আর সেই দিনটি হল শেষ বিচারের দিন।
আর এই জন্য আমাদের রাসূল (স) বলেছেন— "যদি কাফের জানতো আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা কত দয়ালু তাহলে এমনকি কাফেরও জান্নাতে প্রবেশের ব্যাপারে আশাবাদী থাকতো।" এটাই হল আল্লাহর দয়ার শক্তি।

তাই প্রিয় ভাই এবং বোনেরা, আমরা এখানে একটু থামবো, আগামী কাল আবার 'রাহমার' ধারনা নিয়ে কথা বলবো। কিন্তু আজ একটি বিষয় আপনাদের চিন্তা করার জন্য রেখে যাচ্ছি।
যখন আল্লাহ ৫০০ এর অধিক আয়াতে নিজেকে দয়ালু হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যখন আল্লাহ পাঁচটি আলাদা 'প্রপার নাউন' ব্যবহার করে নিজের দয়ার বর্ণনা দিয়েছেন, যখন আল্লাহ বলেছেন তিনি হলেন রাহমান, তিনি হলেন রহিম, তিনি হলেন 'আর হামুর রাহিমিন' (সকল দয়াবানদের মাঝে সবচেয়ে বেশি দয়াবান), তিনি হলেন 'খাইরুর রাহিমিন' (সকল দয়াবানদের মাঝে শ্রেষ্ঠ দয়াবান), তিনি হলেন 'জুর রাহমা' (সকল রহমতের মালিকানা যার) তখন কীভাবে আমরা আল্লাহর দয়ার প্রতি আশাহীন হতে পারি! কীভাবে আমরা আল্লাহর করুণার প্রতি আশা হারাতে পারি!

প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহর দয়ার প্রতি আশা হারানো আল্লাহর প্রতি অপমানজনক। আল্লাহর দয়ার প্রতি আশা হারানো আল্লাহর প্রতি বড় ধরণের অপমান। আর এটা আমার কথা নয়। এটা হাদিসে এসেছে। আমাদের রাসূল (স) বলেছেন— মনোযোগ দিয়ে শুনুন— আকবারুল কাবায়ের, সকল কবিরা গুনাহের মাঝে সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ হল… গুনাহের ধরণ হল কবিরা এবং সগিরা তথা ছোট এবং বড়। আমরা কবিরা গুনাহগুলো সম্পর্কে জানি, রাসূল (স) এখানে বলছেন— সকল কবিরা গুনাহের মাঝে সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ আকবারুল কাবায়ের... এখন, কবিরা গুনাহ কোনগুলো? এক নাম্বার, শিরক বিল্লাহ। দুই নাম্বার হল, আল কুনুউতু মির রাহমাতিল্লাহ। "আল্লাহর দয়ার ব্যাপারে আশা ছেড়ে দেওয়া।" এই গুনাহটি তালিকার দুই নাম্বারে।

এটি কেন আল্লাহর প্রতি অপমানজনক? এমনকি এই দুনিয়াতে, ধরুন, কেউ একজন খুবই দয়ালু দাতা। আপনি তার কাছে সামান্য কয়টি পয়সা চাইলেন। অসুবিধায় পড়েছেন তার কাছে এসে বললেন, আমাকে কি দয়া করে সামান্য কয়টা টাকা দিতে পারবেন? আর মনে মনে ভাবতে লাগলেন, না, তিনি আমাকে এক টাকাও দিবেন না। এই ভাবনাটা কি দয়ালু রাজার প্রতি অপমানজনক নয়? এটা কি ঐ ধনী ব্যক্তির প্রতি অপমান নয়? যিনি তার উদারতা এবং দান-খয়রাতের জন্য বিখ্যাত। যে তিনি আমাকে এক টাকাও দিবেন না। আপনার তো এভাবে চিন্তা করাই উচিত নয়।

তাহলে যখন, وَلِلَّهِ الْمَثَلُ الْأَعْلَىٰ - “মহোত্তম উপমা সব আল্লাহর জন্য”(16:60)
যে কেউ ধারণা করে যে, সে একাই এতো বেশি পাপ কামাই করেছে যে আল্লাহর পক্ষে তাকে ক্ষমা করা সম্ভব নয়, আল্লাহর শপথ! কি এক অপমানজনক চিন্তা! কে আপনি? আর কেমন আপনার পাপ আল্লাহর ক্ষমার তুলনায়? আপনি কি আল্লাহর দয়াকে সীমিত করে ফেলছেন? এমনভাবে যে আপনি একা, এক জীবনে এতো বেশি পরিমাণে পাপ করতে পারেন যে আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করতে পারবেন না? এটা বড় ধরণের অপমান! আর এই কারণে এটা এক ধরণের কুফর এই ধারণা করা যে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করতে পারবেন না। এই জন্য আমাদের রাসূল (স) বলেছেন, শিরকের পরেই দুই নাম্বারে বড় গুনাহ হল, আল্লাহর দয়ার ব্যাপারে আশা ছেড়ে দেওয়া। আর কুরআনে এসেছে - وَ مَنۡ یَّقۡنَطُ مِنۡ رَّحۡمَۃِ رَبِّہٖۤ اِلَّا الضَّآلُّوۡنَ - “‘পথভ্রষ্টরা ছাড়া, কে তার রবের রহমত থেকে নিরাশ হয়’? ” (১৫:৫৬)
আল্লাহ কুরআনে আরও বলেছেন - قُلۡ یٰعِبَادِیَ الَّذِیۡنَ اَسۡرَفُوۡا عَلٰۤی اَنۡفُسِہِمۡ لَا تَقۡنَطُوۡا مِنۡ رَّحۡمَۃِ اللّٰہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ یَغۡفِرُ الذُّنُوۡبَ جَمِیۡعًا - “বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ..." তুমি সীমা লঙ্ঘন করেছ, আল্লাহ সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলছেন لَا تَقۡنَطُوۡا مِنۡ رَّحۡمَۃِ اللّٰہِ - তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন।”

প্রিয় ভাই এবং বোনেরা—
রাহমান, রহিম, আর-হামুররাহিমিন আমাদের প্রতি অনবরত রাহমা প্রদর্শন করতে পারেন। আর সকল সৃষ্টির সম্মিলিত রাহমার চেয়েও আল্লাহ বেশি রাহমা দেখাতে পারেন। আর এতে তার রহমতের কোন কমতি হবে না। তিনি যদি গোটা সৃষ্টি জগতকে তার চিরস্থায়ী রাহমা প্রদর্শন করেন সেই রাহমা কখনো শেষ হবে না।

তাই, আমার আপনার মত ক্ষুদ্র সৃষ্টি কি এমন পাপ করতে পারবো যা আল্লাহর রাহমাকে ছাড়িয়ে যাবে। চলুন, নতুন করে আবার নিয়ত করি যে, আমরা আল্লাহর রাহমা অর্জন করব। চলুন, এই আশায় বুক বাঁধি। কারণ, এই আশা হল ঈমানের অংশ। চলুন, আর রাহমান এবং আর-রহিমে বিশ্বাস করি। চলুন, এই বিশ্বাসে বুক বাঁধি যে আর-রাহমান আমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবেন। আর-রহিম আমাদেরকে তাঁর রহমতে আবৃত করে নিবেন।

— ইয়াসির কাদি

পঠিত : ৫৫৯ বার

মন্তব্য: ০