Alapon

ইসলামের ব্যপারে কঠোরতা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেয়া মূল নীতি



আমাদের কিছু ভাই আছেন যারা ইসলামের ব্যপারে কঠোরতায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেয়া মূল নীতির বাইরে চলে যান।

রাসূলের মহব্বতে যে চলমান আন্দোলন সেখানে সব শ্রেনীর মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ আমাদের হৃদয়ে যখন ভালো লাগার বাতাস বয়ে যাচ্ছে কিছু দ্বীনী ভাই সাধারণ মানুষ এবং ছাত্র জনতার রাসূল প্রেমকে বিভিন্নভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। বলতে চাইছেন যদি রাসূল প্রেম সত্যিই থাকে তবে সুন্নত পালন কোথায়? তাদের জন্য নিচের হাদিসটা পড়ার অনুরোধ। যেখানে দন্ডপ্রাপ্ত আসামীও যে আল্লাহ এবং রাসূলকে ভালোবাসতে পারে তার উদাহরণ পাবেন।

’উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে এক লোক যার নাম ছিল ’আবদুল্লাহ্ আর ডাকনাম ছিল হিমার (গাধা)। এ লোকটি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হাসাত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শরাব পান করার অপরাধে তাকে বেত্রাঘাত করেছিলেন। একদিন তাকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় আনা হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চাবুক মারার আদেশ দিলেন। তাকে চাবুক মারা হল। তখন দলের মাঝ থেকে এক লোক বলল, হে আল্লাহ্! তার উপর লা’নত বর্ষণ করুন! নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তাকে কতবার যে আনা হল! তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে লা’নত করো না। আল্লাহর কসম! আমি জানি যে, সে আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলকে ভালবাসে।(1)

চিন্তা করুন আমাদের অবস্থা! আমরা এমন ব্যক্তি রাসূলের ভালোবাসার দাবী করলে কী করতাম?

এখন আসি রাসূলের ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তায়। নিচের হাদিস অনুসারে আমরা দেখি যে পৃথিবীর সবকিছু এবং সবার থেকে রাসূলকে ভালোবাসার পরিমাণটা হতে হবে বেশি।
‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না তার কাছে আমি তার পিতামাতার চেয়ে, সন্তানাদির চেয়ে এবং সমস্ত মানুষের চেয়ে প্রিয় না হব।’(2)

এখন কেউ যদি নিজের জানের চেয়ে কম ভালোবাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাহলে কী হবে? উত্তর আছে উমর রা. এই হাদিসে।

একবার হজরত ওমর ফারুক (রা.) রাসুলকে (সা.) বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনি আমার কাছে সবকিছুর চেয়ে বেশি প্রিয়, কেবল আমার জান ছাড়া।’ রাসুল (সা.) বলেন, ‘না (একথা সত্য নয়), আল্লাহর কসম যার হাতে আমার প্রাণ, ওইসময় পর্যন্ত (সত্য) নয়, যতক্ষণ না কারও কাছে আমি তার জানের চেয়ে বেশি প্রিয় হবো।’

রাসুল (সা.)-এর মুখ থেকে এই কথা ওমর (রা.)-এর মনে বিদ্যুতের মতো স্পর্শ করল, এবং তার মন ওই সময়ই বদলে গেল। তিনি বললেন, ‘খোদার কসম, আপনি আপনি আমার জানের চেয়ে বেশি প্রিয়।’ রাসুল (সা.) বললেন, ওমর, এক্ষণে তোমার ঈমান পরিপূর্ণ হলো। (3)

রাসূল সা. কে ভালোবাসার প্রতিদান কী হবে? আমরা হাদিস থেকেই সেটা জানতে পারি। নিচের হাদিস দু’টো স্পষ্ট করে দিচ্ছে।

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, এক সাহাবি রাসুলের দরবারে এসে জিজ্ঞেস করেন— ‘কিয়ামত কবে?’ রাসুল (সা.) জানতে চাইলেন ‘তুমি এর জন্য কী কী প্রস্তুতি নিয়েছ?’, সাহাবি বললেন, ‘আমি অধিক পরিমাণে নামাজ রোজা জাকাত সদকা আদায় করে কোনো প্রস্তুতি তো নিতে পারিনি, কিন্তু আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি আমার ভালোবাসা আছে।’ রাসুল (সা.) তখন বললেন, ‘তুমি তার সাথেই থাকবে যাকে তুমি ভালোবাসো।’সাহাবি বলেন, এই সুসংবাদের পর আমি এত খুশি হয়েছি, ইসলাম গ্রহণের পর অন্যকিছুতে এত খুশি হইনি। (4)

হজরত সফওয়ান বিন কুদামাহ (রা.) বলেন, আমি হিজরত করে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর দরবারে হাজির হই। আমি আরজ করি— হে আল্লাহর রাসুল, আপনার হাত দিন, আমি বায়আত গ্রহণ করব। আল্লাহর রাসুল (সা.) তার হস্ত মোবারক বাড়িয়ে দিলেন। আমি বললাম, হে রাসুল, আমি আপনাকে ভালোবাসি। তখন তিনি বললেন, ‘মানুষ যাকে ভালোবাসবে, তার সাথেই সে থাকবে।’

আল্লাহর রাসূলের সাথে যেন আল্লাহ আমাদের কিয়ামতে মিলিয়ে দেন সেই প্রত্যাশা করি। আল্লাহ আমাদের গুনাহ ও বিচ্যুতি ক্ষমা করে ইসলামে পরিপূর্ণ দাখিল হওয়ার তওফীক দান করুন।

আমরা অন্যসময় আলোচনা করতে পারি রাসূলের প্রতি ভালোবাসার দাবী এবং তার উপর কর্তব্যসমূহ সম্পর্কে। ইনশাআল্লাহ।
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

~লুতফুর রহমান ভূঁইয়া
(1) বুখারী শরীফ-৬৭৮০.
(2) বুখারি, হাদিস : ১৫
(3)সহিহ বুখারি, হাদিস ৬৬৩২
(4) সহিহ বুখারি, হাদিস ৬১৭১
(*) ছবি: উসামা হক

পঠিত : ৩৯৮ বার

মন্তব্য: ০