Alapon

এই আগুন নেভানোর মত ক্যাপাসিটি আমাদের জানা নেই!



চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড কন্টিউনার ডিপোতে আগুন লেগে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় ৪০০ মানুষ। তবে আশংঙ্কার বিষয় হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ, এই আগুন কোনো যেন তেন সাধারণ আগুন ছিলো না। এই আগুনকে বোমা বিস্ফোরণের সাথেও তুলনা করা যায়। কারণ, কন্টিউনারগুলো ছিল রাসায়নিক দ্রব্যে ভরা। সেই রাসায়নিক পদার্থে আগুন লেগে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয় এবং এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

অন্যান্য সকল ঘটনার মতো, এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাতেও নিশ্চয়ই তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। আর সেই তদন্ত রিপোর্ট কোনো এক অজানা কারণে কখনোই জনসম্মুখে আসবে না। আর আমাদের দেশে যেহেতু ইস্যুর শেষ নেই, তাই একটা সময় পর সাধারণ জনতাও সীতাকুণ্ডের এই ঘটনার কথা ভুলে যাবে।

ঠিক যেভাবে সাধারণ মানুষ ভুলে গেছে রানা প্লাজার কথা। রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু তদন্ত হয়তো আজও শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ হলেও সেই রিপোর্ট আমলে নেওয়া হয়নি। ফলাফল স্বরূপ, রানা প্লাজার মালিক রানা জামিনে মুক্ত হয়ে বীরদর্পে সরকারি দলের রাজনীতি করে বেড়াচ্ছে।

তাজরীন ফ্যাশন অগ্নিকাণ্ডের কথা কি মনে আছে? তাজরীন ফ্যাশনের অগ্নিকাণ্ডের পর যথারীতি সরকারি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু আজ অবধি তদন্ত শেষ করা সম্ভব হয়নি। আর তদন্ত শেষ না হওয়ায় তাজরীন ফ্যাশন অগ্নিকান্ডের মামলাও শুরু হয়নি। যার ফলে অপরাধীরা ধরা ছোয়ার বাহিরেই রয়ে গেছে।

সেজান জুস ফ্যাক্টরির অগ্নিকাণ্ডের কথা মনে আছে? আমার ঠিক স্মরণ ছিল না। এই লেখাটা লিখতে গিয়ে স্মরণ হয়েছে। এই অগ্নিকাণ্ডের পর সেজান জুস কোম্পানীর চেয়ারম্যান এবং তার ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু মাস দুয়েক পরেই তারা জামিনে মুক্ত হয়েছেন এবং যথারীতি তারা নিজেদের ব্যবসায়িক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই ঘটনার তদন্ত আজও শুরু হয়েছে কিনা সন্দেহ! আর বিচার আশা করা তো বোকামো ছাড়া আর কিছুই না।

পুরান ঢাকার চুরিহাট্টা ট্রাজেডির কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। এখানেও কেমিক্যাল কারখানা ছিল। আর কেমিক্যালে আগুন লাগার কারণে সেই আগুন দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সেই আগুনে প্রায় শতাধিক মানুষ মারা যায়। তখনও আমাদের ফায়ার ফাইটারদের কেমিক্যালের আগুন নিভানোর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সেই প্রশ্ন সীতাকুণ্ডে আগুন লাগার পর নতুন করে উত্থাপিত হয়েছে।

আমাদের ফায়ার ফাইটারদের আগুন নেভানোর মত উন্নত সরঞ্জাম নেই, কিন্তু আমাদের সরকার বাহাদুর কথায় কথায় উন্নয়নের কথা বলেন। আমাদের সরকার স্যাটেলাইট পাঠানো নিয়ে আত্মতৃপ্তিতে ভোগেন, কিন্তু আমাদের ফায়ার ফাইটাররা কেমিক্যালে আগুন লাগার পর অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে বলেন, ‘এই আগুন নেভানোর মত ক্যাপাসিটি আমাদের জানা নেই!’

এই ক্যাপাসিটি আমাদের রাষ্ট্রেরই নেই। অথচ আমরা দিনভর শুনছি উন্নয়নের গান। যেদেশে জীবনেরেই কোনো নিরাপত্তা নেই, সে দেশে উন্নয়নের গান তো বিলাসিতা মাত্র!

পঠিত : ৪০৪ বার

মন্তব্য: ০