Alapon

মানুষের জীবনে বিপদ আসে কেন...?



জানেন তো? আমরা মুসলমানরা ওহুদের যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলাম, আমরা ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিলাম। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা লক্ষ্য করলেন— এমনকি মুসলমানদের মধ্যেও এটা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেওয়া শুরু করল।

"কেন আমাদের এমন বিপর্যয় ঘটলো? আমাদেরকে কেন এই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হলো? আমাদের সাথে এসেছেন আল্লাহর রাসূল (স)। তাঁর সাথে আমরা সকল বিশ্বাসীরা এতো ত্যাগ-কুরবানি স্বীকার করলাম। কিভাবে আমাদের প্রতি এমন বিপর্যয় নেমে আসতে পারে?"

আল্লাহ বলেন— وَ تِلۡکَ الۡاَیَّامُ نُدَاوِلُهَا بَیۡنَ النَّاسِ - "(জয়-পরাজয়ের) এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মধ্যে আবর্তিত করে থাকি।" وَ لِیَعۡلَمَ اللّٰهُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا - "যাতে আল্লাহ চিনে নিতে পারেন কারা সত্যিকার অর্থে ঈমান এনেছে।" (৩ঃ ১৪০)

জিততে থাকলে তো বিশ্বাস করা সহজ। তাই না? আমি দেখতে চাই কাদের ঈমান তখনো তাজা থাকে যখন কী হয়? যখন পরাজয় হয়।

প্রথম যখন এই আয়াত পড়ি, আমি তখন নিউ ইয়র্কে থাকতাম। সে সময় আমি বাস্কেট বল টিম 'নিউইয়র্ক নিকসের' (New York Knicks) ফ্যান ছিলাম। এই টিম সম্পর্কে যদি কিছু জেনে থাকেন 'স্পাইক লি'-কে (spike lee) দেখবেন প্রতিটি ম্যাচে উপস্থিত থাকতে। আমি জানি না এখন সে থাকে কিনা। কিন্তু সে সময় সে প্রতিটি খেলায় উপস্থিত থাকত। গ্যালারি থেকে সে শাহাদাত আঙ্গুল নাড়াতে থাকত। খেলায় তার টিম চল্লিশ পয়েন্ট পিছিয়ে থাকলেও সে বিশ্বাস হারাত না। তাকে বলা হত 'ট্রু বিলিভার'। জেতার অবস্থা থাকুক বা না থাকুক সে আশা হারাত না। খেলা শেষ হতে মাত্র তিন সেকেন্ড বাকি আছে, তার টিম চল্লিশ পয়েন্ট পিছিয়ে আছে, সে তখনো শাহাদাত আঙ্গুল নাড়াতে থাকত। এমনি ছিল তার বিশ্বাস!! এ জন্য তাকে বলা হত 'ট্রু বিলিভার' বা আসল বিশ্বাসী।

ব্যাপারটা হলো— যখন আমরা খারাপ সময় অতিক্রম করি, ঠিক সে সময় আল্লাহ দেখতে চান আল্লাহর উপর আমাদের আস্থা আছে কি নেই। ঠিক সে সময় সত্যিকার অর্থে আমাদের ঈমানের শুধু পরীক্ষা হয় না, বরং গ্রেইড দেওয়া হয়। এভাবে চিন্তা করুন, সে সময় গ্রেইড দেওয়া হয়। সে সময় যে গ্রেইড অর্জন করেন সেটাই আসল গ্রেইড। সে সময় কি আপনি আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থাকেন। তাই আল্লাহ বলেন— আমি জানতে চাই কারা সত্যিকার অর্থে ঈমান এনেছে। আমি তোমার ঈমানের প্রয়োগ দেখতে চাই। আমি দেখতে চাই পরীক্ষায় পড়লে তোমার ঈমানের কী অবস্থা হয়।

কুরআনের অন্য এক জায়গায় তিনি বলেন- مَا کَانَ اللّٰهُ لِیَذَرَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ عَلٰی مَاۤ اَنۡتُمۡ عَلَیۡهِ حَتّٰی یَمِیۡزَ الۡخَبِیۡثَ مِنَ الطَّیِّبِ - আল্লাহ এমন নন যে, তিনি মুমিনদেরকে আরামদায়ক অবস্থায় ছেড়ে দেবেন...।" (৩ঃ ১৭৯) তিনি ছেড়ে দিবেন না। তিনি সময়কে কঠিন করে দিবেন। "যতক্ষণ না তিনি অসৎকে সৎ থেকে পৃথক করবেন।" وَ مَا کَانَ اللّٰهُ لِیُطۡلِعَکُمۡ عَلَی الۡغَیۡبِ - "আল্লাহ তোমাদেরকে গায়িবের বিধান জানাবেন না।" (৩ঃ ১৭৯) তিনি আপনাদেরকে আসল পরিকল্পনার কথা জানাবেন না। তিনি স্বয়ং এ কথা বলেছেন।

এটাই হলো গভীর বিনম্রতা। এটা এতোই গভীর যে এমনকি একজন রাসূলকেও এই নম্রতা শেখার জন্য ভ্রমণ করতে হয়েছিল (মূসা আলাইহিস সালাম কে)। নম্রতার এই শিক্ষা আমাকে আপনাকেও নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে। সত্যিকার অর্থে, একেবারে অন্তর থেকে আমাদের অভিযোগগুলোকে, আল্লাহর প্ল্যান সম্পর্কে আমাদের জিজ্ঞাসাগুলোকে ছেড়ে দিতে হবে। নিজেকে জাস্ট ভাসতে দিন। নিজেকে আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিন।

তখনি নিজের মাঝে সত্যিকারের প্রশান্তি খুঁজে পাবেন এবং আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা আপনাকে জীবনে এমন প্রশান্তি দান করবেন যা অন্য কোনোভাবে আপনার কাছে আসতো না।

—নোমান আলী খান

পঠিত : ৩৮২ বার

মন্তব্য: ০