Alapon

লেবানন এবং শ্রীলঙ্কার পরে যেই দেশটি দেউলিয়া হতে যাচ্ছে তা হয়তো পাকিস্তান...



গত কয়েক বছর ধরে পাকিস্তান ঋণের চাকায় ঘুরছে। কারণ পাকিস্তানের অর্থনীতি এতই নাজুক যে কিছুদিন পর পর আইএমএফের থেকে ঋণ আনতে হয়। সেই ঋণ যখন সুদে আসলে পূরণ করার সময় আসে তখন আরো বেশি ঋণ নিয়ে আগের দায় এবং নতুন চাহিদা পূরণ করতে হয়।

কিন্তু ঋণের উপর কত দিন চলা যায়?

ইমরান খান যখন ক্ষমতায় আসে তখন আইএমএফ এর থেকে ঋণ নিতে চাইলে তারা কঠিন কিছু শর্ত দেয়। প্রথমত, পাকিস্তান সরকারকে ট্যাক্সের হার বাড়াতে হবে, দ্বিতীয়ত, জ্বালানি তেল, গ্যাস, সবকিছুর মূল্য বৃদ্ধি করতে হবে, তৃতীয়ত, সরকারি সম্পত্তি বিক্রি করে হলেও ঋণের টাকা জোগাড় করে আনতে হবে। অবশ্যই এটি ছিল বেশ অপমানজনক। তাই তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আসার ওমর এর সমালোচনা করে চুক্তি করতে পিছপা হয়। ইমরান সরকার তখন তাকে পদচ্যুত করে আইএমএফের সাথে চুক্তি করে। তাছাড়া আর কোন রাস্তা বাকি ছিল না। কারণ ততদিনে সৌদি ও চীনের থেকে কিছু ঋণ চেয়েছিল কিন্তু তারা আইএমএফের মত এতো বেশি (৬ বিলিয়ন ডলার) ঋণ দিতে পারে নি।

এই সবকিছু ২০১৯ সালের ঘটনা। কিন্তু তারপরে গত কয়েক বছরে পাকিস্তানের অবস্থার বিশেষ কোন উন্নতি হয়নি। হয়তো ২০২০ ও ২০২১ সাল আগের দিনগুলোর তুলনায় কিছুটা ভালো ছিল। কিন্তু বর্তমানে আবারো শোচনীয় অবস্থায় পৌঁছে গেছে। এই অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে মোট বাণিজ্য ঘাটতি পৌঁছেছে ৩৯ বিলিয়ন ডলারে। জ্বালানি তেল, গ্যাস ও কয়লার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া একটি কারণ সত্য কিন্তু পাকিস্তানের নিজস্ব সমস্যাগুলোও অস্বীকার করার মত নয়। পাকিস্তানের নিজস্ব প্রযুক্তি ও শিল্প নির্ভর রপ্তানি খাত নেই। আপনি শুনলে অবাক হবেন পাকিস্তানের শীর্ষ রপ্তানি পণ্য হচ্ছে কাপড় ও তুলা। তারপর আছে বিভিন্ন প্রকার খাদ্য ও চামড়া সমগ্রী। অর্থাৎ, একেবারে কৃষি নির্ভর রপ্তানি খাত। উন্নত প্রযুক্তি ভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠেনি এবং খনিজ সম্পদও আমদানি করতে হয় দেশটিকে।

এক সময় পাকিস্থানে লোড শেডিং ও ট্র্যাফিক জ্যাম ছিল নিত্য দিনের সঙ্গী। সম্প্রতি চীনকে সাথে নিয়ে প্রচুর বিনিয়োগ করে এই দুই সমস্যার কিছুটা সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু রাস্তা এবং বিদ্যুৎ রাতারাতি রপ্তানি বৃদ্ধি করতে পারে নি। এর কারণ আমি দেখি এভাবে যে রাস্তা-ঘাট ও বিদ্যুৎ প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিল্প খাতে বিনিয়োগ এবং ইন্ডাস্ট্রি লেভেলে উন্নত রাষ্ট্রের সহযোগিতা।
পাকিস্তানের আরও দুইটি সমস্যা হচ্ছে এই দেশের জনগন খুব দুর্নীতিবাজ এবং রাজনীতি খুব অস্থির। সব মিলিয়ে অবস্থা হচ্ছে এমন যে পাকিস্থানের ডলার আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। তাই তাদের কিছুদিন পর পর ঋণ নিয়ে চলতে হচ্ছে। বর্তমানে তাদের ঋণ পেতে সমস্যা শুরু হচ্ছে। ডলার রিজার্ভ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। পাকিস্থান যদি আগামী এক বছরের মধ্যে নতুন ঋণ না পায় কিন্তু এই অবস্থা অপরিবর্তিত থাকে তাহলে কি হবে?

হিসেব করে দেখুন, বর্তমানে পাকিস্তানের কারেন্ট একাউন্ট ডেফিসিট অর্থাৎ, বাণিজ্য ঘাটতি + রেমিট্যান্স আয় মাসে ১ বিলিয়ন ডলারের কিছু কম। কিন্তু তাদের হাতে আছে মোট ১০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, ১ বছরে শ্রীলঙ্কা।

তবে এর মাঝে ঋণ পেলে বা তেলের মূল্য কমলে আরো কিছুদিন চালানো যাবে। তবে এগুলোর কোনটাই স্থায়ী সমাধান না। বর্তমানেই রুপির মূল্য কমে ডলারে ২০০ ছাড়িয়েছে এবং এই মান ক্রমাগত নিচের দিকে যাচ্ছে।পাকিস্তান যদি বর্তমান অবস্থার বিশেষ উন্নতি সাধন না করতে পারে, কিছুদিনের মধ্যেই কেউ আর এই দেশকে ঋণ দিতে রাজি হবে না। তখন শুরু হবে তীব্র মূল্যস্ফীতি, জ্বালানী তেল গ্যাসের সংকট, বেকারত্ব এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয়।

- মোহাইমিন

পঠিত : ২৬০ বার

মন্তব্য: ০