Alapon

"বুকসেক্সুয়ালিটি : একটি আদর্শিক লড়াই"



কম্যুনিস্টদের হাত ধরেই এইদেশে বুকসেক্সুয়ালিটি সর্বপ্রথম প্রচার ও প্রসার লাভ করে। এবং অবশ্যই এই বুক্সেক্সুয়ালিটি নিরীহ কোন ব্যাপার ছিলো না, কলকাতাইয়্যা কালচারাল হেজিমনির সূচনা ছিলো মাত্র।
.
বাংলায় বুকসেক্সুয়ালিটি এমন একজন মানুষের হাত ধরে ব্যাপকতর হয় যিনি জন্মলাভ করেছিলেন কলকাতায়-আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ।
.
বুকসেক্সুয়াল হওয়াটাও নিরীহ কোন প্রসেস না। প্রমত চৌধুরীর "বই পড়া" প্রবন্ধ দিয়ে আপনাকে হাড়ে হাড়ে বুকসেক্সুয়াল হওয়ার গুরুত্ব বুঝিয়ে দেয়া হবে।
.
একদিকে ইমপ্লিসিট সেক্যুলার এডুকেশন সিস্টেম অন্যদিকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মতো আউটসাইডার সেক্যুলার প্রেসার গ্রুপ-উভয়ই মিলে এইদেশে কলকাতাইয়্যা কালচার আর বুকসেক্সুয়ালিটির ভিত রচনা করেছে।
.
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সেক্যুলার কলকাতাইয়্যা কালচার, পশ্চিম বাংলার নন্দনতত্ত্ব, রবীন্দ্র সাহিত্য, রাশিয়ার নিরীহ কম্যুনিস্ট রচনাপত্র আর পশ্চিমা কলোনাইজার এস্থেটিক সাহিত্য এইদেশের শিক্ষার্থীদের মন ও মগজে গেথে দিয়েছে-তৈরী করেছে জাহানারা ইমামের হাজারো রুহানি সন্তান।
.
"আলোকিত" বা "enlighten" মানুষ গড়ার শপথ নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান গত কয়েক দশক ধরে ডিইসলামাইজেশনের কাজ করে যাচ্ছে নিরবে-নিভৃতে। মুক্তচিন্তক আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত নির্মাণ করে প্রগতিশীল প্রজন্ম তৈরি করা আর "পশ্চাৎপদ" শক্তিকে পরাজিত করার জন্য এই প্রতিষ্ঠানে ফান্ডিং করছে ইউরোপিয়ান বিভিন্ন দেশের দূতাবাস, ইউনেস্কো, বিশ্বব্যাংক আর বিভিন্ন এনজিও।
.
কী এমন স্বার্থ যার কারণে বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে বিনিয়োগ করছে? সেটা কি শুধুই একটা জাতিকে বই পড়া শেখাতে? এইজাতি বই পড়তে শিখলে ইউরোপীয়দের কী লাভ?
.
এই প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করলেই বুঝবেন "বই পড়া" নিরীহ কোন ব্যাপার না। এর সাথে জড়িয়ে আছে আদর্শ আর রাজনৈতিক হেজিমনি তৈরির এক অদৃশ্য লড়াই।
.
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, জাফরীয় শিশু সাহিত্য আর সেক্যুলার স্টাব্লিশমেন্টের সহায়তায় ইসলামবিরোধী বুক্সেক্সুয়ালিটি জারি থাকে শাহবাগ পূর্ব সময় পর্যন্ত। এসময়ই(মে বি ২০১০ সালে) সরকারীভাবে সেকায়েপ প্রকল্পের অধীনে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সহায়তায় "পাঠ্যাভাস উন্নয়ন কর্মসূচি" চালু হয়। এই প্রকল্পের অধীনে হাজারো মাদ্রাসায় মডারনাইজিং প্রজেক্ট হাতে নেয় সেক্যুলাররা।
.
শাহবাগ উত্তর সময়ে প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বহাল তবীয়তে টিকে থাকলেও সেক্যুলার অক্সিলিয়ারী প্রেসার গ্রুপগুলোর পতন ঘটে।

এই জায়গাটা দখল করে নেয় ইসলামপন্থীরা। শাপলা মেসাকারের পরেও একটা সোস্যাল মবিলাইজিং ফোরস হিসেবে ইসলামপন্থীরা আত্মপ্রকাশ করে। এই সময়টাতেই অনেক শাহবাগী বুঝে যায় নতুন সুবাহ বাংলায় তাদের হেজমনি থাকবেনা। ইসলামপন্থীদের সাথে নেগোসিয়নের মাধ্যমে পোস্ট শাহবাগেও নিজের অবস্থানকে ধরে রাখতে চায় তারা। ফলে তাদের অনেকেই ইসলামপন্থীদের সাথে "ঐক্যে" আগ্রহী হয়-ইসলামী প্রকাশনার সাথে কাজ করে। আর জাতে ওঠার তালে থাকা ইসলামিস্টরাও শাহবাগী বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমন্ডলে নিজেকে জাহির করার সুযোগ লুফে নেয়।
.
এই ইসলামিস্টরাই পারভেজ আলমের মতো স্বঘোষিত শাহবাগী, পিনাকীর মতো শাহবাগীদেরকে পুনর্বাসন করে। অন্যদিকে নিজেদের ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি করতে দরবারে মীরের মীর ব্রাদার্সদের মতো অনেকেই শাহবাগী তোষণ করে চলে। দেয়া-নেয়ার এই খেলায় আলটিমেটলি লাভবান হয় শাহবাগীরাই। বই কেন্দ্রিক যে কাল্ট এখনো শাহবাগীদের লিপ সার্ভিস দিচ্ছে তাদেরকে ঠেকাতে বুক্সেক্সুয়ালিটির বিরুদ্ধে আলাপ তুলতে হবে। এটা একটা আদর্শিক লড়াই।

~আহমদ ইশতিয়াক মাসুদ

পঠিত : ১০৫৯ বার

মন্তব্য: ০