Alapon

দ্বীনের দ্বায়িদের আর্থিক সচ্ছলতা অধিক জরুরী...



স্যার উইলিয়াম হান্টার কর্তৃক লিখিত 'দ্য ইণ্ডিয়ান মুসলমান' বইতে আল্লামা জাফর থানেশ্বরী সম্পর্কে বলতে গিয়ে এক জায়গায় হান্টার লিখেছেন, "তিনি দলীল লিখতেন, ব্রিটিশ আদালতের আইন বুঝতেন, যে কথাই বলত মানুষ সেটা অন্ধভাবে বিশ্বাস করত, তার আনুগত্য করত! সকল মতের মানুষ সাহায্য নিতে, তার কাছে ধর্না দিত।

ফলে অর্থনৈতিক ভাবে তিনি যথেষ্ট সচ্ছল হয়েছিলেন। তারপরও তিনি সেই কাজ ছেড়ে দিয়ে, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে মানুষকে সংগঠিত করার কাজে মনোনিবেশ করেছে। এসব মানুষ উন্মাদ! ধর্মের তাগিদে নিজের সচ্ছলতাকেও ছুড়ে ফেলতে চিন্তা করেনা।" এটি বহু লম্বা কাহিনীর একটি সার-সংক্ষেপ চিত্র মাত্র। তাঁকে আন্দামান দ্বীপে আজীবনের জন্য, নির্বাসিত করা হয়েছিল। সেখানেই তিনি মারা যান।

বর্তমান যুগের কিছু দ্বীনের দায়ীরা যখন চাকুরীর মজা বুঝেছে তখন থেকেই তাদের কাছে দ্বীনের স্বার্থ দুই নম্বরে স্থান পেয়েছে। দ্বীনের দায়ীদের অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতার প্রভাব, ইসলামের চরম ক্ষতি ডেকে আনে। আর সে সচ্ছলতা যদি চাকুরীর মাধ্যমে মেটাতে যায়, তাহলে সারে সর্বনাশ ঘটে জীবনে।

চাকুরী শব্দটি 'চাকর' থেকে সৃষ্টি হয়েছে। তাই চাকুরী নামক কাজটির ধরনই এমন যে, কারো কথার তলে নিজেকে আবদ্ধ হয়। এ কারণে দ্বীনের দ্বায়িদের জন্য এই পেশাটি বিপদজ্জনক হয়। কোন নবীরা ব্যক্তির অধীনে চাকুরী করেন নি। প্রয়োজনে ছাগল চরানোর মত ক্ষুদ্র, বিরক্তিকর অথচ স্বাধীন এমন পেশায় নিজেকে জড়িত রেখেছেন।

ইমাম বোখারী (রহ) সরকারের ইচ্ছায় কাজ না করার জন্যই শেষ জীবনে পালিয়ে বেড়িয়েছিলেন! আত্মগোপনে থাকা অবস্থায়, বিশ্বখ্যাত মহান মনীষী নিঃসঙ্গ ঈমাম, বৃদ্ধ বয়সে অচেনা অখ্যাত পল্লীর কোলে লোকচক্ষুর অন্তরালে দুনিয়া ত্যাগ করতে বাধ্য হন। তাঁর ভয় ছিল, যদি কোন অবস্থাতেই সরকারের দয়া গ্রহণ করেন, তাহলে তিনি যে লক্ষ লক্ষ হাদিস উপস্থাপনা করেছেন, ভবিষ্যতে কোন একদিন মানুষ সে গুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলবে এই বলে যে, সরকারী হালাল সুবিধার খপ্পরে পড়ে ইমাম বোখারীও মজে গিয়েছিলেন।
ইতিহাসে দেখা যায়, রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা পেয়ে জগতের বহু জ্ঞানী আলেম পথভ্রষ্ট হয়েছে। চোখের পর্দা একটু বড় করে তাকালেই আমরা আজো বহু নজীর দেখতে পাব।

এ সব থেকে রক্ষা পেতে, ইমাম হাসান আল বসরী (রহ) নিজে ব্যবসা করতেন। একজন গুণগ্রাহীর প্রশ্নে তিনি বলেন, "কাজের সময়কে তিনি তিন ভাগে করেন! এক ভাগ দিয়ে দ্বীনের দাওয়াত, অন্যভাগ দিয়ে লেখাপড়া বাকী সময় ব্যবসায়ের জন্য দোকানে বসতেন। এই সময়টাতেই আল্লাহ বরকত দিতেন; উল্টো ক্রেতারাই তার জন্য অপেক্ষা করত। রাতের সময়টা পরিবারকে সময় দেয়া, ঘুম ও এবাদতের জন্যই বরাদ্দ করতেন।

কথাগুলো এ কারণেই তোলা, যারা আমাদের দ্বীনের দ্বায়ী তারাতো অবশ্যই মসজিদের ঈমামতি করবেন, মাদ্রাসার শিক্ষকতা করবেন কিন্তু এই আয় দিয়ে তাদের জীবন চালানো দূরহ হবে। তাই তাদের উচিত সাথে সাথে জন মানুষের সাথে সম্পর্কিত ব্যবসার মধ্যে নিজেদের জড়িয়েও রাখা। আল্লাহ অবশ্যই তাঁদের ব্যবসায়ে বরকত দিবেন। দেশে সৎ ব্যবসায়ীর যে বিরাট ঘাটতি সেটা তাদের মাধ্যমে অনেকাংশে কমে আসবে।

যারা নিজের ব্যবসায়ে আয় করেন, তারা সর্বদা সঠিক কথা শক্ত ভাবে বলতে পারেন, তাদের মনোবল একজন চাকুরীজীবীর মনোবলের চেয়ে অনেক প্রবল। মানুষের ব্যক্তি জীবনে অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা দেখা দিলে, চৌকশ জ্ঞানী মানুষও দুনিয়ার চাহিদার কাছে হার মানে।

- নজরুল

পঠিত : ৮৯৯ বার

মন্তব্য: ০