Alapon

প্রসঙ্গঃ রাসুলুল্লাহ সা. এর সাথে আয়েশা রা. বিয়ে এবং কিছু কথা...



জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য দেবার পর আমাকে একজন এই প্রশ্ন করেছিলো। সে ছিল একজন বয়স্ক ব্যক্তি এবং সে আরবি জানতো। আমাকে খুবই অসৌজন্য মূলকভাবে প্রশ্ন করে, What is your opinion about a 53 years man who had sex with a 6 years old girl?

তার উদ্দেশ্য ছিল আমাদের ধর্মকে হেয় করা। আমি মাথা ঠান্ডা রেখে, হাসিমুখে বললাম, আমাদের ধর্ম সম্পর্কে প্রশ্ন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। সে এমন উত্তরের জন্য প্রস্তুত ছিল না। আমার প্রতিক্রিয়া দেখে অবাক হয়ে যায়।

এরপর তাকে বললাম, আমি মুসলিম হিসেবে ধর্ম সম্পর্কে মিথ্যা বলতে পারবো না, তাহলে আমাকে জাহান্নামে যাওয়া লাগতে পারে। আর আমাদের ধর্মীয় গ্রন্থসমূহ শতভাগ সংরক্ষিত এবং সবার জন্য উন্মুক্ত। ইন্টারনেটে সবই পাবেন। আমি যদি মিথ্যা বলি তাহলে আপনি সেটা ধরে ফেলতে পারবেন সহজেই।

বুখারী শরিফ এবং অনান্য গ্রন্থে এ ঘটনা উল্লেখ আছে। আবু বকর রা. যা করেছিলেন সেটা সে সময়ের আরবের একটা খুবই প্রচলিত এবং জনপ্রিয় রীতি। তিনি তার মেয়েকে তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে বিয়ের প্রস্তাব দেন। বর্ণনাটা এমন, আয়েশা রা. খেলছিলেন তখন উনার মা তাকে বাসায় নিয়ে যান, প্রস্তুত করে দেন এবং আবু বকর রা. রাসুলুল্লাহ সা. এর নিকট বিয়ের প্রস্তাব দেন। একটা বর্ণনাটায় আছে তখন উনার বয়স ছিল ৬ বছর অন্য বর্ণনায় আরো বেশি। তখন শুধু বিয়ের প্রস্তাবই হয়। বিয়ে হয় আরো পরে।

বিয়ের সময় বয়স কত ছিল সেটা নিয়ে কথা। হাদিসে দুই ধরনের বর্ণনা থাকলেও পবিত্র কুরআনের চার নম্বর সূরা, সূরা নিসার ১৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ স্পর্ট করে আদেশ দিয়েছেন, ❝ হে ঈমানদার সকল! জোর জবদাস্তি নারীদের ওয়ারিশ হওয়া তোমাদের জন্য বৈধ নয়। ❞

এছাড়া একাধিক হাদিসেও আছে যে কোন মেয়েকে তার অমতে বিয়ে দেওয়া যাবে না। তার মানে যখন বিয়ে হয় তখন আয়েশা রা. ভালভাবেই বোঝেন বিয়ে মানে কি, সংসার করা কি, সন্তান ধারনে সক্ষম এবং বিয়েতে সম্মতি দিয়েছেন।

তবে এই সম্পর্কিত আরো একটি ঘটনা আছে যেটা তাৎপর্যপূর্ণ। খাদিজা রা. এর মৃত্যুর পরে হযরত খাওলা রা. (১৪তম মুসলিম উসমান ইবনে মাজউন রা. এর স্ত্রী) রাসুলুল্লাহ সা. কে বাসার কাজে সাহায্য করতেন। তিনি এক সময় রাসুলুল্লাহ সা কে বলেন, আপনার আবার বিয়ে করা দরকার। রাসুলুল্লাহ সা. খাওলা রা. জিজ্ঞেস করেন পাত্রী কে আছে? খাওলা রা. জবাব দেন হয় আয়েশা (রা.) অথবা সাওদা (রা.)। হযরত খাওলা রা. এর প্রস্তাবই প্রমান করে আয়েশা (রা.) বিয়ের মত যথেষ্ট বয়স হয়েছিলো।

এছাড়া দুইজনের বিয়ে এবং দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে আমরা যা জানি সবই স্বয়ং আয়েশা রা. এর মুখে। দুইজন একসাথে কিভাবে রান্না করতেন, খাবার খেতেন, একই গ্লাসে পানি খেতেন, একসাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করতেন; কখনো তিনি জিততেন কখনো উনার হাসব্যান্ড সা. জিততেন, কিভাবে খুনসুটি করতেন, একে অপরের সাথে অভিমান করতেন এবং ভাঙাতেন, কৌতুক করতেন, গল্প শোনাতেন, কবিতা আবৃত্তি করে শোনাতেন ইত্যাদি ইত্যাদি।

রাসুলুল্লাহ সা. এর মৃত্যুও হয় আয়েশা রা. এর কোলে মাথা রেখে। রাসুলুল্লাহ সা. মৃত্যুর ঠিক পূর্বে আয়েশা রা. একটি মিশওয়াক নিজে ব্যবহার করে রাসুলুল্লাহ সা. এর মুখে দেন, কারন তিনি জানতেন এটা রাসুলুল্লাহ সা. কতটা পছন্দ করতেন। সেই মিশওয়াক দিয়ে দাঁত পরিস্কার করার পর রাসুলুল্লাহ সা. এর ওফাত হয়।

রাসুলুল্লাহ সা. এর ওফাতের পরে আয়েশা রা. আরো ৩৬ বছর বেঁচে ছিলেন। এই সময়ে তিনি কি করেছিলেন? রাসুলুল্লাহ সা. এর ওফাতের পরে খলিফা হোন আয়েশা রা. এর পিতা। তারপরে উনার খুবই প্রিয় ভাগিনাও ছিলেন শাসক। এছাড়া উনার রা. ভাইয়েরা, ভাগিনারা ছিলেন সে সমাজের খুবই ক্ষমতাবান ব্যক্তি।

তিনি চাইলে আবার বিয়ে করতে পারতেন, তা করেননি। বাকী জীবন তিনি তার হাসব্যান্ডের কথা বলে গেছেন। তিনি নিজের হাসব্যান্ডের প্রতি এত বেশি মুগ্ধ ছিলেন, এতবেশী বর্ণনা করেছেন তা দিয়ে কয়েক খন্ডের মোটা মোটা বই আছে। তিনি এরমধ্যে নিজের হাসব্যান্ডের ব্যাপারে একটিও নেতিবাচক কথা বলেননি।

আপনাকে প্রশ্ন করি, আপনি কি আজ এই মুহূর্তে এমন কোন মেয়েকে চেনেন যিনি ৩৬ বছর নিজের হাসব্যান্ডের ব্যাপারে কোন নেতিবাচক কথা বলেননি? আপনারা কাউকে চেনেন এমন? ৩৬ বছর বাদ দিন। ১০ বছর? ৫ বছর? ১ বছর? ১ মাস? ১ সপ্তাহ? এমন মানুষ পাওয়া খুবই মুশকিল যার ব্যাপারে তার বউ একদিন পার করছে কোন অভিযোগ না করে।
এবার আমার আপনার কাছে প্রশ্ন এরচেয়ে রোমান্টিক গল্প কি আপনি জানেন? আপনার কাছে প্রিয় গল্প কি শেক্সপিয়রের রোমিও এবং জুলিয়েট? যেখানে দুই জনের বয়স ১২ এবং ১৪। তাদের পরিবার বিয়েতে রাজী ছিল না। বিয়ের পূর্বেই তারা অনেক কিছু করে যা আমি বলতে পারবো না এবং শেষে তারা আত্নহত্যা করে।

ইহুদি ধর্ম, হিন্দু ধর্ম, খ্রিস্টান ধর্ম এবং ইসলাম ধর্ম; পৃথিবীর সবগুলো প্রধান ধর্মানুসারেই আত্নহত্যাকারী জাহান্নামে যাবে। রোমিও-জুলিয়েট দুনিয়াতেও অশান্তিতে ছিল এবং আখিরাতে জাহান্নামে যাবে।

রাসুলুল্লাহ সা. এবং আয়েশা রা. এর দাম্পত্য জীবন দুনিয়াতেও ছিল মধুর এবং আখিরাতেও উনারা জান্নাতের সবচেয়ে উঁচু মাকাম জান্নাতুল ফেরদৌস আল উলাতে থাকবেন।

— শাইখ ইউসুফ ইসস্তেস

পঠিত : ৩৩৪ বার

মন্তব্য: ০