Alapon

নামাজে নিয়মিত ও মনোযোগী হওয়ার উপায়...



নামাজ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। আল্লাহতায়ালা আমাদের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। তাই আমরা যতো ব্যস্তই থাকি না কেনো, দিনে-রাতে পাঁচবার আল্লাহ দরবারে হাজিরা দেওয়ার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই সময় বের করতে হবে।

একজন মুসলিম এবং কাফেরের মধ্যকার প্রধান পার্থক্য হচ্ছে নামাজ। আব্দুল্লাহ ইবনে শাকিক (রহ.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীরা (রা.) নামাজ ছাড়া অন্য কোনো আমল ছেড়ে দেওয়াকে কুফুরি মনে করতেন না। (তিরমিজি: ২৬২২)
নিচে নিয়মিত নামাজ আদায় করার কিছু টিপস দেওয়া হলো। এগুলো অনুসরণের মাধ্যমে আমরা নামাজে নিয়মিত হতে পারবো- ইনশাআল্লাহ।

নামাজে যা পাঠ করা হয় তার অর্থ জানা: নামাজে পাঠ করা সুরা এবং অন্যান্য দোয়ার অর্থ জানা একদিকে যেমন নামাজে মনোনিবেশ করাকে সহজ করে তোলে পাশাপাশি নামাজের সঙ্গে মুসল্লির একটি সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। তাই নামাজে সচরাচর পাঠ করা সুরা এবং দোয়াগুলোর অর্থ জেনে নিতে হবে যাতে নামাজ আমাদের জন্য অন্তঃসারশূন্য না হয়। এতে করে নামাজে আদায়ের প্রতি কোনো অনীহা থাকলে তা দূর হয়ে যাবে।

দৈনন্দিন কাজসমূহের সুষ্ঠু পরিকল্পনা করা: প্রতিটি দিন শুরু করার আগে ওই দিনের জন্য একটি সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। কর্মপরিকল্পনা তৈরি করার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, নামাজের সময়গুলোতে যেনো কোনো কাজ না থাকে। স্কুল-কলেজে, অফিসে অথবা মার্কেটে কিংবা পরিবার পরিজনের সঙ্গে কোথাও বেড়াতে গেলে, সবক্ষেত্রেই নামাজের জন্য আগে থেকেই আলাদা করে সময় নির্ধারণ করে রাখতে হবে।

সর্বদা নামাজের জন্য প্রস্তুত থাকা: কোনো কাজে বাহিরে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলে সঙ্গে করে জায়নামাজ, হিজাব এবং নামাজের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে যেতে হবে, যাতে করে এগুলোর কোনো একটি না থাকাটা
নামাজ বাদ দেওয়ার কারণ/অজুহাত না হতে পারে। নামাজ আদায়ের জন্য সবসময় শরীর পবিত্র রাখতে হবে।

মোবাইলে অ্যালার্ম সেট করা: বর্তমানে এমন অনেক অ্যাপ পাওয়া যায় যেখানে আপনার স্থানীয় সময়ে নামাজের সময় দেখাবে এবং নামাজের সময় হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আজান শুরু হয়ে যাবে। এধরনের অ্যাপ সময়মত নামাজ আদায় করার জন্য বেশ কার্যকর।
এরকম কোনো অ্যাপ খুঁজে না পেলে অন্তত নিজের কাছে থাকা ফোনে নামাজের সময়গুলোতে অ্যালার্ম সেট করে রাখা যেতে পারে, এতে করে আপনার ব্যবহৃত ফোনটি সময়মত সালাত আদায়ের জন্য একটি চমৎকার রিমাইন্ডারে পরিণত হবে।

প্রতিদিনের নামাজের জন্য একটি চেকলিস্ট তৈরি করা: দিনশেষে আপনি যে নামাজগুলো আদায় করলেন, সেগুলোতে টিক চিহ্ন দিন। এতে করে সালাত আদায়ে নিয়মিত হতে আপনার আগ্রহ আরো বৃদ্ধি পাবে। কোনো সালাত মিস হয়ে গেলে তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে ও এর প্রতিকার করতে হবে।

দোয়া করা: সবসময় আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে যেনো আল্লাহ তায়ালা নামাজকে আপনার দৈনন্দিন কাজের অংশ বানিয়ে দেন। নিয়মিত নামাজ আদায়ের জন্য কোনো রুটিন বানালে আপনি যেনো সেই রুটিন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে পারেন, সেজন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে।

সর্বোপরি নামাজকে তার যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা যতোটা জরুরি, মনে রাখতে হবে, দৈনিক পাঁচবার আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করা তার চাইতেও বেশি জরুরি।

নামাজে মনোযোগী হওয়ার ৬ টি উপায় :

(১) নামাজে একাগ্রতা ঠিক রাখাঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা'য়ালার ইবাদত করো এমনভাবে যেন আল্লাহ তা'য়ালা'কে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে মনে মনে ভাবো তিনি যেন তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন। [বুখারী- ৫০]

(২) স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে কোরআন তেলাওয়াত করাঃ

এ সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআন বলেন, হে আমার বান্দারা স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে কোরআন তেলাওয়াত করা। [সূরা মুজ্জামিল: ০৪]

সহিহ শুদ্ধভাবে ও স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে কোরআন তেলাওয়াত নামাজে পড়া আবশ্যক। আর নামাজ ছাড়াও সহিহ শুদ্ধভাবে ও স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে।

(৩) ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রদর্শন করাঃ

কেননা এ বিষয়ে আল্লাহ তা'য়ালা নিজেই পবিত্র কোরআনে বলেছেন, হে আমার বান্দারা তোমরা আল্লাহর সম্মুখে দণ্ডায়মান হও বিনীতভাবে। ধীরে ধীরে নামাজ পড়া আর তাড়াহুড়া না করা।

(৪) নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহ তা'য়ালাকে ভয় করাঃ

ভাবুন, এই নামাজই হয়তো বা আপনার জীবনের শেষ নামাজ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে জনৈক ব্যক্তি সংক্ষপ্তি উপদেশ কামনা করলে তিনি তাকে বলেন, যখন তুমি নামাজে দণ্ডায়মান হবে তখন এমনভাবে নামাজ আদায় করো। যেন এটি তোমার জীবনের শেষ নামাজ। [ইবনে মাজাহ ১২৩৫, মিশকাত ৫২২৬]

(৫) নামাজে মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কল্যাণ আশা করাঃ

মহান আল্লাহ তা'য়ালা ইরশাদ করেন, তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। [সূরা বাকারা: ৪৫]

এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বলেন, তোমরা কেউ নামাজে দাঁড়ালে সে মূলত তার প্রভুর সঙ্গে কথোপকথন করে। তাই সে যেন দেখে, কীভাবে সে কথোপকথন করছে। [সহিহুল জামে-১৫৩৮]

(৬) নামাজে নিজের গোনাহ কথা চিন্তা করাঃ

আল্লাহ সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার কথা ভেবে নিজের মাঝে হায়া ও লজ্জাশরম নিয়ে আসুন। দণ্ডায়মান অবস্থায় একজন অপরাধীর মতো মস্তক অবনত সিজদার স্থানের দিকে নিবন্ধ রাখুন।

আর নামাজে যখন বার বার মন অন্য দিকে চলে যাবে আপনি বার বার নিজের মনকে নামাজে নিয়ে আসবেন।

নামাজ শেষে আল্লাহ কাছে এই দোয়াটি বেশি করবেন, ''হে আল্লাহ আপনি নামাজে আমার মন অটুট রাখুন আর এমন ভাবে আমার নামাজ কবুল করুন যে নামাজের জন্য আমি আপনার দেওয়া জান্নাতুল ফিরদাউসে যেতে পারি,,।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা আমাদের সব মুসলিম ভাই ও বোনের নামাজে মন ঠিক রাখুন এবং সহিহ শুদ্ধভাবে নামাজ পরার তাওফিক দিন।

লেখা: জুবায়ের আহমেদ।

পঠিত : ৩০৩ বার

মন্তব্য: ০