Alapon

ব্যক্তিপূজার ভয়াবহতা এবং কিছু কথা...



শাইখ ইসরার আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, "বুশ যখন বলে মুসলমানদের সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই, সে সত্য কথাই বলে। নামায পড়ো, রোজা রাখো, রমজান মাসে তো হোয়াইট হাউসে ইফতারের আয়োজনও করে। তাই এই দাবি মিথ্যা নয়। নামায, রোজা, ঈদ, তাসবীহ তাহলীলের ইসলাম বা মুসলমানের সাথে তাদের কোন সমস্যা নেই। পুরো আমেরিকায় কতো মসজিদ হচ্ছে, কোথাও বাধা দিচ্ছে না।

লেকিন নিযাম হামারা হোগা...
হুকুমত হামারি হোগি...

কিন্তু রাষ্ট্র চলবে আমাদের নীতিতে। ক্ষমতা আমাদের হাতে থাকবে। রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি এগুলো নিয়ে যারা কথা বলবে তাদেরকে বরদাশত করা হবে না।"

শাইখ ইসরার আহমাদকে আমি ব্যক্তিগতভাবে আল্লামা মাওদূদীর (রাহি) চেয়েও অনেক বেশি পছন্দ করি। কারণ, তুলনামূলকভাবে তাঁর মানহাযকে আমি কুরআন, সুন্নাহর অনেক কাছাকাছি দেখতে পাই। আর এই মানহাযগত বৈপরীত্যের কারণেই তিনি জামায়াতে ইসলামী থেকে বেরিয়ে যান।

তবে তাঁর এই বক্তব্যের সূত্র ধরে আমি আল্লামা মাওদূদীর (রাহি) অবদানকে স্মরণ করি। খিলাফত ভেঙে যাওয়ার পর অনেক দিন মুসলিমদের ধারণাতেই ছিল না যে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা দ্বীনের একটা বড় অংশ। আর এটা করতে গেলে কাফিরদের সাথে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক সংঘর্ষ অবশ্যম্ভাবী। এই যে মুসলিম মিল্লাতের মধ্যে হুকুমত প্রতিষ্ঠার একটা ধারণা পূণর্জীবিত করেছেন, এর পেছনে আল্লামার বিরাট অবদান। পশ্চিমারা ইসলামী দল-উপদলকে দু'টো ভাগে ভাগ করেঃ ১. যারা হুকুমত ও মুজাহাদার কথা বলে ২. যারা ব্যক্তিগত আমল আখলাকের কথা বলে। এর মধ্যে প্রথম গ্রুপকে তারা শায়েস্তা করতে চায়, আর দ্বিতীয় গ্রুপকে প্রমোট করতে চায়।

আল্লামা মাওদূদীর অনেক চিন্তাভাবনা, তাফসীরের সাথে আমি একমত নই। সেখানে আমি অন্যান্য ক্লাসিক্যাল ইমামদের মতকে প্রাধান্য দেই, অথবা ইসরার আহমাদের মত আধুনিক মুফাসসিরদের। তবে এই ধরণের দু-চার বিষয়ে সমালোচনা ইমাম আল-আরবা, ইবনে তাইমিয়া এরকম হাতে গোনা কয়েকজন বাদে ইতিহাসের সকল ইমামদের বিরুদ্ধেই আছে।
এ ব্যাপারে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ড. মূসা আল শরিফ (বর্তমানে সৌদি জেলে বন্দি) বলেন, "শাইখ আল-মাওদূদী একজন উঁচু মানের দা'য়ী। তাঁর অনেক ব্যাখ্যায় ভুলত্রুটি রয়েছে। তবে তিনি দ্বীনের একনিষ্ঠ খাদেম ছিলেন, যিনি পুরো জীবনকে দ্বীনের খেদমতে ব্যয় করেছেন।"

আল্লামা মাওদূদীর জীবনীর ওপর মূসা আল শরিফের এই খুতবা ইউটিউবে আছে। এই খুতবায় আমি মাওদূদীর জীবনের যতো ব্যাপক বর্ণনা পেয়েছি, অন্য কোন বইয়ে এরকমটি পাই নি।

আমি তারপরও শাইখ ইসরার আহমাদের মানহাযকে প্রাধান্য দেই। তবে তাই বলে কেউ আল্লামা মাওদূদীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিলে কষ্ট লাগে। সেটা আল্লামা নদভী (রাহি), আল্লামা কান্ধলভী (রাহি), আযযাম (রাহি) বা দ্বীনের অন্য যেকোন মহান খাদেমের বিরুদ্ধে শুনলেও লাগে। অনেকে ভাবতে পারেন এটা কীভাবে সম্ভব যে একই সাথে ভিন্ন ভিন্ন মানহাযের আলিমকে মুহব্বত করা। আমি আমাদের শাইখকে জিগ্যেস করেছিলাম যে এরকম বিভিন্ন বিষয়ে স্পষ্ট ভুলত্রুটি বা সমালোচনা থাকার পরও কীভাবে একজনকে অনুসরণ করা যায়। শাইখ বলেন, "নবী-রাসূল (আ) বাদে বাকি সবার বিরুদ্ধে এরকম সমালোচনা পাবেন। সেটা তাদের হয়তো ১% বিষয়ে। সেই ১% বাদ দিয়ে বাকি ৯৯% ভালোটা গ্রহণ করতে হবে।"

আমাদের উচিত ব্যক্তিপূজা থেকে বেরিয়ে আসা। যার কাছে যেটা ভালো সেটা গ্রহণ করা।

মুরশেদ আহমেদ

পঠিত : ২৬৩ বার

মন্তব্য: ০