Alapon

আমেরিকা কেন একমাত্র সুপার পাওয়ার?


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুই কলোনিয়াল পাওয়ার ব্রিটেন এবং ফ্রান্স তাদের শক্তি হারায়৷ তাদের জায়গায় নতুন দুই সুপার পাওয়ার আত্নপ্রকাশ করে। ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকা এবং ইউনিয়ন অফ সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকস বা সোভিয়েত ইউনিয়ন। আমেরিকা পূর্বে আন্তর্জাতিক ইস্যু থেকে নিজেকে বিরত রাখলেও ১৯৪৭ সালে এসে আমেরিকা সেই নীতি পাল্টায়। ১৯৪৭ সালের ১২ ই মার্চ আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান কংগ্রেসে আমেরিকার নতুন পররাষ্ট্র নীতি ঘোষণা করেন। যাকে ট্রুম্যান ডকট্রাইন বলা হয়। ট্রুম্যান ডকট্রাইনকে আমেরিকার সুপার পাওয়ার হওয়ার ঘোষণা বলা যেতে পারে। এরপর ১৯৯১ সাল পর্যন্ত আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে শীতল যুদ্ধ চলে। ১৯৯১ সালের পর আমেরিকা পৃথিবীর একমাত্র সুপার পাওয়ার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। আমেরিকার শক্তি গত কয়েক দশকে কমেছে এবং চীনেরও উত্থান ঘটেছে। সাথে রাশিয়াও শক্তিশালী হয়েছে। তাও আমেরিকাই পৃথিবীর একমাত্র সুপার পাওয়ার। চীন কী আমেরিকাকে হটিয়ে সুপার পাওয়ার হতে পারবে? ভারত, ব্রিটেন, জার্মানি এবং জাপান সুপার পাওয়ার হতে পারবে কখনো? চলুন এসকল প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যাক।

চীন এখন দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ২০১৩ সালে বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (Belt And Road Initiative - BRI) নামে একটি নতুন অর্থনৈতিক প্রকল্প শুরু করেন। যাতে পৃথিবীর ১৪৬ টি দেশ সম্পৃক্ত রয়েছে। যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভে চীন ৪ থেকে ৮ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার কথা রয়েছে। যা আধুনিক সিল্ক রুট তৈরি করবে। এটা নিঃসন্দেহে চীনের প্রভাব বিস্তারের সবচেয়ে বড় প্রকল্প।এত বড় বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে চীনকে অবশ্যই এই প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করতে হবে। তাই অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন চীন নিজেকে সুপার পাওয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ তাঁরই অংশ। চীন সুপার পাওয়ার হতে পারবে কি না তা জানার আগে জানা প্রয়োজন সুপার পাওয়ার কাকে বলে? সুপার পাওয়ার নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে এর মানে হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শক্তি। অতীতে গ্রীক, রোমান, পারসিয়ান, মিশরীয় এবং কখনো কখনো ভারতীয় সাম্রাজ্যগুলো সুপার পাওয়ার ছিলো। খ্রিস্টান ধর্মের উত্থানের সময় রোমানরা সুপার পাওয়ার ছিলো। পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র রোমানরাই ১ হাজার বছরেরও বেশী সময় ধরে সুপার পাওয়ার হিসেবে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছে।
ইসলামের প্রাথমিক সময়ে পৃথিবীতে দুটি সুপার পাওয়ার ছিলো। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য (Byzantine Empire) এবং সাসানীয় সাম্রাজ্য (Sasanian Empire)। রাসূল সাঃ কর্তৃক মক্কা বিজয়ের পর এই দুটি সুপার পাওয়ারের শক্তি কমতে থাকে। রাশিদুন খিলাফাতের (Rashidun Caliphate) সময় মুসলিমরা সাসানীয় সাম্রাজ্য দখল করে নেয় এবং বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যেরও অনেক অংশ দখল করে নেয়। রাশিদুন খিলাফাতের পর উমাইয়া খিলাফাত (Umayyad Caliphate) এবং এর পর আব্বাসীয়রা (Abbasid Caliphate) পৃথিবীর একমাত্র সুপার পাওয়ার হিসেবে নিজেদের অবস্থান বজায় রাখে। এছাড়াও উসমানীয় সাম্রাজ্য (Ottoman Empire), মুঘল সাম্রাজ্যসহ (Mughal Empire) আরও কিছু মুসলিম সাম্রাজ্য স্বল্প সময়ের জন্য সুপার পাওয়ার হয়ে উঠে। এনসাক্লোপিডিয়া অফ ব্রিটানিকার মতে, যে রাষ্ট্রের শক্তিশালী সেনাবাহিনী কিংবা শক্তিশালী অর্থনীতি রয়েছে সেই রাষ্ট্র সুপার পাওয়ার (Super Power)। সুপার পাওয়ার তাঁর অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সভ্যতা, সামরিক শক্তি দ্বারা সারা পৃথিবীতে নিজের প্রভাব রাখে। কোন আন্তর্জাতিক সমস্যা সুপার পাওয়ার রাষ্ট্রের অংশগ্রহণ ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়। যদি কোন রাষ্ট্র নিজেকে সুপার পাওয়ার হিসেবে দাবি করে কিন্তু তাঁর অংশগ্রহণ ছাড়া অনেক আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান হয় তাহলে সে রাষ্ট্র সুপার পাওয়ার নয়।

কোন দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, অর্থনীতি, মিডিয়া এবং সংস্কৃতি সেই দেশকে সুপার পাওয়ার হতে সাহায্য করে। আধুনিক সময়ে বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন পৃথিবীর নতুন দুই পরাশক্তি বা সুপার পাওয়ার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী তৎকালীন সুপার পাওয়ার ব্রিটেনের অনেক উপনিবেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়ায় ব্রিটেন সুপার পাওয়ার হওয়ার মর্যাদা হারায়। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে এখনো পর্যন্ত আমেরিকা পৃথিবীর একমাত্র সুপার পাওয়ার। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দা, ইরাক এবং আফগানিস্তানের যুদ্ধ আমেরিকার অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করলেও আমেরিকা এখনো নিজের সুপার পাওয়ার অবস্থান ধরে রেখেছে। কিন্তু কীভাবে? এর উত্তর পাওয়া যায় আমেরিকান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মাইকেল ব্যাকলের "Unrivaled: Why America Will Remain the World's Sole Superpower" গ্রন্থে। মাইকেল ব্যাকলে বলেন এখনো আমেরিকার সুপার পাওয়ার হিসেবে ঠিকে থাকার অন্যতম কারণ হলো আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বীদের দূর্বলতা। আমেরিকার গণতন্ত্র দূর্বল হলেও চীনে স্বৈরতন্ত্র রয়েছে। আমেরিকার প্রশাসনিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিকভাবে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় এখনো অনেক শক্তিশালী। আমেরিকা প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ একটি দেশ। আমেরিকার সীমান্ত মাত্র দুটি দেশের সাথে রয়েছে।

আমেরিকার দুই প্রতিবেশী দেশ কানাডা এবং মেক্সিকো উভয়েই ধনী দেশ। উভয় দেশেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রয়েছে। এছাড়া রাশিয়া, বাহামাস এবং কিউবার সাথে আমেরিকার সামুদ্রিক সীমা রয়েছে। মাত্র দুটি দেশের সাথে সীমান্ত থাকা এবং তেমন কোন সীমান্ত বিরোধ না থাকায় আমেরিকাকে সীমান্ত নিরাপত্তায় বেশি অর্থ খরচ করতে হয় না। অন্যদিকে চীনের সাথে ১৪ টি দেশের সীমান্ত রয়েছে। এসব দেশের অধিকাংশেই রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীলতা নেই। চীনের প্রতিবেশী ভারত, ভিয়েতনাম এবং মঙ্গোলিয়ার সাথে চীনের সীমান্ত বিরোধ রয়েছে। ফিলিপাইনের সাথে চীনের সামুদ্রিক সীমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এছাড়া চীনের প্রতিবেশীদের মধ্যে ভারত এবং ভিয়েতনাম আমেরিকার মিত্র দেশ। চীনের সামুদ্রিক প্রতিবেশী জাপান এবং ফিলিপাইনে আমেরিকার সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। চীনের অভ্যন্তরে হংকং নিয়েও চীনকে ব্যস্ত থাকতে হয়। আমেরিকার মতো চীন প্রাকৃতিক সম্পদে এতটা পরিপূর্ণ নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অসাধারণ দক্ষতা আমেরিকার অন্যতম বড় শক্তি। যা আমেরিকাকে প্রযুক্তিতে অন্যান্য দেশ থেকে অনেক এগিয়ে রেখেছে। একটি হিসেব অনুযায়ী পৃথিবীর ৩৫ শতাংশ আবিষ্কার আমেরিকাতে হয়েছে। অন্যদিকে চীন প্রযুক্তিতে এত দক্ষ নয়। যার ফলে চীন নতুন আবিষ্কারে আমেরিকা থেকে অনেক পিছিয়ে।

চীন তাঁর বৃহৎ জনসংখ্যা দ্বারা প্রচুর পণ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হলেও চীনের জনসংখ্যায় বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। যা চীনকে প্রযুক্তির দিক থেকে পিছিয়ে রাখার অন্যতম কারণ। চীনের বৃদ্ধ জনগোষ্ঠী চীনের জন্য ভবিষ্যতে বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দেবে। চীনকে ধনী মনে হলেও চীনের অভ্যন্তরে নানা রকম অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চীনকে তাঁর ১৪৪ কোটির অধিক জনসংখ্যার জন্য প্রচুর পরিমাণ ব্যয় করতে হয়। যার ফলে চীন গবেষণা এবং সামরিক খাতে আমেরিকার মতো বরাদ্দ দিতে পারে না। অন্যদিকে আমেরিকার জনসংখ্যা মাত্র ৩৩ কোটি। তাই আমেরিকার জন্য গবেষণা এবং সামরিক খাতে বিপুল বরাদ্দ দেওয়া চীনের তুলনায় অনেক সহজ। উল্লেখ্য ২০২১ সালে আমেরিকার মোট বাজেটের পরিমাণ ছিলো ৬.৮২ ট্রিলিয়ন ডলার। আমেরিকা বিগত ১০০ বছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ করেছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছাড়াও ভিয়েতনাম, কোরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানসহ আরও বহু দেশকে আমেরিকা দশকের পর দশক যুদ্ধ ক্ষেত্র বানিয়ে রাখলেও আমেরিকার অভ্যন্তরে গত ১৫০ বছরে কোন যুদ্ধ হয় নি। যা আমেরিকাকে সুপার পাওয়ার হতে সাহায্য করেছে। আমেরিকা যেসব দেশে যুদ্ধ করতে গিয়েছে সেসব দেশ ধ্বংস হয়ে গেলেও এসব যুদ্ধের ব্যয়ের বোঝা আমেরিকার অর্থনীতির ওপর তেমন প্রভাব ফেলতে পারে নি। আমেরিকার ভাষা ইংরেজি। যা আন্তর্জাতিক ভাষা। পৃথিবীর প্রতিটি দেশের মানুষ ইংরেজি বোঝে।

যা আমেরিকাকে প্রচুর সুবিধা দেয়। ইংরেজি ভাষাও আমেরিকার সুপার পাওয়ার হয়ে উঠার অন্যতম কারণ। আমেরিকা মুদ্রা ডলার বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত মুদ্রা। যা আমেরিকার বিনিয়োগকারীদের সারা পৃথিবীর যে কোন জায়গায় বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা দেয়। ডলারের কারণেই আমেরিকার অর্থনীতি এত বড় বড় যুদ্ধের ব্যয় বহন সক্ষম। ডলার আমেরিকার সুপার পাওয়ার স্ট্যাটাস ধরে রাখার অন্যতম প্রধান অস্ত্র। এর বিপরীতে চীনের এই সুযোগ এখনো পর্যন্ত নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী ৫ দশকেও চীনের মুদ্রা ডলারকে হারিয়ে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত আন্তর্জাতিক মুদ্রা হয়ে উঠতে পারবে না। বিশ্ব ব্যাংকের মতে, এখনো পৃথিবীর ২৯.৪ শতাংশ সম্পদের মালিক আমেরিকা। এর পরেই রয়েছে চীনের অবস্থান যার পরিমাণ ১৭.৭ শতাংশ। যার ফলে আমেরিকা এখনো তাঁর নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী চীন থেকে অনেক এগিয়ে। পৃথিবীর ২০০০ শীর্ষ কোম্পানির মধ্যে ৬০০ এর অধিক শীষ কোম্পানি আমেরিকার মালিকানাধীন। ২০২১ সালে হওয়া পৃথিবীর মোট সামরিক ব্যয়ের ৩৮ শতাংশ আমেরিকা একাই করেছে। যার পরিমাণ ৮০১ বিলিয়ন ডলার। পৃথিবীর ৮০ টি দেশে আমেরিকার ৭৫০ টি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। ৭০ টিরও বেশী দেশ কোন না কোনভাবে আমেরিকার মিত্র। আমেরিকার কয়েকটি রাজ্যে চলা বিছিন্নতাবাদী আন্দোলন, ধনী গরিবের বৈষম, বর্ণবাদ এবং বাড়তে থাকা ঋণের বোঝা আমেরিকার সুপার পাওয়ার স্ট্যাটাস বা মর্যাদা ছিনিয়ে নিতে পারে।

তবে মাইকেল ব্যাকলে বলেন, আমেরিকা এখনো বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। আমেরিকা যদি তাঁর শক্তি সঠিকভাবে ব্যবহার করে তাহলে আমেরিকা আগামী শতাব্দী পর্যন্ত সুপার পাওয়ার থাকতে পারবে। যদিও মাইকেল ব্যাকলের এই বই নিয়ে প্রচুর বিতর্ক আছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরসূরী রাশিয়া এখনো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ। কিন্তু সে সুপার পাওয়ার হয়ে উঠতে পারবে না। ১৪ টি দেশের সাথে রাশিয়ার সীমান্ত রয়েছে। রাশিয়ার অধিকাংশ প্রতিবেশী দেশের সাথে তাঁর সীমান্ত বিরোধ রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে রাশিয়া একারণেই ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধ করছে। অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞ বলেন সুপার পাওয়ার সব সময় যুদ্ধ তাঁর সীমান্ত থেকে অনেক দূরে করে থাকে। যা করা রাশিয়ার পক্ষে সম্ভব নয়। রাশিয়া তাঁর সীমান্ত থেকে দূরে যুদ্ধ করলেও তাঁর সীমান্তেও তাঁকে যুদ্ধ করতে হয়। রাশিয়ার অর্থনীতি আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া এবং টেক্সাস রাজ্যের অর্থনীতির চেয়েও ছোট। রাশিয়ার দূর্বল অর্থনীতি, প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সীমান্ত সংঘাত, সঠিক অনুপাতে জনসংখ্যা না বাড়ার কারণে সুপার পাওয়ার হতে পারছে না। তবে রাশিয়া এখনো আমেরিকার পর সবচেয়ে বড় সামরিক শক্তি। রাশিয়াও সুপার পাওয়ার হওয়ার শক্তিশালী প্রার্থী। কিন্তু কবে নাগাদ রাশিয়া সুপার পাওয়ার হবে বা আদৌ হতে পারবে কি না তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। আমেরিকার সাবেক শত্রু এবং বর্তমান ঘনিষ্ঠ মিত্র জাপানও সুপার পাওয়ার হয়ে উঠতে পারে। জাপান তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

জাপানের জিডিপ ৫.০৪ ট্রিলিয়ন ডলার। জাপানের শক্তিশালী অর্থনীতি থাকলেও জাপানের সামরিক শক্তি এত বেশী নয়। জাপান প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে থাকা একটি দেশ। চীন, উত্তর কোরিয়া এবং রাশিয়ার তরফ থেকে সামরিক হুমকির কারণে জাপান ধীরে ধীরে তাঁর সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে। জাপান ৭০০০ অধিক দ্বীপের সম্বনয়ে গঠিত একটি দেশ। যার কোন দেশের সাথে সীমান্ত নেই। জাপানের চীন, রাশিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে সামুদ্রিক সীমা রয়েছে। জাপানের ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যার অধিকাংশ বয়স্ক হওয়ায় জাপান সুপার পাওয়ার হয়ে উঠতে পারবে না। তবে জাপান অর্থনৈতিক দিক থেকে সুপার পাওয়ার হয়ে উঠতে পারে। আমেরিকার আরেক শত্রু ও বর্তমান মিত্র জার্মানি। জার্মানি রাশিয়ার পর ইউরোপের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। জার্মানি পৃথিবীর চতুর্থ বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। জার্মানির জিডিপি ৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলার। ৯ টি দেশের সাথে জার্মানির সীমান্ত রয়েছে। জার্মানি প্রযুক্তিগত দিক দিয়েও এগিয়ে। এত সবকিছুর পরও জার্মানি সামরিকভাবে এতটা শক্তিশালী নয়। জার্মানি পৃথিবীর বড় ইস্যুগুলোতে এখনো তেমন একটা কথা বলার ক্ষমতা রাখে না। ইউরোপের অধিকাংশ দেশের মতো জার্মানিকেও আমেরিকার কথা শুনে চলতে হয়। সাবেক সুপার পাওয়ার ব্রিটেনও সুপার পাওয়ার হওয়ার শক্তিশালী প্রার্থী৷ ব্রিটেন এক সময় পৃথিবীর অর্ধাংশে রাজত্ব করতো।

আজ ব্রিটেনের সেই ক্ষমতা না থাকলেও ব্রিটেন এখনো বেশ বড় সামরিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক শক্তি। ব্রিটেনও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে এগিয়ে থাকা একটি দেশ। ব্রিটেন পৃথিবীর ৬ষ্ঠ বৃহৎ অর্থনীতি। আমেরিকার মতো ব্রিটেনের ভাষাও ইংরেজি। মূলত সারা পৃথিবীতে ব্রিটিশ উপনিবেশ থাকার কারণেই ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা হয়ে উঠতে পেরেছে। ব্রিটেন এখন আয়তনে ছোট একটি দেশ হলেও ভবিষ্যতে সুপার পাওয়ার হয়ে উঠতে পারে। আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ ভারতও সুপার পাওয়ার হওয়ার শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। আগামী কয়েক দশকে ভারত পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশ হতে যাচ্ছে। যা ভারতকে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহযোগিতা করবে। ভারতের জনসংখ্যার অধিকাংশই তরুণ। যা ভারতের গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্পদ। ভারতের জনসংখ্যার ৬৮ শতাংশের অধিক দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। ভারতের অদক্ষ জনসংখ্যা এবং ১০ টির অধিক রাজ্য চলা বিছিন্নতাবাদী সংগ্রামও ভারতের সুপার পাওয়ার হয়ে উঠার পথে বাঁধা৷ এতসব কিছুর পরও ভারত পৃথিবীর ৫ম বৃহৎ অর্থনীতি। এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারলে ভারতও সুপার পাওয়ার হয়ে উঠতে পারে। মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ তুরস্কও সুপার পাওয়ার হয়ে উঠতে পারে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর তুরস্কের অবস্থা খারাপ থাকলেও বিগত দুই দশকে তুরস্ক রজব তৈয়ব এরদোয়ানের নেতৃত্বে অর্থনৈতিক, সামরিক এবং প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অনেক উন্নতি করেছে।

তুরস্কের প্রযুক্তিগত দক্ষতা, তরুণ জনসংখ্যা এবং ভৌগোলিক অবস্থান তুরস্ককে সুপার পাওয়ার হয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে। তুরস্কের ভৌগলিক অবস্থান তুরস্কের জন্য সবচেয়ে বড় শক্তি। পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক বাণিজ্য পথ বসফরাস তুরস্কে অবস্থিত। যা তুরস্ককে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। তুরস্ক ১৯ তম বৃহৎ অর্থনীতি এবং মুসলিম বিশ্বে তুরস্কের বেশ প্রভাব রয়েছে। এত সব কিছুর পরও তুরস্ক এই শতাব্দীতে সুপার পাওয়ার হয়ে উঠার সম্ভাবনা খুব কম। সুপার পাওয়ার হতে গেলে তুরস্কের বর্তমান আয়তন বাড়াতে হবে এবং প্রতিবেশীদের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। সব কিছু মিলিয়ে আমেরিকাই এখনো পর্যন্ত পৃথিবীর একমাত্র সুপার পাওয়ার। আমেরিকা পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো জায়গায় অবস্থিত। আমেরিকার কাছে আটলান্টিক এবং প্রশান্ত উভয় সমুদ্রই আছে এছাড়া আমেরিকার উভয় প্রতিবেশীই ধনী। যা আমেরিকাকে সুপার পাওয়ার হতে সাহায্য করেছে। আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বীদের নানা সমস্যাই আমেরিকার সুপার পাওয়ার হিসেবে টিকে থাকার সবচেয়ে বড় কারণ।

[সমাপ্ত]
[কমেন্টে জানান কেমন লাগলো আমেরিকা কেন একমাত্র সুপার পাওয়ার আর্টিকেলটি]

তথ্যসূত্রঃ
১। Countries of the Belt and Road Initiative (BRI) - Green Finance & Development Centre.
২। superpower | Definition, Examples, & Facts - Encyclopedia Britannica.
৩। SUPERPOWER | meaning in the Cambridge English Dictionary.
৪। Unrivaled: Why America Will Remain the World's Sole Superpower By Michael Beckley.
৫। Why the United States Is the Only Superpower | Tufts Now - 21 November, 2019.
৬। Is America still the world's only superpower or is China a real rival? Experts aren't so sure anymore - Abc - 22 June, 2019.
৭। China Population (2022) - Worldometer
৮। United States Population (LIVE) - Worldometer
৯। U.S. Federal Spending | U.S. Treasury Data Lab.
১০। Cost of war: The 13 most expensive campaigns in U.S. history - USA TODAY - 13 June, 2019.
১১। Chart: All of the World's Wealth in One Visualization - Visual Capitalist - 16 January, 2020.
১২। • Ranking: military spending by country 2021 | Statista - 29 April, 2022.
১৩। Infographic: US military presence around the world - Al Jazeera - 10 September, 2021.
১৪। How Many US Military Bases Are There in the World? - The Soldiers Project - May 2, 2022.
১৫। Poverty in India: Facts and Figures on the Daily Struggle for Survival - SOS Children Village.

পঠিত : ২৯৫৬ বার

মন্তব্য: ০