Alapon

দুঃখ কষ্ট এবং জীবন সংগ্রাম—আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ



একটি জিনিস আমাদের সবার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, আর তা হলো— দুঃখ কষ্ট এবং জীবন সংগ্রাম। কোন মানুষই... কোন মানুষই এই পৃথিবীতে জান্নাতের মত সুখী জীবন যাপন করে না। কাউকে নিজের চেয়ে বেশি কিছুর মালিক হতে দেখলে আপনার এমনটি মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—

"মানবজাতির প্রতিটি সদস্য কোনো ধরনের ব্যতিক্রম ছাড়াই কোনো না কোনোভাবে সংগ্রাম করে যাচ্ছে।"

আমি বলছি না যে সবার পরীক্ষা সমান। সন্দেহাতীত ভাবে বলা যায়, যারা তাদের মাথার উপর বোমা পড়ার ভয়ে আতঙ্কিত, যাদের পরিবারের সদস্যদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে, যারা সন্তান হারিয়েছেন— আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে রক্ষা করুন— কোনো সন্দেহ নেই এগুলো বড় ধরণের পরীক্ষা। কিন্তু, কোনো ব্যক্তিই এই দুনিয়াতে জান্নাতের মত সুখী জীবন যাপন করে না। কারণ, এই দুনিয়া কখনোই জান্নাত হওয়ার কথা ছিল না।

এই দুনিয়াকে বানানো হয়েছে সংগ্রাম করার জন্য, পরীক্ষা করার জন্য এবং দুঃখ কষ্টের জন্য। তাই, যে সম্পদশালী তাকে তার মত করে পরীক্ষা করা হচ্ছে আর যে গরিব তাকেও তার মত করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। যে পরিবারের সাথে আছে তাকে তার মত করে পরীক্ষা করা হচ্ছে আর যে পরিবার ছাড়া আছে তাকেও তার মত করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। আমাদের সবাইকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। জীবন তো এ সম্পর্কেই।

তাই, এমন কিছু আয়াত আছে যেগুলো আমাদের মুখস্ত করা উচিত এবং ব্যবহার করা উচিত যেন ইনশা আল্লাহু তা'আলা আমরা এই পরীক্ষাগুলোতে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হতে পারি। যখন এই দুনিয়াতে আমরা কোনো সমস্যায় পতিত হব তখন যেন নিজেদের আশা ধরে রাখতে পারি।

প্রথম আয়াতঃ আপনারা সবাই এগুলো জানেন। فَإِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا - إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا — (ফাইন্না মাআল উচরি ইউচরান, ইন্না মাআল উচরি ইউচরা) এটি একটি নিয়ম। আল্লাহ্‌ যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। এটি একটি নিয়ম যা আমাদের সবার মুখস্ত থাকা উচিত। فَإِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا - আল্লাহ কখনই কারো প্রতি কোনো কষ্ট প্রেরণ করেন না, যদি না সেই কষ্টের সাথে অবশ্যই একটি স্বস্তি বিদ্যমান থাকে। এরপর লক্ষ্য করুন... আমরা এখন এই আয়াতের তাফসির জানার চেষ্টা করছি। এরপর আল্লাহ আবার বলেন, إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا — (ইন্না মাআল উচরি ইউচরা) একই কষ্টের সাথেই রয়েছে আরেকটি স্বস্তি। ইবনে আব্বাস বলেন, একটি কষ্ট কখনোই দুই বা তার অধিক স্বস্তিকে পরাজিত করতে পারবে না। স্বস্তি সবসময় বিজয়ী হবে।

লক্ষ্য করুন, فَإِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا — এখানে 'উসর' এর সাথে আলিফ-লাম রয়েছে। কিন্তু 'ইউসরা' এর সাথে আলিফ-লাম নেই। "মাআল উসরি ইউসরা"। এর দ্বারা বুঝানো হচ্ছে, একই কষ্টের সাথে আল্লাহ্‌ কয়েকটি স্বস্তি প্রেরণ করবেন। তাই, আপনি যদি অর্থনৈতিকভাবে কষ্টে পতিত হন, আল্লাহ বলছেন চিন্তা করো না, তোমার স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। যদি স্বাস্থ্য খারাপ হয়, আল্লাহ বলছেন তোমার ভালবাসাপূর্ণ একটি পরিবার থাকবে। যদি পারিবারিক সমস্যায় পতিত হও, আল্লাহ বলছেন সমাজে শান্তি বজায় থাকবে। অন্যকথায়, আপনি যে সমস্যাতেই ভোগেন না কেন আল্লাহ বলছেন আমি তোমাকে কয়েকটি স্বস্তি দান করব। তোমার জীবনের অন্যান্য বিষয়গুলোকে সহজ করে দিবো। যদিও তুমি একটি সমস্যায় সংগ্রাম করে যাচ্ছ।

তাই, আশা ধরে রাখার জন্য এই আয়াতটি স্মরণে রাখুন।

প্রত্যাশার দ্বিতীয় আয়াতটি হলো... এই আয়াতের কথাও আমরা সবাই জানি। এগুলো প্রাথমিক জ্ঞান। আমাদের সবার এগুলো মুখস্ত রাখা উচিত। যখন আমরা কোনো সমস্যায় পতিত হবো, যখন আর্থিক সংকটে পড়বো, পারিবারিক সমস্যায় পড়বো, আমরা তখন এগুলো স্মরণে আনবো।

দ্বিতীয় যে আয়াতটি আমাদের সবার স্মরণে রাখা উচিত তা হলো, لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا-(লা ইউকাল্লিফুল্লাহু নাফচান ইল্লা উচআহা) "কোনো নফসকে দিয়ে তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা বহন করানো হবে না।" এটি একটি নিয়ম। আবারো বলছি এগুলো আল-কুরআনে বর্ণিত নিয়ম। এগুলো সৃষ্টির নিয়ম যা আল্লাহ আমাদের প্রতি প্রেরণ করছেন।

এর দ্বারা খুবই সুন্দর একটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হচ্ছে। কিছু মানুষ মনে করে আমার পক্ষে এই দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। আমার জন্য এটা অনেক বেশি হয়ে যায়। সংগ্রামটা অনেক বেশি কঠিন। আমার সামর্থ নেই। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি— আপনার সৃষ্টিকর্তা জানেন এই বোঝা বহন করার শক্তি আপনার ভেতরে আছে। আপনার হয়তো নিজের প্রতি আস্থা নেই, কিন্তু আপনার সৃষ্টিকর্তার আপনার প্রতি আস্থা রয়েছে। আপনার হয়তো নিজের প্রতি বিশ্বাস নেই, কিন্তু আল্লাহ জানেন, আপনি এটা করতে পারবেন।

অন্যথায়, এই সংগ্রামে পড়তেন না যদি এই বোঝা বহন করার সামর্থ্য আপনার না থাকত। এই বোঝা বহন করার দায়িত্ব আপনার উপর অর্পিত হতো না। ব্যাপারটা এতটাই পরিষ্কার। لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا-আল্লাহ্‌ জানেন, আপনার সেই শক্তি রয়েছে। আপনার সেই শক্তি আছে, সেই সাহস আছে, সেই মনোবল আছে।

— ড. ইয়াসির কাদির আলোচনা অবলম্বনে

পঠিত : ৮৬৮ বার

মন্তব্য: ০