Alapon

নতুন শিক্ষাক্রমে "ধর্ম শিক্ষা" বলে কোন বিষয় কতোটুকু থাকছে?


.
বাংলাদেশে আবারো নতুন শিক্ষাক্রম তৈরি করা হয়েছে। পিইসি-জেইসি পরীক্ষা বাতিলের পাশাপাশি নতুন শিক্ষাক্রমে কিছু বিষয় যোগবিয়োগও হয়েছে। প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়তে হবে আটটি বই। আর ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে ১০টি বিষয় প্রবর্তনের কথা আছে। এই দশটি বিষয় হল -
.
- ভাষা ও যোগাযোগ
- গণিত ও যুক্তি
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
- তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি
- পরিবেশ ও জলবায়ু
- জীবন ও জীবিকা
- সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব
- শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা
- শিল্প ও সংস্কৃতি
- মূল্যবোধ ও নৈতিকতা
.
এই দশ সাবজেক্টের লিস্টে "ধর্ম শিক্ষা" নামে কোন বিষয় দেখা যাচ্ছে না। পুরো শিক্ষাক্রমে ধর্মকে আনা হয়েছে নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের অধীনে। অর্থাৎ স্বতন্ত্রভাবে ধর্ম বা ধর্মের বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ না। রাষ্ট্রের বেঁধে দেয়া মূল্যবোধ এবং নৈতিকতার সীমানার মধ্যে ধর্ম যতোটুকু খাপ খাওয়াতে পারবে তাই মুখ্য। ধর্মের কাজ হল রাষ্ট্র যেসব সেক্যুলার মূল্যবোধকে 'পবিত্র' হিসেবে ঠিক করে দিয়েছে সেগুলোর পক্ষে আলোচনা আনা।
.
এছাড়া ২০২০ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২২ সালের জন্য সুপারিশকৃত শিক্ষাক্রমে ইসলাম ধর্ম, খ্রিষ্ট ধর্ম, হিন্দু ধর্ম-এই ধরণের কোন বিষয়ের পরীক্ষা মাধ্যমিক পরীক্ষায় থাকছে না বলেই মনে হচ্ছে।
.
প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্ম শিক্ষা আসলে কতোটুকু কার্যকর বা ধর্মসম্মত সেই আলোচনা আপাতত বাদ দিয়ে, সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মকে বাদ দেয়া বা ধর্মের আলোচনাকে ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ করার পেছনে যুক্তি কী, সেই দিকে একটু তাকানো যাক।
.
আদর্শ সেক্যুলার নাগরিক তৈরির ক্ষেত্রে একটা বড় প্রতিবন্ধক হল ঐসব ওয়ার্ল্ডভিউ যেগুলো সেক্যুলারিসমের সর্বজনীনতার দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে। আর সবচেয়ে অ-সেক্যুলার ওয়ার্ল্ডভিউ হল ইসলাম। তাই কাগজেকলমে ৯০% মুসলিমের দেশ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে সত্যিকার অর্থে সেক্যুলার করে তুলতে হলে দুটো বিষয় আবশ্যক -
.
ক) ইসলামের 'প্রকৃত শিক্ষা, সংজ্ঞা ও সীমানা' ব্যাখ্যা করার কর্তৃত্ব রাষ্ট্রের হাতে থাকা
খ) সমাজ ও রাষ্ট্রের আলোচনায় ইসলামের প্রভাব কমিয়ে লিবারেল-সেক্যুলার-বাঙ্গালি নৈতিকতার প্রভাব বাড়ানো।
.
প্রথমটা করা হচ্ছে "গণ"-কমিশনসহ অন্যান্য বিভিন্ন উপায়ে 'অনুমোদিত ইসলাম'-এর সীমানা নতুন করে তৈরি করে।
.
আর পরেরটা বাস্তবায়নের একটা অংশ হল নতুন এই শিক্ষাক্রম। যেখানে ধর্মকে ব্যক্তিগত কিছু আচার ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হবে। অন্যদিকে সমাজ ও শাসনের ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের জন্য শিল্প ও সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা, সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব-এর নামে লিবারেল-সেক্যুলার আকীদাহ শেখানো হবে।
.
অনেকবার বলেছি, আবারও বলি - সেক্যুলারিসম ধর্মের ব্যাপারে নিরপেক্ষতা না। সেক্যুলারিসম হল ধর্মকে রাষ্ট্র ও সংবিধানের অধীনস্ত করা। ধর্মকে নিয়ন্ত্রন করা।

পঠিত : ৬০৭ বার

মন্তব্য: ০