Alapon

কোন যুক্তিতে বাম-প্রগতিশীলেরা মোদির সঙ্গে আওরঙ্গজেবের তুলনা করেন?



আমি জোর গলায় প্রশ্ন করছি মোদির সঙ্গে আওরঙ্গজেবের কেন তুলনা হবে? কেন মোদির সঙ্গে আকবরের তুলনা হবে না? কেন মোদির সঙ্গে অশোকের তুলনা হবে না? মোদি বললেই কেন অটোমেটিক্যালি আওরঙ্গজেবের নাম আসে? মনের মধ্যে কী শত শত বছরের সাম্রাজ্যবাদের ছড়ানো আওরঙ্গজেব বিদ্বেষ কোথাও থানা গেড়ে আছে? তবুও মোদির সঙ্গে আওরঙ্গজেবের তুলনা করে লেখা লিখলাম আমার এক দাদার অনুরোধে - কিন্তু আমার মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে, চোখে জল আসছে, আজও মোদির সঙ্গে আওরঙ্গজেবের তুলনা করতে হচ্ছে। বাংলার দুর্ভাগ্য, বাংলার ইতিহাসচর্চার দুর্ভাগ্য! ব্যতিক্রমী আওরঙ্গজেব পাদশার কাছে ক্ষমা চেয়ে লেখাটা লিখলাম।

কোনও তুলনাই চলে না, উচিতও না। কিন্তু কেন তুলনা চলে না, সে বিষয়ে আমার মত বলি - সংক্ষেপেই। তখন জাতিরাষ্ট্র ছিল না - রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য এক ধর্ম, এক দেশ, এক ভাষাকে তোল্লাই দেওয়ার কোনও অন্তর্লীন এজেন্ডা ছিল না। ফলে শাহজাহান এবং আওরঙ্গজেবের রাজত্বে 'উচ্চপদে' ৩৩% অমুসলমান হলে মধ্য এবং নিম্নপদে আরও কত বেশি অমুসলমান ছিল অনুমেয়। বাংলার সুলতানি এবং নবাবি আমলের আমলাতন্ত্র আলোচনাট এ চিত্র স্পষ্ট হয়ে যায়। যদুনাথ সরকারের মত আওরঙ্গজেব বিদ্বেষী বলছেন সম্রাট মনে করতেন চাষীর দেয় রাজস্বে তাঁর রাজত্ব চলে ফলে তার জীবনধারণের জন্যে বরাদ্দ ১ কোটি টাকা হলেও, তিনি নিজের চাহিদা সীমাবদ্ধ করে নিয়েছিলেন। উল্টোটা আজ দেখি। নিজেকে ঝোলাদার বলা এক রাষ্ট্রপুরুষ কী ধরণের বিলাসিতায় ডুবে আছেন। শাহজাহানের একান্ত সচিবের নাম ছিল চন্দ্র ভান ব্রাহ্মণ, তিনি আওরঙ্গজেবের সময়েও মধ্যচ্চপদে কাজ করে অবসর নিয়েছেন। রাজা রঘুনাথ ছিলেন আওরঙ্গজেবের প্রথম অর্থমন্ত্রী, উজির, দ্বিতীয় ক্ষমতাধর মানুষ। অথচ গান্ধীকে পুজো করা আজকের প্রধানমন্ত্রী গান্ধীকের খুন করা এক সঙ্ঘীর গলায় মালা দেন। আওরঙ্গজেব অন্তত দাঙ্গা লাগান নি এবং সেই কাজকে ডিফেন্ড করেন নি। এই দ্বিচারিতা তাঁর ছিল না। সুন্নিদের বিরোধী শিয়াদের উচ্চপদে নিয়োগ করেছিলেন। ক্যাথলিন বাটলার বলছেন তাঁর সময়ে হিন্দুস্তানি সঙ্গীতের সব থেকে বেশি বিকাশ হয়। বহু সঙ্গীতকার তাঁর নামে সঙ্গীতের বই নামাঙ্কিত করেন। আওরঙ্গজেব যত মন্দির ধ্বংস করেছিলেন তার থেকে বেশি মন্দির তৈরির ফরমান দিয়েছেন। সঙ্ঘীদের প্রশ্ন করুন, তিনি যে প্রায় ৩ দশক দক্ষিণে ছিলেন সেখানে আরও বড় বড় মন্দির ছিল, কত মন্দির আওরঙ্গজেব তিনি ধ্বংস করেছেন? আর আজকের প্রধানমন্ত্রীর মার্গদর্শক মসজিদ ভাঙার ডাক দেন।

আমাদের ব্যর্থতা, দুর্ভাগ্য হল, ১৯২০তে যদুনাথ সরকারের বিদ্বেষভরা, মিথ্যেভরা আওরঙ্গজেবের জীবনী লেখার ১০০ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও অড্রে ট্রুস্কের সেকেন্ডারি সোর্সের একটা চটি বই ছাড়া[অসামান্য কাজ, কিন্তু বিশদে কাজ না] একজন দক্ষিণ এশিয় ঐতিহাসিক মিলল না যিনি আওরঙ্গজেবের জীবনী লিখতে বুকের পাটা টান টান করে কলম ধরবেন! কিন্তু বিপুল নথি পড়ে আছে। সে সব ব্যবহার হয় না।

মোদি আর সংঘের সাফল্য হল যে পুরোনো দিনের আওরঙ্গজেব বিদ্বেষের নামে ইসলামোফোবিয়া মনের মধ্যে চারিয়ে দেওয়া।

পঠিত : ৩১০ বার

মন্তব্য: ০