Alapon

সীতাকুণ্ড অগ্নিকাণ্ড : ৫০ ছাড়িয়ে যেতে মৃতের সংখ্যা




চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় এখনো পর্যন্ত ৪৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৩ টি মরদেহ এসে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ শামীম আহসান। তার হিসেব মতে সেখানে এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় আহত ১৩০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ৪ জনকে আইসিইউ-তে রাখা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মাইন উদ্দিন জানিয়েছেন মৃতদের মধ্যে আটজন দমকল কর্মী রয়েছেন। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। সবমিলিয়ে আহতের সংখ্যা ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও পুলিশসহ দুইশ জনের মতো মানুষ। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শহরের বেশ কটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে মোঃ মাইন উদ্দিন জানিয়েছেন।

সেখানে একটু পরপর বিস্ফারণের হচ্ছে বলে আগুন নেভাতে সমস্যা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক। এখন আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি। আগুন নেভাতে আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে দমকল কর্মীরা যোগ দিয়েছেন। সহায়তা করছে সেনাবাহিনী সদস্যরা।

শনিবার রাত নটার দিকে চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩০ কিলোমিটারের মতো দূরে সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় বিএম ডিপো নামের একটি কন্টেইনার টার্মিনালে শুরুতে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। এর চল্লিশের মিনিটের মাথায় ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ ঘটে। মালবাহী কন্টেইনারগুলো দুমড়ে মুচড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। পরপর বেশ কটি বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের সময় দমকল বাহিনীর কর্মীরা আগুন নেভানোর কাজ করছিল।

ডিপোতে আমদানি হয়ে আসা এবং রপ্তানিমুখি প্রচুর মালবাহী কন্টেইনার ছিল। যার মধ্যে রাসায়নিক পদার্থও ছিল। চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর আগে রপ্তানি পণ্য এবং আমদানি হয়ে আসা মাল খালাস হওয়ার পর 'ট্রানজিট পয়েন্ট' হিসাবে কন্টেইনার রাখার জন্য ডিপোটি ব্যবহৃত হয়। বিস্ফোরণের সময় পাঁচ কিলোমিটারের মতো দূরত্বে কাঁপুনি অনুভূত হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে। আশপাশে ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাতাসে ঝাঁঝালো গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

আগুন নেভাতে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট। ডিপোটিতে 'হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড' নামের একটি রাসায়নিকে আগুন লেগেছে বলে নিশ্চিত হয়েছে ফায়ার সার্ভিস। যে রাসায়নিক এখন আশপাশের ড্রেনে ছড়িয়ে পড়েছে। রাসায়নিক যেন আশপাশে জলাধার ও সমুদ্রে আরো ছড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে কাজ চলছে। বালুর বস্তা দিয়ে ড্রেন আটকে দেয়া হয়েছে।

আগুন নেভাতে গিয়ে এতো বেশি ফায়ার সার্ভিসের কর্মী আগে কখনো নিহত হয়নি। সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগার পর কনটেইনারে কী ধরনের জিনিস ছিল এ বিষয়ে তথ্য না থাকাতেই প্রাণহানি বেশি ঘটেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কথা উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিস বলছে, আগুন লাগার পর কনটেইনারে থাকা বস্তু সম্পর্কে কোনও তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে কর্তৃপক্ষ জানায়নি। যে কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে তীব্রতা আরও ছড়িয়ে পড়ে।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, আগুনের ধরন অনুযায়ী প্রশিক্ষিত কর্মী রয়েছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আগুন নেভাতে গিয়ে ভবন মালিক কিংবা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কাউকে পাওয়া যায় না। যে কারণে প্রাথমিকভাবে ধারণাও পাওয়া যায় না। তারপরও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জীবন বাজি রেখে কর্তব্য পালন করে যান। শুধু রাসায়নিক থেকে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রায় তিন শতাধিক দক্ষ প্রশিক্ষিত কর্মী রয়েছে। এ ধরনের আগুন নেভাতে আছে আলাদা কেমিক্যালও।

পঠিত : ২৯৫ বার

মন্তব্য: ০